১। এক সন্ধ্যায় একজন চা-ওয়ালা দেখতে পেলাম। এত বয়স যে, বয়সের ভরে নুয়ে পড়েছে। হাঁটতে পারছে না ঠিক করে। হাতে একটা চায়ের বড় ফ্লাস্ক, একটি পলিথিনে কয়েকটি সিগারেটের পেকেট, ছোট একটি পানির পাত্র (চায়ের কাপ ধোয়ার জন্য)। যদিও আমার চায়ের নেশা নেই বা তেমন চা খায় না, তবুও সামনে গিয়ে চা চাইলাম। আমাকে চা দিয়ে চা-ওয়ালা বসে পড়েছে। বুঝতে পারলাম দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। আমি বললাম, ঠিক করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না এগুলো নিয়ে চলবেন কেমন করে??
কি করবো বাবা? কিছু তো করার নেই।
কেন আপনার ছেলেমেয়ে নেই??
২ ছেলে, ১ মেয়ে। কেউ দেখে না। আগে মসজিদের ইমামতি করতাম, এখন বয়স হয়েছে তাই .... (থেমে গেলেন)
আপনার পরিবার (স্ত্রী) আছে??
আছে, তার নিয়েই থাকি। কিচ্ছু করতে পারি না, ভিক্ষা করতেও খারাপ লাগে।
হেঁটে হেঁটে এতো কষ্ট না করে একটা ভাল জায়গা দেখে বসে চা বিক্রি করেন। কোথাও বসলে আপনাকে মানা করবে না।
ঠিক আছে, বলে টাকা নিয়ে চলে গেলেন। আমি কিছু সময় তাকিয়ে দেখলাম। ভালভাবে হাঁটতে পারছে না, পা ঠিক মতো পড়ছে না...তবু চলেই যাচ্ছে লোকটা.....
২। সাধারনত বৃদ্ধ লোকের রিক্সায় মানুষ বেশি উঠতে চায় না। অবশ্য এখানে কারো দোষ দেওয়াও ঠিক না। কারন সবাই ব্যস্ত আর একটু তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য বলবান টাইপের রিক্সাওয়ালা হলে হাঁকিয়ে যেতে পারে। আমার অভ্যাস আমি তেমন ব্যস্ত না থাকলে বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা দেখলে তাদের বেশি প্রাধান্য দিই। কারন কোন উপায় না পেয়ে তারা রিক্সা চালায়। আমি চড়লে তাতে তারও কিছু সাহায্য হলো আমারও পথ চলা হলো। একদিন কোন কাজে একটি কুরিয়ার সার্ভিসে যাচ্ছি। একটি পার্সেল নিয়ে ফেরৎ আসতে হবে। যথারীতি বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা। বয়স ৭০-৭৫ হবে। ভালভাবে চালতে পারছে না। আমি কথা বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু বুঝতে পারলাম বয়সের পাশাপাশি কানও বৃদ্ধ হয়েছে। ভাল শুনতে পায় না। জানতে চাইলাম, চাচার দেশ কোথায়???
ময়মনসিংহ।
এই বয়সে রিক্সা চালান কেন??
কি করবো, আর কোন কাজ জানি না যে।
ছেলে মেয়ে কি করে??
২ মেয়ে। ফোস্কা (বসন্ত) ওঠে ২ মেয়ে আর মেয়ের মা অন্ধ হয়ে গেছে। এখন তাদের তো ফেলে দিতে পারি না।
ফেরৎ যেতে হবে তার জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে বললাম। ৫-৬ মিনিটে পারর্সেল নিয়ে ফেরৎ আসার সময় কথা বলতে পারেনি। এই লোকটার কিছু হলে ঐ পরিবারের কি হবে মাথার ভিতর ঘুরছে। ঐ দিন যাওয়া আসা ৪০ টাকার ভাড়া ৮০ টাকা দিয়েও তাকে খুশি করতে পারে নি।
৩। বস্তির পাশ দিয়ে হাঁটছি। একটা জায়গার কিছু লোকের জটলা। এগিয়ে গিয়ে শুনলাম, বস্তির ৭০ বছর বয়স রিক্সাওয়ালা বৃদ্ধের একমাত্র সঙ্গিনী আজ দুনিয়া থেকে বিদায় হল। বৃদ্ধকে দেখলাম পাথর চোখে তাকিয়ে আছে। এক ফোঁটা পানি নেই চোখে। আমার মাথায় ঢুকলো ঐ বৃদ্ধ আগে পরিশ্রম করতো তারপরও আশা ছিল। সে ঘরে ফিরবে, তার সঙ্গিনীর সাথে কথা বলবে, এক সাথে খাবে, সুখে দু:খে এক সাথে থাকবে। এখন, এখন সে কি করবে? কোন আশা বিহীন একাকী একজন বৃদ্ধের অনুভুতি কেউ কি উপলব্দি করতে পারবে তার মত করে??
(বি:দ্র: অনেক দিন পর ব্লগে ফিরে কিছু অনুভুতি শেয়ার করলাম ছাড়া কিছুই না। )
ছবি: ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৮