আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, নিউরাল নেটওয়ার্ক, কগনিটিভ ইন্টেলিজেন্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন, রোবটিক্স, মেকাট্রনিক্স, বায়োনিক্স, এগুলি বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই পৃথিবীর চেহারা বদলাতে শুরু করে দিয়েছে। কোভিডের মত মহামারির পরে এগুলির তৎপরতা, ভূমিকা, কতৃত্ব, আরো বাড়বে। "বিলাসিতা"-র স্থান দখল করে নিবে "প্রয়োজনীয়তা"। কনজিউমার ও প্রোডিউসার দুজনেই প্রেফার করবে- লিস্ট হিউম্যান টাচ। যত কম মানুষের সংস্পর্শ থাকবে, তত নিরাপদ থাকবে পণ্য বা সেবা।
স্পষ্টতভাবেই, এসব ব্যাপারে বিশ্বের দেশগুলি দুটি দেশে ভাগ হয়ে যাবে মহামারির আঘাতের পর থেকে।
এক- যারা সামলে নিয়ে উন্নতি করতে শুরু করবে; কারণ, তাদের সম্পদের প্রাচুর্য ও নিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা।
দুই- যাদের পতন আরো ত্বরান্বিত হবে; কারণ, তাদের সম্পদের অসম বন্টন বা অভাব; এবং মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা।
বহুবছর আগে প্রকৌশলে স্নাতক অধ্যয়নরত অবস্থায় "রোবটের কারখানা" খুলার মত স্বপ্নের কথা শুনে হাসাহাসি করেছিল আমার আশেপাশের অনেকে। আসলেই ব্যাপারটা হাস্যকর ছিল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক কিছুই হাস্যকর ও অবান্তর। কিন্তু, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিতে উন্নত অনেক দেশের জন্যই রোবট কারখানাও এখন মামুলি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে; ঠিক যেমনটা বাংলাদেশের শহরের স্বচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা ফ্যান্সি রেস্টুরেন্ট খুলে ব্যবসা করতে চায়।
শুধুমাত্র ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের কল্যাণে বাংলাদেশে সারা দুনিয়ার খবরাখবর উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। আর সেসব খবরাখবর পড়ে বা না পড়েই, তাজ্জব হয়ে বা অবিশ্বাসের সাথে সন্দেহ নিয়ে, রিয়েক্ট করা বা শেয়ার করা ছাড়া, বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের আর কিছু করার আছে বলে দেখি না।
বাংলাদেশের জনগণ ও সিস্টেম, সবসময়ই "Quantity over Quality" পলিসির উপর আমল করে এসেছে। সন্তান পয়দা করা থেকে শুরু করে, পরীক্ষার খাতার মার্ক, চাকরির বেতন, বৈদেশিক শ্রমবাজারের অদক্ষ শ্রমিক সংখ্যা, দেশীয় তৈরি পোশাকখাতের কারখানা সংখ্যা, বাৎসরিক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীর সংখ্যা, কিংবা হুটহাট করে বেড়ে যাওয়া জিডিপি বা রেমিট্যান্স, সব কিছুতেই "বড় ডিজিট" দিয়েই বাংলাদেশ উন্নতি মাপতে চেয়েছে।
ফলাফল আমরা প্রতিনিয়ত নিজ চোখেই দেখছি।
দেশের প্রায় প্রতিটা প্রকৌশল, যান্ত্রিক, প্রযুক্তিগত বা স্থাপত্যের অর্জনগুলির পিছনে রাশিয়া, নেদারল্যান্ড, জাপান, চীন, ইংল্যান্ড বা ভারতীয় মেধাবী পেশাজীবিদের অবদান। বাংলাদেশ শুধু কামলা উৎপাদন করে গিয়েছে।
কোন আশা দেখিয়ে, বা সমাধান বাতলে লেখা শেষ করবো না। শুধু এটাই বলবো, এখনো যদি নিজেদের ও নিজের পূর্বপুরুষদের ভুলগুলি বুঝতে ও মানতে না পারেন, তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্ম আপনাদের মরার পরে শুধু গালি ও অভিশম্পাতই দিবে। বাচ্চাদের কোরানে হাফেজ বানায়েও বেহেশত পাবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৬:৩১