somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আচমকা হঠাত আজ আচানক

২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জুল ভার্নের কী একটা গল্প ছিল, নাম মনে নেই, আপনারাও পড়ে থাকবেন হয়ত। গল্পটা ছিল এমন যে, এক দেশের রাজা পার্শ্ববর্তী আরেক দেশের সঙ্গে হঠাত যুদ্ধ ঘোষণা করে একশো বছর আগে ঘটে যাওয়া খুবই তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে! শুধু রাজাই নয়, সেখানকার জনগণও যুদ্ধে যাবার জন্য একদম একপায়ে খাঁড়া!

সবাই অবাক, এ কেমন ব্যাপার, সেই কত আগের সামান্য একটা ঘটনা নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে কেন! পরে গবেষণা করে দেখা গেল, ওই অঞ্চলের বাতাসে স্নায়ু উত্তেজক ভিন্ন এক গ্যাস কৌশলে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল- যার দরুন মানুষগুলো সবাই সাধারণ বিবেচনা হারিয়ে হিংস্র হয়ে উঠল রাতারাতি!

আমি ভাবছি হঠাত আমাদের দেশের সরল শান্তিকামী মানুষগুলোর নিঃশ্বাসেও অমন কোন বিষমন্ত্র আচমকা মিশিয়ে দেওয়া হল যা নিয়ে মানুষগুলো হঠাত করেই পুজা মণ্ডপ সঙ্গীত শিল্পী মানেই জাহান্নামী এই প্রকারের বিতণ্ডা নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে!

সঙ্গীত শিল্পীর মৃত্যু কি এদেশে আগেও হয়নি?

হয়েছে তো। তাহলে আজ হঠাত এটা নিয়ে উদ্ভট কথা কেন?

আজ হঠাত করেই কে শেখালো যে সঙ্গীত শিল্পী মানেই জাহান্নামী??
এতদিন সঙ্গীতশিল্পী দেখেননি আপনারা? আরব দেশে সঙ্গীত নেই? ইসলামে সঙ্গীত নেই??

তাছাড়া একজন মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা যাবে না, উল্টো তার মৃত্যুতে খুশি হতে হবে এটাই বা হঠাত কে শেখালো?

আপনাদের হঠাত করেই এই উদ্ভট উন্মাদনায় কে নামালো একটু ভেবে দেখুন তো!

এবারে মণ্ডপ নিয়ে কথা! পুজো জিনিসটাই সার্বজনীন, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্যই এটা উন্মুক্ত, এবং আবহমান কাল ধরেই এটা এভাবেই উদযাপিত হচ্ছে, এবং বলা বাহুল্য মণ্ডপগুলোতে যে ভীড় হয় সে ভীড়ের বিরাট অংশ কিন্তু মুসলমানেরাই। নইলে আয়োজনকে ক্ষুদ্রকায়ই দেখাত। একটি ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীন অংশগ্রহণ ও প্রয়াসে সুন্দর হয়ে উঠছে এটাই তো সুন্দর। সেখানে একজন বাজে চিন্তার মানুষ মুসলিম মেয়েদের মণ্ডপে যাওয়া নিয়ে বাজে কথা বলেছে, এজন্য সাম্প্রদায়িক উসকানির দায়ে তাকে শাস্তি দেওয়া উচিত। এমন একটা আঘাত সৃষ্টিকারী বক্তব্যের কারণে তো বিরাট হিন্দু মুসলিম দাঙ্গাই বাঁধতে পারত, যদিও ঘটেছে উল্টো, এখানেও সেই একই বিষ! ধর্মীয় উন্মাদনা!

ওই লোকটাকে এখন মুসলমানরাই সমর্থন দিচ্ছে, বলছে, ভাই আরও দুইটা গালি বাড়ায়ে দেন অগোরে, ওরা যায় কেন! কী অদ্ভুত!! যেন তারা বা তাদের পরিচিতরা কখনই যায়নি পূজো দেখতে, কিংবা পূজো জিনিসটাই নোংরা কিছু! ইসলাম কোন মূর্তির সামনে নত হওয়াকে হারাম করেছে, বেশ, মণ্ডপে কোন মুসলমান তো নত হবার জন্যে যায় না, পূজো দিতেও যায় না, উৎসব হচ্ছে তাই দেখতে যায়, এবং যে যায় বা যে গিয়ে প্রসাদ খায় বা নিজেই পূজো দিয়ে আসে সেটা তার নিজস্ব ধর্মচেতনার বিষয়, বা বলা যাক তার ধর্মচেতনারই সমস্যা, এর হিসেব পরকালে সে বা তারা দেবে! আপনি বড়জোর তাকে সঠিক পথে ডাকতে পারেন, তাকে গালিগালাজ তো করতে পারেন না!

কেউ নামাজ না পড়লে তাকে কি নাস্তিক বলে গালি দেন??

নামায না আদায় করার চেয়ে মারাত্মক অপরাধ কোনটা আছে যা এমন অহরহ ঘটছে?? কই, সেখানে তো আপনার উম্মাদনাটার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় না কখনও! এসব উসকানীর বেলায় তবে কেন??

