somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতি সমাচার

৩০ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাদের মেমোরিগুলো কম্পিউটার ফোল্ডারের মতন! আপনি গরু চেনেন, অর্থাৎ গরু নামের একটা ফোল্ডার তৈরি হয়ে আছে আপনার মাথায়। এরপর গরু সংক্রান্ত যত তথ্য, যত কিছু আপনি জানবেন, শিখবেন, বুঝবেন সব ওই ফোল্ডারে যুক্ত হবে।

স্মৃতির বিষয়টাকে আমি এই ফোল্ডার হিসেবে দেখি। এতে একটা সুবিধা হয় আমার, আমি কী নিয়ে ভাববো তা খানিকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমি মনে করি, আমাদের স্মৃতিগুলোকে গুছিয়ে রাখা সম্ভব, এবং স্মৃতি আর কিছুই না, যা আমি মনে রাখতে চাইব সেটাই! একইভাবে কোন স্মৃতি চাইলেই মুছে ফেলা সম্ভব। হ্যাঁ, আপনি চাইলেই পারেন। কখনও এই স্মৃতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছেন কি?

আমদের জীবনে অনেক দুঃখের স্মৃতি বা ঘটনা থাকে, অনেক গ্লানির ব্যাপার থাকে যা পরবর্তীতে মনে পড়লে ময়ূরের পা দেখার মত কদর্য প্রতিক্রিয়া ঘটে।* আমার জীবনেও স্বাভাবিকভাবে এমন ঘটনা অনেক থাকার কথা, ছিলও হয়ত, কিন্তু আমার তার কিছুই মনে নেই। একটা ঘটনা মনে করতে পারি, টিউশন পাবার জন্য একজন টিচার আমাকে মিথ্যে বলতে শিখিয়ে দিয়েছিলেন গার্ডিয়ানের কাছে। উনি আমার সম্পর্কে গালগল্প করে রেখেছেন ওই পরিবারের কাছে যাতে আমি টিউশনটা পাই! এখন উনি তাঁদেরকে যেমন যেমন যোগ্যতা বলে রাজি করিয়েছেন, আমি তেমনটা না বললে উনাকেই ছোট করা হয়, উনি আমার উপকার করতে চাইলেন আর আমি সততার ঠেলায় উনাকে মিথ্যুক প্রমাণ করব অতখানি নীতি তখনও আমার ভেতর গজায়নি!

তো যাইহোক, গার্ডিয়ান নিজেই জিজ্ঞেস করলেন, তুমি অমুক কলেজে পড়?
বললাম, জী।
প্রশ্ন এল অমুককে চেন, তোমার বিভাগেই পড়ে!
তখন কেমনটা লাগে!
পরেরটুকু আর না বলি, খুব লজ্জা পেয়ে ফিরেছিলাম সেদিন!
ঘটনাটা আমি কখনও মনে করতে চাই না। এরকম লজ্জার স্মৃতি ভুলে যাওয়াই ভালো।

খেয়াল করে দেখুন, আমি কীভাবে ঘটনার বাকিটুকু মনে করা থেকে সরে গেলাম! আপনি ভুলতে চাইলে আপনার প্রাক্তনকে ভুলতে পারবেন না, যত ভুলে যেতে চাইবেন ততবেশিই মনে পড়বে, এজন্য এভাবে অপ্রিয় অসুখকর কোন চিন্তা মাথায় এলে স্কিপ করবেন, অন্য কোন সুন্দর চিন্তায় ডুবে যাবেন!
পারবেন না?

এবারে স্মৃতি মুছে ফেলার ব্যাপারটা বলি। বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে হলে স্মৃতি রিনিউ করার ব্যাপার আগে উল্লেখ করা জরুরি। আমি আগে একবার বলেছিলাম, আমার জন্মের এক বছর পর আমার ছোট ভাইয়ের জন্ম হয়, এবং অবাক বিষয়, সেই দিনটার কথা আমার মনে আছে! যাকেই কথাটা বলতাম অবাক হত, এক বছর বয়সের স্মৃতি মনে রাখা কিভাবে সম্ভব!
আমিও ভেবে পেতাম না, কিভাবে সম্ভব!

তখন বিষয়টা মাথায় এল, আপনি গত মঙ্গলবার দুপুরে কী দিয়ে ভাত খেয়েছিলেন মনে করতে পারবেন?
পারবেন না। কারণ জিনিসটা আপনি মনে রাখার দরকার মনে করেননি। অথচ তিন বছর আগে আপনার কোন আত্মীয়ের বাড়িতে বা বিয়েতে কী খেয়েছিলেন তা ঠিকই মনে করতে পারছেন! আরো সহজ করে বললে ঘটনাটা ঘটার পর আপনি দ্বিতীয়বার সেটা কখনও স্মরণ করার চেষ্টা করেছিলেন কিনা তার ওপন নির্ভর করে স্মৃতিতে স্থায়ী হওয়া! আমরা যত যা প্রত্যক্ষ করি তার সবই আমাদের স্মৃতিতে আছে, আসলে আমরা কোনটাই ভুলি না। তবে সহজেই মনে করতে পারি সেগুলো- যা আমরা বারবার স্মৃতিতে আউড়াই বা যা আমাদের মনে কোন তীব্র আবেদনের কারণে দাগ কাটে। আমি ছেলেবেলায় ভাবুক ছিলাম, কল্পনাপ্রবণ ছিলাম, তাই হয়ত যা যা দেখেছি তা মনে মনে আউড়াতে গিয়ে কিছু স্মৃতি মনে স্থায়ী হয়ে গেছে!

