ইয়াবা সম্পর্কে জানেননা কিংবা চিনেননা, এরকম মানুষের সংখ্যা দিনদিন কমছে। এটি এমনই এক মরননেশা যেটা কিনা গত কয়েক বছরে সারা দেশটাকে তছনছ করে দিচ্ছে । অন্যান্য যেকোন প্রকার মাদকের চাইতে এটার ভয়াবহতা নিঃসন্দেহে অনেক অনেক বেশি ।
সেদিন পত্রিকায় একটি নিউজ পড়ে খুবই অবাক হলাম । মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাবমতে, ঢাকায় নাকি প্রতিদিন ইয়াবার চাহিদা ২৫ লাখ!!! অথচ সারাদেশে এক সপ্তাহে ২৫ লাখ প্যারাসিটামল বড়ি বিক্রি হয় কিনা সন্দেহ ।
ফেসবুক পেইজ সাইবার একাত্তর থেকে জানতে পারলামঃ
ইয়াবা মূলত মায়ানমারের শান প্রদেশে পাহাড়ে ঘোড়াদের খাওয়ানো হতো। কেননা ঘোড়া পাহাড়ে কোন গাড়ি সহজে টানতে চাইত না, পরে ঘোড়াকে পাগলা করে দিতে বার্মিজরা এই ড্রাগ তৈরি করে। মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইন হল দুটি মস্তিস্কের উত্তেজক পদার্থ। ইয়াবা সেবনে মুলত এই মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইন সেবনকারীকে বেপরোয়া করে দেয়।
তালপাতার সেপাই নিজেকে মহাবীর আলেকজান্ডার ভাবা শুরু করে এবং যে কোন অপরাধ করার সিদ্ধান্তে যেতে তার বিবেক বাধা দেয়না।
ইয়াবার ভয়ানক সাইড ইফেক্টঃ
বলা হয় যে একটা দুইটা ইয়াবা সেবন করলেই মস্তিস্কের কিছু ছোট রক্তনালী নষ্ট হয় এবং নিয়মিত করলে, খুব অল্প বয়সে ব্রেইন ষ্ট্রোক করে প্যারালাইজড বা চলাচলে অক্ষম হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫%। এছাড়া ওজন কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, হ্যালুসিনেশন, উন্মাদের মত আচরন, গোয়ার্তুমি এবং পুরুষত্ব হারানো ও বন্ধ্যত্ব হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
আমার এলাকায় ইয়াবাঃ
আমার বাড়ি বাংলাদেশের ছোট্ট এবং শান্তিপূর্ণ জেলা শেরপুরে। আমার চোখের সামনে অনেক অনেক মেধাবি দিন দিন ধবংসের পথে ধাবিত হচ্ছে। আগে শুনতাম নষ্ট হওয়ার বয়স নাকি বয়ঃসন্ধিকাল কিংবা কলেজ লাইফ । এই গন্ডি পার করলে নাকি মানুষ অন্তত নষ্ট উপাধি পায়না। অথচ ইয়াবা আজকাল ছেলে , বুড়ো, নারী, এমনকি ধর্মীয় লাইনে পরা মানুষদেরও নষ্ট করে দিচ্ছে । আমার ছোট বেলার অনেক বন্ধু আজ ইয়াবা আসক্ত। আজ আমার বাড়ির পাশের ছোট্ট বাজারে নাকি প্রতি রাতে নাকি গড়ে ২০-৩০ পিস ইয়াবা সেবন হয়। যাদেরকে লেখাপড়ার ব্যপারে সবসময় হিংসা করতাম, যাদের ঘরে খেলার মাঠে জয় করা অন্তত ৫০ টি ট্রফি, মেডেল থাকে, তারা আজ ইয়াবার কারনে চোখের সামনে আবর্জনার স্তুপে পরিনত হচ্ছে। এটা আজও আমি মেনে নিতে পারিনা । শেরপুরে ইয়াবা কারা বিক্রি করে, কোথায় বিক্রি হয়, তা এখন ওপেন সিক্রেট । রাজনৈতিক কিছু মানুষও এসবের সাথে জড়িত যা শেরপুরের সবাই জানে।এরপরও কোন এক অজানা কারনে কোন ভাবেই সেগুলো বন্ধ তো হচ্ছেইনা বরং বিভিন্ন মিটিং মিছিলে বড় বড় নেতাদের আশেপাশে এদের হরহামেশাই দেখা যায় ।
ঠেকানোর উপায়ঃ
আমার মতে সরকারের উঁচু মহল থেকে সিরিয়াসভাবে এই ব্যপারটা দেখা দরকার । ইয়াবা সেবনকারীর চাইতে ইয়াবা ব্যবসায়ী কিংবা সাপ্লায়ারদের খুজে খুজে বের করা দরকার। এদের খুজে বের করতে দেশের গোয়েন্দাবাহিনীকে সরবোচ্চ পরিমানে সক্রিয়া করা হোক।
মাহমুদুর রহমান মান্না, কাদের সিদ্দিকি কোথাও ঘরোয়া বৈঠক করলে ৫ মিনিটের মধ্যে যদি তারা সেখানে পৌছানোর সামর্থ্য রাখে, তাদের দ্বারা সারাদেশের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের খুজে বের করা তো ডালভাত হওয়ার কথা। সুতরাং কাদের সিদ্দিকীর মতো একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধার পিছু নেওয়ার মতো অকাজ করার চাইতে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পিছু নেওয়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ । কারন এদের বন্ধ করা গেলে সেবনকারীরা, "খাইবে না। পাইবে কই"?
যারা এর ব্যবসা করে, তারা কিন্তু আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার আশায়ই করে । তাদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া দরকার । তাদের যাতে মনে ধারনা গেথে যায়, ইয়াবা বিক্রি করলে বিশেষ জায়গা দিয়ে গরম ডিম ঢুকানো সহ্য করতে হয়। হাত পা পঙ্গু হতে হয়। ইয়াবা ব্যবসা করে ১০ লাখ টাকা কামাই করলে অন্তত ১৫ লাখ টাকা খরচাপাতিতেই চলে যায়। মাঝেমধ্যে গুমও হতে হয়।
সারাদেশে যখন মানবাধিকার লঙ্ঘিত, সেখানে জাতীয় স্বার্থে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের উপর একটু আকটু মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে আমার মতো অনেকেই মাইন্ড করবেনা নিশ্চই । বাদবাকিটা আপনাদের ইচ্ছা। কারন আমার কাছে ১০০ জন ধুকে ধুকে মরার চাইতে একজন হুট করে মরা ভালো।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:০৩