somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘের রাজ্যে একদিন (শেষ পর্ব)

২৭ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেঘের রাজ্যে একদিন (১ম পর্ব)

আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল সকাল ৯’৩০টায়, শেষ হল দুপুর ২’৩০ এ। পথে কিছুক্ষন (৩০মিনিট – ৪৫ মিনিট)যাত্রা বিরতি ছিল। গন্তব্যে পৌঁছেই, সবার পেয়ে গেল প্রচন্ড রকম ক্ষিদে। কোনরকমে লাগেজ রেখে, হাত মুখ ধুয়ে সবাই দে ছুট ডাইনিং হলের দিকে। খাওয়া-দাওয়ার পর শুরু হলো বেড়ানো। আশেপাশে কোন্ দিকে কি আছে, তার অনুসন্ধান। বাচ্চাপার্টিরা কেউ এক দৌড়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে যাচ্ছে, আবার কেউ দৌড়ে উপরে উঠছে, কেউ ছোটখাটো একটা পার্ক আবিষ্কার করে ফেলে নিজেকে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের উত্তরসুরি ভাবছে, আর কেউ আস্ত একটা হেলিপ্যাড আবিষ্কার করে বুঝতেই পারছেনা পাহাড়ের এত উঁচুতে কেন এত বড় একটা মাঠ খেলার জন্য বানানো হলো।
দৌড়াদৌড়ির মাঝে মাঝে আবার চলছে ফটোসেশান। আহা!!! কত রঙের, কত ঢং এর কত বাহারি ছবি!!! কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বোসে, কেউ শুয়ে, কেউ কোলে আর কেউ কেউ গাছে ঝুলে!!!! সর্বশেষক্তদের দেখলেই আমাদের পূর্বপুরুষীয় তত্ত্বের সত্যতা সম্পর্কে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকেনা। শুধুমাত্র পশ্চাদ্দেশীয় একটা অমিল ছাড়া!!!!!!! আর দেখতে হবেতো আমরা কোথায় আছি!!! আফটার অল্, জায়গার (বান্দরবন) নামেরও একটা এফেক্ট আছে না !!!!!!
অবশ্য নীল্গিরির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকে উৎসাহিত করবে ছবি তুলতে। পাহাড়ের চুড়ায় দাড়িয়ে দিগন্তে দৃষ্টি প্রসারিত করলেই দেখতে পাবেন আপনি দাড়িয়ে আছেন মেঘের স্তরেরও উপরে। চারদিকে ঘন সবুজের মেলা, পাখির কলকাকলি, নির্মল বিশুদ্ধ বাতাস, দিগন্তে আকাশ এবং পাহাড়ের মিলনরেখা। আর দেখবেন মেঘের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে পাহাড়ের চুঁড়ো। গিয়ে দাড়ান অবসার্ভেশন প্লাটফরমগুলোতে, তাকান নিচের দিকে, দেখবেন মেঘের কারনে নিচের কিছুই দেখতে পাচ্ছেননা, মনে হবে আপনি ভাসছেন মেঘের ভেলায়। মাঝে মাঝে মেঘ সরে গেলে দেখতে পাবেন অনেক নিচে একেবেঁকে বয়ে যাচ্ছে শঙ্খ নদী।

