আমাদের দেশের ভিক্ষুকের সাথে, আমাদের দেশেরই বাড়িওয়ালা সম্প্রদায়ের অনেক মিল আছে।
বিশ্বে অনেক দেশে মার্চ থেকে শুরু করে, বিভিন্ন মেয়াদে, বিক্ষিপ্তভাবে, বাড়ি ভাড়া মওকুফ বা কমানোর মত ঘটনা ঘটেছে; সুদবিহীন লোনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে ভাড়াটিয়াদের জন্য কিছু জায়গায়।
বাংলাদেশে এসব খাটবে না। বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকৃষ্ট কিছু পেশা/জীবিকার একটি হল "বাড়ি বানিয়ে ভাড়া দিয়ে চৌদ্দগুষ্টিসহ বসে খাওয়া"। এমনকি বিদেশেও দেখেছি, বাংলাদেশীরা এখানে এসে, কয়েক বছর কোনরকমে খাটনি করে, একটি অতিরিক্ত ফ্ল্যাট কিনে, সেটা অতিরিক্ত ভাড়ায় ভাড়া দিয়ে, বাকি জীবন শুয়ে বসে খেয়েছে, গতরে শক্তি থাকার পরেও।
ভাড়াটিয়াদের কষ্ট ও দুর্ভোগ বাড়িওয়ালারা কখনোই বুঝবে না।
একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের উদাহরণ দিচ্ছি। বাবা একজন আইনজীবি, মা একজন শিক্ষিকা, দুই কন্যাসন্তান। কোর্ট বন্ধ, মামলা বন্ধ, মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাত বন্ধ। অতঃপর প্রায় দেড় মাস ধরে ভদ্রলোকের সব আয়রোজগার বন্ধ। শিক্ষিকার আয় মাসে ৫ হাজার টাকারও কম, অথচ পরিশ্রম ৫০ হাজার টাকার মানের। মেয়ে দুইটা ভার্সিটি লেভেলে পড়ালেখা করছে। তারা ছোটখাট টিউশনি করে হাতখরচ আয় করে।
খেয়েপরে কোন রকমে চলে নিতে পারে এরকম মধ্যবিত্ত পরিবার। কিন্তু, বিশাল একটা বোঝা হয়ে দাঁড়ায় মাসিক ঘর ভাড়া; যেটা কিনা মাসিক খাবার খরচের প্রায় ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি।
আমি যখন গত দুই মাস ধরে বাংলাদেশের মানুষের খাবারের ত্রাণের ফটোসেশনের বাহার দেখে হাসছি, ঠিক তখনই লক্ষ লক্ষ মধ্যবিত্ত পরিবার কিন্তু বিনা আয়ে প্রতি মাসে এতগুলা টাকা নিজেদের আজীবনের সঞ্চয় থেকে খরচ করে ফেলার পরে ঠিকই কাঁদছে।
অথচ, একটা বাড়ি বানিয়ে, এতগুলা বছর, এতগুলো মানুষের, প্রতিমাসের ভাড়া নেওয়ার পরেও, করোনা চলে যাওয়ার পরেও আজীবন ভাড়া পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও, "বাড়িওয়ালা" নামের নিকৃষ্ট জীবগুলি যখন ভিক্ষুকের মত ছোটলোকগিরি করে, তখন তাদের বিন্দুমাত্র লজ্জা করে না??