somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘ পাহাড়ের দেশেঃ প্রত্যাবর্তন

২৬ শে মে, ২০২০ দুপুর ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালে ঘুম থেকে উঠেই বারান্দায় গিয়ে দেখি দিনের প্রথম গায়ে রোদ মেখে কাঞ্জনজংঘা শুভ্র সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে। অনেক সময় (বর্ষা, শরত সিজনে বিশেষকরে) মানুষ কয়েকদিন অপেক্ষায় থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পায়না আর আমরা একদিন দার্জিলিং থেকেই তা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম ভেবে পুলকিত হলাম। নাস্তার পর চলে গেলাম ম্যাল এ, সকালের শুভ্র রোদের আলোতে রাতের চেয়ে অনেক বেশি মোহনীয় লাগছিল। ম্যাল চত্ত্বরেই পাহাড়ের উঁচুতে মহাকাল মন্দির নামে একটি বড় মন্দির আছে, এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে প্রায় ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি চক্রকার রাস্তা আছে যা ম্যাল এর এক পাশে শুরু হয়ে অন্য পাশে এসে শেষ হয়েছে৷ এই অসাধারণ সুন্দর রাস্তায় পরিভ্রমণ করতে গিয়ে দেখলাম এখানে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরো ভালোভাবে দেখা যায়, দুই পাশে উঁচু পাহাড় আর মাঝখানে রাস্তা। অনেকেই মর্নিং ওয়াকে বের হয়েছে, অনেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা পাশে রেখে এক্সারসাইজ করছে দল বেধে। অনেকটা সময় নিয়ে সে রাস্তায় কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ম্যাল এর অন্যদিকে রাস্তাটা যেখানে মিলেছে সেদিকটায় স্কুল, সরকারি অফিস এসব দেখতে পেলাম। দার্জিলিং এ মোটামুটি কমের মধ্যে ভালোমানের কাশ্মীরি শাল পাওয়া যায়, কিছু শাল কিনে নিলাম। শহরের খুব কাছেই দেখতে গেলাম বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার জাপানিজ টেম্পল। এই বৌদ্ধ মন্দিরটি জাপানি সাধুর অর্থায়নে তৈরি বলে একে জাপানিজ টেম্পল বলা হয়। ততক্ষনে শংকর দা চলে এসেছেন সিকিম থেকে (কর্মস্থল ওখানে), সিকিমের চা ও গিফট সাথে নিয়ে। একসাথে লাঞ্চ করার পর উনি বুদ্ধি দিলেন যে রাস্তায় এসেছি শিলিগুড়ি থেকে সে রাস্তায় না গিয়ে মিরিক হয়ে যেতে, এতে মিরিকটা দেখা হয়ে যাবে। এ রাস্তায় শিলিগুড়ি পৌছতে মোটামুটি ৪ ঘন্টার মত লেগে যায় তাই আমরা দাদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মিরিকের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিলাম।

অনেকটা পথ একটানা চলার পর গাড়িচালক জানালেন দার্জিলিং - মিরিক পথটি কিছুটা নেপাল সীমান্ত ছুঁয়ে গেছে আর আমরা নেপাল সীমান্তে পৌছে গেছি। গাড়ি থেকে নেমে নেপাল সীমান্তে একটি ছোট গেইট ও সীমান্ত রক্ষীদের তৎপরতা দেখতে পেলাম। মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে বিখ্যাত পশুপতি মার্কেট, ভারতীয় নাগরিকেরা শুধু আইডি দেখিয়ে নাম এন্ট্রি করে গাড়ি সমেত নেপালে ঢুকে যাচ্ছে; বাংলাদেশীদের ভিসা ছাড়া যাওয়ার সুযোগ নেই। কিছুক্ষণ পর থামলাম গোলপাহাড় ভিউ পয়েন্ট নামক একটি জায়গায়, এখানে গোলধারা চা বাগান ও চা কফি মোমো খাওয়ার কয়েকটি ভালো দোকান আছে। এখানে চা খেতে নেমে হঠাৎ বৃষ্টির মুখে পড়লাম, পাহাড়ে যা যেকোনো সময় হতে পারে। চারদিকে মেঘ ও কুয়াশার কারণে প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছিল, গাড়িচালক গাড়ির হিটার চালিয়ে দিলেন আবার যাত্রা শুরু হতেই। আমাদের ডান পাশে তখন বিরাটাকায় পাহাড় আর বাম পাশে পাইন গাছের লম্বা সারি ,মাঝ খানে পীচ ঢালা পথ, সামনে ঘন কুয়াশা আর মেঘের যুগলবন্দী। সে এক অপার্থিব অনুভূতি। অঞ্জন দত্তের গান বলছেঃ

"কুয়াশায় ঘেরা ভাসা ভাসা সেই পাইন গাছের ফাঁকে ফাঁকে রোদ্দুর
খাদের ধারে শুয়ে শুয়ে হাতে পায় হলদে সবুজ রং
ছিলনা বালাই সময়ের শুধু আকাশে একটা নেপালী গানের সুর..."

