somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিহত পুলিশ কনস্টেবলের সন্তান, জাফর মুন্সির স্ত্রী ও অন্যান্য

০৩ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যাত্রী বোঝাই বাসে আগুন দেয়ার মাধ্যমে গত চার ফেব্রুয়ারি রাতে জামাত-শিবির যুদ্ধাপরাধ বিচার বিরোধী সহিংসতা শুরু করে। উত্তরায় রাত সাড়ে দশটার সেই নৃশংসতায় জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে এবি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা প্রাণ হারান। তের ফেব্রুয়ারি তারা প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের কর্মী জাফর মুন্সিকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দেয়। চব্বিশ ঘণ্টা অমানুষিক যন্ত্রণা ভোগের পর জাফর মুন্সি হাসপাতালের বিছানায় মারা যান।

এরপর পনের ফেব্রুয়ারি বাসার সামনে নির্মমভাবে খুন হন ব্লগার রাজিব। পয়লা মার্চ রাতে রাজিবের খুনিদের পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেফতার করলে জানা যায়- রাজিব খুনের উস্কানিদাতা একজন শিবির কর্মী।

বাইশ ফেব্রুয়ারি জামাত-শিবির তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সারা দেশে সহিংসতা শুরু করে। জুমার নামাজের পরপর তারা একযোগে দেশের চৌষট্টিটি জেলায় হামলা চালায়। শাহবাগের গণআন্দোলনের খবর প্রচার করায় সাংবাদিক এবং নিরাপত্তা দেয়ায় পুলিশের ওপর জামাত-শিবির আর তার দোসরদের হামলা ছিল লক্ষণীয়। অন্তঃত ত্রিশজন পুলিশ মারাত্মকভাবে আহত হন, উনিশজন সাংবাদিককে গুরুতরবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়। দেশজুড়ে চালানো জামাত-শিবিরের হামলায় চারজনের প্রাণহানি ঘটে। সেদিন জামাত-শিবিরের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি মসজিদ, দেশের পতাকা, শহীদ মিনার এবং কয়েক জেলার গণজাগরণ মঞ্চ। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে মসজিদের মাইক ব্যাবহার করে উস্কানি দিয়ে তারা সাধারণ জনগণকে পুলিশের গুলির মুখে ঠেলে দেয়।

তারপর আসলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিন-আটাশ ফেব্রুয়ারি। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাইদির ফাঁসির রায় জানা গেল। আর সাথে সাথে শুরু হল দেশজুড়ে জামাত-শিবির ও তার দোসরদের তাণ্ডব। সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ও বসতবাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে তারা সাম্প্রদায়িক সংঘাত শুরু করার একটা অপচেষ্টা চালায়। ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে এক প্রকৌশলীকে হত্যার মাধ্যমে জামাত-শিবির প্রকাশ করে সহিংসতার নতুন রূপ। গাইবান্ধায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় তিন পুলিশ সদস্যকে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার মাত্র দুইদিনে সারাদেশে কমপক্ষে সাতচল্লিশজন মানুষ সহিংসতার বলি হয়। নিঃসন্দেহে পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া একটা অংশ জামাত-শিবির কর্মী। কিন্তু একটা বড় অংশই সাধারণ মানুষ; যারা জামাত-শিবির ও পুলিশের সম্মুখযুদ্ধের মাঝে পড়ে কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই মারা গিয়েছে। যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ছিল খুব সাধারণ ঘটনা।

খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে পরদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করলেন। নেত্রীর ঘোষণার পর জাতীয়তাবাদী শক্তি প্রকাশ্যেই জামাত-শিবিরের সহিংসতার সহযাত্রী হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবিদার সাদেক হোসেন খোকা ঘোষণা দিলেন শাহবাগ আন্দোলন প্রতিহত করার। জামাতের সাথে মিলিয়ে বিএনপি আগামি মঙ্গলবার সারা দেশে হরতাল ডেকেছে।

আজ তিন মার্চ জামাত-শিবিরের আটচল্লিশ ঘণ্টার হরতালের প্রথমদিনে এ পর্যন্ত বাইশজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। শুধু বগুড়াতেই এগারোজন নিহত, শাজাহানপুর থানায় জামাত-শিবিরের চালানো হামলায় দুজন নারীও সহিংসতার নির্মমতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন। কিশোর ও শিশু নিহত হওয়ার খবরও শোনা গেছে। ট্রেনের বগিতে আগুন দেয়া, স্টেশনে আগুন দেয়া, রাস্তা অবরোধ করা, যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, খাবার বোঝাই ট্রাকে হামলা, স্থল বন্দরে আক্রমন ইত্যাদি চলছেই।

চার ফেব্রুয়ারি নিহত হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা একটি দুগ্ধপোষ্য শিশুর বাবা। যে শিশু কোনদিনই তার বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারবে না। জাফর মুন্সিও পরিবার-পরিজন রেখে গেছেন; তার স্ত্রী আর কোনদিনই তার প্রিয় খাবারটি রাঁধতে পারবেন না। নিহত এক পুলিশ কনস্টেবলের বাড়ি ফেরার কথা ছিল, সন্তানদের বাবার জন্য সেই প্রতীক্ষা কোনদিনই ফুরাবে না। এ যাবতকালে নিহত সকল সাধারণ মানুষেরই আত্মীয়স্বজন আছেন যাদের ব্যাথা আমরা চাইলেও কোনদিন উপলব্ধি করতে পারব না।

শুধু বলতে পারি- তোমরা আমাদের ক্ষমা কর। আমরা তোমাদের নিকটজনদের জামাত-শিবিরের হিংস্র থাবা থেকে রক্ষা করতে পারিনি। যেমনটা পারিনি একাত্তর সালে ত্রিশ লক্ষ শহীদকে বাঁচাতে। যেমনটা পারিনি একাত্তরে দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম বাঁচাতে। তবে আমরা একাত্তরে ঠিকই সব বিরোধিতা আর ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে স্বাধীনতার টকটকে লাল সূর্যকে এনেছি। এবারও জয় আমাদেরই হবে, আমরা তোমাদের ভুলব না।

জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:২০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×