আমি নিজেও মণ্ডপে গিয়েছি, আগামিতেও যাব, এতে কি আমি কাফির হয়ে গেছি, না আল্লাহর উপর থেকে আমার ঈমান উঠে গেছে? আমার ঘরে কোরআন বাইবেল বেদ আছে, আমি তথ্যের প্রয়োজনে সবই পড়ি, এতে কি আমার ঈমান চলে গেছে? না আল্লাহ আমাকে পরিত্যাগ করেছেন?? আপনি ইসলামের দাওয়াত দিতে পারেন সর্বোচ্চ, উসকানি দিয়ে, গালি দিয়ে কখনও পুণ্য হয় না, আল্লাহর সন্তুষ্টি তো অনেক দূরের ব্যাপার।

আমার কথা হল, এইসব বিষয় নিয়ে এতগুলো বছরে কোন বিতণ্ডা হয়নি কোথাও, আজ হঠাত এত ধর্মীয় অনুভূতি শাণিত হয়ে ওঠার পেছনে ইন্ধনটা কার? একজন সঙ্গীত শিল্পী, মানুষের কল্যানেই কাজ করে গেছেন তিনি, তাঁকেই কিছু অত্যুৎসাহী মানুষ যারা ধর্মের ধ-ও ঠিকমত বোঝে না, তারা রায় দিচ্ছে আইয়ুব বাচ্চুকে জাহান্নামী বলে!
এরকম আমীন না লিখে যাবেন না কিসিমের নির্বোধদের নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই, ওদের কিছু বলারও নেই, কিন্তু আপনি তো সচেতন! আপনি কেন এটাকে প্রতিহত করছেন না?

একেকজন ফেইসবুকে আর ওয়াজের মেহফিলে একদম জানে প্রাণে ধার্মিক হয়ে যাই, অথচ বছরে তেপ্পান্ন জুমুআর নামাজ আদায় করা তো দূর তেপ্পান্ন বার নেক দীলে আল্লাহকে স্মরণও করি কি না সন্দেহ আছে!

আমরা শব-এ বরাত শব-এ ক্বদরে সারারাত কঠোর সাধনা নিয়ে নফল নামাজ আদায় করে ক্লান্ত হয়ে ফজরের আ'যান শুনে ঘুমাতে চলে যাই, ফরজ রেখে নফল নিয়ে টানাটানি!!

এই হচ্ছে আমাদের ধর্মচেতনা! আমরা নিজেরা ধর্মের বিধান ঠিকমত মানিই না, অথচ অন্যের পাপ পুণ্যের রায় দিতে সবাই এগিয়ে যাচ্ছি!! সুতরাং নিজের ইয়া নাফসিটা আগে সামলাই বরং! এটাই কাজে দেবে আপনার আমার পরকালের জন্যে।

আর রইল মণ্ডপ, ওখানে যাওয়া হারাম।
মদ খাওয়াও হারাম, গোঁড়ালি পর্যন্ত পুরুষের পাজামা পরাও হারাম, নামাজে না গিয়ে ফেইসবুকে বসে থাকাও হারাম, চ্যানেল খুলে খোলামেলা নর্তন দেখাও হারাম, চটি পেইজের ব্লগ পাঠ করাও তো হারাম, পর্ন ওয়েবসাইটে ঢু মারাও হারাম, হাঁটুর ওপর কাপড় উঠে যাওয়াও হারাম!

এমন আরও অসংখ্য হাজার হাজার হারামের তালিকা আছে, যেটা আপনি আমি রোজ রোজ উঠতে বসতে দিনে রাতে হাজার বার করি, সে হুঁশ আছে???

আর আপনি আসছেন মণ্ডপে যাওয়া নিয়ে একটা নোংরা গালিকে সমর্থন দিয়ে পুণ্য ফলাতে!!

যার যার ইয়া নাফসি সে সে করুক, আখেরাতে আপনার হিসাব আপনাকে দিতে হবে, মণ্ডপে কে গেল কেন গেল সে হিসাব আপনার আমার না। হ্যাঁ, আপনি আমি দাওয়াত দিতে পারি, সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করতে পারি, তবে উসকানি আর গালিগালাজ অবশ্যই নয়।

ধর্ম কখনই বিভেদের কথা বলে না, যা শান্তি নষ্ট করে তা কখনই আল্লাহর আদেশ হতে পারে না, একদম পানির মত সহজ আর পরিস্কার হিসেব!

শুভরাত্রি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:১৬
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাগতম ইরান

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

ইরানকে ধন্যবাদ। ইসরায়েলকে দাত ভাঙ্গা জবাব দেওয়ার জন্য।

হ্যাঁ, ইরানকে হয়তো এর জন্য মাসুল দেওয়া লাগবে। তবে, কোন দেশ অন্য দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপে করবে আর সেদেশ বসে থাকবে এটা কখনোই সুখকর... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×