বাবা মার স্বপ্ন ছিলো, বড় ছেলে সাইন্সে পড়বে। এই বিশ্ব বসতির বুকে ছেলের কীর্তি যখন দ্বীপ্তিমান সূর্যের মতো জ্বলবে, তখন বাবা মা- ও বেঁচে থাকবেন শত সহস্র বছর, সেই উজ্জ্বল ইতিহাসে!
সত্যি বলতে, বাবা মা কখনো এসব ভেবে ছেলেকে সাইন্সে পড়াননি। তাদের বিশ্বাস, ছেলে সাইন্সে পড়ে, মস্ত মানুষ হয়ে, রুক্ষ পৃথিবীতে একটু ভালো থাকবে।
কলেজে পড়তে এসে, ছেলেটার মনে হলো, স্যার ম্যাডামেরা পড়াতে পারেন না। যেসব ছেলে নিয়মিত ক্লাস করে, তারা মাথায় তেল দেয় না (আঁতেল)। এই প্রযুক্তির পৃথিবীতে যারা চুল বড় করে, ঘাড় বাঁকা করে মুখবইয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি দিতে পারে- তারাই প্রকৃত জ্ঞানী।
মা বাবা সন্তানের বিদ্যাভ্যাস দেখে পুলক অনুভব করে। রোজ সকাল সন্ধ্যা গৃহত্যাগ করে, বিজ্ঞানের জটিলতম প্রমাণগুলোকে আয়ত্ব করা নিশ্চয়ই সহজ নয়।
পুত্রভক্ত কিংবা অসচেতন পিতা যদি কোনদিন দেখতেন, তার আদরের সন্তান, চায়ের কাপে বিজ্ঞানের গোপনতম রহস্যসমূহ উন্মোচন করে চলেছে নিত্যদিন- তবে তার পুলক নিশ্চয়ই বাড়তো।
সহজ, সরল ভাবুক মাতাটি যদি কোনদিন জানতেন, অন্য ঘরের একটি মেয়ের প্রতি, তার পুত্রের দৃষ্টির সাথে অক্ষরজ্ঞানহীন একজন মানুষের দৃষ্টির কোন প্রভেদ নেই- তবে তিনি এক অনন্ত বিষ্ময়ে ডুবে যেতেন।
প্রিয় টংটিতে সন্তান দিব্যি দিন কাটাচ্ছে। ক্লাস করা লাগে না, পড়া বোঝা লাগে না। নাগরিক জীবনে এর চেয়ে সুখ নাই। সবচেয়ে বড় কথা- ধুয়াপানের শিল্পটা সন্তানের কাছে এত আকর্ষনীয় যে, যেকারো সামনে তার শিল্পী হওয়ার সাধ প্রচন্ড! ইউনিফর্ম পড়ে ধুয়াপানের সময় তার আত্ন অহংকার বলে- "নিজের বাপের টাকায় খাচ্ছি, কার কি?"
ধুয়াপান করতে গিয়ে সেই অর্থদাতা বাপের অনুমতি চাওয়ার প্রয়োজন, তার জ্ঞান সমুদ্রে কোন ঢেউ তোলে না।
রোদ বৃষ্টির দিন, সেই টংএ কাটে। সঙ্গী জোটে, আড্ডা হয়। আধুনিক দূরালাপনী যন্ত্রে, অদেখা কিশোরীর সাথে প্রেম হয়, দেখা হয় না। কলেজের সীমানায় ধুয়া ছাড়া হয়, ক্লাস করার সময় হয় না।
এই মহাজগতে, সময়- এক বৃদ্ধ বেদুইন
বাবা মা গত হন, দায়মুক্ত হন। সন্তান সংসারের রণভূমিতে নেমে পা হড়কায়। ছাপোষা মধ্যবিত্ত কিংবা দৈবগুণে একজন বড় নেতার বাম হাত, ভবিষ্যৎ এখানেই থমকে দাড়ায়।
টং এর প্রতি দুর্বার আকর্ষন আর নেই। কিন্তু ক্লাসে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে, টং এই যাওয়া হয়। চিৎকার করে কাঁদা যায় না, নিঃশব্দে ধূমপান করতে হয়।
.
.
.
.
.
((সামুর দুর্দিনে গুহা থেকে বের হলাম...। প্রার্থনা করি, এই দুর্দিন থাকবে না।
কলেজের ম্যাগাজিনের জন্য লেখাটি লিখেছি, এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো, ব্লগেও দিয়ে দিলাম। পড়ে মন্তব্য জানালে কৃতার্থ হই__লেখক))
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২০ ভোর ৬:৪১