আমি রাতের জন্য তিল তিল করে অপেক্ষা করি,
ঘড়ির কাঁটার টিকটিকের সাথে
আমার অপেক্ষা দমে দমে হাহাকার করে!
সারাটা দিন ছটফট করি, সে বোঝে না৷
সে শুধু ছুটে বেড়ায়- আপিসে, দপ্তরে,
সারা ঘরময়।
প্রজাপতির মত উড়ে উড়ে বেড়ায়,
কখনও কিচেনে, কখনও টেবিলে,
বইয়ের পাতায়,
কখনও ড্রেসিংটেবিলটার সামনে বসে গুনগুন করে,
পিঠের ওপর বিলিয়ে দিয়ে দীঘল চিকুরজাল!
লোলুপ আয়নাটা প্রথমে আমায় ভ্রুকুটি করে,
তারপর আয়েশ করে সময় নিয়ে
গিলতে থাকে তার সৌন্দর্য!
আমার প্রতীক্ষা দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর হয়,
সে বোঝে না৷
ছুটির দিনে তো অন্তত আমায় একটু বেশি সময় দিতে পারে!
তাও না!
সে ছুটির দিনে আরো ব্যস্ততায়
রঙ তুলি নিয়ে বসে।
তার কপোলে রঙ মেখে যায়,
তুলিটা অসভ্যের মত জিভ লেলিয়ে যায় সুযোগ পেলে!
আমি অসহায়ের মত দেখতে থাকি!
এত খাটুনি তার! আমার কষ্ট হয়!
ওই নরম শরীরে আর কতটা সয়!
কী হয় দুপুরে একটু ঘুমালে?
অন্তত ঘরে থাকা অবস্থায়
দুয়েকবার গা তো এলাতেই পারে,
একটু বসলেই পারে আমার কোল ঘেঁষে!
নাহ! তা সে করে না!
বই পড়তে বসে রকিং চেয়ারে!
চেয়ারটাও শালা, সারা পিঠে লোভাতুর স্পর্শ বুলিয়ে চলে!
হাতল দুটোকেও বলিহারি!
লম্পটের মত জীবন্ত হয়ে ওঠে যেন!
ওরা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে!
আমার গা জ্বলে যায়!
আমি সারাদিন ছটফট করি৷
আমার অপেক্ষা খাপরাহস্ত হয়!
কখন রাত আসবে,
কখন তার চোখের পাতায় আদিম নেশা ভর করবে,
কখন তার বুকের চুঁটিতে মুখ লুকিয়ে
নিঃশ্বাস ভরে শুষে নেবার সুযোগ পাব
খোমারি পারফিউম!
কখন তার গলা বেয়ে ঘাম
টুপ করে গড়িয়ে পড়বে আমার নাকের ডগায়!
কখন তার বুকের ধুকপুকানিতে তাল মিলিয়ে
কেঁপে কেঁপে গলে যাবার রাতটুকু আসবে?
তার শরীরে লম্বা হয়ে জড়িয়ে
পেচিয়ে নিঃশ্বেষ হয়ে যাওয়াই যে আমার জীবনের সার্থকতা!
হায় চিদ্রূপের বিদ্রূপ,
আমি এক হাতহীন,
পা- হীন,
ঠোঁটহীন,
জিভহীন,
প্রেমার্ত কোলবালিশ!
টীকা:
কোলবালিশ লইয়া প্রায় একই বা কাছাকাছি থিমের একটি গল্প লিখিয়াছিলেন বনফুল৷ গল্পের নাম "অক্ষমের আত্মকথা"৷ ঠিক কোলবালিশ নয়, উহা ছিল বালিশ লইয়া লেখা গল্প৷ আমার এই অপদস্ত কবিতার সঙ্গে ওই গল্পের কোন যোগ নাই, তথাপি ইহারা কাছাকাছি প্লটের৷
একজনকে পটাইতে গিয়া বলিলাম, ডেবী, টোমার কোলবালিশকে আমার হিংসে হয়!
চটুল শ্রীমতীখানা এই সামান্যতে পটিলেন না৷ উল্টো আমায় চ্যালেঞ্জ ছুড়িয়া বলিলেন, ঝটপট একটা কবিতা লিখে দিন তো কোলবালিশ নিয়ে!
এই কবিতা লিখিবার সময় আমার চিন্তার কোথাও বনফুল ছিলেন না, না তাঁহার বালিশ লইয়া গল্প, আমার মাথায় শুধুই ঘুরিতেছিল ক্রাশের কোলবালিশটি আমি হইলে আমার মনে কী কী চেত্তা উদিত হইত৷
ইহা কেবলই বিনোদন৷ পাঠক নিম্নের মন্তব্য বাকশে যথেচ্ছা নিন্দে নিকুচি করিতে পারিবেন, আমি নাসাগামী ওমরসানীর ন্যায় ওইসব "না দেখার ভান করে থাকব"!
ধন্যবাদ৷