somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল হবার বিশুদ্ধ উপায় ও সময় (রিপোসট)

০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাবলিক ট্রান্সপোর্টে জ্যামে বসে আছি। মুখে দাড়ি ওয়ালা একজন হকার উঠে বক্তৃতা শুরু করলো। বিষয়-ইসলাম। একটি বই তার আলোচনার বিষয়। সহীহ নামাজ শিক্ষা, তার সাথে একটি বই ফ্রি, যার নাম ‘কি করিলে কি হইবে’। বই দুটি হাতে নিয়ে আমার স্বল্পতম ইসলামী জ্ঞানেও আঁতকে উঠলাম। এমন সব কথা আর এমন সব ভুল বই দুটিতে আছে যা শুধু বিপর্যয়কর নয়, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নামে পরিস্কার মিথ্যাচার বটে। ‘কি করিলে কি হইবে’ জাতীয় ভয়াবহ বই পড়ে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কেমন ভুল পথে পা বাড়াবে তা ভেবে খুব দুঃখবোধ হলো। সেই দুঃখবোধ থেকে আমার এই লেখা।

শর্টকাটে কিছু পাওয়া মানুষের স্বাভাবিক ফিলোসফি। ছোটবেলায় যখন কুরআন পড়তে বসতাম, তখন চিন্তা করতাম কোন সুরাটা পড়লে বেশী বেশী নেকী এবং সওয়াব পাওয়া যাবে। সেই হিসাবে সুরা ইয়াসিন এবং সুরা আর রাহমানই বেশী পড়েছি, বাকী কুরআন মনে হয় জীবনের একটা বড় সময় অধরাই রয়ে গেছে। আল্লাহর করুণায় ধীরে ধীরে বুঝেছি, ইসলামকে জানার কোন বিকল্প নেই এবং এর জন্য খুব বেশী শ্রমও ব্যয় করতে হয়না। লক্ষ কোটি নেকী নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌঁছালেও ফলাফল হবে শূন্য যদি আমার ইবাদতে শির্ক যুক্ত থাকে। সারা জীবন একনিষ্ঠভাবে মিলাদ, খতমে ইউনুস, দুরুদে হাজারী কিংবা খতমে খাজেগান ধরণের আমল করে গেলে লাভ তো হবেইনা, বরং তা ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে কারণ তা আল্লাহর রাসুল সাঃ ইসলামের নামে কখনও তা করেননি। এহেন নতুন তৈরী আমল সম্পর্কে তিনি বলেছেন “দ্বীনের ভেতর প্রত্যেক নতুন আবিষ্কার হলো বিদ’আত, প্রত্যেক বিদ’আত হলো পথভ্রষ্টতা”। (সহীহ মুসলিম)

দোয়া কবুল হবার প্রধান শর্ত হলো এককভাবে আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক না করা। দুঃখজনক হলেও সত্যি, মুসলিম উম্মাহর অনেকেই আজ এ শর্তটাতেই আটকে গেছে চাওয়ার ক্ষেত্রে শির্ক যুক্ত করে। কালের আবর্তে ধর্ম ব্যবসায়ীর হাতে পড়ে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা হারিয়ে গিয়ে ইসলাম এখন বিকৃত রূপে আমাদের কাছে উপস্থাপিত হচ্ছে। অন্তরের অন্তস্থলেরও খবর জানা আল্লাহকে ডাকার জন্য আমরা ধর্ম ব্যবসায়ীদের দিকে ছুটে চলেছি।

যখন কোন লোক নিজের সর্বস্ব হারিয়ে কিংবা কঠিন বিপদে পড়ে অথবা প্রাণপ্রিয় সন্তানের রোগমুক্তির জন্য সামনে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে পাচ্ছে না, তখন আলেম নামধারী এক শ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ী তাকে দিয়ে মিলাদ পড়িয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিংবা কোন মাজারের খাদেম মানতের নামে তাকে আরো নিঃস্ব বানিয়ে ছাড়ছে। এরা বলে বেড়াচ্ছে যে, আল্লাহকে ডাকার জন্য মাধ্যম প্রয়োজন। এরা বলছে আদালতে সামান্য জজের সাথে কথা বলার জন্য যদি উকিলের প্রয়োজন হয়, তাহলে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে কিভাবে আমরা সরাসরি ডাকব? মানুষ ভাবছে, সত্যিই তো। আমার মতো মানুষের ডাক কি আল্লাহ এমনিই শুনবেন? কেউ আবার যাচ্ছে কোন পীর বা অলী-দরবেশ নামধারী লোকের কাছে। যে চাওয়াটা দরকার ছিল আল্লাহর কাছে, তা অলীর কাছে চাচ্ছে। নামধারী সেই অলী, যে নিজেরই কোন ভালো বা মন্দ করার ক্ষমতা রাখেনা, নজরানা হাতিয়ে নিয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ধোকা দিচ্ছে। অসহায় মানুষ আজ এরকম দ্বিধায় পড়ে এমন এক চক্রে আটকা পড়ছে যা তাকে শিরকের মতো ভয়াবহ গুনাহের ভেতরে ডুবিয়ে ফেলছে।

