দিনটা অন্যান্য দিনের মতোই শান্ত। তবুও অন্যদিনের চেয়ে আলাদা। সংক্ষিপ্ত সফরে নারায়গঞ্জে যাচ্ছি। সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হলাম। হোটেলে নাস্তা খেয়ে কমলাপুরের নারায়ণগঞ্জ প্লাটফর্ম থেকে টিকেট কাটলাম। ট্রেন ছাড়ার আগ মুহুর্তে টিকেট কেটেছি। তাই দেরি না করে ট্রেনে বসলাম। পাঁচ মিনিট দেরিতে ট্রেন ছেড়েছে। নারায়ণগঞ্জে অপেক্ষা করছে মিঠুন। তার পুরো নাম শ্রী লোকনাথ মণ্ডল।
ট্রেন নিজের গতিতে এগুচ্ছে। বাইরের দৃশ্য দেখছি। বাজার, দোকান, মানুষ, বাড়ি-ঘর। চোখে পড়ল বেশ পুরোনো বাড়ি। বাড়ির বদলে মহল শব্দটাই মানানসই। সায়দাবাদের কাছে এমন মহলের কথা জানা নেই। মহল দেখে অবাক হয়েছি। চারপাশ দেখতে দেখতে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছে গেলাম। নারায়ণগঞ্জ বন্দর ট্রেনের শেষ স্টেশন। ট্রেন থেকে নেমে চারপাশটা ভালো করে নিলাম। স্টেশনে অবস্থান করা অস্থায়ী ভাবে বসবাস করা স্থায়ীদের দেখছি। তাদের জীবনযাত্রা বুঝার চেষ্টা করছি। যাত্রীদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে মিঠুনের ফোন এলো।
সে এসেই বন্দরের আশপাশে কি আছে জানাতে লাগলো। আমি নিরব শ্রোতা। যদিও আমি এ সব আগেই দেখে নিয়েছি। তবুও কথায় বাঁধা দিলাম না। সবকিছু দেখাতে দেখাতে নিয়ে গেলো নারায়গঞ্জ সরকারী গ্রন্থাগারে। নতুন করে গ্রন্থাগার বানানো হয়েছে। বেশ বড় করেই বানানো। জানতে পারলাম, নিচতলায় অডিটোরিয়াম, দ্বিতীয় তলা ও তৃতীয় তলা পাঠাগার। তবে করোনা সংক্রমন বাড়ার কারণে দোতলা বন্ধ ছিল। তৃতীয় তলায় বই নাড়াচাড়া করলাম। আপাতত পড়ার ইচ্ছা বা সময় কোনটাই নেই। তবুও চর্যাপদ নিয়ে একটা বই চোখে পড়ল। ওটা কিছুক্ষণ পড়লাম। অন্য টেবিলগুলোতে আট থেকে দশজন ছিল। এরা সবাই চাকরির পড়া নিয়ে ব্যস্ত। খুব মনোযোগের সাথে পড়ছে। পত্রিকা পড়ার রুমে দুই-তিনজন ছিল।
সেখান থেকে গেলাম চাষাড়া শহীদ মিনার। চাষাড়া শহীদ মিনারের চা বিখ্যাত। পুদিনার চা খেয়ে গেলাম চাষাড়া রেল স্টেশন। দুপুরের রোদ কিছুটা ঠাণ্ডা হলে বের হলাম। খেয়ে দেয়ে নদী পার হলাম। গন্তব্য সাবদি। সাবদি যাওয়ার মূল রহস্য গোপন রেখেছে মিঠুন। শুধু বলেছে, ‘জায়গাটা সুন্দর। অনেকে ঘুরতে যায়।’ আমিও মানা করলাম না। ভাবতে পারি নি আমার জন্য অপেক্ষা করছে বিস্ময়।
নদী পার হয়ে রিক্সা নিলাম। পুরো এলাকার সাথে পরিচয় করাতে করাতে নিয়ে যাচ্ছে মিঠুন। তার সাথে যোগ দিলো রিক্সা চালক। সাবদির আগে পড়ল সোনাকান্দা। সোনাকান্দা নামের সাথে পরিচয় ছোট বেলা থেকে। সোনাকান্দা পীরের ভক্ত আমাদের বংশের কয়েকজন। তার গুনগানও বেশ শুনছি। কিন্তু সেখানে রয়েছে দূর্গ। যা সোনাকান্দা কেল্লা নামে পরিচিত। পাশেই সোনাকান্দা কেল্লা জামে মসজিদ। রিক্সায় ছিলাম বিধায় খুব ভালো ভাবে দেখতে পারি নি। বিকেলের দিকে সাবদি পৌঁছালাম। সাবদি এলাকা জুড়ে ফুলের ক্ষেত। বিভিন্ন ধরণের, বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ হয় এখানে। কেউ কেউ ফুল সংগ্রহ করছে। কেউ গাছ লাগাচ্ছে। কেউ গাছের পরিচর্যা করছে। দর্শনার্থী নেহায়েত কম নয়। রিক্সা ছেড়ে দিলাম সাবদি বাজারে। সেখানে থেকে হেঁটে যাত্রা করলাম। রাস্তায় চায়ের দোকানে দাঁড়ালাম। দুই কাপ চা নিলাম রুবেল ভাইয়ের দোকান থেকে।
তার চা ব্যতিক্রম। অসাধারণ চায়ের স্বাদ। কোথায়ও এমন স্বাদ পাই নি। অন্তত ওই চা খাওয়ার জন্য সাবদি যাওয়া যায়। চা খেলাম ব্রক্ষ্মপুত্র নদের তীরে বসে। এর-ই মধ্যে আমাদের সাথে যোগ দিলো তৌফিক। মিঠুনের বন্ধু। আমার সাথেও পরিচয় আছে। সকালেই আসত। কিন্তু পরীক্ষার জন্য আসতে পারে নি। পরীক্ষা দিয়ে দেরি করে নি। যোগ দিয়েছে আমাদের সাথে।
দূর থেকে সরিষা ক্ষেত, ডালিয়া ক্ষেত, গাঁদা ক্ষেত দেখছি। দর্শনার্থীরা সরিষা ক্ষেত নষ্ট করে ছবি তুলতে ব্যস্ত। তাদের কেউ বাঁধা দিচ্ছে না। দিয়েও লাভ নেই। কথা শুনে না কেউ। তাই আশা ছেড়ে দিয়েছে কৃষকরা। ফুল নষ্ট না করার জন্য সর্তকবার্তা টানানো প্রতি ক্ষেতেই। সেদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তোলায় ব্যস্ত তারা। ফুল ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে কেউ কেউ। সেখান থেকে ঝাল মুড়ি (মুড়ি ভর্তা) খেয়ে বন্দরের দিকে রওয়ানা দিলাম।
নৌকা থেকে নেমে অলি গলি পেরিয়ে গেলাম শেখ রাসেল নগর পার্কে। সন্ধ্যা সেখানেই কাটালাম। পার্কে সন্ধ্যার সৌন্দর্য অবলোকন করে বন্দরে ফিরি। সেখানে আরেক দফায় চা খেয়ে স্টেশনে আসি। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন আসল। ৮টা ৪০ এর ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওয়া না দিলাম। পিছনে রেখে আসছি নারায়ণগঞ্জকে। দেখতে দেখতে কমলাপুর থামল ট্রেন। সুন্দর কিছু স্মৃতি, দারুন অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকা ফিরলাম। রেখে এলাম একগুচ্ছ মায়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:৪৩