আমাদের মেমোরিগুলো কম্পিউটার ফোল্ডারের মতন! আপনি গরু চেনেন, অর্থাৎ গরু নামের একটা ফোল্ডার তৈরি হয়ে আছে আপনার মাথায়। এরপর গরু সংক্রান্ত যত তথ্য, যত কিছু আপনি জানবেন, শিখবেন, বুঝবেন সব ওই ফোল্ডারে যুক্ত হবে।
স্মৃতির বিষয়টাকে আমি এই ফোল্ডার হিসেবে দেখি। এতে একটা সুবিধা হয় আমার, আমি কী নিয়ে ভাববো তা খানিকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমি মনে করি, আমাদের স্মৃতিগুলোকে গুছিয়ে রাখা সম্ভব, এবং স্মৃতি আর কিছুই না, যা আমি মনে রাখতে চাইব সেটাই! একইভাবে কোন স্মৃতি চাইলেই মুছে ফেলা সম্ভব। হ্যাঁ, আপনি চাইলেই পারেন। কখনও এই স্মৃতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছেন কি?
আমদের জীবনে অনেক দুঃখের স্মৃতি বা ঘটনা থাকে, অনেক গ্লানির ব্যাপার থাকে যা পরবর্তীতে মনে পড়লে ময়ূরের পা দেখার মত কদর্য প্রতিক্রিয়া ঘটে।* আমার জীবনেও স্বাভাবিকভাবে এমন ঘটনা অনেক থাকার কথা, ছিলও হয়ত, কিন্তু আমার তার কিছুই মনে নেই। একটা ঘটনা মনে করতে পারি, টিউশন পাবার জন্য একজন টিচার আমাকে মিথ্যে বলতে শিখিয়ে দিয়েছিলেন গার্ডিয়ানের কাছে। উনি আমার সম্পর্কে গালগল্প করে রেখেছেন ওই পরিবারের কাছে যাতে আমি টিউশনটা পাই! এখন উনি তাঁদেরকে যেমন যেমন যোগ্যতা বলে রাজি করিয়েছেন, আমি তেমনটা না বললে উনাকেই ছোট করা হয়, উনি আমার উপকার করতে চাইলেন আর আমি সততার ঠেলায় উনাকে মিথ্যুক প্রমাণ করব অতখানি নীতি তখনও আমার ভেতর গজায়নি!
তো যাইহোক, গার্ডিয়ান নিজেই জিজ্ঞেস করলেন, তুমি অমুক কলেজে পড়?
বললাম, জী।
প্রশ্ন এল অমুককে চেন, তোমার বিভাগেই পড়ে!
তখন কেমনটা লাগে!
পরেরটুকু আর না বলি, খুব লজ্জা পেয়ে ফিরেছিলাম সেদিন!
ঘটনাটা আমি কখনও মনে করতে চাই না। এরকম লজ্জার স্মৃতি ভুলে যাওয়াই ভালো।
খেয়াল করে দেখুন, আমি কীভাবে ঘটনার বাকিটুকু মনে করা থেকে সরে গেলাম! আপনি ভুলতে চাইলে আপনার প্রাক্তনকে ভুলতে পারবেন না, যত ভুলে যেতে চাইবেন ততবেশিই মনে পড়বে, এজন্য এভাবে অপ্রিয় অসুখকর কোন চিন্তা মাথায় এলে স্কিপ করবেন, অন্য কোন সুন্দর চিন্তায় ডুবে যাবেন!
পারবেন না?
এবারে স্মৃতি মুছে ফেলার ব্যাপারটা বলি। বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে হলে স্মৃতি রিনিউ করার ব্যাপার আগে উল্লেখ করা জরুরি। আমি আগে একবার বলেছিলাম, আমার জন্মের এক বছর পর আমার ছোট ভাইয়ের জন্ম হয়, এবং অবাক বিষয়, সেই দিনটার কথা আমার মনে আছে! যাকেই কথাটা বলতাম অবাক হত, এক বছর বয়সের স্মৃতি মনে রাখা কিভাবে সম্ভব!
