somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অফিসের গাড়ী (ধারাবাহিক)

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নয় – স্বজন

রাশেদকে বার কয়েক ফোন করলো নীলা । ধরছে না রাশেদ টেলিফোন । ঠিক সময় মতো কেউ ফোন না ধরলে মনে মনে খুবই বিরক্ত হয় নীলা আর চেহারাতেও তার প্রকাশ ফুটে ওঠে । নীলার বেডরুমের মাঝারী ড্রেসিং টেবিলের লুকিং গ্লাসটা এর নিয়ত সাক্ষী !

ঢাকায় এসে সংসার পাতার পরপরই সাংসারিক কাজে তাঁকে সাহায্যের জন্য দু দুটো মেয়ে নিয়ে এসেছিল সে দেশে থেকে । নীলার শ্বাশুরি মানে রাশেদের মাই তাদেরকে যোগাড় করে দিয়েছিলেন । নাতিপুতি দুজনকে ভালোভাবে দেখাশোনার জন্য আর সেই সাথে টুকিটাকি অনেক সাংসারিক কাজ তো আছেই । ওরাই নীলার সংসারটা সুন্দরভাবে ধরে রাখার অনেকখানি ভরসা । তা না হলে কি আর সংসার আর দু দুটো বাচ্চাকাচ্চা সামলিয়ে সে কি এতো মনযোগ দিয়ে অফিস কাচারি করতে পারতো !

এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে নীলার হাসিখুশী আর আনন্দ মাখা ছোট্ট সংসার ! তাঁর সংসারটা সুন্দরভাবে চলার আর একটা কারণ আছে । আর তা হলো রাশেদের পূর্ণ সহযোগিতা । শুধু রাশেদ কেন , সত্যি কোরে বলতে গেলে রাশেদের পুরো পরিবারের , বিশেষত রাশেদের মা মানে নীলার শ্বাশুরির পূর্ণ সহযোগিতা না পেলে এই খোদ রাজধানীতে বসে একজন চাকুরীজীবি মেয়ে হোয়ে নিজের সংসারটা এতো ভালোভাবে চালাতে পারতো কি না সে তাতে বেশ সন্দেহই আছে নীলার !

ছেলেটাকে সবে একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে । ছোট মেয়েটির বয়স এক ছুঁইছুঁই । এরই মধ্যে নীলার মাথায় যেন বাজ ভেঙ্গে পড়লো । রাশেদের বাহিরে বদলীটা তাও সে কোনভাবে মেনে নিয়েছিল । কিন্তু এখনকার ব্যাপারটা বড়ই ভয়ংকর । বিশেষতঃ তা সামলে নেয়া নীলার পক্ষে ।

নীলার কাজের বড় মেয়েটির বিয়ে । ওর বাবা মা মেয়েকে নিতে এসেছে দেশের বাড়ী থেকে । ওদের হিসেব মতে অনুফার বিয়ের বয়স হয়ে গ্যাছে , আর একটা ভালো ছেলেও পাওয়া গ্যাছে , তাই মেয়েকে দিতেই হবে !

অনুফার কি এমন বিয়ের বয়স হয়েছে ? নীলা অনেকটা স্বার্থপরের মতোই অনুফার বাবামার সাথে কথা কাটাকাটি করলো । এই পনের বয়সী মেয়ের বিয়ে দিলে ওর শরীরের শেষে কি হাল হবে ভেবে দেখেছ? আটারো বছর না হোলে তো মেয়েদের বিয়ে দেবার নিয়ম নাই এ দেশে । দেখো , পুলিশ টের পেলে তোমাদের ধরবে । বিয়ে ভেঙ্গে যাবে !

কিন্তু কে শোনে কার কথা ! অনুফার বাবামা তাঁদের মেয়ের বিয়ে দেবেই দেবে ! তাদের কথারও যুক্তি আছে । গ্রামে বেশী বড় মেয়ে কেউ নাকি বিয়ে করতে চায় না ।

চোখ মুছতে মুছতে নীলা অনুফার দেনা পাওনা সব বেশী বেশী করেই মিটিয়ে দিলো । সেই সাথে বাড়তি নুতুন পুরাতন অনেক পোশাক আশাক , চুড়িমালা দুল ইত্যাদি ! অনুফার বাবামা খুব খুশী । অনুফা কিন্তু যাবার সময় হতেই বাবুদের জড়িয়ে ধরে বেজায় কান্নাকাটি শুরু করলো । এসব দেখেশুনে তাঁর বাবামা বলে উঠলো , না হয় মেয়েকে আর এক বছরের জন্য এখানে রেখে যাই !

