somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গল্প

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কয়েক দিন আগে দেশের প্রচার মাধ্যমসমূহে একটি খবর খুব ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। খবরটি হচ্ছে, সরকার শিগগিরই সারাদেশে পরিবার পিছু বিনামূল্যে দু'টি করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব বিতরণ করবেন। খবরটি শুনে অনেকেই উল্লসিত হয়েছেন। বাজারে বর্তমানে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী একটি বাল্বের দাম ৩০০ থেকে সাড়ে তিনশ' টাকা। অনেকেই ভাবছেন ছয়শ' সাতশ' টাকার দু'টি বাল্ব যদি বিনামূল্যে পাওয়া যায় তাহলে মন্দ কি? দেশে এখন ব্যাপকভাবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট চলছে। আমার এলাকায় এই পবিত্র রমযান মাসে তারাবিহ পড়তে গিয়ে আজ পর্যন্ত কখনো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যায়নি। প্রতিদিনই এই সময়ে কমপক্ষে দু'বার বিদ্যুৎ যায়। আর দিন রাতের হিসাব করলে তো তার বর্ণনা দেয়াই কঠিন। সারা দিনের রোযার অবসাদ এবং শরীরের জ্বালা-পোড়ার মধ্যে লোডশেডিং এবং বাসা বাড়ির প্রচন্ড গরমের যন্ত্রণা কেমন ভুক্তভোগীরাই তা শুধু অনুভব করতে পারেন। অর্থাৎ সরকার বিদ্যুৎ দিতে পারছেন না তার পরিবর্তে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব দিয়ে মানুষের ক্ষতিটা পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন বলেই মনে হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে সাশ্রয়ী বাল্ব দিয়ে কি হবে এই প্রশ্নও কেউ কেউ করছেন। সরকার এর আগে দিনের আলো সংরক্ষণের লক্ষ্যে ঘড়ির কাঁটা এক ঘন্টা এগিয়ে এনেছিলেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এই ঘটনার পর কয়েকদিন ধরে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিদ্যুৎ সাশ্রয় তথা দিনের আলো সংরক্ষণের একটা হিসাব দিয়ে আসছিলেন যদিও তার কথা দেশের মানুষ বিশ্বাস করেনি। কেননা ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে নেয়ার পর লোডশেডিং এর অবস্থা প্রতিদিনই খারাপ হয়েছে, ভাল হয়নি। এই অবনতি এখনো অব্যাহত রয়েছে। অবশ্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর এতে প্রমোশন হয়েছে। তিনি হোম-এর দায়িত্ব পেয়েছেন। এই প্রমোশন বিদ্যুৎ খাতে তার ব্যর্থতার জন্য না রাজনৈতিক প্রতিদ্বনিদ্বদের ঠেঙ্গিয়ে গণতন্ত্রের আওয়ামী সংস্করণ প্রকাশের জন্য তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ও তার অনুসারী বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা করে পুলিশ যেভাবে তাদের পিটিয়েছে তাতে নতুন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পৌরুষ যে আছে তা অনেকেই টের পেয়েছেন। অবশ্য দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াত-শিবির ও অন্যান্য বিরোধীদল আগে থেকেই তা টের পেয়ে আসছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে খানা বা পরিবারের সংখ্যা হচ্ছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে শহর ও পল্লী এলাকায় ছিন্নমূল পরিবারের সংখ্যা হচ্ছে ৩৭ লাখ। অর্থাৎ ২ কোটি ৪৯ লাখ পরিবারের বসতবাড়ি আছে। এই হিসাব অনুযায়ী শহর এলাকার ৮৬.২৫ শতাংশ এবং পল্লী এলাকার ৩৮.৭৩ শতাংশ পরিবারে বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করা হয়। এদের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ কোটি ৫৪ লাখ ৩৮ হাজারে। প্রত্যেক পরিবারকে দু'টি করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব দিতে হলে সরকারের খরচ পড়বে ৯২৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা থেকে ১০০৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা (প্রতিটি বাল্ব তিনশ' থেকে সাড়ে তিনশ' টাকা দরে)। আমি বাজেট ঘেটে দেখেছি, এই টাকার বরাদ্দ বাজেটে নেই। সরকারকে যদি এই অর্থ ব্যয় করতে হয়, তাহলে হয় বরাদ্দ পুনঃযোজন অথবা থোক বরাদ্দ থেকে এই টাকা নিয়ে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব বিতরণ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ করতে হবে এবং এজন্য একনেকের সম্মতির প্রয়োজন হবে।