somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কনফিগারেশন দেখে কিনুন স্মার্টফোন

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্মার্টফোন আসার আগে আমরা ফোন কিনতাম ক্যামেরা, অডিও কোয়ালিটি, চার্জ কেমন থাকে এসব দেখে। কিন্তু এখন এসবের সাথে নতুন করে প্রসেসর, জিপিইউ এবং র‍্যাম যোগ হয়েছে, যা দেখে ফোন কেনা খুবই জরুরি। কিন্তু যিনি প্রথমবার কিনছেন, তার জন্য দুর্বোধ্য! আপনি যেন কোনো ভুল না করেন সে লক্ষ্যেই এই লেখা। চলুন দেখে নেয়া যাক নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার সময় হার্ডওয়্যারের কোন কোন বিষয় বিবেচনা করতে হবে।

স্মার্টফোন – ক্ষুদ্র কম্পিউটার:

প্রথম কথা হলো, অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে ফোন না ভেবে একটি ছোট কম্পিউটার ভাবুন। একটি ভাল প্রসেসর আপনাকে অনেক দ্রুত কাজ করতে সাহায্য করবে। আর র্যা ম যত বেশি হবে তত বেশি/বড় অ্যাপ্লিকেশন/গেমস চালাতে পারবেন। জিপিইউ হচ্ছে গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এর মুল কাজ হলো আপনার ডিসপ্লেতে যেসব জিনিস আসবে তা প্রসেস করা, কিছুটা বলতে পারেন আরেকটি প্রসেসর যার কাজ শুধু গ্রাফিক্স যেমন মুভি, গেম গ্রাফিক্স এসব প্রসেস করা। জিপিইউ শক্তিশালী হলে উন্নতমানের গেমস এবং এইচডি মুভি চালাতে কোনও সমস্যা হবেনা। প্রসেসর কম্পিউটারে বোঝা সহজ হলেও মোবাইলের ক্ষেত্রে বেশ ঝামেলার।

প্রসেসর:

প্রসেসরকে আপনি ভাবতে পারেন একটি মানুষ হিসাবে, যিনি অনেক কাজ করতে পারেন। কিন্তু তিনি সব রকমের কাজ করতে পারেন না, তাকে যা যা করতে শেখানো হয়েছে কেবল সেগুলোই তিনি করতে সমর্থ। নতুন কিছু শিখতে পারেন না। এখন যা শেখানো হয়েছে সেগুলো তিনি ধীরে অথবা দ্রুত করতে পারেন। অনেক সময় আবার উনার মত আরও লোক থাকতে পারে, তখন একটি কাজ তারা ভাগ করে করে ফেলেন। এই একাধিক লোক বা প্রসেসর থাকাকেই মূলত ডুয়েল-কোর, কোয়াড-কোর ইত্যাদি বলা যেতে পারে। প্রসেসরের ক্ষেত্রে কী কী কাজ প্রসেসর করতে জানে তাকে বলা হয় ইন্সট্রাকশন সেট। একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার সময়ে প্রথমেই দেখতে হবে ইন্সট্রাকশন সেট কোনটি। পুরাতন ফোনের প্রসেসরের থাকে ARMV6 বা ARM11 ইন্সট্রাকশন সেট, যেটা এখনকার যুগের নতুন কোন বড়সড় প্রোগ্রাম/গেম চালাতে অক্ষম। এখন আর ARMv6 ফোন না কেনাই ভাল। এই তথ্য আপনি ফোনের স্পেসিফিকেশন সাইটেই পাবেন। যদি ARMv7 বা এর পরের হয়, প্রসেসরটি উন্নতমানের। এরপর হচ্ছে প্রসেসরের গঠন বা আর্কিটেকচার। কাজ শুধু জানলেই হবেনা, বলিষ্ঠ, শক্তিশালী হতে হবে। এখানেই হচ্ছে দ্বিতীয় দেখার বিষয়, আর্কিটেকচার কী।

প্রসেসর আর্কিটেকচার:

