somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাফিয়ার মাফ নাই

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হলিউডের সিনেমাগুলির চাইতে বলিউডের সিনেমাগুলিকে আমাদের দেশের ঘটনাবলীর সাথে বেশি corelate করা যায়।

এই যেমন- প্রাক্তন শ্রমিক নেতা, এখনও শ্রমিক নেতা, সরকারের মন্ত্রী, পরিবহন মাফিয়ার কর্ণধারদের একজন, ইত্যাদি নামে যাকে নামাঙ্কিত করা যায়, সেরকম একজন ঘাঘু গডফাদার আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা কিভাবে তাদের হাজার কয়েক গুন্ডাবাহিনীর সাহায্য কোটি কোটি মানুষকে জিম্মি করে রাখে, হার এক্সেলেন্সির রাজত্বকে বুড়ো আঙ্গুল দেখায়, হাইকোর্টকে অবমাননা করে যায় বুক ফুলিয়ে, সেটা আমার প্রথমে বোধগম্য না হলেও, পরে বলিউডি পলিটিক্যাল মুভিগুলির জটিল প্লটের সাথে তুলনা করে ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি।

পুলিশ-law enforcing বাহিনীর সদস্যরা ব্যস্ত ছিলেন শাহবাগ এবং তদসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের ভয়াবহ অবস্থান ধর্মঘট প্রতিহত করতে; যাদের অযৌক্তিক দাবী হচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুতের মত অতিসস্তা দ্রব্যের ঘন ঘন দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ করা। আর, সেই সময়েই বড় বড় শহরগুলিতে যাত্রীবাহী বাসের পথ আটকে দেশদ্রোহী যাত্রীগুলিকে ঘাড় ধরে পথিমধ্যে নামিয়ে দিচ্ছিলেন নিষ্পাপ, মাসুম, কিউট পরিবহন শ্রমিকেরা। অনিল কাপুর অভিনীত যুগান্তকারী চলচ্চিত্র "নায়ক"-এর একটা দৃশ্য মনে পরে গেল।

ওই মুভিতেও রাস্তায় পথচারী এক ভার্সিটি-ছাত্রকে বাস দিয়ে উড়িয়ে গুড়িয়ে দেয় এক আদুরে বাস-ড্রাইভার। পরে, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে আসলে পুরো শহরজুড়ে কেয়ামতের প্রোমো দেখিয়ে দেয় পরিবহন শ্রমিকেরা। চলচ্চিত্রের কি অসাধারণ বাস্তবায়ন!

"নায়ক" মুভিতে অম্লেশ পুরীর চরিত্র, এবং অন্যান্য রাজনীতিজীবিদের চরিত্রের বাস্তব রূপ দিতে বরাবরই সক্ষমতা দেখিয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের ক্ষমতাসীনেরা। এই যেমন, শহর জুড়ে দাঙ্গা-ধর্মঘট শুরু হয়ে যাওয়ার পরে ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশ কমিশনার জরুরি ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী অম্লেশ পুরীকে ফোন করে। মূখ্যমন্ত্রী ফোনে বলেনঃ-

"কমিশনারের বাচ্চা, বেশি কাবিলতি দেখাইস না। তোর কিচ্ছু করার দরকার নাই। তামাশা দ্যাখ। ওরা ভাংচুর করতে করতে একসময় কাহিল হয়ে ঘরে ফিরে যাবে। সংঘাত আপনা আপনি থেমে যাবে। ততক্ষণে যা মরে মরুক।

এই দ্বন্দের একদিকে পরিবহন চালক আর শ্রমিকেরা- যারা আমাকে একাধিকবার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। আর, অন্যদিকে ক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজ, যারা ক্ষমতায় বসার আগে-পরে আমার জন্য কাজ করেছে। কারো বিপক্ষে যাওয়া যাবে না। দুই পক্ষই আমার চেয়ারের দুই পায়া!"

কি দারুণ ডায়লগবাজি!

