somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহিলারা কি মসজিদে নামাজ আদায় করতে যেতে পারবে? হুজুররা কি বলে

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহ, শুরুতেই বলে রাখি যে, বুখারী মুসলিমের নাম শুনলে এতদিন শীয়াদের গা জ্বলত। আর এখন তাদের সাথে সাথে গা জ্বলে হানাফী মাযহাবের অনুসারীদের।
===========================================
যাইহোক, মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নিয়ে যে প্রসিদ্ধ হাদিসটি রয়েছে তা হচ্ছে,

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم‏.‏ ‏ "‏ إِذَا اسْتَأْذَنَتِ امْرَأَةُ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَمْنَعْهَا
#আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, তোমাদের কারো স্ত্রী যদি (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য মসজিদে যাওয়ার)অনুমতি চায় তা হলে স্বামী যেন তাকে বাঁধা না দেয়।
সহীহ বুখারি (ইফা), অধ্যায়ঃ ১০/ আযান | হাদিস নাম্বার: 831

এছাড়াও রাসূলুল্লাহ সা: এর যুগে মহিলারা মসজিদে সলাত আদায় করতেন।
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْقَاسِمِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، رضى الله عنها أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُصَلِّي الصُّبْحَ بِغَلَسٍ فَيَنْصَرِفْنَ نِسَاءُ الْمُؤْمِنِينَ، لاَ يُعْرَفْنَ مِنَ الْغَلَسِ، أَوْ لاَ يَعْرِفُ بَعْضُهُنَّ بَعْضًا‏
#আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এরপর মু’মিনের স্ত্রীগণ চলে যেতেন, অন্ধকারের জন্য তাদের চেনা যেত না অথবা বলেছেন, অন্ধকারের জন্য তাঁরা একে অপরকে চিনতেন না।
সহীহ বুখারি (ইফা), অধ্যায়ঃ ১০/ আযান | হাদিস নাম্বার: 830

কথা হচ্ছে মহিলাদের এই মসজিদে সলাত আদায়টিকেই কেন্দ্র করে বিখ্যাত বুজুর্গ ওলিপুরী (অনেকে বলে হাকিমপুরী) বলিয়াছেন, ///''দুষ্ট মৌলভীরা মসজিদে নারীদেরকে উপভোগ করতে/// চায়’’(নাউজুবিল্লাহ)। এই বুজুর্গ আরো বলিয়াছেন, ///বর্তমান যুগে নয়া একটা ফ্যাশন বাইর হইছে, সেটা কি? নারীরা মসজিদে গিয়া জমাতে শরীক হইয়া নামাজ পড়ব (আস্তাগফিরুল্লাহ)///

আল্লাহ এই বুজুর্গরে হেদায়েত দান করুন যেমন হেদায়েত দান করেছিলেন ওমর রা. সহ নওমুসলিম সাহাবীদের।
=========================================
এবার আরেক কম বয়সী বুজুর্গ উক্ত বিখ্যাত বুজুর্গের ফালতু কথার পিছনে খুটি দেওয়ার জন্য বুখারীর একটি হাদিস দিল কাটছাট করে।

হাদিসটি নিম্নরূপ:-
7. উমর (রা.) মহিলাদের মসজিদে যাওয়াকে অপছন্দ ও মাকরুহ মনে করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত, “উমর (রা.)এর এক স্ত্রী (আতেকা বিন যায়েদ) ফজর ও এশার নামাযের জামাতের জন্য মসজিদে যেতেন। তাকে বলা হল আপনি কেন নামাজের জন্য বের হন ? অথচ আপনি জানেন যে, হযরত উমর (রা.) মসজিদে যাওয়াকে অপছন্দ ও আত্মমর্যাদাবোধ পরিপন্থি মনে করেন। (সহীহ বুখারী)

=> অথচ বুজুর্গ পুরো হাদিসটা দিল না। ওমর রা: নিজের স্ত্রীর মসজিদে যাওয়াকে অপছন্দ ও আত্মমর্যাদাবোধ পরিপন্থি মনে করতেন কিন্তু তিনি মহিলাদের মসজিদে যাওয়াকে নিষিদ্ধ করেননি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলে। তিনি নিজের স্ত্রীর জন্য মসজিদে যাওয়াকে নিষিদ্ধ করেননি স্বামী হিসেবে। উপরের হাদিসটিতে ওমর রা: এর স্ত্রীকে প্রশ্ন করার বিষয়টি উক্ত লেখক সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন, কিন্তু স্ত্রী কি উত্তর দিয়েছিলেন সেটা ***গোপন**** করেছেন। সম্পুর্ণ হাদিসটি হচ্ছে,

ইবনুূু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাঃ)-এর স্ত্রী (আতিকাহ বিনত যায়িদ) ফজর ও ইশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর জামা’আতে মসজিদে হাযির হতেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কেন (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য) বের হন? অথচ আপনি জানেন যে, উমর (রাঃ) তা অপছন্দ করেন এবং মর্যাদা হানিকর মনে করেন। তিনি জবাব দিলেন, *****তা হলে এমন কি বাধা রয়েছে যে, উমর (রাঃ) স্বয়ং আমাকে (আতিকাহ বিনত যায়িদ) নিষেধ করছেন না? বলা হল, তাঁকে বাধা দেয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীঃ "আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করো না।"***
সহীহ বুখারি (ইফা), অধ্যায়ঃ ১১/ জুমু'আ | হাদিস নাম্বার: 854