অথচ কতো কাছেই ছিলেন আল্লাহ। কতো সহজ ছিলো তাঁর কাছে কিছু চাওয়া তা না জেনেই হয়তো অনেক মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো। আমরা দেখে নেই আল্লাহ এবং তাঁর মনোনীত রাসুল কি বলেছেন।

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে চাওয়ার প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন,

"তুমি কখনো আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডেকোনা, যে তোমার কোন কল্যাণ (যেমন) করতে পারেনা, (তেমনি) তোমার কোন অকল্যাণও সে করতে পারেনা। এ সত্বেও যদি তুমি অন্যথা করো, তাহলে অবশ্যই তুমি জালিমদের মধ্যে গণ্য হবে।" -সুরা ইউনুসঃ ১০৬

"তাঁকে ডাকাই হলো সঠিক (পন্থা); যারা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদের ডাকে, তারা (জানে তাদের ডাকে এরা) কখনওই সাড়া দেবেনা। (এদের উদাহরণ হচ্ছে এমন) যেন একজন মানুষ (যে পিপাসায় কাতর হয়ে) নিজের উভয় হাত পানির দিকে প্রসারিত করে এ আশায় যে পানি (মুখে এসে পৌঁছুবে, অথচ তা কোন অবস্থায়ই) তার কাছে পৌঁছাবার নয়। কাফেরদের দোয়া (এমনিভাবে) নিষ্ফল (ঘুরতে থাকে)"। -সুরা রাদঃ ১৪

আল্লাহকে ডাকার জন্য বা আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য মাধ্যম প্রয়োজন এর বিরুদ্ধে কুরআনে অনেক আয়াত আছে। যেমন আল্লাহ বলছেন,

"আর যারা আল্লাহকে রেখে অন্যদের বন্ধু বা সাহায্যকারী হিসাবে গ্রহণ করে এবং বলে যে, আমরা তাদের ইবাদত করি শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দেবে। তারা নিজেদের মধ্যে যে মতভেদ করেছে আল্লাহ তার ফায়সালা করে দেবেন। মিথ্যাবাদী আর কাফিরদের আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেননা"। -সুরা যুমারঃ ৩

এবার দেখে নেই আল্লাহকে আমরা কিভাবে ডাকব। তিনি কি সরাসরি আমাদের ডাক শুনবেন? আল্লাহ বলছেন-

"(হে নবী), আমার কোন বান্দা যখন তোমাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে (তাকে তুমি বলে দিয়ো), আমি তার একান্ত কাছেই আছি। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে, তাই তাদেরও উচিৎ আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং (সম্পূর্ণভাবে) আমার ওপরই ঈমান আনা। আশা করা যায় এতে করে তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে"। -সুরা বাকারাঃ ১৮৬

সুবহানাল্লাহ, এর চেয়ে সহজ ভাষা আর কি হতে পারে? এর চেয়ে বড় সুযোগ আর কি হতে পারে?