নীলা নিজের মনটাকে বেশ শক্ত করে নিয়ে মৃদু হেসে বললো ; থাক , নিয়ে যাওয়ার জন্য যখন মনস্থির করছো , নিয়ে যাও । অনুফার নিজেরও তো একটা মন আছে । নিজের বিয়ের কথায় ও নিজেও হয়তো মনে মনে অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলেছে । কিন্তু , মেয়ের এতো কম বয়সে বিয়ে ঠিক কোরে তোমরা ভালো করলে না !

অনুফার দু চোখ মুছতে মুছতে আর পেছনে তাকাতে তাকাতে গেটে রাখা স্কুটারে উঠে বসলো । ওর কান্না দেখে নীলাও ফুঁপিয়ে উঠলো আর সেই সাথে পাভেল । নীলার ছেলে !
অনুফা চলে যাবার পরদিন থেকে চারদিনের সিএল নিয়েছে নীলা । বড় আশা, এই সময়টুকুর মধ্যে যদি শ্বাশুরী নতুন মানুষ পাঠান । কিন্ত এখন নতুন লোক না পেলে কি হবে তা ভাবতেই ভীষণ ভয় লাগছে নীলার । আগে তো তাও একটা বড় খুঁটির জোর ছিলো , তার মানে রাশেদ ছিলো কাছেই । এখন সে নেই । বগুড়াতে বদলী হয়েছে তাঁর । হেড অফিস থেকে ব্রাঞ্চ এ । তাও আবার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার । একজন ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের দায়িত্ব অনেক । হুট হাট কোরে ছুটিছাটা নেয়ার সুযোগ নেই ।

এখন লোক না পেলে কি যে করবে নীলা !ছোট মেয়েটিকে মানে হাবিবাকে অনেক কোরে এ’ কদিনে ট্রেনিং দেয়া হোচ্ছে কি কোরে ছোট বাবুমনিটাকে দুধ বানিয়ে খাওয়াতে হবে । কিভাবে কাপড় চোপড় পাল্টিয়ে দিতে হবে , এসব আরও কত কি । সে কতটা বুঝছে তা আল্লাহ মালুম । কিন্তু চেষ্টা করছে আপ্রাণ সফলকাম হবার ।

পাভেল ডাইনিং টেবিলে বসে ঘন ঘন মাথা নাড়ছে আর বলছে – না , না ও কিছুতেই এসব পারবে না আম্মু ।
তাহলে কে পারবে ? তুই পারবি ?
হু , পারবই তো ।
তাহলে নে পার , বেশ একটু রাগত স্বরেই ছেলেকে বললো নীলা । কিন্তু পরক্ষণেই বেশ অবাক হয়েই দেখতে পেল , পাভেল খুব সুন্দর আর পরিপাটি কোরে প্রমিকে ফিডার খাওয়াচ্ছে । তার মানে পাভেল পারবে । বেশ একটু আশ্বস্ত হোল নীলা ।

পাভেলের স্কুল ছুটি হয় বেলা বারোটায় । স্কুলের মাইক্রো বাসে সে আসা যাওয়া করে । বেশ যত্ন করেই গাড়ীর হেলপার ছেলেটি তাঁকে বাড়ীর সামনের রাস্তায় নামিয়ে গেটের ভেতর ঢুকিয়ে দেয় । অবশ্য সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে নীলাই ওকে গাড়ীতে উঠিয়ে দেয় । যা হোক বোঝা গেল স্কুল থেকে বাড়ী ফিরে বাদবাকি সময় সে তাঁর ছোট্ট আপুমনির দেখাশুনা বেশ ভালভাবেই করতে পারবে । বাকি থাকবে আর চার ঘণ্টা । মানে প্রায় সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে বারোটা , পাভেলের স্কুল আর পথে থাকার সময়টা। এই চার ঘণ্টার মধ্যে প্রমি অন্ততঃপক্ষে ২ বার ফিডার খাবে । আর তার প্রাথমিক যোগাড় যন্ত্রণা নীলাই সেরে দিয়ে যাবে ।

আচ্ছা এই পুচকি মেয়েটি , মানে হাবিবা কি প্রমী রানীর দুধ থেকে ভাগ বসাবে ? সে যদি প্রমীকে দুধ না খাইয়ে নিজে নিজে সব খেয়ে নেয় ! উহ, না খেতে পেরে খালি পেটে চেঁচাতে চেঁচাতে তো তাহলে ছোট্ট মেয়েটি মারা যাবার উপক্রম হবে ! তখন যে কি হবে । কে যে এসে খাইয়ে দাইয়ে তাঁর কান্না থামাবে !

