গত পোস্টের পর থেকে……
আমিনবাড়ি হইতে নৌকা নিয়া কেতুপুরের ঘাটে ফিরিলো চন্ডি আর লখ্যা। নৌকা ঘাটে ফিরাইতেই তারা দেখিতে পাইলো হোসেন মিয়া আর তাহার বড় ছেলে ইব্রাহিমকে। হোসেন মিয়া বুড়া হইয়াছে। বয়স তাহার সত্তরের মাঝামাঝি।
প্রথম দুই বউয়ের কোনো সন্তান হয়না দেখিয়া হোসেন তাহাদের তালাক দিয়া তৃতীয় বিবাহ করিয়াছিলো। সেই বউয়ের কোল জুড়াইয়া ফুট ফুটে দুইখান সন্তান আসে। বড়ছেলের নাম ইব্রাহিম আর ছোট ছেলের নাম ইসমাইল । কিন্তু দুর্ভাগ্য হোসেন মিয়ার্। ছোট ছেলেটা বার বছর বয়সে পদ্মার পানিতে ডুবিয়া মরিয়াছে।
এরকিছু কাল পরে তাহার স্ত্রীও পদ্মার জলে ডুবিয়াছে।
জেলেপাড়ার লোকেরা এসবকে মানুষের অভিশাপ বলিয়াই বিশ্বাস করে। নিজ সম্রাজ্য স্থাপনের জন্য হোসেন অনেক গরীবের ঘর ভাঙ্গিছে। অনেককে ময়নার দ্বীপে লইয়া গেসে। আর তার পাপের ফলও হাতেনাতে পাইয়াছে। কিন্তু কেউ এসব হোসেনের সামনে কখোনোই বলে না।
বয়সের ভারে নুয়িয়ে পড়া হোসেন তার কাজের সব দায়িত্ব ইব্রাহিমের উপড় সমর্পন করিয়াছে। ইব্রাহিমই এখন ময়নার দ্বীপের সত্ত্বাধীকারী।
ময়নার দ্বীপের লোক সংখ্যা হাজার ছাড়াইয়াছে। সেখানে গড়িয়া উঠিছে নতুন নতুন বসতি। দ্বীপের আয়তন প্রতিনিয়তই বাড়িতেছে।ফসলও ফলিতেছে আগের চাইতে ভালো।
ময়নার দ্বীপে এখন ধান,গম,ভুট্টার পাশাপাশি নতুন নতুন সবজি ও ফসল জন্মাইতে শুরু করিয়াছে। আর এসবই হোসেনের কৃতিত্ব। কিন্তু হোসেন নিজে কখনোই নিজেকে সাফ্যলতার উচ্চশিখরে নিতে চায় নাই। সে সব কৃতিত্ব ময়নার দ্বীপের বাসিন্দাদের দিয়াছে। আর বলিয়াছে সব তোমাগোই কৃতিত্ব মিয়ারা আমিতো কেবল উসিলা মাত্র।
হোসেনকে দেখিতে পারেনা চন্ডি আর লখ্যা। কিন্তু হোসেনের সামনে তাহারা তা প্রকাশ করেনা। হোসেন আর ইব্রাহিমের সাথে কুশলাদি জিজ্ঞেস করিয়া তাহারা বাড়ি ফিরিলো।
পথিমধ্যে রাসুর সহিত তাহাদের দেখা হইলো। রাসু চন্ডিকে বলিলো চন্ডি কতা আছে হুইনা যা।
লখ্যার হাতে বাজারের পোটলাটা দিয়া চন্ডি রাসুর কাছে গেলো
রাসু-হুনছোস নি ময়নার দ্বীপের কুনু খবর?
-নাতো জেডা কিছু হুনি নাই,কি অইছে?
-আরে বেডা ময়নার দ্বীপত বলে পানি বাড়তাছে!মেলাহানি বলে তলায় গেসে!!মাইনষে বলে ওহান থিকা পলায় আইতাছে!
-কওকি?আমিতো কিছু হুনিনাই আমিনবাড়িত!কেডায় কইলো তোমারে?
-আমি গঞ্জে থেইকা হুনলাম। চারজন আইজ পলায় আইসে । আমি চাক্ষুস দেকছি।হেরাই কইলো।
-অইবার পারে।
-তা তর বাপের কুনু খবর পাইছস নি?
-আর খবর!!!বাঁইচা থাকলে একাই ফিরা আইবোনি।
এই বলিয়া চন্ডি বাড়ির পথে চলিতে শুরু করিলো। বাড়িতে গিয়া সে সবাইকে ঘটনা খুলিয়া বলিলো । ঘটনা শুনিয়া গোপি যেন তার বাপের প্রতাবর্তনের আশা বুকে বাঁধিলো।
লখ্যা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া বলিলো ভাইগ্যর থাকলে আব্বার ফিরাও আইতে পারে!!!এই বলিয়া সে বাহির হইয়া গেলো ।
ভাঙ্গা পা নিয়া খোড়াইতে খোড়াইতে গোপী পদ্মার পাড়ের দিকে আগাইয়া গেলো।
হারানো পিতার প্রতাবর্তনের আশায় চাহিয়া রইলো পদ্মার বিস্তীর্ন অঞ্চলের দিকে।
(চলবে………)