কয়দিন আগে বাধ্য হয়ে সামু ব্লগে আমার একটা ব্লগ ডিলিট করে দিলাম। প্রায় ১৫টার মত কমেন্ট পড়েছিল এক ঘন্টার মধ্যে। সব অশ্রাব্য কমেন্ট।
কারণ, আমি আত্মহত্যা ও ডিপ্রেশন/ফ্রাস্টেশন ঠেকানোর কিছু পথ বাতলে দিয়েছিলাম। ঢাবির ঐ ছাত্রের আত্মহত্যার পরে; যার আত্মহননের কারণ ছিল প্রেমঘটিত। আমি স্পেসিফিক ঐ ঘটনার আলোকে না বলে, সার্বিকভাবে কেন যুবসমাজ পথভ্রস্ট ও আশাহত হয়ে পড়ছে, সে ব্যাপারে লিখেছিলাম।
আর, লেখার মূল গুরুত্বারোপ ছিল- সরকারি চাকরির সুযোগসুবিধা কমানো, সরকারিকরণের আওতা কমানো, বেসরকারি চাকরিকে সরকারি বেতন ও সুবিধার সমপর্যায়ে নিয়ে আসা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য কমানো, সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থাকে দক্ষতানির্ভর ও উৎপাদনমুখী করে তোলা, গণহারে গ্র্যাজুয়েট উৎপাদন বন্ধ করা, ইত্যাদি।
ফেসুবকে কমেন্ট থ্রেডে যেমন বাঙালেরা হামলে পরে, সামুব্লগেও ঐ ব্লগের নিচে একই কাহিনী হয়েছিল। সাকিব আল হাসানের শিশুকন্যাই শুধু না, হাজার হাজার মানুষ এইসব অমানুষদের অসদাচরণের শিকার। এদের এরকম হামলে পড়ার যৌক্তিক কারণ ছিল। এই যেমন, বিটিসিএল তার কর্মীদের মধ্যে করোনায় মৃতদের ২৫ লাখ ও জীবিতদের ৫ লাখ টাকা অনুদান দিবে শুনে, কর্মীদের মধ্যে "ফেইক করোনা" সনদ বানানোর হিড়িক পরে গিয়েছিল। আজ ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির প্রতিবেদনে দেখলাম, সরকারি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী থাকেন ডুপ্লেক্স বাড়িতে, চড়েন প্রিমিও গাড়িতে। এরকম খবর পড়তে পড়তে বাঙ্গালরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে।
তাদের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়েছে, সরকারি চাকরিই জান্নাত। সরকারের তাঁবেদার হয়ে থাকাটাই নিশ্চিন্ত জীবন। সরকারি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর ডুপ্লেক্স বাড়ি থাকা বা প্রিমিও গাড়িতে চড়া উন্নত অনেক দেশের বিবেচনায় খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু উন্নত দেশে ঐ একই সময় ধরে চাকরিরত, অন্য বেসরকারি কোম্পানির কর্মচারীও একই রকমের জীবনযাপন উপভোগ করবেন। কারণ সেসব দেশে কোনরকম প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক বৈষম্য নেই। অথচ, বাংলাদেশে, এই তৃতীয় শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী যে সময় ধরে চাকরি করেছে, সেই একই সময় ধরে চাকরি করা কোন বেসরকারি কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ারও একটা ফ্ল্যাট তো দূরের কথা, একটা ভালো ভাড়া-বাসাও এফোর্ড করতে পারবে না।
যতদিন এই জাতির মানুষগুলো নিজেদের দুশ্চরিত্র আর দৃষ্টিভঙ্গি না বদলাচ্ছে, আমাদের মত মানুষদের লিখে যাওয়াও শুধু "উলুবনে মুক্তো ছড়ানো"।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:০৪