সরকার হয়ত তা করবেন কিন্তু এতে অন্নহীনের অন্ন কিংবা বস্ত্রহীনের বস্ত্র অথবা কর্মহীনের কর্ম যে জুটবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায়।আগেই বলেছি বিদ্যুৎ যদি না থাকে তাহলে সাশ্রয়ী বাল্বে লাভ কি? লাভ হয়ত আছে তবে দেশের মানুষের নয়,দলের।তিন কোটি ৮ লাখ ৭৬ হাজার বাল্ব তৈরি ও বিক্রি করে দলীয় কোনও শিল্পপতির পক্ষে রাতারাতি শীর্ষ ধনীতে রূপান্তরিত হবার একটা বিরাট সুযোগ এখানে সৃষ্টি হবে।বাল্বের বিল ও তা পরিশোধের শত ভাগ গ্যারান্টি থাকলেও সব যে কেনা ও বিতরণ হবে তার গ্যারান্টি যে থাকবে না সরকার ও তার দলীয় ক্যাডারদের আট মাসের আচরণের অভিজ্ঞতা থেকে তা সহজেই বুঝা যায়।এই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের বিপরীতে ৮০ শতাংশ ভুয়া বিল সহজে ধরে নেয়া যায় এবং যথাস্থানে নির্দিষ্ট অংক দেয়ার পর অবশিষ্ট টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দল, অঙ্গদল ও উপদলের নেতা-কর্মীদের মারামারিতে কতজন ‘শহীদ' হয় তা এখন দেখার বিষয়।বাংলায় ঢেউ গুণে পয়সা কামাই-এর একটা প্রবাদ আছে।আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার অংগ সংগঠনগুলো প্রশাসনিক দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হলেও ঢেউ গুণে টাকা রোজগারের যে অনন্য সামর্থ্য প্রমাণ করতে সক্ষম হচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই।বাল্ব দিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় তারা করতে পারবেন না, দিনের আলো সংরক্ষণের নামে ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে দিয়ে দেশবাসীর সাথে প্রতারণা করে তারা তা প্রমাণ করে দিয়েছেন।
এখন মাগুরার একটা ঘটনা বলি। পাঠকরা নিশ্চয়ই ভোলেননি যে, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে জাতীয় পার্টির সমর্থনে আওয়ামী লীগ একবার ক্ষমতায় ছিল। ১৯৯৭ সালের দিকে মাগুরাতে একটি এনজিও গঠন করা হয়েছিল। এর নাম ছিল ‘মহারাজা ফরেকা'। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতায় মোহাম্মদপুর উপজেলা আরএলপিতে কর্মরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নেতৃত্বে এই এনজিওটির বিকাশ ঘটে। বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ঋণ দেখিয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থপুষ্ট আরএলপি প্রকল্পের প্রায় ৫০ লাখ টাকার একটি বিশাল তহবিল মহারাজা ফরেকায় ট্রান্সফার করা হয় এবং এই অর্থকে বিনিয়োগ হিসেবে প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু এর পুরো অংকই খেলাপীতে পরিণত হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মাইক্রো ফিনান্স বিভাগের তৎকালীন প্রধান ড. ফার্নান্ডো এবং ঐ বিভাগের সিনিয়র এনালিস্ট অশোক শর্মার প্রকল্প পরিদর্শনকালে ১৯৯৯ সালে তা ধরা পড়ে। এতে মহারাজা ফরেকার নাম রহস্যও বেরিয়ে পড়ে। শেখ মজিব পরিবারের জীবিত মৃত সাত সদস্যের নামের আদ্যক্ষর নিয়ে এই এনজিওটির নামকরণ করা হয়েছিল। যেমন ‘ম'তে মজিবর, ‘হা'তে হাসিনা, ‘রা'তে রাসেল ‘জা'তে জামাল (মহারাজা)। ‘ফ'তে ফজিলাতুন্নেছা, ‘রে'তে রেহানা, ‘কা'তে কামাল (ফরেকা)। প্রতিভার এক অদ্ভুত বিস্ফোরণ! ধরা পড়ার পর অর্থ নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাবার পূর্বে এর নেতারা নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক এবং এজন্য বিএনপি-জামায়াতের রোষানলে পড়ার কথা বলতে ভোলেনি। ঐ সময়ে মহারাজা ফরেকা ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও