somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাইরালের আড়ালেঃ সুশান্তের সুইসাইড

১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্রোতের প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়ার অভ্যাস আমার কোন কালেই ছিল না। এই যেমন ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিষয় বাছাইয়ে আমি ভাইরাল বিষয়গুলি সচরাচর এড়িয়ে যাই; যদি সেগুলি আমার ব্যক্তিগত কোন কিছুর সাথে সম্পর্কিত না হয়।

খুব সম্ভবত কোভিডে বা এক্সিডেন্টে মারা গেলে সুশান্ত সিং রাজপুতকে নিয়ে আমি কিছু লিখতাম না। কেন জানি, তাকে আমার অভিনেতা হিসেবেও এতটা ভালো লাগতো না। তারপরেও কেন এখন এটা নিয়ে আলোচনা করছি?

অন্য অনেক কিছুর মতই এই ইস্যুতেও ফেসবুকবাসী দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছে, একজন আরেকজনের সাথে কামড়াকামড়ি করছে। রিজনেবল বা সেনসিবল প্রতিক্রিয়া খুব কম মানুষের কাছ থেকেই দেখছি। বাকিদেরকে আমি মানুষের পর্যায়ে মনেও করি নাহ।

কারণে বা অকারণে, কাজে কিংবা অকাজে, ফেসবুকে বা ইন্টারনেটে মানুষ এখন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় ব্যয় করছে। যে কারণে, একই রকম লেখা পড়ে বিরক্ত আসা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বিশেষত, যখন বাংলাদেশে উইপোকার মত মানুষ মারা যাচ্ছে মহামারীতে। তো মহামারীর জন্য কি সুশান্ত দায়ী, নাকি ভারত দায়ী? কিংবা যারা সুশান্তের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে কিছু বলছে, তারা যদি কোভিড নিয়ে বলে, কোভিড কি পিছনের দরজা দিয়ে পালাবে? কোভিড আসার পর থেকে, বাংলাদেশের মানুষ ফেসবুকে গ্রুপ ও পেইজ খুলে, যা যা করে আসছে, তার ঠিক কোনটা মানুষের জীবন বা জীবিকা বাঁচাতে কাজে এসেছে, সেই প্রশ্ন সবার কাছে রাখলাম।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আত্মহত্যা বা ডিপ্রেশন বা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভুল প্রতিক্রয়া দেখায়, ভুল ধারণা পোষণ করে। বিশেষত বাংলাদেশে। কেউ এসব নিয়ে তামাশা (ট্রল) করে, কেউ বা তাচ্ছিল্য করে, কেউ ট্যাবুর দৃষ্টিতে দেখে, কেউ করুণা করে। ঠিক যে এপ্রোচে ডিল করা দরকার, খুব কমজনেই তা করে, এবং জানে।

আমি ইন্টারনেটে কোথাও আলাদা করে সার্চ করে এই সুইসাইড ঘটনা নিয়ে কিছু পড়িনি, পড়ার দরকারও নেই; যা দেখছি, ফেসবুকের নিউজফিডের মানুষের পোস্ট ও মন্তব্য পড়েই জেনেছি।

সুশান্ত যে কি লেভেলের মেধাবী মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিল, সেটাও আজকেই জানলাম। ইঞ্জিনিয়ারিং ট্র্যাকে প্রফেশন ক্যারি অন না করে, সে তার প্যাশন অভিনয়কে প্রফেশন হিসেবে বেছে নিয়েছিল। খুব বড় একটা রিস্ক ও চ্যালেঞ্জ ছিল সেখানেই। বিনোদনজগতের কারোর আত্মীয় না হওয়া এই ছেলেটা ক্যারিয়ারের শুরুতেই নিশ্চয় পরিবার থেকে বাধার সম্মুখীন হয়েছিল। তারপরেও ছোট ও বড় পর্দায় সফল হয়েছিল।

মহামারীর স্বাস্থ্যগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ফলাফল তো আমরা সরাসরি দেখছিই; কিন্তু যেটা দেখছি না সরাসরি চোখ দিয়ে, সেটা হল মানসিক দিকগুলি। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্বের বাঘা বাঘা বৈজ্ঞানিক গবেষকেরাও পর্যন্ত প্রতিনিয়ত এই ব্যাপারটা নিয়ে সাবধান বাণী দিয়ে যাচ্ছেন। নরওয়ে/নিউজিল্যান্ডের মত উন্নত দেশগুলি কোভিডকে আয়ত্তে আনার পেছনে শুধু হাত ধোয়া বা দুরত্ব বজায় রাখার মত বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেয়নি; বরং মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য সবরকম পরামর্শ দিয়ে গিয়েছে ও এখনো যাচ্ছে। Pandemic এর সাথে যখন economic depression এবং global mental depression যোগ হয়, তখন সেটা হয়ে দাঁড়ায় Pandemonium। [লক্ষণীয়, এই দুই ডিপ্রেশনের অর্থ ভিন্ন]

আইসোলেশনে থাকা, কোয়ারেন্টাইনে থাকা, কোভিড আক্রান্ত হওয়া, পরিচিত জনদের আক্রান্ত বা মৃত্যুর সংবাদ শোনা, বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া, পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তা ঝুঁকি, চাকরিচ্যুত হওয়া, চাকরি না পাওয়া, বিয়ে না হওয়া, সামাজিক চলাফেরা বন্ধ হয়ে যাওয়া, ভাইরাসে ইনফেক্ট হওয়ার ভয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকা থেকে শুরু করে অনেক তুচ্ছ কারণেও মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে; এবং এটা শরীরে জ্বর-সর্দি হওয়ার মতই ঘটনা।

এই যে সুশান্তে মৃত্যুর খবর আরেকজনকে শেয়ার করতে দেখে নেগেটিভ রিয়েকশন দেওয়া- এটাও একধরণের মানসিক অসুস্থতা; অস্বস্তিবোধের সৃষ্টি।

কোভিডের ফলে বিপর্যস্ত জীবনযাপন, মায়ের মৃত্যু, পারসোনাল এসিস্টেন্টের মৃত্যু, মিডিয়ার অত্যাচার, আরো অজানা কারণ- এত সব আপনি-আমি হয়তো খুব সহজে সামাল দিতে পারতাম; এরকম মনে হতেই পারে কিবোর্ডের এই প্রান্তে বসে। ঠিক যেমন গ্যালারিতে বসে মাঠের খেলোয়াড়কে গালি দেওয়া খুবই সহজ। ব্যাকসিট ড্রাইভিং এ ওস্তাদ এই জাতির সামগ্রিক অনুন্নতির অন্যতম কারণ এই বদস্বভাব। "put yourself into others' shoes" এই কথাটা মানতে পারে না ও বুঝতে পারে না অধিকাংশ মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ১১:৪৮
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×