somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারায়ণগঞ্জে নয় ঘন্টা

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দিনটা অন্যান্য দিনের মতোই শান্ত। তবুও অন্যদিনের চেয়ে আলাদা। সংক্ষিপ্ত সফরে নারায়গঞ্জে যাচ্ছি। সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হলাম। হোটেলে নাস্তা খেয়ে কমলাপুরের নারায়ণগঞ্জ প্লাটফর্ম থেকে টিকেট কাটলাম। ট্রেন ছাড়ার আগ মুহুর্তে টিকেট কেটেছি। তাই দেরি না করে ট্রেনে বসলাম। পাঁচ মিনিট দেরিতে ট্রেন ছেড়েছে। নারায়ণগঞ্জে অপেক্ষা করছে মিঠুন। তার পুরো নাম শ্রী লোকনাথ মণ্ডল।

ট্রেন নিজের গতিতে এগুচ্ছে। বাইরের দৃশ্য দেখছি। বাজার, দোকান, মানুষ, বাড়ি-ঘর। চোখে পড়ল বেশ পুরোনো বাড়ি। বাড়ির বদলে মহল শব্দটাই মানানসই। সায়দাবাদের কাছে এমন মহলের কথা জানা নেই। মহল দেখে অবাক হয়েছি। চারপাশ দেখতে দেখতে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছে গেলাম। নারায়ণগঞ্জ বন্দর ট্রেনের শেষ স্টেশন। ট্রেন থেকে নেমে চারপাশটা ভালো করে নিলাম। স্টেশনে অবস্থান করা অস্থায়ী ভাবে বসবাস করা স্থায়ীদের দেখছি। তাদের জীবনযাত্রা বুঝার চেষ্টা করছি। যাত্রীদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে মিঠুনের ফোন এলো।



সে এসেই বন্দরের আশপাশে কি আছে জানাতে লাগলো। আমি নিরব শ্রোতা। যদিও আমি এ সব আগেই দেখে নিয়েছি। তবুও কথায় বাঁধা দিলাম না। সবকিছু দেখাতে দেখাতে নিয়ে গেলো নারায়গঞ্জ সরকারী গ্রন্থাগারে। নতুন করে গ্রন্থাগার বানানো হয়েছে। বেশ বড় করেই বানানো। জানতে পারলাম, নিচতলায় অডিটোরিয়াম, দ্বিতীয় তলা ও তৃতীয় তলা পাঠাগার। তবে করোনা সংক্রমন বাড়ার কারণে দোতলা বন্ধ ছিল। তৃতীয় তলায় বই নাড়াচাড়া করলাম। আপাতত পড়ার ইচ্ছা বা সময় কোনটাই নেই। তবুও চর্যাপদ নিয়ে একটা বই চোখে পড়ল। ওটা কিছুক্ষণ পড়লাম। অন্য টেবিলগুলোতে আট থেকে দশজন ছিল। এরা সবাই চাকরির পড়া নিয়ে ব্যস্ত। খুব মনোযোগের সাথে পড়ছে। পত্রিকা পড়ার রুমে দুই-তিনজন ছিল।



সেখান থেকে গেলাম চাষাড়া শহীদ মিনার। চাষাড়া শহীদ মিনারের চা বিখ্যাত। পুদিনার চা খেয়ে গেলাম চাষাড়া রেল স্টেশন। দুপুরের রোদ কিছুটা ঠাণ্ডা হলে বের হলাম। খেয়ে দেয়ে নদী পার হলাম। গন্তব্য সাবদি। সাবদি যাওয়ার মূল রহস্য গোপন রেখেছে মিঠুন। শুধু বলেছে, ‘জায়গাটা সুন্দর। অনেকে ঘুরতে যায়।’ আমিও মানা করলাম না। ভাবতে পারি নি আমার জন্য অপেক্ষা করছে বিস্ময়।

নদী পার হয়ে রিক্সা নিলাম। পুরো এলাকার সাথে পরিচয় করাতে করাতে নিয়ে যাচ্ছে মিঠুন। তার সাথে যোগ দিলো রিক্সা চালক। সাবদির আগে পড়ল সোনাকান্দা। সোনাকান্দা নামের সাথে পরিচয় ছোট বেলা থেকে। সোনাকান্দা পীরের ভক্ত আমাদের বংশের কয়েকজন। তার গুনগানও বেশ শুনছি। কিন্তু সেখানে রয়েছে দূর্গ। যা সোনাকান্দা কেল্লা নামে পরিচিত। পাশেই সোনাকান্দা কেল্লা জামে মসজিদ। রিক্সায় ছিলাম বিধায় খুব ভালো ভাবে দেখতে পারি নি। বিকেলের দিকে সাবদি পৌঁছালাম। সাবদি এলাকা জুড়ে ফুলের ক্ষেত। বিভিন্ন ধরণের, বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ হয় এখানে। কেউ কেউ ফুল সংগ্রহ করছে। কেউ গাছ লাগাচ্ছে। কেউ গাছের পরিচর্যা করছে। দর্শনার্থী নেহায়েত কম নয়। রিক্সা ছেড়ে দিলাম সাবদি বাজারে। সেখানে থেকে হেঁটে যাত্রা করলাম। রাস্তায় চায়ের দোকানে দাঁড়ালাম। দুই কাপ চা নিলাম রুবেল ভাইয়ের দোকান থেকে।



তার চা ব্যতিক্রম। অসাধারণ চায়ের স্বাদ। কোথায়ও এমন স্বাদ পাই নি। অন্তত ওই চা খাওয়ার জন্য সাবদি যাওয়া যায়। চা খেলাম ব্রক্ষ্মপুত্র নদের তীরে বসে। এর-ই মধ্যে আমাদের সাথে যোগ দিলো তৌফিক। মিঠুনের বন্ধু। আমার সাথেও পরিচয় আছে। সকালেই আসত। কিন্তু পরীক্ষার জন্য আসতে পারে নি। পরীক্ষা দিয়ে দেরি করে নি। যোগ দিয়েছে আমাদের সাথে।

দূর থেকে সরিষা ক্ষেত, ডালিয়া ক্ষেত, গাঁদা ক্ষেত দেখছি। দর্শনার্থীরা সরিষা ক্ষেত নষ্ট করে ছবি তুলতে ব্যস্ত। তাদের কেউ বাঁধা দিচ্ছে না। দিয়েও লাভ নেই। কথা শুনে না কেউ। তাই আশা ছেড়ে দিয়েছে কৃষকরা। ফুল নষ্ট না করার জন্য সর্তকবার্তা টানানো প্রতি ক্ষেতেই। সেদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তোলায় ব্যস্ত তারা। ফুল ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে কেউ কেউ। সেখান থেকে ঝাল মুড়ি (মুড়ি ভর্তা) খেয়ে বন্দরের দিকে রওয়ানা দিলাম।

নৌকা থেকে নেমে অলি গলি পেরিয়ে গেলাম শেখ রাসেল নগর পার্কে। সন্ধ্যা সেখানেই কাটালাম। পার্কে সন্ধ্যার সৌন্দর্য অবলোকন করে বন্দরে ফিরি। সেখানে আরেক দফায় চা খেয়ে স্টেশনে আসি। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন আসল। ৮টা ৪০ এর ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওয়া না দিলাম। পিছনে রেখে আসছি নারায়ণগঞ্জকে। দেখতে দেখতে কমলাপুর থামল ট্রেন। সুন্দর কিছু স্মৃতি, দারুন অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকা ফিরলাম। রেখে এলাম একগুচ্ছ মায়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:৪৩
৯টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×