ভয় ভূত নিয়ে আমার টুকটাক অভিজ্ঞতা আমি বিভিন্ন সময়ে লিখেছি। আমরা সবাই বলি, আসলে ভূত বলতে কিছুই নেই; কিন্তু সুনসান মুহূর্তে অস্বাভাবিক কোন ঘটনা বা সামনে হাজির হওয়া আচমকা কোন ছায়া আমাদের শক্ত মনকে টলমল করে দেয় এটাও সত্য। কারণ, আমাদের মস্তিষ্কেই ভয়ের অনুভূতি সংরক্ষিত আছে।
শৈশবে আমার দাদী গল্পের ছলে বলেছিলেন, একজন রাতে প্রস্রাব করতে বসার পর হঠাৎ সামনে দেখে ইয়া বড় বড় চোখ আর গা ভর্তি লোমের একটা মানুষ সামনে দাঁড়িয়ে আছে!
সেই থেকে মাথার ভেতর রাতে প্রস্রাব করতে যাবার সময় ওই অবয়বটার কথা কল্পনায় আসে! বয়সের সঙ্গে যুক্তিবোধ তৈরি হলেও ওই কল্পনাটা কিন্তু উবে যায়নি।
ভয় সম্পর্কে আমি একবার বলেছিলাম যে, ভয়ের প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নিতে পারলেই ভয়টা কেটে যায়! তা সামনে পিস্তল ধরে হুমকি দেবার ভয়ই হোক, আর অশরীরীর ভয়ই হোক। ভূত দেখার ক্ষেত্রে যেটা হয়, মানুষ হ্যালুসিনেট করে এবং হয় সম্বিত হারায় নয়ত চোখের পলকে জিনিসটা মিলিয়ে যাবার পর কী দেখেছে তা-ই পরবর্তীতে অন্যদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করতে বা ভয় পাওয়ার কারণটাকে আরো জোরালো করে সবার কাছে উপস্থাপন করতে কাহিনীতে ডালপালা যুক্ত করে বর্ণনা দেয়! ভূত দেখার কাহিনী মূলত এটাই।
আসলেই ভূত বলতে কিছু হয় না, আমরাই ভয় পাবার পর সেটাকে ভূত বানাই। এখানে হ্যালুসিনেট করার ব্যাপারটায় কিছু ভাবার বিষয় আছে। হ্যালুসিনেট মানুষ যখন তখন করে না, এর সঙ্গে পরিবেশ, শারীরিক মানসিক অবস্থারও যোগ থাকে। কিন্তু এরচেয়ে বড় একটা ব্যাপার আছে, সেটা হল দেজা ভু। যদিও দেজা ভু বলতে বোঝায় এমন কিছু দেখা বা ঘটা যা দেখে মনে হবে ঠিক আগেও কোন এক কালে হুবহু একই ঘটনা ঘটেছিল! যেমন, আপনি কাউকে কিছু একটা বললেন, উত্তরে ওই ব্যক্তি এমন কিছু বলল, যা শুনে আপনি অবাক হয়ে ভাববেন, আরে, ঠিক একই কথা বা উত্তর একই ভঙ্গিতে যেন আগেও কেউ বলেছিল! কিংবা আপনি কোন একটা নতুন জায়গায় গিয়েছেন, যেখানে আগে কোনদিন যাননি, অথচ সেখানকার রাস্তাঘাট, গাছপালা বাড়িঘর দেখে আপনি চমকে উঠে ভাববেন, আরে, এ কীভাবে সম্ভব, একই স্থান যেন আমি আগেও দেখেছি, সবকিছুই যেন আমার চিরচেনা! এমনকি অনেকে তো ওই নতুন জায়গার কোথায় কী থাকার কথা তাও আবছা আবছা বলে দিতে পারে!