লক্ষ্য করুন উপরে স্টার মার্ক করা অংশটুকু গোপন করা হয়েছে। উল্লেখ্য ওমর রা. রাসূলুল্লাহ সা: এর নির্দেশকে মান্য করে চুপ থেকেছেন। স্ত্রীকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেননি। আর বর্তমানের বুজুর্গরা ওমর রা: এর চেয়েও একধাপ বেশী এগিয়ে যে, তারা কেউ হাদিসের অংশ কাটছাট করে আবার তাদের কেউ মহিলাদের মসজিদে যাওয়াকে ফ্যাশন বলে, আবার কেউ মসজিদে যাওয়াকে মহিলাদের মসজিদে উপভোগ করার মতো জঘন্য কথা বলে।

ওমর রা: কে রাসূলুল্লাহ সা: এর নিষেধ বাঁধা দিয়ে আটকে রাখতে পেরেছে, কিন্তু বর্তমানের হানাফীদের পারে নাই। বড়ই আফসোসের বিষয়।

এছাড়া উক্ত বুজুর্গ আরো একটি হাদিস বুখারী মুসলিমের বলে উল্লেখ করেছে। অথচ সেটি আমরা তন্য তন্য করেও বুখারী মুসলিমে পেলাম না। বুজুর্গকে হাদিসটির হাদিস নাম্বার বুখারী মুসলিমের অধ্যায় অনুচ্ছেদ সহ উল্লেখ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। সে যে হাদিসটি দিয়েছিল তা হচ্ছে,

হযরত আনাস রা. এর বর্ননা অনুযায়ী পাওয়া যায়
" মাসজিদে নববী এর এক নামাযে ৫০ হাজার নামাযের সওয়াব পাওয়া যায়। "
[ বুখারী, খ.১ , পৃ. ১৫৯, মুসলিম, খ.১ , পৃ.৪৪৬ ]

উপরোক্ত হাদিসটি রয়েছে, ইবনে মাজাহতে। হাদিসটি নিম্নে দেওয়া হল।
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا أَبُو الْخَطَّابِ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا رُزَيْقٌ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ الأَلْهَانِيُّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ صَلاَةُ الرَّجُلِ فِي بَيْتِهِ بِصَلاَةٍ وَصَلاَتُهُ فِي مَسْجِدِ الْقَبَائِلِ بِخَمْسٍ وَعِشْرِينَ صَلاَةً وَصَلاَتُهُ فِي الْمَسْجِدِ الَّذِي يُجَمَّعُ فِيهِ بِخَمْسِمِائَةِ صَلاَةٍ وَصَلاَةٌ فِي الْمَسْجِدِ الأَقْصَى بِخَمْسِينَ أَلْفِ صَلاَةٍ وَصَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي بِخَمْسِينَ أَلْفِ صَلاَةٍ وَصَلاَةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ بِمِائَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ
আনাস ইবনুূু মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোন ব্যক্তির নিজ ঘরে এক ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) পড়ার সওয়াব এক ওয়াক্ত সালাতেরই সমান, তার পাড়ার বা গোত্রের মাসজিদে তার এক সালাত (নামায/নামাজ) পঁচিশ সালাতের সমতুল্য, জুমুআহ মাসজিদে তার এক সালাত (নামায/নামাজ) পাঁচ শত সালাতের সমান। মাসজিদুল আকসায় তার এক সালাত (নামায/নামাজ) পঞ্চাশ হাজার সালাতের সমতুল্য, আমার মাসজিদে তার এক সালাত (নামায/নামাজ) পঞ্চাশ হাজার সালাতের সমতুল্য এবং মাসজিদুল হারামে তার এক সালাত (নামায/নামাজ) এক লাখ সালাতের সমতুল্য।
সূত্র: সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ ৬/ সলাত কায়িম করা ও নিয়ম-কানুন | হাদিস নাম্বার: 1413

Click This Link
হাদিসটির সানাদে أَبُو الْخَطَّابِ الدِّمَشْقِيُّ থাকার কারণে হাদিসটি যঈফ। কারণ তিনি মাজহুল (অজ্ঞাত)। সুতরাং হাদিসটি দিয়ে দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। আর যে হাদিস দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য না, সেটাকে বুখারী মুসলিমের হাদিস বলাটা খুবই মারাত্মক একটা ব্যাপার।


বুজুর্গকে বলছি যে, আপনি """এক নামাযে ৫০ হাজার নামাযের সওয়াব পাওয়া যায়"""" মর্মে একটি সহীহ হাদিস আরবী ইবারত ও সানাদসহ আমাদের সামনে পেশ করুন।

সময় স্বল্পতার কারণে শুধুমাত্র দুটি হাদিস নিয়ে আলোচনা করলাম। ইনশাআল্লাহ সময় পেলে সবগুলো হাদিস নিয়েই আলোচনা করব।

পরিশেষে বলতে চাই,
আমরা মুসলিমরা মহিলাদের মসজিদে গিয়ে স্বলাত আদায় করাকে হারাম মনে করি না।
আমরা মুসলিমরা আমাদের মহিলাদের যথাযথ পর্দা করে মসজিদে যেতে বাধা দেই না।
আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমীন।

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×