এক কাজ করা যায় । হাবিবাকে বলা যায় , তোর খিদে পেলে প্রমীর দুধ ধরিস না । কৌটা থেকে দুধ বানিয়ে বানিয়ে খাস। তবে হাবিবা দুধ ছোঁবে না বলেই মনে হোচ্ছে ! দুধের গন্ধে সে ক্যামন যেন একটা বমি বমি ভাব করছে ! বাঁচা গেল , সোনামণির দুধে হাত পড়বে না ! তবে হাবিবাকে যেন চুড়ি কোরে না খেতে হয় তারজন্য বেশ কিছু আলগা খাবার কৌটাতে রেখে যাবে বলে স্থির কোরছে নীলা !

কিন্তু রাশেদ এখনও ফোন ধরছে না । প্রায় ঘণ্টা খানেক হয় তাকে পেতে ট্রাই করছে নীলা । ফোন বাজছে কিন্তু রাশেদ রিসিভ করছে না । এমন অবশ্য জরুরি কোন মিটিং টিটিং থাকলে হয় । উহ , তাই বলে কি সে একটা ম্যাসেসও দিতে পারেনা ? চারিদিন ছুটির দু দিন প্রায় ফুরিয়েই গেল । বাকি রইলো আর দুদিন ।

এমন ঘন ঘন ছুটি নিলে ম্যাদামই বা কি ভাব্বেন ? আর আসাদ স্যার । যার দয়ায় নীলাকে ঢাকা ছেড়ে বাহিরে যেতে হয় নি । ছুটি নিতে গেলে স্যার কেবল একটু মৃদু হেসে বলেন- নীলা এটা কিন্তু হেড অফিস মনে রাখবেন । প্রকল্প অফিস নয় । নীলার ভারী অস্বস্তি লাগে । কিন্তু কি করবে সে , বড় নিরুপায় হোয়েই যে তাঁকে ছুটী নিতে হোচ্ছে তা সবাইকে বুঝিয়েও বোঝনো যায় না । এদিকে আবার বেচারী আফরিনের সেই স্যাড খবরটা ! সেও তো দীর্ঘ ছুটিতে । এদিকে আছে এক তানজিলা আর বায়েজিদ স্যার । কিন্তু একেক জনের কাজের ধরণ তো এক এক রকম । কি কোরে সব কিছু ব্যালেঞ্চেড হবে তা ভেবে ভেবে কূল পায় না নীলা ।

রাশেদকে ঘন ঘন ফোন করার মানে হোল , দেশের বাড়ীতে মাকে কাজের একটা ভালো মেয়ে অতি সত্বর খুঁজে দেবার জন্য বাড়তি তাগিদ দেয়া ।

শ্বাশুরীকে যখন তখন ফোন করতে অবশ্য বেশ ভয়ই লাগে নীলার । বেশ একটু রাশভারী স্বভাবের মানুষ তিনি । তবে মনটা তার খুব উদার ! রাশেদই বড় ছেলে ! তাছাড়া তাঁর নিজেরও স্বামী ছেলেপুলে নিয়ে ভরা সংসার । অনেক ব্যস্ততার মাঝ দিয়ে সময় পার করতে হয় তাঁকেও !

সেদিন নীলা তাঁকে টেলিফোনে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছিলো , আম্মা একটা ভালো মেয়ে পাঠানোর চেষ্টা কোরেন একটু তাড়াতাড়ি । আর তাতেই কি জন্য যেন বেজায় চটে গেলেন তিনি । বললেন – ভালো না খারাপ আমি কি কোরে বোলব বল তো বউমা । ওদের সবাইকে কি আর আমি চিনি ? আর তোমাকেও বলি – কি দরকার ছিল ঢাকাতে বদলী নেবার । ভালই তো ছিলে কুষ্টিয়ায় । এখন ঠেলা বোঝ !