হুঁশ-জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এরকম অভূতপূর্ব কাহিনী দেখেই আসছি অবিরাম।

ভেজাল-অবৈধ ঔষধ বাজেয়াপ্ত করে দোকান সীলগালা করে দেওয়ার কারণে ধর্মঘট ডেকে বসে ড্রাগ-ফার্মেসীগুলি।

খাল দখল করে মার্কেট বানানোকে উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে ভাঙ্গার নির্দেশ দেওয়ার পরে স্থানীয় কাউন্সিলর গিয়ে পুলিশকে বাধা দেয়, পুলিশ গ্রেফতার করে কাউন্সিলরকে, কাউন্সিলরকে মুক্তি দিতে আগ্রাসীভাবে থানা ঘেরাও করে এলাকার সেই বাসিন্দারাই, যারা বর্ষাকালে বৃষ্টি ছাড়াই কোমড়-পানিতে ডুবে থাকে সেই খাল ভরাটের কারণে।

নিম্নমানের পরিবেশে মেয়াদোত্তীর্ণ মাংস বিক্রির জন্যে জরিমানা করতে গেলে কসাইদের ছুরির সামনে পরতে পরতে বেঁচে যায় ম্যাজিস্ট্রেট এবং তার লোকেরা।

শহরের একটি বিশেষ স্থানে অবৈধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড উচ্ছেদে গেলে স্থানীয়-প্রভাবশালী সরকারদলীয় সন্ত্রাসী-ক্যাডার-কর্মীবাহিনীর আক্রমণের শিকার হয় পুলিশ-সদস্যরা; থাপ্পড় খান সম্মানিত ম্যাজিস্ট্রেট!

প্রতি মাসে পত্রিকা-টিভির খবরে ছোট-বড় বেশ কিছু এরকম খবর চোখে পরে। সাদা চোখে এগুলিকে সিন্ডিকেট বলে উড়িয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু, অপরাধ করেও অপরাধ অস্বীকার করা, অপরাধীকে মুক্তি দেওয়া এবং সাজা অস্বীকার করা, দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত জনগণকে জিম্মি করে রাখা, ব্যবসায়িক ফায়দার জন্য দেশের নীতি-নির্ধারকদের হাত করে জ্বালানি-গ্যাস-বিদ্যুতসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাপলুডু খেলা- এসব তো মাফিয়ার বৈশিষ্ট্য!

এসব মাফিয়া সবার উপরে। রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী-এমপি, পুলিশ-গোয়েন্দাবাহিনীগুলির সদস্য, বড় আমলা-কূটনীতিবিদ, আর্মি-বিজিবি, শীর্ষ পেশাজীবি-বুদ্ধিজীবি, রেজিস্টার্ড-unregistered ক্রিমিন্যাল-terrorist, ছাত্রলীগ-যুবলীগ, সবাই এইসব মাফিয়ার সামনে নস্যি, দুধভাত!

মাফিয়া প্রয়োজন অনুসারে এদের মধ্যে যখন যাকে ইচ্ছে, যেভাবে ইচ্ছে ব্যবহার করে। টাকা, হাতিয়ারের ভয়, প্রভাব, ইত্যাদি প্রয়োগ করে নিজেদের অনুকূলে সব নিয়ে আসে তারা।

জয়! মাফিয়ার জয়!

লেখার শেষে কিছু অবাস্তব কথা বলি। দেশের সরকার যদি আসলেই জনগণবান্ধব, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করত, তবে এই পরিবহন ধর্মঘট এর নামে দেশব্যাপী চলা অরাজকতাকে কঠোর হস্তে দমন করত।

এর পিছনের সব সিআইপি-ভিভিআইপি ব্যবসায়ী, শ্রমিক লীগের ধান্ধাবাজ নেতা-কর্মী, মন্ত্রী-এমপি সবাইকে রক্তচক্ষু দেখিয়ে শাসিয়ে দিত।

অরাজকতা বাস্তবায়নে মাঠে থাকা সব ছিঁচকে শ্রমিক-চালক-হেল্পারদের লাঠিচার্জ করে, প্রয়োজনে গুলিবর্ষণ করে, শূন্য পরে থাকা কারাগার কিংবা পঙ্গু হাসপাতালকে জনবহুল করে তুলত।

মনে রাখা উচিত, হাজার খানেক পাশবিক-বর্বর-উগ্র-অশিক্ষিত পরিবহন শ্রমিকের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ উচ্চশিক্ষিত-মার্জিত-মানবিকতাবোধসম্পন্ন বেকার তরুণ দেশের ঘরে ঘরেই আছে!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×