দেশ থেকে অনেক দূরে থাকি, অফিস বা নিজের কাজের ফাঁকে যখনই সময় পাই, তখনই ব্লগ পড়ি, পত্রিকা পড়ি, টিভিতে খবর দেখি, ফেইসবুকে দেশের বন্ধুদের স্ট্যাটাস আপডেট পড়ি, এত দূরে বসেও আমার রক্ত উত্তেজিত হয়ে উঠে, আমারো ইচ্ছে করে এলাকার বন্ধুদের সাথে চট্টগ্রামের জামাল খান মোড়ে সবার সাথে সমবেত হই আর গলা ফাটিয়ে মিছিল করিঃ
“লাখো শহীদ ডাক পাঠালো,
সব সাথীরে খবর দে।
পুরা বাংলা ঘেরাও করে
রাজাকারদের কবর দে।“
একটা কাহিনী বলি, কাহিনীটা হয়তো অনেকেই জানেন, রবার্ট ফুলটন বাষ্পীয় পোত আবিস্কার করেছিলেন। হাডসন নদীতে যখন তিনি তার নতুন আবিস্কার প্রদর্শনের আয়োজন করেছিলেন, তখন কিছু নিরাশাবাদী, নেতিবাচক ও সংশয়ী ব্যাক্তি জড়ো হয়ে বলাবলি করছিল যে, এই জাহাজ কখনও চলবে না। দেখা গলে জাহাজ চলছে এবং সেটি নদী দিয়ে এগিয়ে গেল। তখন যারা জাহাজ চলবে না বলে মন্তব্য করেছিল তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, জাহাজ কখনও থামবে না। সবকিছুর নেতিবাচক দিক দেখার কী আশ্চর্য মানসিকতা!
কাহিনীটা বলার কারণঃ শাহবাগের আন্দোলন যখন শুরু হল, তখন অনেককেই বলতে দেখেছি, এই আন্দোলন সফল হবে না, বেশী মানুষ আসবে না। আর শাহবাগ যখন বিশাল জনসমুদ্রে পরিনত হল তখন তারা বলছে এটা আওয়ামী আর বামদলের ষড়যন্ত্র। সবকিছুর নেতিবাচক দিক দেখার কী আশ্চর্য মানসিকতা! আবার কেউ বলে দেশের আরো কত সমস্যা থাকতে রাজাকার ইস্যু নিয়ে কেন এত মাতামাতি। সাধারন মানুষের ভাবনাকে ভিন্ন দিকে ঘোরানোর জন্যে কি ঘৃন্য অপচেষ্টা। মন চায় শাহবাগের জনস্রোতে মিশে, এই সব নব্য রাজাকারদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলি,
“জামাত, শিবির, রাজাকার,
এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়।“
আরেকটা কাহিনী বলি- এক শিকারীর শিকার-করা পাখী খুঁজে নিতে আসার জন্য একটি শিক্ষিত কুকুর ছিল। কুকুরটি জলের উপর দিয়ে হাঁটতে পারত। শিকারী যখন কুকুরটির এই অলৌকিক ক্ষমতার পরিচয় পেল তখন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। বন্ধুদের নিকট কুকুরের এই আশ্চর্যজনক ক্ষমতা দেখবার অভিপ্রায়ে সে একদিন তার বন্ধুকে হাঁস শিকারের আমন্ত্রণ জানাল । কয়েকটি হাঁস মারা পর সে কুকুরটিকে নির্দেশ দিল হাঁসগুলি জল থেকে তুলে আনতে। কুকুরটি জলের উপর দিয়ে দৌড়ে মৃত হাঁসগুলি নিয়ে এল। সারাদিন ধরে বেশ কয়েকবারই কুকুরটিকে জলের উপর দিয়ে দৌড়াতে হোল। শিকারী তার কুকুরের এই আশ্চর্য ক্ষমতার জন্য বন্ধুর কাছে মন্তব্য আশা করেছিল; কিন্তু বন্ধু ছিল চুপচাপ। শিকারী বাড়ি ফেরার পথে বন্ধুকে জিজ্ঞেসা করল, “কুকুরটির কোনও অসাধারণত্ব লক্ষ্য করেছ কি?” বন্ধু জবাব দিল, ”হ্যাঁ, তোমার কুকুরটি সাতার জানে না।” কোনও কোনও ব্যক্তি সব সময়েই নঞর্থক দিকটিই দেখে।
কাহিনীটা বলার কারণঃ কিছু নেতিবাচক মানুষ বলে যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাওয়া মানেই নাস্তিক, বামপন্তী, ইসলামের শত্রু। 'শাহবাগ আন্দোলনের' আসল লক্ষ্য নাকি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি না, বরং দেশ থেকে ইসলাম ধ্বংস করা। ইসলামের মুখোশধারীদেরকে বলছি, যতই প্রপোগান্ডা চালাও, যতই গুজব ছড়াও, যতই মিথ্যা অপবাদ দাও। কোন লাভ নেই। তরুণরা আজ জেগেছে, কোন শক্তিই আজ তাদের রুখতে পারবে না।
“একাত্তরের হাতিয়ার,
গর্জে উঠুক আরেকবার।
রাজাকারের ফাঁসি হোক,
শহীদরা পাক ন্যয় বিচার।“
পঞ্চমদিনেও জোরালোভাবেই চলছে শাহবাগের আন্দোলন। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ৯৬ ঘণ্টার দ্রোহ। দ্রোহের আগুন দেশের ৫৬ হাজার বর্গ মাইল সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। ঘুম নেই শাহবাগ প্রজন্ম-চত্বরের আন্দোলনকারীদের, দাবি একটাই---যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি।
স্যলুট বাংলাদেশ ,আমি গর্বিত বাংলাদেশি হিসেবে, সাবাস বাংলাদেশ-
“এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়,
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার,
তবু মাথা নোয়াবার নয়।“