somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ: আলোচিত ও অনালোচিত কারণসমূহ পর্ব -১১

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ: আলোচিত ও অনালোচিত কারণসমূহ পর্ব -১১


ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরেও যতগুলি আইনানুগ রাষ্ট্রীয় যুদ্ধ সংঘটিত ) সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন যথাসম্ভব কম প্রাণহানিহয়েছে সবগুলিতেই রাসূলুল্লাহ ( ঘটাতে। শুধু মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক ও যোদ্ধাদের জীবনই নয়, উপরন্তু তিনি শত্র“পক্ষের নাগরিক ও যোদ্ধাদেরও প্রাণহানি কমাতে চেয়েছেন। বস্তুত ইসলাম যুদ্ধকে যে মানবিক রূপ প্রদান করেছে তা অন্য কোনো ধর্মেই পাওয়া যায় না। এখানে একটি তুলনা দেখুন। বাইবেলে যুদ্ধের ক্ষেত্রে বেসামরিক মানুষদের এবং বিশেষ করে সকল পুরুষ শিশুকে এবং সকল বিবাহিত নারীকে নির্বিচারে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র কিশোরী কুমারী মেয়েদেরকে ভোগের জন্য জীবিত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো দেশ যুদ্ধ করে দখল করতে পারলে তার সকল পুরুষ অধিবাসীকে নির্বিচারে হত্যা করতে হবে এবং নারী ও পশুদেরকে ভোগের জন্য রাখতে হবে। আর সেই দেশ যদি ইহূদীদের দেশের নিকটবর্তী কোনো দেশ হয় তবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তথাকার সকল মানুষকে হত্যা করতে হবে। বাইবেলে বলা হয়েছে:
“Kill every male among the little ones, and kill every woman that hath known man by lying with him. But all the women children, that have not known a man by lying with him, keep alive for yourselves.”
“And when the LORD the God hath delivered it tnto thine hands, thou shalt smite every male thereof with the edge of the swore; 14 but the women, and the little ones, and the cattle, and all that is in the city, even all the spoil thereof, shalt thou take unto thyself; and thou shalt eat the spoil of thine enemies, which the LORD thy God hath given thee. 15 Thus shalt thou do unto all the cities which are very far from thee, which are not of the cities of these nations. 16 But of the cities of these which the FORD thy God doth give thee for an inheritance, thou shalt save alive nothing that breatheth; 17 but thou shalt utterly destroy them.”


________________________________________
পক্ষান্তরে হাদীসের নির্দেশ হলো:
لا تغدروا ولا تمثلوا ولا تغلوا ولا تقتلوا الولدان ولا أصحاب الصوامع/ ولا تقتلوا وليدا طفلا ولا امرأة ولا شيخا كبيرا ولا تغورن عينا ولا تعقرن شجرة إلا شجرا يمنعكم قتالا أو يحجز بينكم وبين المشركين ولا تمثلوا بآدمي ولا بهيمة ولا تغدروا ولا تغلوا/ لا تقتلوا شيخا فانيا ولا طفلا ولا صغيرا ولا امرأة ولا تغلوا وأحسنوا إن الله يحب المحسنين/ لا تقتلوا صبيا ولا امرأة ولا شيخا كبيرا ولا مريضا ولا راهبا ولا تقطعوا مثمرا ولا تخربوا عامرا ولا تذبحوا بعيرا ولا بقرة إلا لمأكل ولا تغرقوا نخلا ولا تحرقوه/ ولا تخربوا عمرانا ولا تقطعوا شجرة إلا لنفع ولا تعقرن بهيمة إلا لنفع
যুদ্ধে তোমরা ধোঁকার আশ্রয় নেবে না, চুক্তিভঙ্গ করবে না, কোনো মানুষ বা প্রাণীর মৃতদেহ বিকৃত করবে না বা অসম্মান করবে না, কোনো শিশু-কিশোরকে হত্যা করবে না, কোনো মহিলাকে হত্যা করবে না, কোনো সন্ন্যাসী বা ধর্মজাযককে হত্যা করবে না, কোনো বৃদ্ধকে হত্যা করবে না, কোনো অসুস্থ মানুষকে হত্যা করবে না, কোনো জনপদ ধ্বংস করবে না, খাদ্যের প্রয়োজন ছাড়া গরু, উট বা কোনো প্রাণী বধ করবে না, যুদ্ধের প্রয়োজন ছাড়া কোনো গাছ কাটবে না…। তোমরা দয়া ও কল্যাণ করবে, কারণ আল্লাহ দয়াকারী- কল্যাণকারীদেরকে ভালবাসেন।
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, কতল ও কিতাল বা হত্যা ও যুদ্ধ মূলত ইসলামে একটি নিষিদ্ধ কর্ম। যুদ্ধের ময়দান ছাড়া কোনো কাফিরকে হত্যা করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ও ) বলেছেন:অন্যান্য সাহাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (
من قتل معاهدا لم يرح رائحة الجنة وإن ريحها توجد من مسيرة أربعين عاما
“যদি কোনো ব্যক্তি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী অমুসলিম নাগরিক বা অমুসলিম দেশের অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে তবে সে জান্নাতের সুগন্ধও লাভ করতে পারবেন না, যদিও জান্নাতের সুগন্ধ ৪০ বৎসরের দুরত্ব থেকে লাভ করা যায়।”
শত্র“ রাষ্ট্র বা শত্র“তায় লিপ্ত অমুসলিমদের সাথেও পরিপূর্ণ ন্যায়পরায়ণতার সুষ্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে কুরআন কারীমে ইরশাদ করা হয়েছে:
ولا يجرمنكم شنآن قوم أن صدوكم عن المسجد الحرام أن تعتدوا
“তোমাদেরকে মসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দিয়েছিল বলে কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনই সীমালংঘনে প্ররোচিত না করে।”
অন্যত্র ইরশাদ করা হয়েছে
ولا يجرمنكم شنآن قوم على أن لا تعدلوا
“কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে।”
ঘ. জিহাদ বনাম সন্ত্রাস
এভাবে আমরা দেখছি যে, সন্ত্রাস ও জিহাদের মূল পার্থক্য হলো, জিহাদ রাষ্ট্র কতৃক পরিচালিত যুদ্ধ। আর সন্ত্রাস ব্যক্তি বা গোষ্ঠি কতৃক পরিচালিত যুদ্ধ বা সহিংসতা। দ্বিতীয় পার্থক্য হলো, জিহাদ ও কিতাল আইনানুগভাবে পরিচালিত যুদ্ধ। যেখানে শুধু যুদ্ধে জাড়িত যোদ্ধাদেরকে হত্যা করার অনুমতি রয়েছে। এই বিধান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আর সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে যোদ্ধা-অযোদ্ধা নির্বিচারে হত্যা করা হয়, যা ইসলামে সবচেয়ে ঘৃণিত একটি অপরাধ।


মুলঃ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
পি-এইচ. ডি. (রিয়াদ), এম. এ. (রিয়াদ), এম.এম. (ঢাকা)
অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×