somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবাহ বিচ্ছেদ?

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
আমার এক জুনিয়র একবার আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছিল, জীবনসঙ্গী কতটা সঠিক হবে সেটা নির্বাচন করব কীভাবে?

উত্তরে আমি আমার খ্যাতির পথে এগিয়ে যাওয়া উদীয়মান ভুঁড়িটি দুলিয়ে বলেছিলাম, বেস্ট অপশন হল, যাকে বিয়ে করতে মনস্থির করছ বা অপশন হিসেবে দেখছ তার সাথে বিয়ের আগেই একবার রাত কাটাও!

মেয়েটির ভ্রু কুচকে গেল! সম্ভবত বলতে চাইছিল, আপনার নিজের বোনের বেলায়ও কি এই পরামর্শ দিতেন?

আমি ওকে তার আগেই থামিয়ে দিলাম, বললাম, ওটা বেস্ট অপশন৷ ওটাই করতে হবে তা বলিনি! অতঃপর ওকে বুঝিয়ে বললাম, বিয়ের পরে ভুল পাত্র নিয়ে প্রতিটা রাত সাফার করার চেয়ে একটা রাত সাফার করে দেখাই বেটার! রাত কাটানো মানেই যে শারীরিক বিষয়, তাও না, একটা মানুষের প্রবণতা স্বভাব চরিত্র বদঅভ্যেস এগুলো একসাথে থাকলেই ভালো করে বোঝা যায়৷ বিয়ের আগ পর্যন্ত আমাদের কাছে যা ফ্যান্টাসি থাকে বিয়ের পর সেটার বাস্তবতা যখন টের পাই তখন তোমার কাছে এটা মনে হওয়াও অস্বাভাবিক হবে না যে, ব্যাচেলর লাইফে যে শালারা দাম্পত্য ক্রিয়া সম্পর্কে হাজার রকমের রঙিন প্রলোভন ফেঁদে আমাকেও বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল ওরা আসলেই ধোঁকা দিয়েছে! অর্থাৎ আমরা আমাদের কল্পনা আর বাস্তবের তফাতটা টের পাই বিয়ের পর, বিয়ের আগে টের পাবার তো উপায় থাকে না৷ একত্রে বসবাসই বলো আর আদর সোহাগের ব্যাপারই বল, এটার প্রকৃত অভিজ্ঞতা বিয়ের আগে অর্জন করা সম্ভব হয় না, সে একটা মানুষ যত বারই রুম ডেট করুক না কেন!
তো এই বিয়ের পরেই অনেকের ভুল ভাঙে- আরে! এমন তো চাইনি! এমন তো কথা ছিল না! ইত্যাদি ইত্যাদি! এবং তখন আর বিয়ে অস্বীকার করে চলেও আসা যায় না!

আমি বুঝতে পারছিলাম, বেচারির মাথা ঝিম ঝিম করছে এইরকম উদ্ভট পাগলাটে উপাত্ত শুনে! লাঞ্চ সেরে মেয়েটা চলে গেল, এবং তিন মাস পরে জানতে পারলাম যে, যাক, সাহস করে সে বিয়েটা করে ফেলেছে! বঙ্গদেশীয় সংস্কৃতমনা মেয়ে, আমার বাতলে দেওয়া উদ্ভট পথে নিশ্চিতভাবেই যাচাই করেনি, আর দশজন শুদ্ধ ভালোবাসার মানুষের মতই চোখ বুঝে বিশ্বাস করে বিয়ের পিঁড়িতে বসে গেছে এবং শুকরিয়া যে তাদের সংসার সুখের হয়েছে৷

মেয়েটি আমাকে সামনে কিছু না বললেও মনে মনে গাল দিয়েছিল কি না সেটার খচখচানি আমার৷ মনে অনেকদিন ধরে রয়ে গেছে৷