বেড়াতে আর ফটো তুলতে গিয়ে বিকেলের চা-পর্ব শুরু হল সন্ধ্যায়। চা আর সাথে কিছু "টা" খেয়ে বাচ্চারা সব বসে গেল লুডু আর কার্ড খেলতে। বড়রা সব বসলো আড্ডা দিতে। গল্প, আড্ডা, খেলা এইসবের মধ্যে কখন রাতের খাবার সময় হয়ে গিয়েছে, আমরা কেউ বলতে পারিনা। ৯’৩০-১০’০০ ভেতর রাতের খাবার খেয়ে সবাই দল বেঁধে ফিরে এলাম কটেজে। এবার শুরু হল দ্বিতীয় দফা যুদ্ধ, কে কোথায় শুবে সেটা নিয়ে। যদিও এবার যুদ্ধে বিজয়ি বড়দের দল। রাত ১১’৩০টার ভেতর সবাইকে শুয়ে পরতে হবে, কারন জেনারেটর চলবে রাত ১২’০০ পর্যন্ত। সাধারনঃত বিদুৎ থাকে রাত ১০’০০ পর্যন্ত, কিন্তু আমাদের অনুরোধে সময়সীমা বাড়ানো হয়েছিল আরো দুই ঘন্টা। কি পাঠক!!! ঘাবড়ে যাচ্ছেন বিদ্যুৎ থাকেনা শুনে!!! ঘাবড়াবেননা, বিদুৎ না থাকলেও সোলার পাওয়ার আছে। তবে পরিমিত ভাবে ব্যবহার করতে হয়।
পরদিন ঘুম ভাঙ্গল ভোর ৪,০০ টাতে। ঘুম ভাঙ্গলো ঠিক না, ভাঙ্গনো হলো বলা যায়। ঘুম ভাঙ্গতেই মনে হল কে রে বেরসিক, এত মজার ঘুমটা ভেস্তে দিলো!!!! চোখটা খুলে যেই রাগের ঠেলায় গালাগাল দিতে যাবো, দেখি স্বয়ং আমার বোনই আমাকে ধাক্কাটা লাগাচ্ছে। কি আর করা, সমস্ত রাগ গিলে ফেলে উঠে পরতে হলো !!! বড়বোন বলে কথা!!!! তবে সেই মুহূর্তে রাগ লাগ্লেও, ঘুম থেকে উঠে যেই দরজাটা খুলে বাইরে এলাম, মনে হলো আমাকে ঘুম থেকে না জাগালে সারাজীবনভর আমি ওদের মুন্ডপাত করতাম আমাকে না জাগানোর জন্য।
সে কি অপরূপ দৃশ্য!!!!! আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। অসহ্য রকম সুন্দর। চারদিকে ঘন সাদা কুয়াশা (পাশেরজন্কে দেখা যায় না এমন), এর মাঝে শুধু গাছের মাথা আর পাহাড়ের মাথাগুলো উঁকি দিচ্ছে ঘন সাদামেঘের মাঝথেকে। মনে হবে, আপনি মেঘের দেশে হেটে বেড়াচ্ছেন, কিংবা চড়ছেন মেঘের ভেলায়। কিছুক্ষন পর হঠাৎ দেখতে পাবেন পূব দিকের আকাশকে ক্যানভাস করে কেউ যেন রংতুলি নিয়ে রঙের খেলায় মেতেছে। প্রথমে হাল্কা লাল দিয়ে শুরু, একটু পর লাল রংটা আস্তে আস্তে ঘন হতে শুরু করবে, লাল রঙের কত রকমের শেইড হতে পারে সেই সূর্যদোয় না দেখলে আপনি জানতেই পারবেননা। কিংবা জানতেই পারবেননা লাল সূর্যটা কিভাবে চোখের সামনে নিমেষেই কমলা হয়ে যায়।
প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আর ছবি তুলতে তুলতেই সকালের নাস্তা খাবার সময় হয়ে গেল। হাত-মুখ ধুয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখি অন্যরকম এক নাস্তার আয়োজন করা হয়েছে আমাদের জন্য। বিন্নি চালের খিচুরি আর ডিমের ঝাল কারী।(বিন্নি চালের খিচুরি হয় এটাই আমার জানা ছিলনা)।দেখতে খুব একটা ভাল না হলেও খেতে ভালই।
খাওয়া শেষে শুরু হল বিদায় পর্বের তোড়জোড়। দুপুর ১২টার ভেতর ছেড়ে দিতে হবে কটেজ। সব গোছ-গাছ শেষ করে আবার শুরু হল বিদায়ি ফটোসেশন। এবার হলো পরিবার ভিত্তিক ফটোসেশন। যার যার ছানাদের নিয়ে শুরু হলো বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তোলা। সবশেষে সবাই একসাথে বসে-দাঁড়িয়ে গ্রুপ ছবি তুলে শেষ হল ফটোসেশন পর্ব।
এবার বিদায় পর্ব। আবার একদফা যুদ্ধ শেষে (গাড়িতে ওঠা নিয়ে)গাড়িতে উঠে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হলো আমাদের। ফিরতি পথে উপজাতিদের কাছ থেকে কেনা হলো ফরমালিনমুক্ত গাছ পাকা কলার কাদি আর পেঁপে। একটু দামাদামি করতে পারলেই পাবেন অ-বিশ্বাস্য কম দামে, তবে চট্টগ্রামের ভাষা জানা আছে এমন কাউকে লাগবে সাথে। মিলনছড়ির আর একটু আগেই পাওয়া গেলো উপজাতিদের হস্তশিল্পের দোকান। সেখান থেকে কেনা হলো তাঁতে বোনা বিছানার চাদর, যা কিনা ব্যব্হার করা যায় পাতলা কম্বল হিসেবেও। মিলনছড়ি রিসর্টে দুপুরের খাবার শেষে কাফকো গিয়ে শেষ হল আমাদের নীলগীরি যাত্রার।

