somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বব্যংকের আদলে আসছে দুটি নতুন প্রতিষ্ঠান: অর্থনৈতিক মুক্তি নাকি নতুন জাল?

২১ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক।।


গত টার্মে সরকার ক্ষমতায় এসে ভারতের একটি ব্যংকের (একজিম ব্যংক) কাছ থেকে ২৫০ কোটি ডলার ঋণ নেয়। তখন তৎকালীন বিরোধী দল এর তীব্র বিরোধীতা করে। অনেকগুলোর কারনের অন্যতম ছিল সুদের হার চড়া এবং এ ঋণের বেশিরভাগ টাকাই বিভিন্ন উপায়ে আবার ভারতেই ফিরে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। যেমন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য উপকরন ভারতের কাছ থেকেই নিতে হবে। কথাগুলো কেন যে শুধুমাত্র ভারতের কাছ থেকে ঋণ নেবার সময় উত্থাপিত হল বুঝলাম না। কারন ঠিক সেই একই দোষে দুষ্ঠ বিশ্বব্যংক, আইএফএমের মত প্রতিষ্ঠানগুলোও। এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ নিলে, ঋন ঠিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে কিনা, উপদেষ্টা সহ বিভিন্ন পদে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ করা লোকগুলোকেই রাখতে হয় ঐ ঋণের টাকায়ই। মোট ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশেরও বেশি এই উছিলায় গোড়ায়ই ফিরে যায়; সুদ, মুনাফার কথা বাদ দিলেও।


অনেকদিন আগে কোন একটা পত্রিকায় পড়েছিলাম, জার্মান এক মহিলা সিনেটর বাংলাদেশ ঘুরে ফিরে গিয়ে ইস্তাফা দিয়েছিলেন। তিনি দেখেছিলেন জার্মান বাংলাদেশকে বিভিন্ন উপায়ে যেপরিমান টাকা ঋণ ও অর্থ সাহায্য দেয়, বিভিন্ন উপায়ে তার চাইতে কয়েকগুন বেশি ফেরত গিয়ে বার্লিনের প্রাসাদের সৌন্দর্য বাড়ায়। এই খবরটি পত্রিকা প্রথম পড়া শুরু করেছি এমন সময়ের বিধায় এর সত্যতা নিরুপনের জন্য কোন লিংক বা পত্রিকার তারিখ উল্লেখ করেতে পারলাম না। একই কথা জাইকা সহ সকল অর্থ সাহায্য ও ঋণ প্রদান কারী প্রতিষ্ঠানের জন্যও খাটে।




দুই।।


চীন "এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক(এআইআইবি)" নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু করতে যাচ্ছে। আইএমএফ এর উপর যুক্তরাষ্ট্রের এবং "এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যংক" এর উপর জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের কারনে চীনের ক্ষোভের ফলাফল হবে এটি। আইএমএফ, এডিবি, বিশ্বব্যংকের সকল কর্মকান্ডের যেন চীন সাইডবেঞ্চের দর্শক। আশা করা যাচ্ছে এবছরের শেষ নাগাদ কার্যক্রম শুরু করবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রথম এআইআইবির বিষয়টি সামনে আসে। চীন তখন প্রায় ৫০বিলিয়ন রেজিস্টার্ড ক্যপিটাল নিয়ে যাত্রা শুরুর কথা ভাবছিল চীন। ২০১৪ সালে অর্থের এই অংকটা দ্বিগুন করে ১০০ বিলিয়ন করা হয়। যদি তাই হয়ও, তাহলেও এআইআইবির রেজিস্টার্ড ক্যপিটাল হবে এডিবির প্রায় ৬৫ শতাংশ। এবিষয়ে চীন এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথে আলোচনাও করে যাচ্ছে। এমনকি চীন ভারতকে আমন্ত্রন পর্যন্ত জানিয়েছে এই যাত্রায় সহযাত্রী হবার জন্য। শত্রুগন্য জাপানের সাথেও চীন আলোচনা করেছে। এশিয়ার প্রায় ২৩টি দেশ এবিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে এবং ১০টি দেশ রিকনসিলিয়েশন ট্রীটি পর্য়ন্ত করেছে। মোট রেজিস্টার্ড ক্যপিটালের বেশিরভাগ অংশ যোগান দেবে উদ্যোক্তা দেশ চীন।

কারন?
এরকম একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার কারন সম্পর্কে কিছুটা আভাস উপরে দিয়েছি। চায়নার কর্তৃত্ব প্রদর্শনেচ্ছা। ১৯৬৬ সালে এডিবি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর অর্থের যোগানদাতাদের মধ্যে জাপান ১৫.৭ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৫.৬ শতাংশ প্রদান করে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে শীর্ষে আছে। চীনের শেয়ার এখানে মাত্র ৫ শতাংশ। এরপরেও চীনকে থাকতে হয় সেই সাইডবেঞ্চেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রথিষ্ঠানটির মহাসচিবের পদটি অলঙ্কৃত হয়েছে একজন জাপানী দ্বারা।

এছাড়া চীন অবকাঠামো খাতে এডিবির ঋণদানের অক্ষমতাকেও সামনে আনছে। তাদের ভাষ্য মতে প্রতিবছর এশিয়ার অবকাঠামো উন্নয়নে এডিবিরর প্রতিবেদন অনুযায়ীই প্রায় ৮০ হাজার ক‌োটি দলার বিনিয়োগ প্রয়োজন, কিন্তু এডিবি সেখানে যোগান দিচ্ছে মাত্র এক হাজার কোটি ডলার। এরকম আরো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনই যেন দালিলিক ভাবেই সত্য। প্রতিষ্টার পর থেকেই আন্তমহাদেশীয় সংযোগ ও আন্ত দেশীয় সংযোগের উপর জোর দেবে এআইআইবি।