সত্যি সত্যি এখন ঠেলা বুঝছে সে । আম্মা তো আর মিথ্যে বলেন নি । ভালোই তো ছিল তাঁরা কুষ্টিয়াতে । ভালো সরকারী কলেজ । রাশেদেরও ভালো ব্রাঞ্চ । কিন্তু আগে গোল বাঁধিয়েছিল রাশেদ নিজেই । সে বলেছিলো , ঢাকায় হেড অফিসে না থাকলে ঠিক ঠিক সময় মতো প্রমোশন পাওয়া যায় না । মফঃস্বলে এসিআর এর ভালো মন্দ দিয়ে সব সময় ক্লিক । দর কষাকষি । নীলার চাকরিতে অবশ্য তেমন কোন বিড়ম্বনা নেই । বিষয় ভিত্তিক প্রমোশন । এতে অবশ্য হিতে বিপরীতও হয়। যে সব সাবজেক্টে বিভিন্ন সরকারি কলেজে অনার্স আর মাস্টারাস আছে – সেসব বিষয়ের শিক্ষকগণ ঘন ঘন প্রমোশন পান আর তাতে কোরে চেইন অফ কম্যান্ড এক রকম ভেঙ্গেই যায় । জুনিয়ররা হয়ে যান সিনিয়ারদের সিনিয়র । স্যার ! যদিও ইদানীং ব্যাচ ভিত্তিক প্রমোশন এর জোর আওয়াজ উঠেছে , নীলা এর পক্ষে । তবে ঢাকায় চাকরী করার , তাও আবার হেড অফিসে , এর একটা বিশেষ জেল্লা আছে তা বেশ অনুমান করতে পারে নীলা !

যা হোক সে সময়ে ঢাকায় বদলীর জোর চেষ্টা চলার সময়টাতে নীলার মন্দও লাগছিল না । বেশ একটু স্বাধীন স্বাধীন হবার চেষ্টা ! নিউক্লিয়ার হবার আশায় একান্নবর্তী পরিবারকে ডিঙ্গিয়ে চলার প্রচেষ্টা । সেই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে বটে । কিন্তু এখন ? এখন আত্নীয় পরিজনহীন নীলা তার বিরুপ ফল হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বটে ! কষ্ট । যন্ত্রণা ! এক রাশেদ ছাড়া আর কাউকে তা বলাও যায় না সওয়াও য়ায় না ।

নিজের বাড়ীতে মাকে বলবে কি নীলা একটু কাছে এসে থাকতে ? না সে উপায়ও নেই । তারও বেশ ভরা সংসার আর মার স্কুলের চাকুরী । সেদিন মা বলেছেন , কেউ যেতে চায় না । সব মেয়েরাই এখন গারমেন্টসে কাজ করছে । বেশ সুখেই আছে তারা । মাইনে বেশী । পরিচয়ও আছে । আর আছে স্বাধীনতা । স্বাধীনতা হেন কে বাঁচিতে চায় !

এ পাশ থেকে মার কথায় ভয়ানক রাগ হোচ্ছিল নীলার । কেমন যেন অচেনা মানুষের মতো কথা বলছে নীলার নিজেরই মা । মনে হোচ্ছে , মা যেন নারীবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব পেয়েছেন । রোজকার মতই এবারেও জমলো না , মায়ের সাথে কাজের মেয়ে নিয়ে আলোচনা । তবে কাজের মেয়ে শব্দটায় মার বেজায় আপত্তি । মা বলেন – ‘হেল্পিং হ্যান্ড ‘!
নীলাও ভয়ে ভয়ে বলে , হাঁ বাবা তাইই । ‘হেল্পিং হ্যান্ড ‘!
মা বললেন , একটা চাইল্ড কেয়ার সেন্টারেরও তো বাবুদের রাখতে পার । তোমাদের অফিসে নেই ?
নীলা হতাশ সুরে বললো , না নেই !