যারা নীলগিরি যেতে চান তাদের জন্য দরকারি কিছু তথ্য।

১। নীলগিরি যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে গাড়ীর কথা চিন্তা করতে হবে।নিজেদের গাড়ী করেও যেতে পারেন অথবা নিতে পারেন ভাড়া গাড়ী। গাড়ীটি হতে হবে পেট্রল চালিত। বান্দরবন পর্যন্ত গ্যাসচালিত গাড়ী যায়, কিন্তু চড়াই শুরু হলে পেট্রলচালিত গাড়ি লাগে। ভাড়া গাড়ি নিলে আপনি চট্টগ্রাম থেকেও ভাড়া নিতে পারেন আবার বান্দরবন শহর থেকেও নেয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে মাইক্রো ভাড়া নিলে পেট্রলসহ ভাড়া নেবে ১৪-২০ হাজার টাকার মত। বান্দরবন থেকে নেবে ৫-৮ হাজার টাকা। বান্দরবন থেকে চাঁদের গাড়ীতেও যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ভাড়া হবে আরও কম।(ক্ষেত্রবিশেষ এ ভাড়া কম বেশীও হতে পারে)।
২। আপনি যদি নীলগিরিতে রাত কাটাতে চান, তবে প্রথমেই আপনাকে বান্দরবনের সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার (সি,ও) এর কাছ থেকে থাকার অনুমুতি নিতে হবে।
৩। নীলগিরিতে সেনাবাহিনীর দুইটা কটেজ, দুইটা রুম এবং ২-৪টা তাবু ভাড়া পাওয়া যায়। কটেজ “মেঘদূত” র ভাড়া ৫ হাজার টাকা এবং কটেজ “আকাশলীনা” র ভাড়া ৬ হাজার টাকা। (রুম আর তাবুর ভাড়া সম্পর্কে ধারনা দিতে পারছিনা বলে দুঃখিত)।
৪। রাত কাটানোর অনুমুতি পাওয়ার সময়ে আপনাকে বলে দিতে হবে কত জন যাবেন এবং কয় দিন থাকবেন। সেইসাথে বলে দিতে হবে কি খাবেন। চাইলে রাতে বার্বিকিউ করা যায়। খাওয়ার দাম আলাদা দিতে হবে।(অত্যন্ত ভাল খাবার অত্যন্ত সুলভ মুল্যে পাবেন)।
৫। যারা সাশ্রয় করতে চান, তারা কিন্তু অনায়াসে প্রতিটি কটেজে ১০-১৫ জন থাকতে পারবেন। কটেজ কতৃপক্ষের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিছানা ভাড়া নিয়ে।(বিছানাও অনেক সুলভ মূল্যে পাবেন)।সেই সাথে জেনারেটর চালানোর সময় সীমাও বাড়ানো যায় অতিরিক্ত এবং সামান্য টাকার বিনিময়ে।
৬। নীলগিরিতে যাওয়ার সময় কিছু শুকনো খাবার যেমনঃ বিস্কুট, কেক, চানাচুর, ফল, শুকনো মিস্টি এই জাতীয় খাবার, কিছু ইনডোর গেইমস যেমনঃ তাশ, লুডু, মশার অষুধ এবং সঙ্গে ১-২টা টর্চলাইট নিতে ভুলবেননা। শুকনো খাবার নেবেন কারন ভাল আবহাওয়ার জন্য কিছুক্ষন পর পরই খিদে পেয়ে যাবে। আর সন্ধ্যার পরে সময় কাটানোর জন্য নেবেন গেইমস।
৭। নীলগিরিতে যাবার আগে গোসল অবশ্যই সেরে যাবেন। কারন সমতল থেকে প্রায়ই ২৪০০ ফুট উপরে হবার কারনে পানির ব্যবহার সীমিত। হাত মুখ ধোয়া, অযু এবং প্রাকৃতিক কাজের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান পানি পাওয়া যায়।
আজকে এইখানেই ইতি টানছি। সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:৫৯
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×