তার অংগ সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীরা ‘বঙ্গবন্ধু' ও তার পরিবার সদস্যদের নামে হাজার হাজার সংগঠন গড়ে তুলে দেশব্যাপী লুটপাটের মহাযজ্ঞ শুরু করেছিল, যার ধারা বর্তমান মেয়াদে আরো জোরালোভাবে দেখা দিয়েছে বলে মনে হয়। রাজধানীর অলি গলি ও আনাচে কানাচেসহ সারাদেশে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা এ ধরনের লীগ, সমিতি আর সংস্থার দখলে চলে গেছে। জাতীয়, দলীয় ও উপদলীয় বিভিন্ন বার্ষিকী ও দিবসে টাঙ্গানো লাখ লাখ পিছ, সাদা, কালো ও সবুজ কাপড়ের ব্যানার, পানাহারের আয়োজন, গান-বাজনা এবং ফুর্তির অকৃপণ অনুষ্ঠান তাদের চাঁদাবাজির সাক্ষ্যবহন করে। গ্যাস ব্লকের ন্যায় দেশ এখন টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির জন্য বিভিন্ন ব্লকে ভাগ হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক পক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী চক্রগুলোর পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক নেতাকর্মী এমপিরা এই ব্লকগুলোর ইজারা নিয়ে গেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। ফেনীর আতংক জয়নাল হাজারী পুনর্বহাল হয়েছেন, লক্ষ্মীপুরের তাহের পুনঃপ্রতিষ্ঠিত। নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান স্বমহিমায় ফিরে এসেছে। তিন সংসদ সদস্যের সহযোগী ও ছেলেদের নিয়ন্ত্রণে চলছে এখন কুষ্টিয়া। প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী কুমারখালী এবং খোকসা উপজেলার সর্বময় কর্তার দায়িত্ব পালন করছেন গোলাম মোরশেদ পিটার নামক এক যুবক। থানার ওসি কে হবেন, কাবিখার চাল গম কে পাবেন, কারা উপজেলার কোন কমিটিতে থাকবেন, ঠিকাদারী কে পাবেন না পাবেন সব ঠিক করে দেন এই পিটার। তিনি এমপি নন, তবে কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সুলতানা তরুণের ছেলে। থানা পুলিশ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা সকলেই পিটার ও তার বাহিনীর হাতে জিম্মি। টেন্ডার এওয়ার্ড, কাবিখা ও টিআরএর চাল গম বরাদ্দ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি থেকে শুরু করে এমন কোন কাজ নেই যার জন্য তাদের চাঁদা দিতে হয় না। কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আফাজউদিদন বিশ্বাসের ছেলে দৌলতপুর থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ ও নির্বাহী কর্মকর্তাদের তাদের কথায় উঠ বস করতে হয়। তাদের সম্মতি ছাড়া থানায় মামলা নেয়া হয় না। সর্বহারা বামপন্থী সন্ত্রাসীদের তারা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এবং অর্থবিত্ত উপার্জনে এই দলগুলো তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এলাকার খুন রাহাজানিসহ সকল অপরাধ তৎপরতায় তাদের ভূমিকা অগ্রগামী। যশোর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, নওগাঁ, নাটোর, চট্টগ্রামসহ সারা দেশ এখন সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের জন্য অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। দলকে এখন জাতীয়করণ করা হয়েছে। বিএনপিকে চুরির দায়ে অভিযুক্ত করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এখন নিজেই ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে বলে দেশব্যাপী অভিযোগ উঠেছে। চরমপন্থীদের মাথায় তুলে নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত অবস্থায় নিয়ে যাবার পর এখন যখন তারা র্যা বের ক্রস ফায়ারে পড়ছে এবং তাদের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই মৃত্যু বরণ করছে তখন ক্ষমতাসীন দল তাদের রক্ষার কৌশলী পদক্ষেপ নিয়েও এগিয়ে এসেছে।দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে যখন সর্বহারা কানেকশনের অভিযাগ উঠেছে তখনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সামছুল হক টুকু দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর চরমপন্থী দলগুলোর সদস্যদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহবান জানিয়েছেন।উপার্জন আর আধিপত্যের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্য এই কৌশলটি নিঃসন্দেহে অভিনব।দ্বিতীয় মেয়াদেও তারা একাজটি করেছিলেন, কিন্তু দেশবাসীর উপকারে আসেনি।
