বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ধারা মতে,
“কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।”
.
এই অপরাধে ব্যক্তি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং অন্যূন সাত বছর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ২০০৬ সালে যখন এটি করা হয় তখন শাস্তি ছিল সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড। ২০১৩ সালে সংশোধন করে শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ১৪ বছর করা হয়। সেখানে সর্বনিম্ন কারাদণ্ড রাখা হয় ৭ বছর। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপরাধ জামিন অযোগ্য করা হয়। আগে মামলা করার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন ছিল। এখন সেটারও দরকার নেই। অপরাধ আমলে নিয়ে পুলিশ শুধু মামলাই নয়, অভিযুক্তকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তারও করতে পারছে।
.
আমরাও মনে করি, কেউ যদি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চর্চার নামে সীমা লঙ্ঘন করে তবে তার শাস্তি হতেই পারে। তবে এর জন্য কমপক্ষে ৭ বছর শাস্তি অবশ্যই হওয়া উচিত নয়।
.
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, কোনো ব্যক্তি শুধু হাসি-ঠাট্টা বা মজা করার জন্য কিছু লিখে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে হয়রানির শিকার হয়েছেন। ওই ধারাটি দেশের নাগরিকদের হাসি-ঠাট্টা-মশকরা করার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। একে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যার কারণে ইন্টারনেটের যে কোনো কর্মকাণ্ড অপরাধ মনে করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
কোনটি অপরাধ আর কোন অপরাধের মাত্রা কেমন এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে কোনো নির্দেশনা কি দেওয়া হয়নি.?
রাষ্ট্র আইন করে রক্ষণশীলতার পরিচয় দিয়েছে, উদার মনোভাব দেখাতে পারেনি।
.
প্যারোডি রচনা বহু পুরনো ঐতিহ্য। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ব্যাঙ্গাত্মক হাস্যরস সৃষ্টির পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বলা যায়, সৃষ্টিশীলতার গতিতে ধাক্কা লেগেছে। কারণ নাগরিকরা কোনো কিছু লেখার সময় যদি চিন্তা করে,
এটা লিখলে বা বললে কত বছর জেলে থাকতে হবে, তাহলে লেখার গতি যে এগুবে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
.
এরই মধ্যে...
↓
●বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক গান লিখে এক ব্যক্তি ৭ বছরের জন্য দণ্ডিত হয়েছেন।
↓
●প্রধানমন্ত্রীর শাড়ি নিয়ে মন্তব্য করে এক ব্যক্তিকে কারাগারে যেতে হয়েছে।
↓
●ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করে স্ট্যাটাস দেওয়ায় একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
↓
●জুম্মার নামাজের পর মোনাজাতে প্রধানমন্ত্রীকেনিয়ে কটূক্তি করায় ইমামের নামে মামলা হয়েছে।
↓
→ এ জাতীয় উদাহরণ আরও অনেক রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে যেসব অপরাধের শাস্তি সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে, সে সব অপরাধের শাস্তি তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ৭ থেকে ১৪ বছর করা হয়েছে। প্রচলিত বেশ কিছু আইনের সঙ্গেও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের শাস্তির মাত্রা বিরোধপূর্ণ।
অনেকটা এ রকম: প্রচলিত আইনে খুন করে কেউ ১০ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন; আর তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কাউকে ‘খুনি’ বলেই ১০ বছরের জন্য কারাগারে থাকতে হতে পারে।
↓
‘খুনি বলা’ আর ‘খুন করা’ এখানে একই রকম অপরাধ !!!