আমরা এখন দেখে নিই রাসুলুল্লাহ সাঃ কি বলেছেন, তাঁর সাহাবাগন কিভাবে আল্লাহর কাছে চেয়েছেন।

রাসুল সাঃ বলেছেন, "ইজাস সলাতু ফাসল্লিল্লাহ", "যদি তোমার কোনকিছু চাইতে হয় তুমি আল্লাহর কাছে চাও"। (সহিহ মুসলিম)।

সাহাবী জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, "ইসলাম গ্রহণের পর আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে কিছু চাইনি। সকল কিছুই আমরা আল্লাহর কাছেই চাইতাম। এমনকি আমাদের কারো জুতার ফিতাটিও যদি খুঁজে না পেতাম তাও আমরা আল্লাহকে বলতাম" (সহিহ বুখারি)।

কোন কোন সাহাবা এমনও ছিলেন যে তাঁরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে চাওয়া তো দূরে থাক, পার্থিব জীবনের ছোট-খাটো কোন বিষয়েও মানুষকে সাহায্যের জন্য বলতেন না।

সাওবান রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন-"যে ব্যক্তি আমার সাথে এই অঙ্গীকার করবে যে, সে কারো কাছ থেকে কোন কিছুই চাইবে না, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হবো।" আমি বললাম, আমি অঙ্গীকার করছি। (হাদিসটি বর্ণনাকারী রাবী বলেন) এরপর থেকে তিনি (সাওবান রাঃ) কারো কাছ থেকে কিছু চাননি। এমনকি তিনি ঘোড়ার পিঠে চড়া অবস্থায় তাঁর হাত থেকে চাবুক পড়ে গেলেও নিচে থাকা লোকটিকে তা উঠিয়ে দিতে বলতেন না, নিজেই নেমে তা উঠিয়ে নিতেন। (আবু দাউদ)।

আল্লাহু আকবার। আমাদের সামনে কি উদাহরণ তাঁরা রেখে গেছেন। অথচ আজ আমরা জ্ঞানের অভাবের জন্য কিছু লোক আল্লাহর নামকে বিক্রি করে মানুষকে ধোকা দিচ্ছে।

পবিত্র রামাদান মাস চলছে। এ মাস হলো ক্ষমা আর রাহমাতের মাস, প্রশান্তি আর আল্লাহর দিকে ফিরে আসার মাস।এ মাস হলো আল্লাহর কাছে চাওয়ার মাস। আল্লাহ, যাঁর সীমাহীন ক্ষমতা আমাদের কল্পনারও অতীত তিনি আমাদের জন্য এ মাসকে তাকওয়া অর্জনের মাস হিসাবে বলেছেন। এ মাস এমন এক মাস যখন আমাদের সামান্য একটি তাওবার জন্য আল্লাহ জীবনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন।

আমরা আমাদের চাহিদাগুলো আল্লাহর কাছে বলবো, আমরা আমাদের ভুলগুলোর জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবো, তিনি ওয়াদা করেছেন তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন, আমাদের ক্ষমা করবেন। সত্যিই এ এক বড় সুযোগ।

প্রথমেই লক্ষ্য রাখতে হবে, আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য সকল সময় আমাদের জন্য উন্মুক্ত। আমরা চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে, কাজে-কর্মে সকল সময় মনে মনে আল্লাহর কাছে চাইব এবং রাসুল সাঃ তাই করেছেন এবং করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন "দোয়া হচ্ছে আত্মরক্ষার বর্ম"। আমরা যেন শুধুমাত্র কবুল হবার সময়গুলোতেই একে সীমাবদ্ধ না করে ফেলি।

দোয়া কবুলের সময়ঃ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা দোয়া করার জন্য এমন অসংখ্য সময় ও সুযোগ আমাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়। আসুন সহীহ হাদীস থেকে আমরা দেখে নেই দোয়া কবুল হবার সময়গুলো সম্পর্কে। আলোচনার এ অংশটুকু নেয়া হয়েছে http://www.abdurrahman.org এই সাইট থেকে।

১। রাতের শেষ তৃতীয়াংশঃ
এই সময় দোয়া কবুল হবার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে অত্যন্ত জোরালো রেফেরেন্স আছে। এটা প্রতিটি রাতের জন্যই প্রযোজ্য, শুধুমাত্র শবে বরাত, শবে মিরাজ বা কদর রাতে নয়।
আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “প্রত্যেকদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব (আল্লাহ) সবচেয়ে নীচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো?” (সহীহ বুখারী)
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আল্লাহর কাছে তাঁর একজন উপাস্য সবচেয়ে নিকটতম যে সময়টাতে আসতে পারে তা হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। সুতরাং তোমরা যদি পারো তাহলে তোমরা তাদের একজন হও যারা সে সময় আল্লাহর স্মরণ করে”। (তিরমিজি, নাসায়ী, আল হাকিম-সহীহ)

