somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটু এদিকে আসুন । একটি হঠাৎ থমকে যাওয়া সময়ের গল্প শুনি

২৩ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“সাইদ ভাই বিসিএস এর পড়া পড়তে পারি না,খালি ঘুম পায়” –অপু
ডাঃ মাহামুদুল হাসান (অপু)। মাঝে মাঝে ‘আপু’ বলে রাগানোর চেষ্টা করতাম,কিন্তু সদা হাস্যজ্বল অপু রাগ না করে বলত- “কি খবর সাইদ ভাই?” আজ সেই অপুর গল্প বলব। আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে বাবা-মা’র চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয় অসাধারন মেধাবী ছাত্র অপু। এর পর মেডিকেলের কঠিন সব কার্ড, টার্ম, প্রফ ভালোভাবে শেষে ইন্টার্ণ ডাক্টার। দিন রাত ইন্টার্ণ ডাক্টার হিসেবে হাসপাতালে এক বেড থেকে আরেক বেডে ছুটে চলা সদা প্রাণ চঞ্চল অপুর জীবনে হঠাৎ ছন্দ পতন। CKD(Chronic Kidney Disease)- শেষ ধাপে অপু। নাহ, এটা কোন গল্প বা বাংলা সিনেমা না, ভাগ্যের নির্মমতায় বন্দী সবার প্রিয়-বন্ধু অপুর।

যে হাসপাতাল,ওয়ার্ড,বেডে অপু এতদিন অসহায়,গরীব অসুস্থ মানুষ কে সুস্থ করতে, মনে আশার আলো জ্বালাতে এগিয়ে গেছে, রোগীর স্বজনরা ঘুমালেও নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে, মাংস পঁচা দুর্গন্ধে যখন রোগীর পাশে কেই দাঁড়াতে পারত না,অপু নির্বিকার ভাবে সে রোগীর দিনের পর দিন ড্রেসিং করেছে, সেই হাসপাতালের বেডে অপুকে কখনো দেখব স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। অপুর অসুস্থতার কথা শুনে রাতেই যখন অপুকে দেখতে গেলাম, এই প্রথম হাসি ছাড়া অপুর মলিন মুখ দেখলাম। বন্ধুটি ডাক্তার হওয়ায় জেনে গেছে রোগের ভয়াবহতা। ফিরে আসার সময় হঠাৎ করে আমার হাতটি ধরে মুখের দিকে চাইল, কিন্তু কিছু না বলে আবার ছেড়ে দিল। তার চোখে দেখলাম আমাদের ছেড়ে না যাওয়ার আকুতি, এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অক্লান্ত চেষ্টা, নিজের অসচ্ছল পরিবারে সচ্ছলতা আনতে না পারার কষ্ট।

আমি জানি আপনারা ভাবছেন ডাক্তার না একটা কসাই/ডাকাত/চামার মরছে এতে তো দেশের লাভ, সাধারন মানুষের লাভ। একটি বার ভাবুন আমরাও মানুষ, আমরাও আপনাদের মত কোন পরিবার থেকে উঠে এসেছি। এই চামার দের কাছেই আপনারা সুস্থ, সুন্দর জীবনের জন্য আসেন।

আর কোনদিন হাসপাতালে অসুস্থ হওয়ার দিনেও দায়িত্ত পালন করা অপুকে দেখব কি'না জানি না। জানিনা দেখব কি'না খোলা বই হাতে অপুকে সন্ধ্যার পর হোস্টেলের বারান্দায় হেঁটে হেঁটে পড়তে। তবে আমরা প্রতি মুহূর্তে শঙ্কায় আর হতাশায় কেঁপে উঠছি। আমাদের এই বন্ধুটা খুব ঘুরতে ভালবাসত। কীর্ত্তনখোলা নদীর পাড়,দপদপিয়া সেতু, ভরা জোছনায় ছাদে বসে থাকা। কুয়াকাটায় আমরা ৩৮তম ব্যাচ যেবার ঘুরতে গেলাম, সবাইকে অবাক করে দিয়ে দুপুর বেলা লুঙ্গি পরে বিচে নেমে পরল আমাদের এই পাগলাটে বন্ধুটা। আজ সীমাহীন শুন্যতা নিয়ে হাসপাতালের চার দেয়ালে বন্দী অপুর সন্ধ্যা নামে। আবদ্ধ কেবিনে নেই অনন্ত আকাশ, কিংবা ঝুম বৃষ্টি দেখার কোন সুযোগ। আর আমরা অসহায় হয়ে শুধুই তাকিয়ে দেখছি ওর চলে যাওয়ার দৃশ্য। অনন্ত অসীমের পথে।

