somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অফিসের গাড়ী

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক -পরিযায়ী পাখী
নীলার আজ মন ভালো নেই । তাঁর বসের বদলীর অর্ডার এসেছে । নতুন যিনি আসছেন , তাঁর ব্যাপারে ভালোমন্দ অনেক কথাই শোনা যাচ্ছে । ভয়ানক বদমেজাজি নাকি তিনি ! কি যে হবে ! তাঁর সাথে চাকরি করতে পারবে তো সে । না পারলে তার পরিণতি নিশ্চয়ই শুভ নয় । হয়তো বদলী নিয়ে চলে যেতে ঢাকার বাহিরের কোন কলেজে !
আগের বস ইব্রাহীম কায়সার এর মত মানুষ হয় না । যেমন চেহারা তেমন ব্যবহার আর তেমনি কাজে কর্মে দক্ষ ছিলেন তিনি । এমন বসের সাথে চাকরী করতে পারাটা বড় ভাগ্যের ব্যাপার ! নীলাকে ভয়ানক স্নেহ করতেন তিনি । যদিও এ নিয়ে অফিসের অনেকেই চোখ টাটাতো , তবে তা গায়ে মাখতো না নীলা ! এখন নতুন বস এলে নির্ঘাত পরিবেশটা বদলিয়ে যাবে । যারা আগে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়াতে পারেনি , তারা নীলার নামে নির্ঘাত এটা ওটা বলে বসের কান ভারী করবে । এমনই হয় । অফিসের বস পালটালে অনেক কিছুই দ্রুত পালটিয়ে যায় !
ভাল লাগছে না নীলার । নানা দুশ্চিন্তায় মাথাটা ঝিম ঝিম কোরছে । বদলী যদি হোতেই হয় তাহলে সব চেয়ে কাছের পোস্টিং টঙ্গি বা গাজীপুর । অন্যদিকে নারায়নগঞ্জ ! যেখানেই হোক , বাড়ী ছেড়ে বেড়োতে হবে সেই সকাল সাতটায় আর ঢাকায় ফিরতে হবে সন্ধ্যে পেরিয়ে । আর সেই সাথে পথের ধাক্কা তো আছেই । এ তো আর ঢাকার অফিস নয় , নিয়ম করে অফিসের গাড়ি বেলাবেলি নিয়ে আসবে বাড়ি থেকে আর পৌঁছে দেবে টাইম ধরে !
হেড অফিসে একটু গেলে কি হয় । আলতামাস স্যারের সাথে একটু শলাপরামর্শও তো করা যেতে পারে নতুন বসের ব্যাপারে । আর সেই সাথে নতুন পোস্টিং এরও । যদিও নীলা বেশী বেশী ভাবছে , আগাম মন্দটাই ভাবছে বদলী –টদলী নিয়ে , তারপরের মন্দটা তো আগে ভাগে ভাবতেই হবে । ভালো হলে ভালো । কিন্তু উল্টোটা হলে তখন ? সরকারি চাকরি তবুও ঢাকায় থাকা নিয়ে অহেতুক ভোগান্তি আর ভালো না নীলার !
আলতামাস নীলাকে বেশ পছন্দ করে । একই জেলার মানুষ তাই খাতিরটা একটু বেশী রকমের ! এ ছাড়াও আলতামাসের কাজের খুব খ্যাতি আছে । তাঁকে ছাড়া অধিদপ্তরের ডিপিপি লেখা হয় না । তাই সারাদিন তাকে লেখালেখি নিয়ে কম্পিউটারে মুখ গুঁজে পরে থাকতে হয় । আগাম সময় না দিয়ে তাঁর দেখা মেলা ভার ।
বস মন্ত্রণালয়ে গেছেন । বোধহয় সবার কাছে থেকে বিদায় আদায় নিতে । এই সুযোগে অফিস অনেকটাই ফাঁকা । যারা আছে , তারা একে অন্যের টেবিলের মুখোমুখি বসে গালগল্প জুড়ে দিয়েছে । আবার কেঊবা এক গালে হাত দিয়ে অন্য হাতে টেলিফোনের ডায়াল ঘোরাচ্ছে ! অডারলি বা পিওনদের টিকিটি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না । একমাত্র বসের দরজা আগলে বসে থাকা বৃ্দ্ধ আমিন উদ্দীন আলগা ঘুমের ভারে ঝিমুচ্ছে !
