somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘর

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পনার ক্লাসমেট আর আপনি একই অবস্থানে নেই কেন? ক্লাসে একটি ট্রিকি কোশ্চেন করা হলে আপনার ক্লাসমেট তড়িৎগতিতে উত্তর ধরে ফেলছে, কিন্তু আপনি সেভাবে পারছেন না, কেন?

আপনার কলিগ ৩৭টা প্রোডাক্টের দাম ইনস্ট্যান্ট মনে মনে গুণ করে বলে ফেলছে, আপনি ইনস্ট্যান্ট পারছেন না, কারণ কী?

দুটোরই কারণ আপনার মানসিক পরিস্থিতি। এই মানসিক পরিস্থিতির অনেকটাই আসে আমাদের পরিবার থেকে। পারিবারিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করেই আপনার মানসিক গড়ন তৈরি হয়। আপনি অল্পতেই রিয়্যাক্ট করবেন, না কৌশলে উত্তর দেবেন তা আপনি পেয়েছেন আপনার পরিবারের আচার থেকে। এরপর যেটা পারেন, তা হল আত্মনিয়ন্ত্রণ! এ প্রসঙ্গে বলব আরেকদিন। আজ পারিবারিক পরিবেশ নিয়েই বলব শুধু। একটি পরিবারের কালচার কেমন তা দ্রুতই বোঝা যায় পরিবারের সদস্যদের একে অপরের প্রতি উত্তরের টোন দেখে। আপনার শৈশব গেল, সেখানে আপনি যা পেয়ে এসেছেন, তার সবটার ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ নেই, আপনি এখন প্রাপ্তবয়স্ক, আপনার এখন যে ঘর তার ওপর কি আপনার সবটুকু নিয়ন্ত্রণ আছে? তাও নেই।

একসময় বলা হত, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে, বলা হত, প্রতিটি সফল পুরুষের পেছনে একজন নারীর অবদান রয়েছে। এখন অবশ্য বলতে হয় প্রতিটি সফল মানুষের পেছনেই তার পার্টনারের অবদান রয়েছে। শুধু নারীর অবদান বললে আবার তা কেবল পুরুষতান্ত্রিকতার কথা বোঝায়। অতএব, পার্টনারের কথাই বলি। আপনার অফিসে প্রেজেন্টেশন, আপনি ঘর থেকে বের হবার সময় পর্যন্ত যদি ঝগড়া করতে করতে বের হন, তাহলে অফিসে গিয়ে যে আপনি কী প্রেজেন্টেশন দেবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না! অর্থাৎ আপনার প্রাতিষ্ঠানিক বা ক্যারিয়ারের সাফল্যের অত্যন্ত বড় একটা নিয়ামক হল আপনার পারিবারিক সাপোর্ট। এখানে যদি আপনি দুস্থ হন, তাহলে আপনি ক্যারিয়ারে বেশি দূর আগাতে পারবেন না। যত মানুষ দেখবেন আপনারই যোগ্যতার অথচ আপনার চেয়ে উন্নতি করে যাচ্ছে তাদের সবার উন্নতির পেছনে কারণ তাদের পারিবারিক সাপোর্ট। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। আপনি আপনার পার্টনারকে উন্নতি করতে কতটা সাপোর্ট দিচ্ছেন, ভেবে দেখবেন।

ঘর অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়! মানুষ ঘরে ফেরে শান্তির আশায়, আরামের জন্য, বিশ্রামের জন্য। সেই আরাম বিশ্রাম যদি নরকে পরিণত হয়, তাহলে ওই মানুষটা আর উন্নতি করতে পারে না। মানুষ অফিসে ক্লান্ত হয় না, কাজে ক্লান্ত হয় না সবচেয়ে বড় ক্লান্ত'টা হয় মানুষ তার নিজের ঘরে!

