somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হোম কোয়ারান্টিন; কী খাবেন ঘরে?

২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মি আমার জীবদ্দশায় একটা দুর্ভিক্ষ দেখেছি। তখন এসব অর্থনীতি, বিশ্বায়ন কিছুই বুঝতাম না, শুধু বুঝতাম ক্ষুধা!
সকাল হলেই ঘরে খাবারের চিন্তা শুরু হত, কোথাও ধার পাওয়া যায় কি না! অবশ্য ধার দেবার মত সচ্ছল তেমন কেউ ছিল না, যারাও ছিল, তাদের কাছ থেকে ধার করা সারা! চালের খুদ সেদ্ধ করে খিচুড়ির মত বানিয়ে খাওয়া হত, খাবার পছন্দ হয়নি বা খেতে ভালো লাগছে না এরকম চেতনাই কখনও মাথায় কাজ করেনি, এখন ভাবলে অবাক লাগে! ভাত না থাকায় শাপলার যে ঢেপ হয়, তার বীজ সেদ্ধ করেও মানুষ খেয়েছে শুনেছি, মাঝবিলে খাগড়া বনের মত একটা ঘাস হত যার ডগায় চিড়ের মত ফুল হত, আজ এত বছর পরে এই শহুরে সভ্যতায় জীবন কাটিয়ে সেই ফুল বা নল খাগড়ার নাম মনে তো নেইই, যাদের কাছে এখন এই গল্প বলছি তারাও এসব ব্যাপারে অজ্ঞাত!
যাইহোক, সেই খাগড়া ঘাসের ফুল সেদ্ধ করেও মানুষ খেয়েছে!

আমরা সকাল হলে বের হতাম, গহীন বাগানে ঢুকতাম এটা ওটা ফল পাওয়া যায় কি না, ফুলের মধু, ফল- এমন কিছু গুল্মও থাকত যার ডগা মিঠা লাগে চিবোতে! অপেক্ষা করতাম কখন জোয়ার নামবে, কখন ভাটা পড়বে, খালের জল শুকাবে! আগা খাল প্রায় মৃত তখন, ওখানে পানি পায়ের গোড়ালি সমান নেমে আসে, তখন কচুরিপানার স্তুপ ঘাটলে দুয়েকটা খয়রা মাছ, টাকি মাছ বা কুচো চিংড়ি পাওয়া যেত, যদিও তা পরিমাণে এমন বেশি না। দেখা গেল বিকেল নাগাদ খালের কাদা ঘেটে অল্প কিছু মাছ নিয়ে ঘরে ফিরতাম ভাই বোনের সাথে, কাকিমা সেগুলো রাঁধতে বসত খুশি মনে। আমরা অবশ্য সব মাছ দিয়ে দিতাম না, ছোট একটা পুটি মাছ বা দু'চারটা চিংড়ি রেখে দিতাম নিজের জন্যে, সে কেমন? ওই চিংড়ি বা পুটিমাছ নিয়ে চুলার পাশে গোল হয়ে বসতাম, দিন শেষে ভাত খুদ যা যোগাড় হল তা চুলায় চড়ত, আমরা গোল হয়ে ঘিরে বসতাম সেই জ্বলন্ত চুলার পাশে, চুলার ফাঁক দিয়ে যে আগুনের শিখা বের হত, তাতে আমাদের ওই চিংড়ি সেকতাম, চুলার কান্দায় লাইন করে ছোট মাছগুলো পাতিয়ে রাখতাম, আগুনের ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় মাছগুলো লাল হয়ে উঠত, কাঁচা পুড়ত, এখন ছেলেপেলেরা যে বারবিকিউ খায় অনেকটা ওরকমই!

আমরা সেই আধপোড়া মাছ খেয়েই খুব আনন্দে থাকতাম, ভাত হল কী না কখন হবে, সারাদিনের না খাওয়া এসব কিছুই মনে আসত না‌! অথচ তখন ছেলে মানুষ ছিলাম, তখন খাবারের জন্য হাউকাউ করিনি, কিন্তু এই বুড়ো বয়সে এসে কতই না খাবার বাছি! নিরামিষ খেতে পারি না, স্বাদ একটু ঊনিশ-বিশ হলেই খেতে পারি না! এই করোনা ভাইরাসের বন্দীদশা যে হারে আমাদের একঘরে করে দিচ্ছে তার উপর খাবারের সংকট আরম্ভ হয়েছে, তাতে সেই দুর্ভিক্ষের দিনের অভিজ্ঞতা আবার ফিরে আসবে মনে হচ্ছে!