২.
তৈয়ব আলীর যেদিন ডিভোর্স হয় (আপনাদের হয়ত মনে আছে, তৈয়ব আলীর তিন বিয়ে), সেদিন এই সত্যটা আবার সামনে এল! তৈয়ব আলী পারলে ফ্লোরে মদ ভাসিয়ে সেখানে সাঁতার কাটতে আরম্ভ করেছেন! কিছুক্ষণ পর পর চিৎ হয়ে ভুঁড়ি দুলিয়ে হাসছেন, জোর করে হাসছেন কি না বুঝতে পারছি না৷ তাঁকে ফুল ফ্রিডম দিয়ে রাখা ছিল সেই দিন, শুধু একটাই শর্ত- বমি করে ফ্লোর নষ্ট করা যাবে না৷ যাইহোক, সেটি তার প্রথম বিবাহবিচ্ছেদ (অবশ্য পরে জেনেছিলাম, ওটা আসলে দ্বিতীয় বিচ্ছেদ, এর আগেও একটা চরম বিচ্ছেদ ঘটেছিল!), উনি তড়াক করে হঠাৎ উঠে বসলেন আসন করে, আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ভাইজান, মদ খাওয়ার পর মিথ্যা বললে গুনাহ হয়! এখন আমি আপনারে চরম কিছু সত্য কথা বলব!

আমার চোখ গোল হয়ে উঠল, এমনিই খাইতেছে মদ, সেইখানে আবার গুনাহ নিয়া পাড়াপাড়ি! মুখে অবশ্য কিছুই বললাম না, গোপন কোন সত্য বের হয়ে এলে ক্ষতি কী? উৎসাহ দিলাম, আলবাত, কবি রুমি বলেছেন, মানুষ সবচেয়ে বেশি মিথ্যে বলে আদালতে কোরআন হাতে, আর সবচেয়ে বেশি সত্য বলে, শুঁড়িখানায় মদের পাত্র হাতে! অতএব, মির্জা গালিবের কসম, এখন এক ফোঁটা মিথ্যাও বলা যাবে না!

তৈয়ব আলী, চোখ ডলে দৃষ্টি পরিষ্কার করার চেষ্টা করে আমার দিকে তাকালেন মনে হল, বললেন, ভাইজানরে তো অলরেডি ধরে ফেলছে মনে হইতাছে!

বললাম, ধুর, নট সো আরলি! দিস ইজ জাস্ট দ্য বিগিনিং মাই ডিয়র ফ্রেন্ড!

উত্তর এল, হ, বিগিনিংএই মির্জা গালিব আর জালালউদ্দিন রুমির মাঝখানে কনফিউশান লাগাইয়া দিলেন যে আসলে উক্তিডা কৈছিল কেডা!

বললাম যে, মদখানা নিয়া বেশিরবাগ উক্তি গালিবই করেছেন, তবু কেন জানি মনে হচ্ছে রুমির ডায়লগ! বাদ দেন, ডায়লগ যারই হোক, কথা তো সত্য, তাই না?

একশো বার সত্য! হাজার বার সত্য! কিন্তু ফুটপাতের সেই মাতালের গল্পডার কথা আলাদা!

ওই যে, পথচারীদের গর্তে ফেলে যে মাতাল, ওইটা?

হাঁ ভাই!

ধুর, ফুটপাতের মাতালের কি আর এত শিক্ষা দীক্ষা আছে? ওদের কাছে রুমির সওয়াল তুলে কোন লাভ আছে?

আপনে একটু আগেও গালিব কইয়া এখন আবার রুমি কইতাছেন! আচ্ছা যাউকগা, আমার সত্য উপলব্ধিডা শোনেন!

গভীর মনোযোগের ভঙিমায় চোখ বুজে বললাম, হু!

তৈয়ব আলী বললেন, আসলে চিন্তা কইরা দেখলাম, সব মানুষেরই না জীবনে দুইবার বিয়া করা দরকার! জীবন তো একটাই, এক রকমের জীবন যাপন কইরা পার কইরা দেওনের চাইতে জীবনের স্বাদ বদল করার সুযোগ থাকা উচিত!

আমার বন্ধ চোখ বলতে গেলে পটাশ করে খুলে গেল, এই লোক তো সক্রেটিসের গলা ধরার লেভেলে চলে যাচ্ছে ভাই রে ভাই!
বললাম, আরো ক্লিয়ার করেন, ষাড়সংক্ষেপ বইলেন না!

ভাইজান, আপনে সারসংক্ষেপ না লেইখা ষাড়সংক্ষেপ লেখছেন, আপনেরে নেশায় ধরছে!

উঁহু, জটিল আলোচনা, ডোন্ট জাম্প টু এ্যানাদার ইস্যু!