দলীয় নেতাকর্মীদের অপরাধের প্রতি মহাজোট সরকারের অন্ধ নীতি এবং বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের কারণে অকারণে অতি মাত্রায় ঠেঙ্গানোর প্রবণতা দেশে অপরাধ তৎপরতাকে ব্যাপকভাবে উস্কে দিচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস। সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর খুন রাহাজানি অগ্নি সংযোগসহ বিভিন্ন ফৌজদারী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত, আদালতে বিচারাধীন এবং সাজাপ্রাপ্ত শতশত দলীয় নেতা কর্মীদের শাস্তি ও বিচার থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এই অব্যাহতি প্রাপ্তদের মধ্যে সরকার ও দলীয় প্রধান, মন্ত্রী, এমপিসহ সিনিয়র জুনিয়ার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রয়েছেন। মামলার চরিত্র ও মেরিট বিবেচনা না করে ক্ষমতার জোরে নির্বিচারে এসব মামলা প্রত্যাহার করার ফলে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বিশেষ করে যারা ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদ নিয়ে অপরাধ জগতে বিচরণ করেন তারা উজ্জীবিত হয়েছেন এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাদের মধ্যে অবজ্ঞার সৃষ্টি হয়েছে। অপরাধের মাত্রা যতই বড় হোক, সাক্ষ্য প্রমাণ যতই নির্ভেজাল হোক তাতে কিছু আসে যায় না। তারা মনে করতে শুরু করেছে যে ক্ষমতাসীন দলের সাথে থাকলে সাত খুন মাফ, অন্য দলের ব্যাপারে এতে সন্দেহ থাকলেও আওয়ামী লীগের ব্যাপারে সন্দেহ নেই। অপরাধীদের এই দৃষ্টি ভঙ্গি আওয়ামী লীগকে ক্রিমিনালনির্ভর একটি দলে পরিণত করতে পারে বলে আমি মনে করি। দেশব্যাপী চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন-রাহাজানি, চুরি ডাকাতি বৃদ্ধির এটাই প্রধান কারণ।
মহা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকারের অধীনে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারবর্গ ছাড়া আর কারুরই জীবন, সম্পত্তি ও মান সম্মানের নিরাপত্তা নেই। দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীও যে নিরাপত্তাহীন এই সরকারের দু'মাস পূর্তির আগেই তা প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার কেবলমাত্র ছাত্র-লীগের সন্ত্রাস চাঁদাবাজি বন্ধ করতেও নির্মমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। তার এই পদত্যাগ সংগঠনটির অপরাধ প্রবণতাকে নতুন মাত্রা যোগ করে। সারা দেশ এখন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের হাতে পুরোপুরি জিম্মী। শোনা যায় যে দলীয় প্রধান তার নেতা কর্মীদের যা কামাবার শিগগির তা কামিয়ে নেয়ার গোপন নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা এই সুযোগ শিগগির শেষ হয়ে যাবে। এ ধরনের কথা শুরুতেও শোনা গিয়েছিল; তখন এর মেয়াদ ছিল তিন মাস। এখন আট মাস পার হয়েছে। একই কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে অপরাধীরা যেভাবে লাই পাচ্ছে তাতে এই মুক্ত পাখীগুলোকে কি আর কখনো খাঁচায় ফেরানো যাবে? সরকার ৩৮ বছরের পুরানো কল্পিত অপরাধের জন্য রাজনৈতিক প্রতিদ্বনিদ্বদের দায়ী করে বিচারের আওতায় আনার কথা বলছেন কিন্তু তাজা মেমোরীর খুনী সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক সাজছেন, এই বৈপরিত্যের শেষ কোথায়? অস্ত্র সজ্জিত, বর্ম ও হেলমেটে সুরক্ষিত পুলিশ ও দলীয় ক্যাডার দিয়ে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে কতকাল তারা জনতার রুদ্ররোষ ঠেকাবেন?
ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী তার এই অংগ সংগঠনের নেতৃত্ব ছাড়ার নাটক করলেও সন্ত্রাসের জন্য যুবলীগ ছাত্রলীগকে প্রথমাবস্থায় দায়ী করেননি। তিনি ও তার দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা নেত্রীরা বলেছেন যে এরা প্রকৃতপক্ষে ছাত্রদল ছাত্র শিবিরের সদস্য, নতুন করে ছাত্রলীগ, যুব লীগে ঢুকে ক্ষমতাসীন দলকে বিব্রত করছে। এখন সরকার এবং পুলিশ উভয়েই স্বীকার করছেন যে টেন্ডারবাজি চাঁদাবাজির সাথে সরকারি দল ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো জড়িত। এই স্বীকারোক্তি আসলে কি কোনও সুফল বয়ে আনছে? প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন যে তিনি যখন দেখেন যে ছাত্রলীগ চাঁদাবাজি এবং টেন্ডারবাজির সাথে জড়িত তখন তার খুব দুঃখ হয়। তিনি পয়সার ধান্দায় না গিয়ে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিয়েছেন। চমৎকার উপদেশ বটে। চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী-প্রধানমন্ত্রী সম্ভবতঃ এই প্রবচনটি ভুলে গেছেন। যাদের পাওনা জেল জরিমানা তাদের উপদেশ দিলে ক্রাইম বাড়ে বৈ কমে না। পুলিশের সামনে যখন টেন্ডারবাজি আর চাঁদাবাজি চলে তখন প্রশ্ন উঠে তাদের ভয় কোথায়? ভয় নিশ্চয়ই কোথাও আছে। তা না থাকলে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিতে অংশীদারিত্ব নিশ্চয়ই আছে এবং একারণেই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে একশান নেয় না। আবার যাদের শক্তির উৎস সরকার তাদের বিরুদ্ধে একশান নিয়ে পুলিশ বাহিনী নিজেদের চাকরির ঝুঁকি বাড়াতেও দ্বিধাবোধ করতে পারে। এমনও হতে পারে যে দলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে যে অস্ত্র আছে তা পুলিশের অস্ত্রের তুলনায় অধিকতর আধুনিক ও কার্যকর যার জন্য পুলিশ তাদের চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে তাদের শক্তির প্রকৃত উৎস খুঁজে বের করা দরকার। দ্বিতীয়ত: টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ পরিচয় জানা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেয়ার পেছনে পুলিশের অবস্থান ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। তা না হলে আজ হোক কাল হোক পুলিশকে অবশ্যই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। পুলিশ বাহিনীর যেসব সদস্য চাঁদাবাজির কাজে লিপ্ত, সড়ক-মহাসড়ক ও ট্রাফিক পয়েন্টে সর্বদা ট্রাক বাস ও বিভিন্ন যানবাহনের ড্রাইভারদের আটক করে পয়সা দিতে বাধ্য করে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজির তাৎক্ষণিক ফলাফল দেশের মানুষ এখন পর্যন্ত যা টের পেয়েছেন তার মাত্রা সামান্য।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×