রাশেদকে অবশেষে পাওয়া গেল । যা নীলা ভেবেছিলো তাইই । জরুরী মিটিং ! সব খুলে বলাতে রাশেদও বোধহয় কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো । তাহলে আমাদের পাভেল বাবু বেশ বড়টি হয়ে উঠেছে দেখছি ! অনেক দায়িত্ব নিতে শিখেছে ! দরকার পড়লে মার ওখানে যাবে সে নীলার জন্য কাজের মেয়ে আনতে , রাশেদ নীলাকে বাড়তি আশ্বাসও দিলো !

ছুটির দিনগুলো দ্রুত ফুরিয়ে এলো । এরপর আবার কাজে ফেরার পালা । কেমন যেন শূন্য শূন্য সংসার ফেলে একবুক দুশ্চিন্তা নিয়ে নীলা অফিসের গাড়ীতে পা রাখলো ! যাবার সময় বারে বারে পাভেল আর হাবিবাকে মনে করিয়ে দিলো , বাড়ীর মেইন গেটটা না খুলতে । কি দরকার ! আর নীলাতো ঘন ঘন টেলিফোন করবেই !

নীলার মনে মনে বড় ভয় পাশের বাড়ীর সেই মহিলাটিকে । মালিহা ভাবী ! বেচারীর কোন ছেলেপুলে হয়নি , বিয়ের প্রায় দশ বছর চলে গ্যাছে । আর হবে বলেও মনে হয় না । কিন্তু মালিহা ভাবীর ইদানীংকার উৎপাতে নীলা অনেকটা দিশেহারা। প্রমীকে নাকি তাঁর স্বপ্নে দেখা মেয়ের মতো মনে হয় । ঠিক তেমনি মুখের আদল , গায়ের রঙ , টানা টানা দু চোখ আর মাথা ভরতি এক রাশ কালো মিশমিশে কোঁকড়ানো চুল !

খবরদার , পাশের বাড়ীর মাহিলা আন্টি আসলে কিন্তু দরজা খুলবি না । খুলবি না কিন্তু বলে দিলাম । কোথাকার কে , সে নাকি প্রমীর স্বপ্নে দেখা মা , প্রমী তাঁর স্বপ্নে দেখা রাজকন্যে । খুলবে না কিন্তু বলে দিলাম – না হলে ---------! বোলতে বোলতে একটু আগেই ঘর ছেড়েছে নীলা !

পাভেল প্রমী ওরা ভাল আছে তো । হাবিবা ! বাসার রেখে যাওয়া টেলিফোনটা বোধহয় বিকল হয়ে গিয়েছে । বাড়ীর দারোয়ানটারও সুইচড অফ ফোন । বাজে ! কিন্তু এখন কি হবে । বাড়ীতে ফিরে যাবে কি নীলা ! দেখবে কি হয়েছে ওদের ! কিন্তু কিভাবে ? আজ এডিপির মিটিং । তাঁকেই মিনিটস লিখতে হবে ! ওপাশ থেকে ঘন ঘন রাশেদের টেলিফোন । যাও , কাজ টাজ ফেলে বাড়ী যাও আগে । আগে বাড়ী তারপরই তো অফিস । নীলা যেতে পারছে না । গেলো সে, অনেক পরেই । সব কাজ বুঝিয়ে দিয়ে !

দরজাটার কলিং বেলটা ব্যাকুলভাবে বাজাতেই হাবিবার চিন্তিত মুখটা দেখে মনটা ধক কোরে উঠলো নীলার । এই কি কি হয়েছে রে ?
জ্বর !
জ্বর কার ?
প্রমীমনির । ১০৪ নাকি !
কে বললো ?
পাশের বাড়ীর মালিহা আন্টি ।
মালিহা আন্টি ?
হু , আমরাই তাঁকে ডেকে এনেছি । সেই সকাল থেকে বাবুর মাথায় বরফ পানি আর জলপট্টি দিচ্ছেন !

উহ , কি উপকারই না করলেন মালিহা ভাবী আজ নীলার। অথচ নীলা তাঁকে কি বোকার মতই না নিজের শত্রু ভেবে বসে আছে । কি সংকীর্ণতা আর মিথ্যেয় ভরা তার নিজের মন !
মালিহা ! মালিহা ভাবী ! তুমি আর জনমে আমার কি ছিলে গো ? তাঁকে গভীরভাবে বুকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো নীলা !
মাহিলা মৃদু হেসে বললো , নীলা তুমি তো আমার জনম জনমের আত্নীয় । স্বজন !

**সব চরিত্রই কাল্পনিক

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×