হ, বুঝাইয়া কইতেছি, শোনেন, ধরেন আপনে বিয়া করলেন, বিয়া করার পর আপনার মনে হইতে লাগল, এই বৌ ভালো হয় নাই, জীবনসঙ্গী এরকম হউক চাই নাই, অন্য রকম চাইছিলাম, বা মনে মনে আফসোস করতে পারেন যে, এরচেয়েও ভালো একটা মানুষ জীবনে পাইতে পারতাম৷ আমি কিন্তু ভালো শরীর বা ভালো চেহারা বলি নাই, ভালো একটা মানুষ বলছি৷ কিংবা একইভাবে ধরেন আপনার ভাবী, মানে আপনার মিসেস আর কি! উনিও তো মনে করতে পারেন যে এরচাইতে ভালো ঘরে বিয়া হইতে পারত, এরচাইতে ভালো শ্বশুর শ্বাশুড়ি দেবর ননদ হইতে পারত! আহা রে, কী ভুল জাগায়ই না বিয়াটা হইল! এখন জীবনটারে ব্যাক গিয়ারে দিয়া আবার পিছন থেইকা শুরু করার তো উপায় নাই, আছে?

আমি আরেক পেগ গিললাম, মানুষ প্রেমে পড়লে কবি হয়, বিয়া করলে গরু হয়, আর ছ্যাকা খাইলে দার্শনিক হয় এতটুকু জানতাম, কিন্তু ডিভোর্স খাইলে যে এই লেভেলের পিনিকে পৌঁছায় আগে জানা ছিল না! বাট হি ইজ গোয়িং রাইট আই থিংক, নেশার কারণে এটাকে রাইট মনে হচ্ছে কি না সেটা পরদিন সকালে বোঝা যাবে৷ তৈয়ব আলীর সাথে তাল মেলালাম, নাহ, রিওয়াইন্ড করার সুযোগ নেই!

তৈয়ব আলী রেশ ধরলেন, তাইলে এখন আর কিছুই পাল্টানোর সুযোগ নাই৷ অতএব জীবনডা কাটাইতে থাকবেন একটা গোপন আফসোস নিয়া!

এবার একটু খোঁচা দিয়ে বলে উঠলাম, বুঝলাম, এখন আফসোস নিয়ে জীবন পার করার চেয়ে এইরকম ডিভোর্সের ছাড়কাট সিদ্ধান্তে চলে আসাই সঠিক সিদ্ধান্ত বলছেন?

একশো বার!

কী বলেন, আরো একশো বিয়ে করে টেস্ট বদল করতে চান!! এক নায়িকাকে দেখলাম দুই বছর এক বছর পর পর হাজবেন্ড পাল্টেছে, আপনি তেমন হরেক প্রকার জীবনের স্বাদ পেতে চান এভাবে?

খোঁচা দিচ্ছেন?

না, তবে একটা জিনিস মাথায় ঘুরছে! ধরুন, আপনি এই যে আজ ডিভোর্স দিলেন, এখন এরপর যখন বিয়ে করবেন, অন্য কারো সাথে সংসার করতে গিয়ে যদি উপলব্ধি করেন যে এরচেয়ে আগের স্ত্রীই অনেক ভালো ছিল! কিংবা প্রথম সংসারে যেসকল ভুল আপনার তরফ থেকে ছিল সেটা পরেরবার উপলব্ধি করলেন, এবং শোধরানোর সুযোগ পেলেন, কিন্তু মানুষটা মাঝখান থেকে হারিয়ে গেল, তখন?

তৈয়ব আলী খুব সন্দেহের চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকালেন এবার! ভাইজান, আপনে কোন গেম খেলতেছেন কি না বুঝতেছি না, কিন্তু আমার এখন কেন জানি মনে হইতেছে আপনার ভাবীরে ফিরায়ে আনা দরকার, আরেকবার আমার তারে নিয়া চেষ্টা করা দরকার!

কী বলেন? ডিভোর্স না দিয়ে আসলেন আজ! এখন এই যে মুক্তির আনন্দ করে পার্টি দিচ্ছেন, এটা পণ্ড করতে চান?

এখন আর আনন্দ লাগতেছে না ভাই, আপনার ভাবীরে মিস করতেছি! আমার সাথে একটু যাবেন, চলেন? এত রাতে এই অবস্থায় একা যাইতে পারব না৷ যাবেন?

কী আর করা, চলেন...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:৩৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×