চট্টগ্রাম ২ নং গেইট এলাকার পার্কটিতে আমি অনেক মানুষ দেখতে পাই যাদের অফিস ছুটি হয়েছে পাঁচটায়, তারা রাত দশটা পর্যন্ত ওখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে, কাঁধে অফিসের ভারী ব্যাগ নিয়ে! ঘরে ফেরার চেয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাইরে চার পাঁচ ঘণ্টা কষ্ট করে দাঁড়িয়ে থাকাকে মানুষ কোন দুরবস্থায় গেলে যে বেটার মনে করে তা বলাই বাহুল্য!

মানুষ ঘর বাঁধে সংসার করে বছরের পর বছর সহাবস্থান করে কীসের ভিত্তিতে?
স্বামী স্ত্রী দিয়েই তো সংসারের ভিত্তি, এই স্বামী স্ত্রীর সহাবস্থানেরই বা মূলে কী? প্রেম? যৌনতা? মায়া?
হ্যাঁ, এসব জরুরি। এসবের চেয়েও জরুরি বিষয় হল কথা বলার শান্তি! যেটা আসে আন্ডারস্ট্যান্ডিং থেকে! আমরা যখন যা বলি তার কজ এ্যান্ড ইফেক্ট সম্পর্কে আমরা যদি সচেতন হয়ে কথা বলি তাহলে আর অশান্তি থাকে না। আমাদের পরিচয় তৈরি হয় কথার পিঠে কথা দিয়ে, পরিচয় নষ্টও হয় কথার পিঠে কথার কারণেই! একটি ভালো কথার উত্তরে আরেকটি ভালো কথা আসে, একটি বাঁকা কথার উত্তরে একটা ভালো কথাও তার আন্তরিকতা হারিয়ে ফেলে বাকিটা বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। এর খুব সহজ একটন উদাহরণ হল, আপনি যদি একই ছাদের নিচে বসে অনেক মনোমালিন্য অশান্তির পর আপনার পার্টনারকে প্রশ্ন করেন, এখনও ভালোবাসো আমায়?
একটু সময় নিয়ে হলেও নিজেকে প্রবোধ দিয়ে হলেও উত্তরটা আসবে, বাসি।
আবার একই অবস্থায় আপনার প্রশ্নটা যদি এমন হত, আর কি আমাকে ভালোবাসো না?
তাহলে উত্তর আসবে কি তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না।
অর্থাৎ আপনিই নির্ধারণ করে দিচ্ছেন আপনার কথার স্রোত এরপর কোনদিকে নেবেন!

একসাথে থাকার, একসাথে বাঁচার সবচেয়ে বড় আনন্দ হল এই কথা বলার আনন্দ, ভালো খাওয়া, ভালো ঘোরা, ভালো রোমান্স, কোন কিছুই এতটা জরুরি না যতটা আপনি উঠতে বসতে কথা বলার বেলায় বোধ করবেন। যেখানে কথা বলেই সুখ নাই, সেখানে রুহের শান্তি হয় না। তখনই মানুষ সুখ খুঁজতে এদিক ওদিক তাকায়। এটাই যে পরকীয়ার একমাত্র কারণ তা বলছি না, তবে এটা অনেক বড় একটা কারণ তাতে সন্দেহ নেই। আপনি আপনার মানুষকে অইটুকু কম্ফোর্ট দিতে না পারলে সে ব্যর্থতা আপনারও আছে! আর বিষয়টা কেবল এখানেই শেষ হয় না, একটা মানুষ ঘর থেকে ভেঙে গেলেই প্রকৃত অর্থে ভেঙে যায়। এরপর তার আর উন্নতি হয় না। সক্রেটিসের নিজেরও উন্নতি হয় নাই। যাহোক আপনার পার্টনার ভালো থাকলে আপনার সংসারেরই উন্নতি হবে, এটুকু বুঝে আপনার পার্টনারের প্রতি সাপোর্টিভ হোন, ইন্সপায়ানিং হোন, উঠতে বসতে ঘ্যানঘ্যান করে শুধু পরিবেশটাই নরক হয়, তর্কে দূরত্ব বাড়ে, আর কিছু লাভ হয় না।

ছুটির পর পার্কে দাঁড়িয়ে থাকা সকল নারী পুরুষ আশা নিয়ে ঘরে ফিরে যাক, এই কামনাই রইল।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×