ARMv7-এর মধ্যে আর্কিটেকচার মুলত ৫ প্রকার। সেগুলো হলো Cortex A5, A7, A8, A9 ও A15। সব কোম্পানিই এই ৫ আর্কিটেকচার মেনে প্রসেসর তৈরি করে থাকে। করটেক্স এ৫ অনেক পুরাতন, বেশ দুর্বল; আর করটেক্স এ১৫ হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী। যেহেতু এখনও এ১৫ এর কোন ফোন বাজারে আসেনি। সম্প্রতি বাজারে আসা গ্যালাক্সি এস ৪-এ ব্যবহৃত হয়েছে এ১৫ এর সিপিইউ। সেহেতু অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস কেনার সময় সম্ভব হলে এ৯ নেয়া উচিত, না হলে এ৭; আর এ৫ না নেয়াই ভাল। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা ফোনে বেশি এইচডি গেম খেলেন না কিংবা মুভি দেখেন না। তাদের জন্য আবার এ৫ নেওয়াটাই ভালো হবে। কেননা, Cortex এ৫ প্রসেসরগুলো খুবই কম ব্যাটারি ব্যবহার করে যার ফলে আপনি আপনার ফোনে দীর্ঘ ব্যাটারি ব্যাকআপ পেতে পারেন। প্রসেসরের আরেকটি ব্যাপারটি হলো NEON সাপোর্ট। এটি জটিল কিছু না। NEON থাকার অর্থ হলো আপনার প্রসেসর এইচডি মানের ভিডিও সরাসরি দেখাতে সক্ষম। এর পর ক্লকস্পীড বা প্রসেসরের কাজের গতি। অবশ্যই যত বেশি হবে ততো ভাল। এবার প্রসেসরের শেষ ব্যাপার, মাল্টিকোর কিনা। প্রথমেই বলেছিলাম, ২জন থাকলে কাজ ভাগ করে করা যায়, ব্যাপারটি ঠিক সেরকম। ডুয়াল কোর মানে ২টি প্রসেসর, কোয়াড কোর মানে ৪টি। প্রসেসর কোয়াড কোর মানেই যে এটি ভাল হবে -তাও আবার ঠিক নয়। কিন্তু কোর কয়টি না দেখে শুরুতে দেখা উচিৎ প্রসেসর ইন্সট্রাকশন সেট ও আর্কিটেকচার।

র‍্যাম:

প্রসেসরের পর গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে র‍্যাম এ। আমাদের মেমোরি কার্ড বা ফোন মেমোরি প্রসেসর যে হারে কাজ করে সে হারে ডেটা পরে দিতে পারেনা। তাই ডেটা আগে র‍্যামে নেয়া হয়, যা অনেক দ্রুত কাজ করে। যত বেশি র‍্যাম, তত বেশি ডাটা দ্রুত প্রসেসরে যেতে পারে। তাই ফোন দ্রুত কাজ করে ফেলতে পারে। র‍্যামেরও স্পিড এবং আর্কিটেকচার আছে, কিন্তু অত মাথা ঘামানোর দরকার নেই। র‍্যাম মুলত লেখার সময় ৩ প্রকার, DDR1, 2 এবং 3. ১ এর চেয়ে ২ উন্নত, একইভাবে ২ এর চেয়ে ৩ উন্নত।

জিপিইউ:

সর্বশেষে রয়েছে জিপিইউ। জিপিইউ নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক আছে এবং সেগুলোর যথেষ্ট কারণও আছে। তাই এত ঝামেলা না করে আমি কাছাকাছি সব জিপিইউ এক একটি শ্রেণীতে ভাগ করে একটি টেবিল দিয়ে দিচ্ছি। শ্রেণী নিচ থেকে উপরে, অর্থাৎ প্রথম শ্রেণী সবচেয়ে ভালো এবং বাকিগুলো তুলনামূলক কম শক্তিশালী।

১ম শ্রেণীঃ Adreno 320, Tegra 4,3, Mali T-series , MPX series, PowerVR 5XT/6.
২য় শ্রেণীঃ Adreno 305, 225, Mali 400/450MPX, Tegra 2, PowerVR series 5.
৩য় শ্রেণীঃ Adreno 200,205, Mali 400, Tegra, PowerVR 531 below.

