somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাফি হত্যা কান্ড জড়িত নেই কারা ?

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি তারই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন। সেই অভিযোগে সিরাজকে কারাগারে যেতে হয়।

এতে তিনি এবং তার অনুগতরা রাফির ওপর ক্ষুব্ধ হয়। কারাগারে থেকেই রাফিকে হত্যার নির্দেশ দেন অধ্যক্ষ সিরাজ। রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

সাড়ে ৬ মাস আগে সারা দেশে আলোড়ন তোলা সেই হত্যাকাণ্ডের মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

সেখানে বলা হয়, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে রাফির মায়ের করা মামলার পর থেকেই ক্ষিপ্ত হন আসামিরা। সিরাজ গ্রেফতার হওয়ার পর আসামিদের কয়েকজন কারাগারে তার সঙ্গে দুই দফা দেখা করতে যায়।

রাফিকে হত্যার নির্দেশনা পেয়ে তারা পরিকল্পনা শুরু করে। পরিকল্পনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জড়িত ছিলেন অধ্যক্ষ সিরাজের অনুগতরা। এর মধ্যে জনপ্রতিনিধি, সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ছাত্র, অধ্যক্ষের আত্মীয় এবং রাফির সহপাঠীও ছিলেন।

পিবিআইয়ের ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে অধ্যক্ষ সিরাজকে এক নম্বর আসামি করা হয়। অভিযুক্ত ১৬ জন আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

রাফি হত্যায় কার কী ভূমিকা ছিল তা পিবিআইর তদন্তে উঠে এসেছে। হত্যার নির্দেশ এবং বাস্তবায়ন পর্যন্ত সবার ভূমিকা তুলে ধরা হল-

১. অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা : সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ না নিলেও নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, রাফির যৌন হয়রানির মামলা তুলে নিতে প্রথমে চাপ প্রয়োগ করা হয়। তাতে কাজ না হওয়ায় ভয়-ভীতি দেখানো হয়। পরে রাফিকে হত্যার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেন তিনি।

২. নূর উদ্দিন : রাফিকে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ সহযোগী নূর উদ্দিনের। অভিযোগপত্রে বলা হয়, রফির গায়ে আগুন দেয়ার আগে রেকি করা ছিল তার দায়িত্ব। আর ভবনের ছাদে আগুন দেয়ার সময় নিচে থেকে পুরো ঘটনার তদারকি করে সে।

৩. শাহাদাত হোসেন শামীম : রাফিকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন শামীম। সেজন্য রাফির প্রতি তার ক্ষোভ ছিল। অভিযোগপত্রে বলা হয়, হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে কার কী ভূমিকা হবে সেই পরিকল্পনা সাজান শামীম।

কাউন্সিলর মাকসুদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে তিনি তার বোরকা ও কেরোসিন কেনার ব্যবস্থা করেন। রাফির গায়ে আগুন দেয়ার সময় তিনি হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরেন।

তার জবানবন্দির ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বোরকা ও কেরোসিন ঢালার গ্লাসটি উদ্ধার করে পিবিআই।

৪. কাউন্সিলর মাকসুদ আলম : অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা গ্রেফতার হলে ২৮ মার্চ তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, বোরকা ও কেরোসিন কেনার জন্য তিনিই ১০ হাজার টাকা দেন। পিবিআই বলছে, পুরো ঘটনার আগাগোড়াই তিনি জানতেন।

৫. সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের : বোরকা ও হাতমোজা পরে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় জোবায়ের। রাফির ওড়না ছিঁড়ে দুই ভাগ করে পা বাঁধা এবং কেরোসিন ঢালার পর ম্যাচ দিয়ে আগুন ধরানোর কাজটি তিনিই করেন বলে তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্য।

৬. জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ : বোরকা পরে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়া জাবেদ। পা বাঁধা হলে পলিথিন থেকে কেরোসিন গ্লাসে ঢেলে তিনি রাফির গায়ে ছিটিয়ে দেন।

৭. হাফেজ আবদুল কাদের : রাফির ভাই নোমানের বন্ধু কাদের সেদিন মাদ্রাসার মূল ফটকে পাহারায় ছিলেন। রাফির গায়ে আগুন দেয়ার ২ মিনিট পরে তিনিই ফোন করে নোমানকে বলেছিলেন, ‘তার বোন গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।’

৮. আবছার উদ্দিন : ঘটনার সময় তিনি গেটে ছিলেন পাহারায়। মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়াও তার দায়িত্ব ছিল।

৯. কামরুন নাহার মনি : আসামি শামীমের দূর সম্পর্কের ভাগ্নি কামরুন্নাহার মনি ২ হাজার টাকা নিয়ে দুটি বোরকা ও হাতমোজা কেনেন। হত্যাকাণ্ডে তিনি সরাসরি অংশ নেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ছাদের ওপর রাফির হাত বাঁধা হলে তাকে শুইয়ে ফেলে বুকের ওপর চেপে ধরেন মনি। আগুন দেয়া হলে নিচে নেমে এসে আলিম পরীক্ষায় বসেন।

১০. উম্মে সুলতানা ওরফে পপি : অধ্যক্ষ সিরাজের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপি সেদিন রাফিকে ডেকে ছাদে নিয়ে যান। পরে মামলা তুলে নিতে চাপ দেন।

তাতে রাজি না হওয়ার নুসরাতের ওড়না দিয়ে তার হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে পা চেপে ধরেন।

১১. আবদুর রহিম শরীফ : ঘটনার সময় তিনি মাদ্রাসার ফটকে পাহারায় ছিলেন। পরে তিনি ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালান।

১২. ইফতেখার উদ্দিন রানা : মাদ্রাসার মূল গেটের পাশে পাহারায় ছিলেন।

১৩. ইমরান হোসেন ওরফে মামুন : মাদ্রাসার মূল গেটের পাশে পাহারায় ছিলেন।

১৪. মোহাম্মদ শামীম : সাইক্লোন সেন্টারের সিঁড়ির সামনে পাহারায় ছিলেন। কেউ যেন ওই সময় ছাদে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করা তার দায়িত্ব ছিল বলে অভিযোগ।

১৫. রুহুল আমীন : মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীন শুরু থেকেই এ হত্যা পরিকল্পনায় ছিলেন। ঘটনার পর পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।

ঘটনার পর শামীমের সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়। ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টাতেও তার ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়।

১৬. মহিউদ্দিন শাকিল : ঘটনার সময় সাইক্লোন সেন্টারের সিঁড়ির সামনে পাহারায় ছিলেন।

তথ্য সুত্র
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:০৪
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×