এখন আলতামাস স্যারের কাছে যাওয়া যেতেই পারে । এমন ভাঙ্গাচূড়া পরিবেশে কাজ করতেও তো ইচ্ছে কোরছে না আর ! যেতে হবে । তারপরের কাউকে বলে তো যেতেই হবে । বস যদি আবার সকাল সকাল ফিরে আসেন । এসে নীলাকে টেবিলে না পেয়ে যদি অন্য কিছু ভেবে বসেন । বলা তো যায় না । ভাবতেই পারেন । মানুষের মন নাকি পলকা কাঁটা ফুলের মত । ক্ষণিক বাতাসে তা আন্দোলিত হয় ! কাজে মিছেমিছি ফাঁকি নিয়ে এই শেষ সময়ে তাঁর ব্যাপারে বসের ভাবনা বদল হোক তা কোনমতেই চায় না নীলা !
পিএ ভদ্রলোককে আজ মহাব্যস্ত বলে মনে হোচ্ছে । তাঁর সামনে ফাইলের স্তূপ । একের পর এক ওগুলো উলটিয়ে পাল্টিয়ে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে চলেছেন তিনি ! এমনটাই নাকি হয় । অফিসের বসেরা যাওয়ার আগে অনেক পুরনো আবদার মিটিয়ে দিয়ে থাকেন ! নীলার বস ইব্রাহীম কায়সার সেই ফাঁদে পা দেবেন কিনা তা এখন পর্যন্ত জানে না সে । পা দিতেও পারেন । ফাইল হাতে নিয়ে কান্নাকাটি দেখলে মানুষের মন গলতে আর কতক্ষণ !
পিএ সাহেব , আমি একটু পাশের হেড অফিসে যাচ্ছি । স্যার বা কেঊ খোঁজ করলে বলবেন –নীলা পিএর ঘরে ঢুকে তার সামনা- সামনি দাঁড়িয়ে কোথাগুলো বললো !
পিএ সাহেবের বোধকরি তা কানে গেল না । ভয়ানক ব্যস্ত তিনি ! তার দুহাতে রাশি রাশি ফাইল গুচ্ছ । অন্তহীন আবদার , দেনা পাওনা ইত্যাদি ! আজ নীলার মতো পুঁচকে অফিসারের কথা শোনার মতো সময়ও যেন তাঁর নেই ! কদিন আগেও ব্যাপারটা ছিল একেবারে উল্টোটা !
তা যাগ গে । নীলাকে সময় নষ্ট করলে চলবে না । হাতের ঘড়ির দিকে তির্যক চোখ বুলালো সে । প্রায় সাড়ে এগারোটা । এরপর গেলে হয়তো বা আলতামাস স্যারকেও টেবিলে পাওয়া যাবে না । স্যারের কাজের তো শেষ নেই । এই মন্রণালয় , নাতো প্লানিং কমিশন বা ইআরডি এসব সব লেগেই আছে !
ছোট্ট কোরে একটু কাশল নীলা । এ ধরণের কাশিকে বলে এলাট কল ! কিন্তু না পিএ সাহেবের ধ্যান ভঙ্গ হলো না। আবার এরি মধ্যে এলো তাঁর টেলিফোন কল ! হাসি হাসি মুখে আয়েশ করে লম্বা কাঠের চেয়ারে মাথা লাগিয়ে হাত পা নাড়িয়ে কথা বলা শুরু করলেন তিনি !
