গত টার্মে ওয়্যারলেস রিলেটেড প্রজেক্ট করতে গিয়ে একবার মনে হয়েছিল ওয়্যারলেস অর্থ তারহীন না হয়ে তারছিড়া হলেই বেশি মানাত। যাই হোক প্রজেক্ট এর সফল সমাপ্তির পর আর সেটা মনে হয়নি। তবে ভাবছি এই তারছিড়া নেটওয়ার্কিং সম্পর্কে কিছু লিখব।
এখনতো বলা যায় ওয়্যারলেসেরই যুগ। ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং অনেক ভাবে ভাগ করা যেতে পারে যেমন রেডিও-অপ্টিক্যাল, ইনফ্রাস্ট্রাকচার-এড হক, লং রেঞ্জ-শর্ট রেঞ্জ, ডেডিক্যাটেড লিংক-শেয়ার্ড মিডিয়াম ইত্যাদি।
আমাদের মোবাইল ফোনও ওয়্যারলেস। তবে সেটা “ইনফ্রাস্ট্রাকচার” বেসড নেটওয়ার্ক। কারন সারা দেশ জুড়েই মোবাইল টাওয়ার (বিটিএস) সেল সেল করে সব ইউজার এর জন্য কাভারেজ নিশ্চিত করে আর কল শুরু করা, গ্রহন করা, স্থানান্তর এর সাথে কানেক্টিভিটি ঠিক রাখা, ফ্রিকোয়েন্সি চ্যানেল এসাইন করা এসবের দায়িত্ব নেয়। এই মোবাইল টাওয়ার গুলোই এমটিএসও এর সাথে একত্রে তৈরী করে মোবাইল নেটওয়ার্কিং এর জন্য ইনফ্রাস্ট্রাকচার।তাই ইউজার এন্ড এ যে মোবাইল ডিভাইস তার কাজ শুধু এই মুহুর্তে যে টাওয়ারে সে রেজিস্টার্ড তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। নেটওয়ার্কিং এর কন্সেপ্ট এ এটাকে ওয়ারলেস ওয়ান (Wide Area Metworking) বা ম্যান (Metropolitan Area Networking) বলা যেতে পারে। পাশাপাশি রুম এ দুইটা ফোন এর ভিতর কল হলেও তারা নিজেরা যোগাযোগ করে না, বরং মধ্যবর্তি হিসেবে কাজ করে মোবাইল টাওয়ার।
সম্পূর্ন টেলিকম সেক্টরটাই প্রধানত ভয়েস ট্রাফিক এর জন্য ডিজাইন করা। সেজন্য এই নেটওয়ার্কিং এর ভিত্তি হল সার্কিট সুইচিং । একটা কল সেটআপ হওয়ার সময়ই সেটাকে সাপোর্ট দিতে প্রয়োজনীয় রিসোর্স আগে বরাদ্দ হয়। অন্যদিকে কম্পিউটার-কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর প্রয়োজনীয়তা থেকে এসেছে প্যাকেট সুইচিং যার সহজ উদাহরন আমাদের ইন্টারনেট এ ব্যবহৃত আই.পি নেটওয়ার্ক। জিএসএম বা সিডিএমএ যেমন সার্কিট বেসড (টেলিকম) ওয়ারলেস ওয়াইড এরিয়া ভয়েস কমিউনিকেশন সারভিস, তেমনি ওয়াইম্যাক্স হলো প্যাকেট বেসড (আইপি) ওয়্যারলেস ওয়াইড এরিয়া ডাটা কমিউনিকেশন সার্ভিস। ওয়াইম্যাক্স আমাদের দেশ এ চালু হবে কিছুদিন এর ভিতরেই। ওয়াইম্যাক্স ভিত্তিক মোবাইল ডিভাইস এখনও অত সুবিধাজনক আকারে পাওয়া না গেলেও, অদূর ভবিষ্যতেই ভাল সম্ভাবনা রয়েছে।
মজার ব্যাপার হল বেসিক ইম্পলিমেন্টেশন এবং কন্সেপ্ট এ তফাত থাকলেও দুটো টেকনোলজিই এখন দুই ধরনের সুবিধাই দেয়। আইপি নেটওয়ার্কে যেমন ৬৪ কেবিপিএস ব্যান্ডওয়াইডথ থাকলেই সুন্দর ভয়েস কমিউনিকেশন হয়, আবার সার্কিট বেসড নেটওয়ার্ক ও প্যাকেট সারভিস দিতে পারে (জিপিআরএস)। জিএসএম সিডিএমএ এর পরবর্তী সংস্করনগুলোতে (যেমন UMTS, WCDMA, EV-DO ভিত্তিক থার্ড জেনারেশন বা তারও পরবর্তী HSOPA, UMB) ভয়েস এর চেয়ে প্যাকেট ডাটা সুবিধাই গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে। আর অনেক ক্ষেত্রে WiMax (802.16), HiperMAN, WiBro বা iBurst টেকনোলজিও ভবিষ্যতে হয়ত একত্রে ব্যবহৃত হবে একই সেট