অনলাইনে কত রান্নার রেসিপি দেখি, কত কত আইটেমে ঠাসা! কিন্তু এই গরীবী হালে, খাদ্য সংকটের কালে সাশ্রয়ী উপাদান দিয়ে খাবার তৈরি বা রেসিপি বানানোটা খুব জরুরী। একই ডাল আলুভর্তা কয় বেলা খাওয়া যায়? খাবারে বৈচিত্র্য আনা জরুরি! আমি কয়েকদিন ধরেই ভাবছি, একই খাবার না খেয়ে একই খাবার অন্য কী উপায়ে খাওয়া যায়, বা কম উপাদানে পেট ভরে তৃপ্তি করে কিভাবে খাওয়া যায়!

আমার মাথায় এক্ষেত্রে প্রথমেই এসেছে পান্তাভাতের কথা, যদি আপনার ডাল আলুভর্তা খেতে খেতে গলা মরে আসে আপনি একদিন পান্তাভাত নুন দিয়ে মেখে খেয়ে দেখবেন, খরচ অনেক কম, দুইটা মরিচ, পেয়াজ দিলে দিলেন, না দিলে নেই, আর একটু লবণ, ব্যস! রোজ রোজ ডাল আলুভর্তা না খেয়ে একদিন চাল ডাল আলু দিয়ে খিচুড়ি করুন, একদিন শুকনো খিচুড়ি তো আরেকদিন ঝোল খিচুড়ি যা অনেকটা ভাতের জাঁউয়ের মত হবে। ও হ্যা, ভাতের জাঁউও খেতে পারেন, সাথে একটু মরিচ ভর্তা বা শুটকি ভর্তা মেখে নিলেই হল! শুটকির দাম অনেক, তবে শুটিতে বরকতও আছে, পাঁচ ছয় টুকরো ছুরি শুটকি হলে খানিকটা পেয়াজ দিয়ে ভুনা করলে এক পিস শুটকি আর পেয়াজ মাখা শুটকির ঝোল দিয়ে দুই প্লেট ভাত খাওয়া যায়!

এছাড়া রুটি করতে পারেন, রুটি দিয়ে ডাল একদিন, রুটি দিয়ে আলুভাজি একদিন, একদিন রুটি দিয়ে হালুয়া একদিন ডিম! একই খাবার সচ্ছলতার সময় যেমন স্বাদ লাগে, অভাবের সময় তেমনটা আর লাগে না। যখন অভাব শুরু হয়, তখন খাবারও কেমন জানি তার স্বাদ হারায়, তরকারিতে লবণ কম হয়ে যায়, নয়ত হলুদ মরিচের সামঞ্জস্য ঠেকে না! কিছু করার নেই, আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। আমরা চার প্লেট ভাত খাওয়া ভেতো বাঙালি, যদি একটা রুটি দিয়ে ব্রেকফাস্টের অভ্যেস আর একবাটি ভাত দিয়ে লাঞ্চের অভ্যাস হত তবে হয়ত আমাদের খাবারের খরচটা অন্যরকম হতে পারত! এখন আমাদের মানিয়ে নিতে হবে, যদি না পারি তবে করোনা আক্রান্ত হই বা না হই না খেয়ে মরতে হবে এটা নিশ্চিত।

আমি রান্নার মানুষ নই, যাঁরা রান্নাকে শিল্প হিসেবে গ্রহন করে আছেন, তাঁরা এবার মাথা খাটান, আমরা সাশ্রয় করে কিভাবে খেয়ে বাঁচতে পারি। নিঃসঙ্কোচে আপনারা আপনাদের রেসিপি প্রচার করুন, লজ্জার কিছু নেই!

এখন এটাকে গরীবি ছোটলোকি মনে হলেও অচিরেই এই না খেয়ে মরার পালা শুরু হতে যাচ্ছে এদেশে! আমরা তো সমস্যা ঘাড়ের ওপর আসার আগ পর্যন্ত সেটাকে গুরুত্ব দিই না, সবার খাবার কেনার সামর্থ্য নেই, সবার খাবার কেড়ে নিয়ে খাওয়ার মত গায়ের জোরও থাকবে কি না সন্দেহ আছে, তাই যা আছে, তা দিয়ে কিভাবে বেশিদিন টেকা যায় তার একটা সুরাহা দরকার।

সরকারের তরফ থেকে কোন রেশন রিলিফ পাবার আশা করি না, তবু সরকারের যদি দয়া হয় সে ভিন্ন কথা, বেঁচে থাকলে পটাকা ফুটিয়ে মুজিব বর্ষ ২০২১ সালে আমরা আরেকবার পালন করব ইনশাআল্লাহ!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×