তবে অভিযোগ যে নেই তা কিন্তু না। এডিবির প্রধান তাকেহিকো নাকাও বলেন-

এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় বিনিয়োগ করতে গিয়ে চীনারা সুশাসনের তোয়াক্কা করে না এবং বিবেকহীনতার পরিচয় দিয়ে থাকে বলে প্রায়শই অভিযোগ ওঠে।





তিন।।

BRICS হল বিকাশমান অর্থনীতির পাঁচটি দেশের একটি জোট। দেশগুলোর নামের আদ্যক্ষর নিয়ে জোটটির নামকরন করা হয়। দেশগুলো হল ব্রাজিল, রাশা, ভারত, চীন, দক্ষিন আফ্রিকা। জোট হিসেবে এর এখনো কিশোর ছেড়ে যুবকও হয়ে ওঠেনি। পৃথিবীর মৌট জনসংখ্যার প্রায় ৪৩ শতাংশের বাস এই দেশ পাঁচটিতে। পৃথিবীর মোট জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ এদের দখলে। বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়েই হয়ে গেল BRICS এর সপ্তম সম্মেলন। এখানেই প্রতিষ্টা পেল BRICS Bank, গত ১৫ জুলাই। গঠনের পর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলামা রৌসিফের কথাটি গুরুত্বপূর্ন -

"বিশ্ব যখন এক ধরনের অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে, তখন বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর ইন্টিগ্রিটি তখন আবশ্যক হয়ে দেখা দিয়েছে। এমতবস্থায় BRICS দেশ বিশ্বসমস্যার উপেক্ষা করতে পারেনা। ব্রিকস গঠনের উদ্যোগকে কারো ওপর প্রাধান্য বিস্তারের পদক্ষেপ নয়। আমরা চাই আমাদের ন্যায্য ও সম-অধিকার।"



উক্তির শেষ লাইনটি আশার উদ্রেক করে। শুধুমাত্র এশিয়ায় ঋণ অপ্রতুলতার কথা চিন্তা করলেই পুরো পৃথিবীর কথাটা বোঝা যায়। তাই এরকম প্রতিষ্ঠান আমরা স্বাগতই জানাই। ১০০ কোটি ডলার রেজিস্টার্ড ক্যপিটাল এবং আরো ১০০ কোটি ডলারের রিজার্ভ কারেন্সি পুল নিয়ে যাত্রা করবে ব্যংকটি। ব্যংকটির সদস্যদেশগুলো এই অর্থের যোগান দেবে এবং জিডিপির মাপকাঠি যাই হোক না কেন মুনাফা সমান অংশীদারীত্বের ভিত্তিতেই প্রদান করা হবে।



চার।।

২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিজয়ী দেশগুলোর প্রচলন করা অর্থ ব্যবস্থায় তাই যেন শুধুমাত্র ডলারেরই জয়জয়কার। এবং একপ্রকার অদৃশ্য সুতোয় যেন টান খেয়ে সেই অর্থব্যবস্থার বিরোধিতাও করা যায়না। এবার বোধকরি তা কিছুটা খর্ব হতে চলেছে।

ভয় এখানে না। আমরা তৃতীয় বিশ্বের চোখে এখানে নতুন আশার আলো হয়ত দেখছি। কিন্তু বাস্তবতার ভাষাও কি একই থাকবে? নতুন স্বাধীনতার কথা শুনে আমরা কিন নতুন জালে আটকা পড়তে যাচ্ছি?

বিঃদ্রঃ পূর্বে আমার ফেসবুকে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বগতোক্তি (Soliloquy)

লিখেছেন সামরিন হক, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ ভোর ৪:৩৫


LIFE IS NOTHING BUT DEATH MAKES LIFE EVERYTHING .


Poetry is about feelings
But
Reality is about dealings‌.


In life faithfulness is more necessary than love.


Patience=Results
Goodness=Success
Truth=Path ...বাকিটুকু পড়ুন

রান্না থেরাপি

লিখেছেন তাহেরা সেহেলী, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:০৫



মন খারাপ থাকলে আমি রান্না করি, ভালো লাগে। এই কাজটা আমার জন্যে থেরাপির কাজ করে। হয়তো অনেকের জন্যেই কুকিং থেরাপিউটিক হতে পারে, চেষ্টা করে দেখুন তো!

করার সময় যদি দেখেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মফস্বল টু প্যারিস !

লিখেছেন স্প্যানকড, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৪৩

ছবি নেট।

আমার দোস্ত দীপ্ত কতকাল পর দেখা হলো তা প্রায় কুড়ি বছর পর। এক সময় এমনভাবে মিশে ছিলাম মেতে ছিলাম দুজনে যেন একই মায়ের সন্তান। ধরবার কোন উপায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

চিড়িয়াখানা (অণুগল্প)

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৫৮


গাড়িতে উঠার আগেই আমার একটু সন্দেহ হয়েছিল। এই প্রথম ঢাকা শহর এলাম, চেনাজানা পরিচিত কেউ নেই। একটা বিশেষ কাজে এসেছিলাম রাতের ট্রেনে ফিরে যাব। পুরোটা দিন কী করা যায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরীক্ষা পদ্ধতি ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের মেধা যাচাই এর দ্বীতিয় কোন বিকল্প নাই

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:০৯

শিক্ষার্থীদের আনন্দময় পরিবেশে পড়ানোর পাশাপাশি মুখস্থনির্ভরতার পরিবর্তে দক্ষতা, সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে শেখাতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। এক্ষেত্রে উন্নত দেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×