নীলা বুঝতে পারলো এরপর আর অপেক্ষা চলে না । আর কিসেরই বা অপেক্ষা । এইসব পিছলে লোকেরা শক্তের ভক্ত । নীলার শক্ত হওয়াই দরকার ।
গ্যাট গ্যাট করে কোনদিকে না তাকিয়ে সে সোজা হেড অফিসের দিকে হাঁটা দিল ! আলতামাস স্যারকে আজই বলতে হবে , এ অফিসে চলতি কানাঘুষার কথা । নতুন বস নাকি এসেই অনেককে বদলী করবেন বিশেষতঃ যাদের তিন বছরের বেশী থাকা হয়েছে। নীলাও সেই দলে পরে । এরপরও তার মতো অনেকে হয়ত টিকে যাবে , কিন্তু তাঁর নির্ঘাত বদলী । আগের বসের সাথে ভাল সম্পর্কের কারণে এখন এ অফিসের অনেকেই যে তাঁর শত্রু তা আগে না বুঝা গেলেও এখন স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ।
চলতে চলতে নীলার খুব কান্না পেল ! রাশেদের কদিন আগে ঢাকার বাহিরের একটা ব্যাংকে পোস্টিং হয়েছে । বড় বাবুটাকে সবে একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে । ছোটটার বয়স বছর হতে চলল । এদেরকে দুটো পুঁচকে কাজের মেয়ের ঊপর ছেঁড়ে দিয়ে চাকরি করতে হয় ! বাসায় থেকে মা বা শাশুড়ী মাঝে মাঝে আসেন বটে কিন্তু তাদেরও তো বেশ ভরা সংসার ! এসব দেখেশুনে এক একবার চাকরী ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে নীলার । কিন্তু মন তাতে পুরোপুরি সায় দেয় না !
হেড অফিসের লিফট সময় মতো পাওয়া মানে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া ! পাওয়া গেল ঠিকমত এই যা রক্ষে !
লিফটে দেখা হোল নীলার তানজিলার সাথে । নীলার চেয়ে সে কমবয়সী । নতুন এসেছে অফিসে ! খুব আলাপী । হেসে হেসে আগ বাড়িয়ে কথা বলে সবার সাথে ।
নীলাকে দেখেই একটু দূর থেকে চেঁচিয়ে বললো ; আপু , আপু কংরাচুলেশন ।
ব্যাপারটা কি ? পাগল নাকি মেয়েটা । কি হোল এত কংরাচুলেট করার । নীলা বেশ একটু অস্বস্তিতেই পড়লো । লিফটের সবাই তাদের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে । ভাগ্যিস সবাই অচেনা !
তানজিলা নাছোড়বান্দা । এক্ষণই বলতেই যেন হবে তাকে সব । না বললেই নয় । নীলা বারে বারে ইঙ্গিত দিল ছ’ তলায় যেয়ে বলার জন্য ।
না , সে এখনি বলবেই । নাছোড়বান্দা !
আচ্ছা , বল কি ব্যাপার । দু চারজন নামাতে নীলা এক্ষণে তানজিলার গায়ে গায়ে এসে দাঁড়াতে পেরেছে !
আপু আপনি সত্যি জানেন না , আপনার বদলীর অর্ডার এসেছে আমাদের ছ’ তলায় প্লানিং উইং এ ।
না তো জানি না, কিছুই জানি না। আকাশ থেকে পড়লো যেন নীলা । সুগভীর আনন্দে সে কাঁদবে না কি হাসবে তা ভেবে পেল না সেক্ষণে । কেবল তানজিলাকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললো – পরিযায়ী পাখীর জীবনের হাত থেকে তো মুক্তি মিললো!
কিন্তু কে তাঁকে মুক্তি দিল ? ইব্রাহীম কায়সার স্যার নাকি আলতামাস স্যার ! তাঁরা দুজনাই তো জানতো নীলার শতেক সমস্যার কথা !


সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:১৫
১০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×