আর ভূত দেখার বেলায় যেটা হয় এই দেখলাম, আবার এই নেই! আমি শৈশবে এটা অনেক দেখেছি। বয়স হবার সঙ্গে সঙ্গে এই মনোরম কল্পনাশক্তিটা চলে গেছে। দেজা ভু নিয়ে আবার কোনদিন বলা যাবে, ভয়ের দুইটা অনুভূতি বলি-
হোটেলের নাম বলব না, রুম নম্বর ছয়শো দশ! আমি ওই হোটেলে বেশ কয়েকবার চেক ইন করেছি, কোন রুমেই অস্বস্তি লাগেনি, শুধু ছয়শো দশ নম্বর রুমে যেদিন বোর্ড করি, সেদিন সারারাত ঘুমাতে পারিনি! বাতি নিভিয়ে শোবার পরই মনে হয়েছে আমি ঘরে একা নই, আমার পাশেই কেউ শুয়ে আছে! বাতাস ভারী, যেন ঘরের ভেতর বাতাসটাও জমে আছে! বাতি জ্বাললাম, কিছু নেই, সব স্বাভাবিক। ঘুমোবো বলে আবার বাতি নিভালাম, খানিক বাদে সেই একই অনুভূতি! অবশেষে বুঝলাম, সলিউশন হল, বাতি নেভানো যাবে না! ব্যস, বাতি জ্বালিয়েই শুয়ে রইলাম। ঘুম আর হল না!
এটা নিয়ে কাউকে কিছু বলিনি, কয়েক মাস পরে আবার সেই হোটেলে ওঠার সময় একই রুম বেছে নিলাম। এবং সেবারও একই অনুভূতি! কী আর করা এক্সপেরিমেন্টের জন্য ঘুম নষ্ট করার তো মানে হয় না! পরে আর ঘাটতে যাইনি। দুই রাতই সই!
আরেকবার ভ্যবাচ্যাকা খেয়েছিলাম ভিন্নভাবে! প্রবলেম শেয়ার করতে এসে একজন জানিয়েছিল, তার সঙ্গে একজন মহিলা বাস করে, অশরীরী! সেই মহিলা তাকে আগাম অনেক কিছু বলে দেয়, এবং সেসব সত্যও হয়! আমি আদ্যোপান্ত সব শুনলাম, ঘটনা এত সহজও নয়, খানিকটা জটিলই বলা যায়! তাকে বললাম, ওই মহিলাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন, আমার কোন একটা সিক্রেট বলুক!
পরদিন আমার তিনটা সিক্রেট জানালো, একটু অবাক হতেই হল! বুঝলাম, যার সাথে কথা বলছি তার পারসেপশন ক্ষমতা উচ্চতর! এবং এই পারসেপশনই তার মাথার মধ্যে একটা দেবী টাইপ মহিলা সৃষ্টি করে রেখেছে, যে তাকে বিপদে আপদে পরামর্শ দেয়! এবং তার চারপাশের এসব জটিলতা তারই সৃষ্টি, যা থেকে তাকে মুক্ত করতে হলে ওই মাথার মধ্যকার মহিলাকে সরাতে হবে। ব্যাপারটা সরাসরি বললে হিতে বিপরীত হবে, আমি বরং উল্টো তাকে বোঝাতে শুরু করলাম, এই মহিলা ভালো, এর কথা শুনলে আপনি বিপদ থেকেই বাঁচবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার উদ্দেশ্য ছিল, এই আবছা চেতনাকে একটি অবয়ব দেওয়া এরপর প্রমাণ করা যে এটার কোন অস্তিত্বই নেই, আপনারই কল্পনা সবটা! এর পেছনের লজিকে যাব না, ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার ঘটনাটা বলে শেষ করি। এক রাতে মেসেঞ্জারে হঠাত তার রিপ্লাই পাল্টে গেল! ওপাশ থেকে লেখা আসতে লাগল, তুমি আমার সাথে টক্কর দিয়ে ভুল করতেছ! তুমি সামান্য মানুষ, তোমার এত ক্ষমতা নেই ওকে আমার কাছ থেকে আলাদা করার! তুমি ফিরে যাও ইত্যাদি ইত্যাদি!
আমি বিহ্বল হচ্ছিলাম যে, আমার একটি রিপ্লাইও সেন্ট হচ্ছিল না! আমি রিপ্লাই সেন্ড করছি, সেটা আর স্ক্রিনে উঠছে না! স্বল্প সময়ের জন্য ভড়কে গিয়েছিলাম, হচ্ছেটা কী!
প্রায় আধাঘণ্টা আমার মেসেঞ্জারের এই অবস্থা ছিল, অন্যদের মেসেজ দিলে যাচ্ছে, শুধু তার ওখানেই যাচ্ছে না, অথচ তার মেসেজ একের পর এক আসছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর ও প্রান্তের প্রশ্ন ছিল, ভয় পেয়েছিলেন?