৭০ লক্ষ জনসংখ্যা এবং মাত্র ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটারের দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের ছোট বলকান দেশ সার্বিয়া ২০১৭ সালে ই-গভর্নমেন্টে রূপান্তরিত হয়েছে। নাগরিকদের জন্য সব সার্ভিস অনলাইন করার কারণে দেশটিতে কাগজের ব্যবহার একেবারেই কমে এসেছে। তারা ইতিমধ্যে ১৮০ মিলিয়ন পেপারশিট বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে।
১৮০ মিলিয়ন A4 কাগজ = ৯০০ টন কাগজ (১৮ হাজার গাছ) + ৭৬ মিলিয়ন লিটারেরও অধিক পরিমাণ পানি + ৬ হাজার মেগাওয়াট-ঘন্টারও বেশি বিদ্যুৎ শক্তি
সার্বিয়া ই-গভর্নমেন্ট চালু করে যেভাবে গাছ, পানি ও বিদ্যুৎ বাঁচালো
বাংলাদেশ যদিও অনেক বছর আগে নামকাওয়াস্তে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে, তথাপি অত্যাধিক জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে, কিংবা দুর্নীতির কারণে, কিংবা পশ্চাদপদমুখিতার কারণে, বাংলাদেশে গভর্নমেন্ট, ব্যুরোক্রেসি, ফাইনান্স, এডুকেশন, ব্যাংকিং, হেলথ, বিজনেস সহ কোন সেক্টরেই প্রয়োজনমাফিক আধুনিকীকরণ করা হয়ে উঠে নি। ফলপ্রসূত, Red Tape বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতির সম্ভাবনাও কমানো যায়নি। যেকোন কিছুতে কাজের ধীর গতি, অকার্যকারিতা, অনিরাপত্তা, অবৈধ-অনৈতিক কাজের প্রবণতা, এবং ক্ষণস্থায়ী উন্নয়নের জন্য দায়ী "ডিজিটাল বাংলাদেশ" সফলভাবে স্থাপন করতে না পারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৪টা ওয়েবসাইট বানাতে সাড়ে দশ কোটি টাকা, ৫টা ডেটাবেইজ বানাতে সাড়ে ১০ কোটি টাকা, ৫টা সফটওয়ার বানাতে ৫৫ কোটি টাকা খরচ করেছে- এসব সেদিন এক সাংসদের বক্তব্যে শুনে আশ্চর্য হইনি। বাংলাদেশের সড়ক ও সেতু বিশ্বের সবচেয়ে ব্যায়বহুল কেন, সেটাও আমরা জানি। জেনেও চুপ থাকি; কারণ ঐসবের সুবিধাভোগ ও ভাগ পাওয়ার জন্য আমরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকি। সবকিছুতে মধ্যস্ততাকারীদের হস্তক্ষেপের সুযোগ নিয়েই প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী বা কেরানীরা ১০ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যায় নিয়মিত অফিস না করেই!
কারা এবং কেন বাংলাদেশকে স্বচ্ছ, দ্রুত, মানবসংস্পর্শবিহীন ই-গভর্নমেন্ট, ই-ব্যাংকিং, ই-এডুকেশন, ই-ফাইনান্স, এসবে রূপান্তরিত হতে দিবে না ও দিচ্ছে না- সেটা দুগ্ধপোষ্য শিশুও বুঝে।
------------------------------------------
সংযোজনীঃ-
আজকের শীর্ষ শিরোনাম হচ্ছেঃ-
"বাংলাদেশ ব্যাংকে আইটি বিপর্যয়, আন্তঃব্যাংক চেক লেনদেন ও ইএফটি বন্ধ"
পাঠকেরা ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেইজে এই খবরের পোস্টের নিচে যা যা কমেন্ট করছেন, তার মধ্য থেকে চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলোঃ-
১) Hacking in progress- এরকম কোন ঘটনা নাকি?
যারা জানেন না তাদের বলছি। বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনাটা আমাদেরকে বেশ ভাল ইন্টারন্যাশনাল রিকগনিশন দিছে। এমনিতে বাংলাদেশ নামে কোন দেশ যে আছে সেটা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মানুষ টোটালি জানে না। কিন্ত হ্যাকিং এর ঘটনার পর অনেকেই এটা জানছে। তাবৎ দুনিয়ার সবচেয়ে বড় তিনটা হ্যাকিং এর ঘটনার একটা কিন্ত আমাদের এইটা। বিশ্বাস না হইলে ইউটিউবে সার্চ মাইরা দেখেন। So I'll call it a small price to pay for a huge publicity
২) একদিন সকালে উঠে দেখবো দেশের সব অর্থ আমেরিকা, ঈসরাইল আর ভারতের আমাদের আর কিছুই নাই। কি সুন্দর সিস্টেম , ভারত আইটি দখল করেছে, আমেরিকা অর্থ জমা রাখছে, আর ঈসরাইল প্রযুক্তি দিচ্ছে আমাদের হাতে আছে কচুটা কাগজ কলমে না ফিরলে এর পরিণতি খুব ভয়াবহ হবে।
৩) ব্যাংকের আইটি সেক্টর ভারতীয়দের করানোর ফল। দেশের আইটি বিশেষজ্ঞদের নূন্যতম মূল্যায়ন করা হয়নি। এত অদক্ষ আর কান্ডজ্ঞানহীন অসচেতন, দায়িত্বজ্ঞানহীন লোকজন দিয়ে কীভাবে একটা রাস্ট্রের ব্যাংক চলে!!!
সোমালিয়ান দস্যুরাও এতটা এলোমেলো টাইপের না।
৪) "ডেটা সেন্টারের মধ্যে সংযোগকারী ফাইবার অপটিক্যাল কেবল বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এই পরিস্থিতি..." ব্যাংকের কেবল সাধারন বাসা-বাড়ির কেবল সংযোগ না। এটা একা একা বিচ্ছিন্ন হয় না, হলেও জোড়া লাগাতে দিনের পর দিন লাগে না। অর্থনৈতিক মন্দা ফেলার জন্য এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত পদক্ষেপ। এর মধ্যে দেশের কোটিপতিরা হাহা রিয়েক্ট দিয়ে যাচ্ছে কারন তাদের বেতন-বোনাসের চিন্তা নেই।
৫) লকডাউনে ব্যাংক পুরোপুরি বন্ধ থাকবে মনে করে হয়তো কোন কুচক্রী মহল বৃহৎ কোন চুরির উদ্দেশ্যে এই কাজ করতে পারে; কেননা এর আগে যখন রিজার্ভ চুরি হয়েছিল তখন দীর্ঘ বন্ধের সুযোগ নিয়েছিল চোরেরা। তখন শোনা যাচ্ছিল এই চোরদের একটা অংশ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে, যদিও তাদের ব্যপারে বিস্তারিত কোন খবর প্রকাশ করা হয় নাই...
৬) ব্যাংকের আইটি ডিভিশন নাকি কোন বিজনেস আনেনা। আইটির লোকেরা নাকি ধইঞ্চা। বর্তমানে আইটি ছাড়া ব্যাংকিং এর অন্য সব ডিভিশন ধইঞ্চ্যা।।
৭) হেনরি কিসিঞ্জার বলেছে তলাবিহীন ঝুড়ি, ঝুড়ি হয়ত তলাবিহীন নয় কিন্তু ঝুড়িতে যে অজস্র ছিদ্র আছে সেটা এ দেশের দায়িত্বহীন লোকগুলাই। জ্ঞান নাই আবার প্রযুক্তি নিয়ে বাড়াবাড়ি করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৫৩