somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডানা ভাঙ্গা পাখি

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আব্দুল্লাহ আফফান

সামিয়া বাড়ির পেছনে খেলছে। বন্ধুদের সাথে প্রায়ই সে কানামাছি খেলে। কানামাছি তার প্রিয় খেলা। খেলতে খেলতে দেখে একটা পাখি মাটিতে ডানা ঝাপটাচ্ছে। উড়তে গিয়েও উড়তে পারছে না। সামিয়া খেলা ফেলে দৌঁড়ে আসে পাখিটার কাছে। আলতো করে তুলে নেয় কোলে। সামিয়ার হাতে পাখি দেখে সবাই ওকে ঘিরে ধরে। সবাই পাখিটাকে ধরতে চায়। সামিয়া কাউকে ধরতে দেয় না।

দে না পাখিটা।
না দেয়া যাবে না।
দিলে কি হয়।
সামিয়া খানিকটা ধমকের স্বরে বলে, কেউ ধরবে না। দেখছো না পাখিটা উড়তে পারছে না।

সামিয়া পাখিটাকে আদর করে। গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। পরম মায়া আর মমতায় আদর করতে করতে বাড়ি নিয়ে যায় পাখিটাকে। সাদিকা (সামিয়ার আম্মু) হাতের কাজ করছিলো ঘরে।
আম্মুকে সামিয়া বলল, দেখো না আম্মু পাখিটা উড়তে পারছে না। ওর কী
হয়েছে? উড়তে পারছে না কেন?
সাদিকা পাখিটার ডানা ধরে বুঝে পাখিটার ডানা ভেঙ্গে গেছে। সাদিকা বলল, ওর
ডানা ভেঙ্গে গেছে আম্মু, তাই উড়তে পারছে না।

ও আর উড়তে পারবে না?
অবশ্যই পারবে ডানাটা ভাল হলেই আবার আগের মতো উড়তে পারবে।
আচ্ছা আম্মু ওর কি অনেক কষ্ট হচ্ছে।

হ্যাঁ আম্মু, ওর অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে।

সাদিকা যত্ন করে পাখির ডানাকে শরীরের সাথে বেঁধে দেয়। আম্মু কী করছে সামিয়া আগ্রহ ভরে দেখে।

পাখির ডানা বাঁধা দেখে সামিয়া বলে, আম্মু ডানা বাঁধা থাকলে ও উড়বে কিভাবে? তুমি ওর ডানা বাঁধছ কেনো?
আম্মু বলে, ও এখন উড়বে না মা। যখন ভালো হয়ে যাবে তখন এটা কেঁটে দিব। দেখবে পাখিটা আবার আগের মতো উড়তে পারবে। তুমি পাখিটাকে খাঁচায় রেখে দাও।

সামিয়া পাখিটাকে খাচায় রেখে ওর জন্য খাবার আনতে যায়। সামিয়া বাটিতে খাবার ও পানি এনে খাঁচায় পাখিটিকে খেতে দেয়।



সেদিনের পর থেকে সামিয়ার অধিকাংশ সময়ই কাটে পাখিকে নিয়ে। বাহিরে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে বললেই চলে। বন্ধুরা খেলার জন্য ডাকে তাতেও সামিয়া পাখির খাঁচা ছেড়ে যায় না। সারাদিন খাঁচার সামনে বসে থাকে। পাখির সাথে কথা বলে। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম বলে যে কিছু আছে তাও যেন সে একেবারেই ভুলে গেছে।

সামিয়ার যত্নে কয়েক দিনেই পাখিটি ভাল হয়ে ওঠে। ব্যান্ডেজ খুলে দিয়েছে সাদিকা। এখন সে খাঁচায় একটু একটু উড়ে। বিকেলে সামিয়া ও তার আম্মু খাঁচা নিয়ে বাগানে যায়। আজ সামিয়ার মনটা ভীষণ খারাপ। একদিকে ভালোও লাগছে; পাখিটা সুস্থ হয়ে গেছে, উড়তে পারে। এ কয়েকদিনে পাখিটার সাথে ভাব হয়ে গেছে তার। পাখি খাঁচা আটকে রাখা ঠিক না দেখে খারাপ লাগলেও পাখিটাকে ছেড়ে দিতে এলো তারা।

সামিয়া খাঁচার দরজা খুলে দিলে ফুড়ুৎ করে বের না হয়ে খাঁচার মধ্যে বসে থাকে পাখিটা। সামিয়া খাঁচার মধ্যে হাত দিয়ে পাখিটাকে বের করে উড়িয়ে দিলো। ডানা ঝাঁপটে একটা ডালের উপর গিয়ে বসে পাখিটা। সামিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ছল ছল চোখে। সামিয়ারও ভীষণ মায়া লাগে। অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে সামিয়া। মনটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তার পরেও সে কাঁদছে না। পাখিটা এ ডাল ও ডাল করে দৃষ্টির আড়ালে চলে যায় একসময়।

এদিকে সাদিকা সামিয়ার ছলছল চোখ দেখেও কিছু বলল না। সাদিকা বাতাসে ধানের দোল খাওয়া দেখছে। দেখছে ফড়িংয়ের ছুটোছুটি, প্রজাপতির উড়ো উড়ি। দেখতে দেখতে পশ্চিমাকাশ সূর্য ডোবার কথা জানান দিলো। আকাশটা লাল হয়ে ওঠলো।

পাখিটাকে এখন কোথায়ও দেখা যাচ্ছে না। সামিয়া পাখির চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে পাখিটা আবার এ পথেই তার কাছে ফিরে আসবে। হয়ত এখনি দেখা যাবে পাখিটা আশেপাশে কোন এক ডালে বসে আছে। সামিয়ার মনটা ভার হয়ে আসছে, বারবার মনে পড়ছে পাখির সঙ্গে কাটানো মুহুর্তগুলো। মনে না করতে চাইলেও মনে পড়ে যাচ্ছে। সামিয়ার চোখ বেয়ে অজান্তেই টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পরে।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:৩৭
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×