সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার কথা মনে আছে? ক্রেমলিনের কয়েকদিন আগেও জানা ছিলো না এমন ভাঙন তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। ভেঙে খানখান হয়ে গেলো। সূর্য-না-ডুবা বিশালায়ন দেশটা হয়ে গেলো টুকরো টুকরো অনে-ক দেশ। তাজিকিস্তান .. উজবেকিস্তান .. তুর্কামেনিস্তান.. আজারবাইজান ....! জুলুমের পরিণতি ছাড়া একে আর কী বলা যায়? আফগানিস্তান দখল করে কী ত্রাস চালিয়েছিলো ওরা! সোভিয়েত ইউনিয়নের মুসলিম অধ্যুষিত জনপদগুলোতে নেমে এসেছিলো কী রক্তিম নিষ্ঠুরতা! মসজিদ বন্ধ। মাদরাসা বন্ধ। মুসলমানরা প্রাণভয়ে পালিয়ে ফিরছে। ধরা পড়ে পড়ে রক্ত দিচ্ছে। ব্যক্তি শেষ। পরিবার শেষ। জনপদের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে জুলুমের ঝড়। রক্তের বন্যা। আহা কী পৈশাচিক বর্বরতা! সুতরাং হঠাত করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়াটাই ছিলো স্বাভাবিক। কয়েকদিন আগে এ ভাঙনের ভয়াবহতা টের না পাওয়াটাই ছিলো স্বাভাবিক। জালিমদেরকে আল্লাহ একটু ঢিল দেওয়ার পর এভাবেই হঠাত পাকড়াও করেন।
আমেরিকা জুলুম করতে করতে এখন শেষ সীমায় পৌঁছে যায় নি? আফগানিস্তানে লাখ লাখ মানুষ মেরেছে। ইরাকে লাখ লাখ শিশু হত্যা করেছে। জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকিতে বোমা ফেলে মহাধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। লিবিয়াকে শেষ করে দিয়েছে। আরব বিশ্বকে গোলাম বানিয়ে রেখেছে। ইসরাঈলকে নিয়মিত শক্তি ও অস্ত্র-সহযোগিতাদিয়ে দিয়ে মাস্তানি করাচ্ছে। এ-সব জুলুমের পরও আমেরিকা বেঁচে যাবে? পরিণতি ভোগ করবে না? সোভিয়েত ইউনয়নের ভাগ্য বরণ করবে না? অবশ্যই করবে! করতেই হবে! আল্লাহর কসম! সেদিন বেশি দূরে না! সবচে’ বড় জালিম আমেরিকার সবচে বড় শাস্তি অপেক্ষা করছে আল্লাহর আদালতে! এ শাস্তির রায় যে কোনো দিন যে কোনো মুহূর্তে ঘোষিত হতে পারে! আমেরিকা তুমি প্রস্তুত থাকো!!
আমরা মনে করি আমেরিকা এখনও সুপার পাওয়ার। কিন্তু মানতে একটু কষ্ট হয়! কেননা বছরে-বছরে এই যে অগণিত ব্যাংক ওখানে দেওলিয়া হয়ে যাচ্ছে, এ কি সুপার পাওয়ার হওয়ার বা থাকার লক্ষণ? ওখানে না-আছে নীতি-নৈতিকতা, না-আছে আমাদের মতো পারিবারিক বন্ধন। বল্গাহারা যৌনতায় ভেসে যাচ্ছে কিশোর যুবক সমাজ। ক্ষণে ক্ষণেই অবৈধ অস্ত্র কেড়ে নিচ্ছে তাজা তাজা প্রাণ। মাদকের ছোবলে ঢাকা পড়ে গেছে মানবতার ক্ষীণ আলোকরেখাও। ডলার? আসলে দাম পড়ে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু ইহুদী লবির কারসাজিতে এখনো টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে এর বাহ্যিক মান। অর্থনীতি নির্ভর হয়ে উঠছে এই ইহুদি লবির দয়ার উপর। এ জন্যে দিশেহারা আমেরিকা এখন দেশে হানা দিচ্ছে ব্যবসায়িক স্বার্থে। অন্যদের সম্পদ লুটেপুটে খেতে। খোঁজ নিলেই জানা যাবে, সৌদি অর্থনীতি কারা নিয়ন্ত্রণ করে? অন্যান্য পুতুল আরবদের ব্যবসা-বাণিজ্যের লাগাম কার হাতে? শুধু লুট করার জন্যে। নিজেদের ধস ঠেকানোর জন্যে।
আমেরিকার পতন শুরু হয়ে গেছে ভিতর থেকে। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে শুধু এখন দানবীয় খোলসটা। এক সময় অন্তঃসারশূন্য হয়ে এটাও ভেঙে পড়বে। তখন আমেরিকা হবে পতিত সোভিয়েত ইউনিয়ন। এ সব কোনো গল্প না। বাস্তবতার পাথরময় উচ্চারণ। খোদ শত শত আমেরিকান গবেষকরা এর মাঝেই চিহ্নিত করেছে আমেরিকার পতনের আট লাখ কারণ। ইন্টারনেটে দেখুন ‘ডিকলাইন অব আমেরিকা’! ‘ফল অব আমেরিকা’। ‘ক্রাইসিস অব আমেরিকা’। সুতরাং জালিম আমেরিকার পতন এখন কেউ ঠেকাতে পারবে না। মিসরের হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে সম্প্রতি কে হত্যা করেছে? এই জালিম আমেরিকার ইঙ্গিতে মিসরের পদলেহী সেনাবাহিনী। ড্রোন হামলার নামে বর্তমানে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে যে-জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা, এরপর আর কী জুলুম বাকি থাকে?
নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যে বর্তমানে যারা নিরীহ জনগণকে জুলুমের নিশানা বানিয়েছে, তাদের পরিণতিও অভিন্ন কিছু নয়। তাদেরকেও বরণ করতে হবে একদিন আগে হোক কিংবা পরে এই সোভিয়েত ইউনিয়নের করুণ পরিণতি। জুলুমের সঙ্গী হলে বাঁচা যাবে না। সোভিয়েত ইউনিয়ন আর আমেরিকা না-বাঁচলে কোন রাশিয়া-আমেরিকাপন্থী বাঁচবে? টিকফা করেও বাঁচা যাবে না! কোনোভাবেই বাঁচা যাবে না! জুলুমের রক্তের দাগ মোছে না, কখনো মুছবে না! হোসনি মোবারককে আমেরিকা বাঁচাতে পেরেছিলো? জেনালেল মুশাররফকে আমেরিকা বাঁচাতে পেরেছিলো? আমেরিকাকে যে ডেকে এনে অনুমতি দিয়েছিলো ড্রোন হামলার? লাল মসজিদে যে বইয়ে দিয়েছিলো শত শত ছাত্র-ছাত্রী ও আলেম উলামার উপর রক্তবন্যা? সুতরাং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকার জুলুম ও পতনের কথা সামনে রেখে আমরা আমাদের দেশের স্বার্থান্বেষী জালিম ক্ষমতালোভীদের চোখে চোখ রেখে বলতে চাই: সাবধান! ইতিহাস থেকে শিক্ষা নাও! নইলে পরিণতির জন্যে প্রস্তুত হও !
::
Yahya Yousuf Nadwi মুহতারামের পোস্ট অলম্বনে