somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড: ইউনুস, হেফাজত ও সমসাময়িক ভাবনা

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস পৃথিবীর ইতিহাসে সপ্তম ব্যক্তি যিনি শান্তিতে নোবেল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল স্বর্ন পদক অর্জন করলেন। তিনি প্রথম মুসলিম হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল স্বর্ন পদক অর্জন করলেন এবং অবশ্যই একমাত্র বাংলাদেশী যিনি এই তিনটি সম্মানই অর্জন করেছেন। বাংলাদেশী হিসাবে গর্ব করার মতো যে কটি জিনিস এখনো অবশিষ্ট আছে তার একটি হলেন প্রফেসর ইউনুস। সারা বিশ্ববাসীর কাছে তিনি বাংলাদেশকে চিনিয়েছেন নতুন করে। তলাবিহীন ঝুড়ির গ্লানি মুছিয়ে উদীয়মান অর্থনীতির বাংলাদেশের চিত্র একেছেন তিনি। অথচ আমাদের দূর্ভাগ্য। তার বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিংকে আমরা কাজে লাগাতে পারলাম না। ঈর্ষাপরায়ণতা আর প্রতিহিংসার বলি হলেন প্রফেসর ইউনুস। গ্রামীন বাংক থেকে ঋন নিয়ে কেও হয়তো কোটিপতি হননি, কিন্তু অভাব ঘুচিয়ে স্বচ্ছ্লতার পথ দেখেছে লাখো মানুষ। এটি অস্বীকার করি কি করে? ২টি দল গত ২২ বছরে যে পরিমান অর্থ এদেশ থেকে লোপাট করে নিয়েছে সেটি কি গ্রামীণ বাংকের আদায়কৃত সুদের থেকে শত গুন বেশী নয়? যে সকল মোসায়েব বুদ্ধিজীবি গ্রামীণ মডেল ব্যার্থ বলে মুখে ফেনা তুলেন তারা কি বিকল্প ব্যংকিং ব্যাবস্থার কোন মডেল দাঁড় করাতে পেরেছেন? আসলে এদেশে সবকিছুই দেখা হয় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন সে সরকারপন্থী গুণীজনেরা পায় একুশে পদক আর স্বাধীনতা পুরস্কার। কালেভদ্রে নিরপেক্ষ গুণীজনেরাও সে পুরস্কার পায় তবে বেশিরভাগ সময় তা মরণোত্তর। মাঝে মাঝে আক্ষেপ হয়, এতগুলো বছরেও আমরা উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছতে পারলামনা! এর কারণ খুঁজে অনেক সময় হয়রান হই। আজ একটা পুরনো কথা মনে পড়লো, যে দেশে গুনীর মর্যাদা দেয়া হয়না, সে দেশ নাকি কখনো উন্নতি করতে পারেনা।

বাংলাদেশের সংবিধানে সব ধর্মের অনুসারী এবং নারী-পুরুষের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এই সংবিধানই হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতিসংবলিত দলিল। হেফাজতে ইসলাম যে ১৩ দফা দাবি তুলেছে, তার মধ্যে সংবিধানের ওই মৌলিক নীতি ও বিধানের প্রতি কোনো শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পায়নি। তবে অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া অবশ্যই অপরাধ। যদি বলা হয় কোনো ব্লগারই সে অপরাধ করেনি তাহলে মিথ্যা বলা হবে। তবে গুটিকয়েকজনের জন্য সমস্ত ব্লগারকে নাস্তিক বলা শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধা লাভের নির্লজ্জ অপপ্রয়াস ও জঘন্য মিথ্যাচার। দেশে প্রচলিত আইনে সে দণ্ডের বিধান আছে। পাকিস্তানের মতো কিছু দেশ ব্লাসফেমী আইন করলেও তা পরিণত হয়েছে শিয়া সুন্নি দ্বন্দ্ব ও বিরোধীদের দমনের হাতিয়ারে। এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। সবাই যার যার ধর্ম নিজের অন্তরে ধারণ করে, সমাজে শান্তিতে সহাবস্থান করে। এটাই এ দেশের সমাজের চিরকালীন সৌন্দর্য। এদেশে বাঙালিত্ব ও ধর্মের মধ্যে রয়েছে অদ্ভুত সুন্দর সেতুবন্ধন। তাই এই ২০১৩ সালে কেউ যখন ওই ১৩ দফার নামে মধ্যযুগে এবাউট টার্ন করার রাস্তা দেখায় দেখায় তখন হতবাক হওয়া ছাড়া উপায় থাকেনা। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে যেমন আওয়ামী লীগ কিছুটা সুবিধা নিচ্ছে তেমনি হেফাজত থেকে পুরো সুবিধা নিচ্ছে বিএনপি-জামাত। আসলে চেতনা যখন সমষ্টির আস্থায় স্থান পায় না, যখন কথা ও কাজের মিল বন্ধন থাকে না, অনিয়ম যখন সমাজ ও রাষ্ট্রের নিয়মে পরিণত হয়, রাজনীতি যখন অপরাজনীতির হাতিয়ারে রূপ নেয় তখন সময়ে সময়ে জাতিকে এরূপ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। একথা নিশ্চিত করে বলা যায়-এটি পাকিস্তান বা আফগানিস্তান নয়, ধর্মের নামে অধর্ম ও অমানবিকতার চর্চা জাতি মেনে নেবেনা। তবে এর জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে যে ধরনের বাণিজ্য চলছে, রাষ্ট্রীয় চরিত্র থেকে তার অবসান হওয়া প্রয়োজন। চেতনায় শানিত ভাব থাকলে, ঐ চেতনার মহিমায় অন্ধকার আপনাআপনিই কেটে যায়।
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×