২। শেষ রাতের যে কোন একটি সময়ঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রাতে এমন একটি সময় আছে যে সময়টাতে কোন মুসলিমের এমনটা হয়না যে সে এই পৃথিবী কিংবা পরকালের জোবনের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইলো আর তাকে তা দেয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে”। (মুসলিম-৭৫৭)

৩। আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ঃ
মক্কা কিংবা মদীনার নামাজের জামায়াত শুরু হবার মাঝখানে অনেক মুসলিমকে দেখা যায় নামাজ শুরুর আগে হাত তুলে দোয়া করতে। এ সময়টা দোয়া কবুল হবার গুরুত্বপূর্ণ সময়।
আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয়না”। (আবু দাউদ-৫২১, তিরমিজি-২১২)

৪। জুম্মার দিন যে কোন একটি সময়েঃ
জুম্মার দিনে এমন অসাধারণ একটি নিয়ামাতের সময় আছে যে সময়টাতে দোয়া কবুল হবার বিশুদ্ধ বর্ণনা রাসুল সাঃ থেকে এসেছে।
আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাদের একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, ‘জুম্মার দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোন মুসলিম সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন’, এবং তিনি (রাসুল সাঃ) তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন”। (সহীহ বুখারী)।
কোন কোন স্কলার সে সময়টার ব্যপারে বলেছেন, তা হলো-ইমাম যখন মসজিদে প্রবেশ করেন সে সময় থেকে সালাত শেষ হবার সময় পর্যন্ত, কেউ বলেছেন দুই খুতবার মাঝখানে, কেউ আবার জোর দিয়ে বলেছেন তা হলো আসর থেকে মাঘরিব পর্যন্ত সময়টা।

৫। জমজমের পানি পান করার সময়ঃ
জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জমজম পানি হলো তার জন্য, যার জন্য এটি পান করা হয়”। (ইবন মাজাহ ৩০৬২, আহমাদ ৩/৩৫৭)।
অর্থাৎ, জমজমের পানি খাবার সময় আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয়, তা পাবার সম্ভাবনা আছে।

৬। সিজদাহর সময়েঃ
আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যে সমটাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলো সিজদাহর সময়। সুতরাং তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চাও”। (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ)

৭। রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠলেঃ
উবাদা ইবনুস সামিত রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যে কেউ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে আর বলে-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হা’মদু ওয়াহুয়া আ’লা কিল্লি শায়্যিন কা’দির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ এবং এরপর বলে ‘আল্লাহুম মাগফিরলি (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) এবং আল্লাহর কাছে চায়, তাহলে তার ডাকে সাড়া দেয়া হবে এবং সে যদি অজু করে সালাত আদায় করা, তাহলে তার সালাত কবুল করা হবে”। (সহীহ বুখারী)

৮। ফরজ সালাতের পরের সময়টাতেঃ
আবু উমামাহ রাঃ বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ কে জুজ্ঞেস করা হলো, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, কো সময়ের ডাক শোনা হয়?” তিনি বললেন, “রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ সালাতের পরে”। (তিরমিজি)।
অনেক স্কলারগন বলেছেন, এ সময়টা হলো সালাম ফেরানোর আগের সময় (আত্তাহিয়াতুর পর)।

৯। কদরের রাতেঃ
নিঃসন্দেহে লাইলাতুল কদর হলো একটি বছরে কোন মানব সন্তানের পাওয়া শ্রেষ্ঠ রাত। আল্লাহ বলেছেন,
“আমরা এটিকে (আল-কুরআন) কদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি।
তুমি কি জানো কদরের রাত্রি কি?
কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম”।

বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে এ রাতের সকল ইবাদত ও আল্লাহর কাছে চাহিদা পূরণের কথা বলা হয়েছে।

১০। বৃষ্টি হবার সময়ঃ
সাহল ইবন সা’দ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয়না। আযানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া”। (আবু দাউদ ২৫৪০)

১১। আযানের সময়ঃ
পূর্ববর্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী আযানের সময় দোয়া কবুল হবার ভালো সময়।