বন্ধু, তুই হয়তো জানিস, তোকে বাঁচাতে মাত্র কয়েক লক্ষ টাকা লাগে। দেখলি কি সহজে মাত্র শব্দটা ব্যবহার করলাম। তোর জীবনের থেকে এই টাকাটা কি খুব বেশি? যে মা ত্রিশ লক্ষ ছেলেকে স্বাধীনতার জন্য বিসর্জন দিতে পারলো সে আজ টাকার জন্য একটি জীবন বাঁচাতে পারছেনা। কত অক্ষমতা আমাদের। অপু, আমরা আকাশ নই, মানুষ। আমাদের সীমাবদ্ধতা অনেক তাই আমরা হাত পাতি। আমরা হাত পেতে সাহায্য চাই, বুক পেতে ভালোবাসা নেই। আমরা আমাদের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে তোকে ফিরিয়ে আনবো মৃত্যুর মুখ থেকে। আমরা প্রমান করবো ভালোবাসার কাছে টাকার মূল্য নিতান্তই সামান্য। তুই আবার আকাশ দেখবি। এই মুক্ত পৃথিবীর পথে তুই আবার ছুটে চলবি নিজস্ব গতিতে হাসপাতালের এক বেড থেকে আরেক বেডে জীবনের আলো নিয়ে। তুই ভালো হবি, হতেই হবে. . .

অপু দুরারোগ্য CKD (Chronic Kidney Disease) তে আক্রান্ত। সে এখন Kidney Foundation Hospital, Mirpur-2, 4th floor, Ward No-502, Bed-01 এ চিকিৎসাধীন আছে। তার অতি সত্ত্বর Kidney Transplantation করা প্রয়োজন। Kidney Transplantation এবং এর post Operative Care একটি অত্যন্ত ব্যয় বহুল চিকিৎসা। এ পর্যন্ত পাওয়া অর্থ মোটেও যথেষ্ট নয়। চলমান চিকিৎসায় প্রয়োজন আরও অর্থের। ব্যক্তিগত ও দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি একজন মেধাবী ডাক্টার কে বাঁচাতে। একদিন না হয় মুঠোফোনে নাইবা কথা বললাম, নাইবা খেলাম দামী কোন রেস্টুরেন্টে, কিংবা দামী সিগারেট। তবুও যদি অপু ফিরে আসে। অনেকেই হয়তো বলবেন এভাবে আর কতই বা সাহায্য করা যায়! কিন্তু এই পোষ্টারে অপুর নামের জায়গায় নিজের নামটি কল্পনা করতেও গা কাটা দিয়ে ওঠে। আসুন হাত বাড়াই আরো একবার। জয় হোক মানবতার। বিন্দু বিন্দু করেই তো সিন্ধু হয়। আমরা আশায় বুক বাঁধি। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের ভেতরকার মানুষগুলো এখনও মরে যায়নি। এই লেখা যারা পড়বেন, আশা করছি তারা সবাই অপুর সাহায্যে একটু করে হলেও এগিয়ে আসবেন। যদি সবাই একটু এগিয়ে আসি তাহলে অপু হয়ত বেঁচে যাবে। আমরা কি পারিনা মার কাছে তার আদরের ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে?

ডাঃ অপুকে সাহায্য করার ঠিকানাঃ
অপুর বোনের নামে খোলা একাউন্ট –
*DUTCH BANGLA BANK LIMITED
SANJIDA AFRIN NIPA
A.C No-127.105.25559

*বিকাশ (bKash) একাউন্ট:
01726128580
যোগাযোগঃ
অপুর মায়ের মোবাইল নাম্বার-
01746450042
ডাঃ তাওহীদ (বন্ধু)-
01919251175
ডাঃ সুজন (বন্ধু)-
01912549678
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×