এরপর মিরিকের একদম স্বচ্ছ হ্রদের কাছে চলে গেলাম যার নাম সুমেন্দু হ্রদ। হ্রদের একদিকে বাগান, অন্য দিকে পাইন গাছের সারি। দুটি পাড়কে যুক্ত করেছে রামধনু সেতু। পুরো সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ হ্রদটিকে ঘিরে রেখেছে। পাহাড়ের ঠিক মাথার উপর তখন মেঘ খেলছে, এ কোন ভাবেই ক্যামেরায় বন্দী করার দৃশ্য নয়।চোখের লেন্সের মধ্যেই আজন্ম বন্দী হয়ে থাকবে এমন মুগ্ধকর দৃশ্য। অনেকে বোটে করে হ্রদে ঘুরে বেরাচ্ছে ,কেউবা ঘুরছে ঘোড়ায়। এখানে দাঁড়ালে নেপালের পাহাড়ের বেশ অনেকখানি অংশ এক নিমিষেই দেখে নেওয়া যায়। ৪৯০৫ ফুট উচ্চতার মিরিকে তখন কেবল মেঘ আর ঘন অরন্য, মনে হচ্ছিল একে অন্যকে আলিঙ্গন করে পাহাড়ের কোল ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। আর পাহাড়টাও কেমন নির্বিকার আয়েশি ভঙ্গিতে হেলান দিয়ে আছে আকাশের গায়। মিরিক পার হয়ে যাবার পর টুপ করে সন্ধ্যা লেগে এলো, পাহাড়ে সন্ধ্যা একটু আগেই আসে। গাড়ি ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামছিলো, পেছনে তাকিয়ে দেখছিলাম উপরের আলো ঝলমলে পাহাড়ী শহর।

অবশেষে সন্ধ্যা ৭ঃ৩০ এর দিকে পৌছলাম নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। ট্রেনের সময় রাত ৯ টা, পদাতিক এক্সপ্রেস যা আলিপুরদুয়ার - শিয়ালদহ রুটে চলাচল করে। যথাসময়ে ট্রেন চলে এলো, এবার আমাদের বগি ছিল 2AC মানে ২*২ এসি স্লিপিং কোচ। রাতের খাবার স্টেশনেই খেয়ে নিয়েছিলাম, ভ্রমণক্লান্তি এতো জেকে বসেছিল যে এক ঘুমে রাত পার হয়ে গেল - শিয়ালদহ নামলাম সকাল ৭ঃ২৫ এ। নাস্তা করার পর শিয়ালদহ স্টেশনের রিটায়ারিং রুম (সামান্য রূপি দিয়ে এখানে ঘন্টা ভিত্তিক ব্যাগ রাখা যায় টোকেন ব্যবস্থা সমেত) এ ব্যাগ লাগেজ জমা রেখে বের হলাম কলকাতা শহরটা একটু দেখবো বলে। হাতে সময় খুব কম, দুপুর দুইটায় বনগা লোকালে উঠতে হবে বেনাপোল যাবার জন্য। কলকাতার ঐতিহ্য হলুদ এম্বাসাডর ট্যাক্সি নিয়ে আমরা গেলাম হাওড়া ব্রিজ, ব্রিজের ওপারে হাওড়া রেলস্টেশনের দিক দিয়ে ঘাটে নেমে গঙ্গা দর্শনও করে নিলাম। পুরো যাত্রাপথেই কলকাতার রাজপথ, পুরনো বাড়ির শোভা তাড়িয়ে উপভোগ করেছি। এরপর বিদ্যাসাগর সেতু পার হয়ে গেলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কলকাতা শব্দ উচ্চারণ করতেই যার নাম আবশ্যিকভাবে চলে আসে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এতো বিশাল যে এখানে অনেকটা সময় কেটে গেল, তাও মিউজিয়াম এর ভেতরে ঢুকা ছাড়াই। এরপরের গন্তব্য শিয়ালদহ বিগ বাজার, হালকা শপিং করে স্টেশনে ঢুকে দুপুর ২ টার বনগা লোকালে উঠে পড়লাম। ৪ টার সময় বনগা স্টেশনে নেমে পেট্রাপোল গিয়ে বর্ডারের দুই পাশের ইমিগ্রেশন শেষ করে বাংলাদেশ ভূখন্ডে পা রাখতে বিকাল ৫ টা বেজে গেল। আর শেষ হল সারা জীবন মনে রাখার মতো মেঘ পাহাড়ের মায়াবী দার্জিলিং ভ্রমণ।

আগের পর্বঃ Click This Link




সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২০ দুপুর ২:০৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×