এ। ফোর্থ জেনারেশন টেকনোলজি চালু হতে হতে হয়তবা IPv6 এর বহুল ব্যবহার শুরু হয়ে যাবে। আর তখন হয়ত আইপি এড্রেসই হবে ফোন নাম্বার। দুই টেকনোলজির একত্র ব্যবহার এর ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক সার্ভিস কোয়ালিটির উপর ভিত্তি করে ঠিক করতে পারবে, কোন ধরনের কল প্যাকেট বেসড হবে, আর কোন ধরনের কল সার্কিট বেসড হবে। এখন মোবাইল এ ফ্রিং বা ইয়াহু মেসেঞ্জার কিংবা মিগ দিয়ে যেমন অনেক কম খরচে কথা বলা যায়, ডাটা নেটওয়ার্ক আরো ভাল হলে, এই অবস্থার উন্নতি হবে। আপনার আনলিমিটেড ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে সারাদিন প্রবাসী বন্ধুর সাথে একরকম বিনামূল্যে কথা বলতে পারছেন (ইয়াহু, এমএসএন বা গুগল টক), এই এপ্লিকেশন গুলো মোবাইলের জন্যও এভেইলএবল, এবং চাইলে সারাদিনই আপনি অনলাইনে থাকতে পারেন, এবং মোবাইল দিয়েই কথা সারতে পারেন। যদিও সবাই সারাদিন কথা বললে ডাটা নেটওয়ার্কে কনজেশন এর জন্য ভয়েস কোয়ালিটি খারাপও হতে পারে, সার্কিট নেটওয়ার্কে যেটা হবে না, কোয়ালিটি অব সারভিস গ্যারান্টিড সেখানে। সার্কিট নেটওয়ার্কে পিক আওয়ার এ কেউ সারাদিন কথা বলবেও না, কারন সেটা ফ্ল্যাট রেট বিলিং না, বরং এয়ারটাইম এর উপর ভিত্তি করে বিলিং।
http://www.fring.com/ সাইটে সিম্বিয়ান, উইন্ডোজ সেট এবং আইফোন এর জন্য ফ্রিং সফটওয়ার পাওয়া যায়, এটা দিয়ে একসাথে সবগুলো মেসেঞ্জার এ লগইন করে থাকা যায়। আগের মিগ দিয়েও করা যেতো কিন্তু ফ্রিং আরো অনেক ইউজার ফ্রেন্ডলি। “ফ্রিং” বেসড ভয়েস কলও সম্ভব, ডাটা নেটওয়ার্ক দিয়ে (আপাতত এজ়/জিপিআরএস অথবা মোবাইল এ ওয়াইফাই থাকলে কোন হটস্পট এর কাছাকাছি থেকে) কল টেস্ট করে দেখতে পারেন।
এ ধরনের রেডিও বেসড টেকনোলজি ছাড়াও কিছু অপ্টিক্যাল টেকনোলজিও ওয়্যারলেস মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্কিং এর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে তবে কম মাত্রায়। RONJA এমন একটি উদাহরন। তবে এটা মোবিলিটি সাপোর্ট করে না।
এই লেখাটা পুরোই Wireless WAN / MAN নিয়ে। মানে লং রেঞ্জ ওয়্যারলেস। পরবর্তী লেখায় শর্ট রেঞ্জ Wireless LAN / PAN নিয়ে লিখব ইনশাল্লাহ। এখন ওয়াইফাই (802.11) এবং ব্লুটুথ আমাদের দেশেই মোবাইল ফোনের সাথে বা এক্সপানশন কার্ড হিসেবে পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহার করে ইনফ্রাস্ট্রাকচার বেসড বা এড হক ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং করা যায়। বিশেষ করে ব্লুটুথ ডোংগল ঠিকমত কনফিগার করতে পারলে প্রোফাইল বেসড অপারেশন ছাড়াও অনেক ধরনের লোকাল নেটওয়ার্কিং করা যায়। মোবাইল, ল্যাপটপ, পামটপ, ব্লু-টুথ হেডসেট, ব্লু্-টুথ প্রিন্টার, ব্লু-টুথ এনাবল্ড ডিসপ্লে সব কিছু মিলিয়ে আপনি পুরো বাসা কিংবা শুধু রুমটা পরিনত করতে পারেন “ওয়্যারলেস স্বপ্নপুরী” তে। আর ইউরোপের বেশ কিছু দেশে স্বপ্নের “ওয়্যারলেস সিটি”র কাজ ও শুরু হয়ে গেছে। শহরের প্রায় পুরোটা যেখানে কাভার করা থাকবে ওয়াই ফাই হটস্পটের নেটওয়ার্ক অথবা ওয়াইম্যাক্স কানেক্টিভিটি দিয়ে।