১২। মজলুম ও নির্যাতিত ব্যক্তিঃ
মজলুমের দোয়া এবং বদ দোয়া দুটোই আল্লাহর কাছে কবুল হবার সম্ভাবনা শতভাগ। রাসুলুল্লাহ সাঃ মুয়াজকে বলেছেন, “মজলুমের দোয়া থেকে সবসময় সতর্ক থেকো, কেননা মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা বা আশ্রয় থাকে না”। (সহীহ বুখারী)

১৩। মুসাফিরের দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিনটি দোয়া (আল্লাহর দ্বারা) ফিরিয়ে দেয়া হয়না। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া”। (বায়হাকি, তিরমিজি)

১৪। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়াঃ
পূর্ববর্র্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী।

১৫। রোজাদার ব্যক্তির দোয়াঃ
পূর্ববর্র্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী।
এছাড়া সমস্ত রমজান মাসই হলো আল্লাহর কাছে চাইবার শ্রেষ্ঠ সময়। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রমজান মাসে করুণার দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়”। (সহীহ বুখারী ১৮৯৯)

১৬। অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে উৎসরিত দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “এমন কোন বিশ্বাসী বান্দা নেই, যে তার অনুপস্থিত কোন ভাইয়ের জন্য দোয়া করে আর ফেরেশতারা বলে না ‘তোমার জন্যও তা হোক’”। (মুসলিম)

১৭। আরাফাতের দিনের দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দোয়ার ভেতর শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া”। (তিরমিজি, মুয়াত্তা মালিক)

১৮। জিহাদের মাঠে শত্রুর মুখোমুখি হলেঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুটি দোয়া কক্ষনো ফিরিয়ে দেয়া হয়না অথবা খুবই কম ফিরিয়ে দেয়া হয়। আযানের সমকার দোয়া আর সেই ভয়ংকর সময়কার দোয়া যখন দু’টি বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি হয়”। (আবু দাউদ ২৫৪০, ইবন মাজাহ)

১৯। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন ছাড়া আর এমন কোন দিন নেই, যে সময়ের সৎকাজ আল্লাহর কাছে তার চেয়ে বেশী প্রিয়”। (সহীহ বুখারী ৯৬৯)

২০। রোজদার ব্যক্তির ইফতারের সময়কার দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও আল্লাহর দ্বারা ফিরিয়ে দেয়া হয়না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে, রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ ইফতার না করে), ন্যায়পরায়ণ শাসক, নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া”। (আহমাদ, তিরমিজি)

২১। অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাবার পর সেই ব্যক্তির দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যখন তোমরা কোন অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাও, তখন ভালো কথা বলো (ভালো কিছু চাও), কেননা তোমরা তখন যাই বলো, তার সাথে সাথে ফেরেশতারা ‘আমিন’ বলে”। (মুসলিম)

এছাড়াও জামাতের সুরা ফাতিহা পড়ার পর আমিন বলার সময়, মসজিদুল হারামের ভেতর কাবার সামনে, পিতামাতার জন্য সন্তানের দোয়া, হজ্জ্বের সময় কংকর নিক্ষেপের সময় এওম্ন আরো অনেক সময়ই দোয়া কবুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে সহীহ হাদীসে এসেছে।

শ্রেষ্ঠ দোয়া কোনটিঃ

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ অসংখ্য দোয়া উল্লেখ করেছেন এবং এগুলোই দোয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এর মধ্যে একটি দোয়ার কথা সহীহ হাদিসে এসেছে যেটা রাসুলুল্লাহ সাঃ বেশি পড়তেন। সেটি হলো-

"রাব্বানা আতিনা ফীদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফীল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়া কিন আ'জাবান নার" ( ও প্রতিপালক, আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিন আর আমাকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন )।

তবে উল্লেখিত সময় সহ সকল সময়েই আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করার জন্য সর্বদা জাগ্রত আছেন। আমরা যদি এরপরও তার কাছে ক্ষমা না নিয়ে পৌঁছাতে না পারি তাহলে তা হবে আমাদের জন্য পরম দুর্ভাগ্য। আল্লাহ আমাদের পৃথিবীর জীবন ও পরবর্তি জীবনের দোয়াগুলো কবুল করুন, আমাদের চাহিদাগুলো মিটিয়ে দিন এবং যাদের নাম আল্লাহ নাজাতপ্রাপ্তদের খাতায় লিখে রেখেছেন, তাদের ভেতর আমাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।

৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×