আমিও ভেবে পেতাম না, কিভাবে সম্ভব!
তখন বিষয়টা মাথায় এল, আপনি গত মঙ্গলবার দুপুরে কী দিয়ে ভাত খেয়েছিলেন মনে করতে পারবেন?
পারবেন না। কারণ জিনিসটা আপনি মনে রাখার দরকার মনে করেননি। অথচ তিন বছর আগে আপনার কোন আত্মীয়ের বাড়িতে বা বিয়েতে কী খেয়েছিলেন তা ঠিকই মনে করতে পারছেন! আরো সহজ করে বললে ঘটনাটা ঘটার পর আপনি দ্বিতীয়বার সেটা কখনও স্মরণ করার চেষ্টা করেছিলেন কিনা তার ওপন নির্ভর করে স্মৃতিতে স্থায়ী হওয়া! আমরা যত যা প্রত্যক্ষ করি তার সবই আমাদের স্মৃতিতে আছে, আসলে আমরা কোনটাই ভুলি না। তবে সহজেই মনে করতে পারি সেগুলো- যা আমরা বারবার স্মৃতিতে আউড়াই বা যা আমাদের মনে কোন তীব্র আবেদনের কারণে দাগ কাটে। আমি ছেলেবেলায় ভাবুক ছিলাম, কল্পনাপ্রবণ ছিলাম, তাই হয়ত যা যা দেখেছি তা মনে মনে আউড়াতে গিয়ে কিছু স্মৃতি মনে স্থায়ী হয়ে গেছে!
এখানে আরেকটি ব্যাপার আমি খেয়াল করেছি, আমরা যখন কোন পুরনো ঘটনা স্মৃতিতে রোমন্থন করি, তখন স্মৃতিটার নতুন একটা ভার্শন মস্তিষ্কে আপডেটেড হয় এবং পুরনো স্মৃতিটা রিসাইকেল বিনে চলে যায়। পরে আবার যখন ঘটনাটা স্মরণ করতে যাবেন তখন ওই গতবারের আপডেটে যা যা মনে করেছিলেন, সেগুলোই মনে আসবে প্রথমে। ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত যেসব প্রসঙ্গ চাপা পড়ে গেছে তা যদি পরবর্তী কয়েকবার ঘটনাটা মনে করার সময় একইভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয় তাহলে সে প্রসঙ্গগুলো প্রায় পুরোপুরি তলিয়ে যায় স্মৃতি হতে (আগেই বলেছি, কিছুই হারায় না, চাপা পড়ে যায় বড়জোর)।
অনেক জগাখিচুড়ি টাইপ কথাবার্তা লিখলাম এতক্ষণ, উদ্দেশ্য এটাই ছিল, যাতে আমরা টেনশন রিগ্রেশন ডিপ্রেশন ইত্যাদি থেকে কিছুটা হলেও বেরিয়ে আসতে পারি! আমি অনেকগুলো প্রসঙ্গ লিখেছি একের পর এক আশা করি মূল ট্রিকটা আপনারা কাজে লাগাতে পারবেন। কোন আঘাত বা কোন কিছুতেই আত্মহত্যা করার চেয়ে মাথাটাকে অন্য কিছুতে খাটান, সমস্যার সাধান করতে না পারলে সমস্যাটাকে উপেক্ষা করুন, তবু ভালো থাকুন, নিজেকে ভালো রাখুন!
* ময়ূরের কদর্য পা- কেমন উপমা? কেমন বাগধারা?
আগে একটা কবিতায় কথাবটা ব্যবহার করেছিলাম। কেউ তখনও জিজ্ঞেস করেনি ঘটনা কী?
এই ঘটনা বলতে হলে আরেকটা পোস্ট লিখতে হবে!