এখানে আরেকটি ব্যাপার আমি খেয়াল করেছি, আমরা যখন কোন পুরনো ঘটনা স্মৃতিতে রোমন্থন করি, তখন স্মৃতিটার নতুন একটা ভার্শন মস্তিষ্কে আপডেটেড হয় এবং পুরনো স্মৃতিটা রিসাইকেল বিনে চলে যায়। পরে আবার যখন ঘটনাটা স্মরণ করতে যাবেন তখন ওই গতবারের আপডেটে যা যা মনে করেছিলেন, সেগুলোই মনে আসবে প্রথমে। ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত যেসব প্রসঙ্গ চাপা পড়ে গেছে তা যদি পরবর্তী কয়েকবার ঘটনাটা মনে করার সময় একইভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয় তাহলে সে প্রসঙ্গগুলো প্রায় পুরোপুরি তলিয়ে যায় স্মৃতি হতে (আগেই বলেছি, কিছুই হারায় না, চাপা পড়ে যায় বড়জোর)।

অনেক জগাখিচুড়ি টাইপ কথাবার্তা লিখলাম এতক্ষণ, উদ্দেশ্য এটাই ছিল, যাতে আমরা টেনশন রিগ্রেশন ডিপ্রেশন ইত্যাদি থেকে কিছুটা হলেও বেরিয়ে আসতে পারি! আমি অনেকগুলো প্রসঙ্গ লিখেছি একের পর এক আশা করি মূল ট্রিকটা আপনারা কাজে লাগাতে পারবেন। কোন আঘাত বা কোন কিছুতেই আত্মহত্যা করার চেয়ে মাথাটাকে অন্য কিছুতে খাটান, সমস্যার সাধান করতে না পারলে সমস্যাটাকে উপেক্ষা করুন, তবু ভালো থাকুন, নিজেকে ভালো রাখুন!

* ময়ূরের কদর্য পা- কেমন উপমা? কেমন বাগধারা?
আগে একটা কবিতায় কথাবটা ব্যবহার করেছিলাম। কেউ তখনও জিজ্ঞেস করেনি ঘটনা কী?
এই ঘটনা বলতে হলে আরেকটা পোস্ট লিখতে হবে!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:১৫
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যর্থ হলে উপদেষ্টাবৃন্দই তোপের মুখে পড়বেন সবার আগে

লিখেছেন এমএলজি, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:০০

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একটা লক্ষ্যণীয় পার্থক্য হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সরকারি অফিস আদালতে দুর্নীতিবাজরা ভীষণ অস্বস্তিতে পড়েছিল; কিছুদিনের জন্য দুর্নীতি প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলা চলে।

এদিকে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অথবা শরৎকাল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:১০


রোদ হাসলে আকাশের নীল হাসে।
গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘ দল ব্যস্ত হয়ে
দূর সীমাহীন দিগন্তে ছুটে।

লিলুয়া বাতাসে তোমার মুখে এসে পড়া চুল আর
ঢেউ খেলানো আঁচলের সাথে—
কাশবনে সব কাশফুল নেচে যায়।
নিভৃতে একজোড়া অপলক... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গঃ স্কুলে ভর্তি.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৪০

প্রসঙ্গঃ স্কুলে ভর্তি.....

সেই ষাট সত্তর দশকের কথা বলছি- আমাদের শিক্ষা জীবনে এক ক্লাস পাস করে উপরের ক্লাসে রেজাল্ট রোল অনার অনুযায়ী অটো ভর্তি করে নেওয়া হতো, বাড়তি কোনো ফিস দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন্দির দর্শন : ০০২ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি পূজা মন্ডপ ও নাচঘর বা নাট মন্দির

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের জমিদার বাড়িগুলির মধ্যে খুবই সুপরিচিত এবং বেশ বড় একটি জমিদার বাড়ি। পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি সম্পর্কে একটি লেখা আমি পোস্ট করেছিলাম সামুতে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে কলকাতা থেকে রামকৃষ্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদিন সবকিছু হারিয়ে যাবে

লিখেছেন সামিয়া, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



একদিন সবকিছু ফিকে হয়ে যাবে,
সময়ের সাথে হারিয়ে যাবে স্মৃতি।
মনে থাকবে না ঠিক ঠাক কি রকম ছিল
আমাদের আলাদা পথচলা,
হোঁচট খাওয়া।
মনে থাকবে না
কাছে পাওয়ার আকুতি।
যাতনার যে ভার বয়ে বেড়িয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×