কিন্তু শ্রেণী মানেই সব নয়, প্রায় সব গেমই ৩য় শ্রেণিতেও চলে। কিন্তু যত ভালও জিপিইউ তত ভালও পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে। তাই যতদূর বাজেটে সম্ভব নতুন জিপিইউ’র ফোন কেনা উচিৎ। জিপিইউর সাথে সম্পর্কিত ব্যাপার হচ্ছে স্ক্রিন রেজুলেশন। রেজুলেশন বেশি হলে বেশি পিক্সেল, অর্থাৎ বেশি ডাটা জিপিইউকে প্রসেস করতে হয়। তাই বেশি রেজুলেশন থাকলে শক্তিশালী জিপিইউ থাকতেই হবে ফোনে নাহলে ফোন ধীরগতিতে কাজ করবে বলে মনে হবে। আর আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এইচডি ভিডিও এই তালিকার সব জিপিইউই চালাতে সক্ষম। কিন্তু 1080P এর জন্যে অন্তত ২য় শ্রেণীর জিপিইউ থাকতে হবে। 720P সব গুলোই পারবে।

ক্যামেরা ও জিপিইউ:

কিন্তু ঝামেলা এখানেই শেষ নয়, অনেকেই ধারণা করেন যে, ফোন বা ট্যাবের এর এইচডি ভিডিও রেকর্ডিং শুধু ক্যামেরার সেন্সরের উপর নির্ভর করে। কিন্তু মোবাইলের 720P এবং 1080P ভিডিও রেকর্ডিং আসলে ভালো জিপিইউ এবং সিপিইউ এর উপর নির্ভর করে। ক্যামেরা এর সেন্সর শুধু ছবি/ভিডিও রেকর্ড করে। পরবর্তী পর্যায়ে কিন্তু সেটি চলে যায় সিপিইউ এবং জিপিইউ কাছে প্রকিয়াকরণ (Rendering) এর জন্য। আর সেই প্রকিয়াকরণ বা রেন্ডারিং শেষ হলেই সেটি ভিডিও আকারে আমাদের দেখার উপযুক্ত হয়।

এক নজরে:

লেখা শেষ করা আগে সবকিছু আরেকটু পরিষ্কার করে দিই। সিপিইউ/জিপিইউ যতোই ভাল হোক না কেন দু’টোর মধ্যে ঠিকমতো মিল বা Combination থাকতে হবে। উদাহরণ হিসেবে Xperia Tipo-কে ধরুন। Tipo তে 512MB RAM, Qualcomm MSM7225AA 800 MHz Cortex-A5 সিপিইউ এবং Adreno 200 জিপিইউ দেয়া হয়েছে। প্রথমেই এই ফোন এ ৫১২এমবি র্যাoমের পুরোটা কাজে লাগানো যায় না। এটির সিপিইউ-এর এত র্যাইম ব্যবহার করার ক্ষমতাই নেই। সে কারণে ফোনটি সাধারণ গেম যেমন Temple Run 2 ও Smoothly চালাতে পারে না। অতএব, কেবল জিপিইউ বা সিপিইউ নয়, কম্পিউটারের কনফিগারেশনের মতোই স্মার্টফোন কেনার সময়ও আপনাকে পুরো কনফিগারেশনকেই বিচারে রাখতে হবে। আশা করি এই লেখা পড়ার পর ফোন কেনার সময় অনেক বিভ্রান্তিই দূর হয়ে যাবে। এখন আর বাকি সব ফিচার মিলিয়ে বাজেটের ভিতর সবচেয়ে সেরা ফোনটি বেছে নিন। স্পেসিফিকেশন দেখে আপনি কেবল প্রাথমিকভাবে আপনার পছন্দের ডিভাইসটি কিনবেন। সেটে আসলেই পারফরম্যান্স কেমন, বিল্ড কোয়ালিটি, ডিসপ্লে কোয়ালিটি ইত্যাদি বিষয়গুলো আপনাকে সেট হাতে নিয়ে দেখতে হবে। তাই নিজে নেড়েচেড়ে না দেখে কেবল স্পেসিফিকেশনের উপর ভিত্তি করে আবার ফোন কিনতে যাবেন না যেন!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:২৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×