somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোথায় আমার মদের বোতল একটু দাও বাবা খেয়ে নিই।

১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আধুনিক যুগের ছেলে আমি, তাই আধুনিক যুগের পরিবর্তনের ধারা একটু হলেও বুঝতে পারি।

ছোট বেলায় আমাদের গ্রামে আমাদের সমবয়সী একটা ছেলে সিগারেট খেয়েছিল- সে খবর সারা গ্রামময় ছড়িয়ে পড়েছিল; যদিও আমরা নিজের চোখে দেখিনি সিগারেট খেতে, শুধু লোকমূখে শুনছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম। আহারে কি অপরাধটাই না করল ছেলেটা, কি সাস্থি হবে কে জানে! ছেলেটার সাথে তারপর অনেকদিন দেখা হয়নি, হয়ত সাস্থি থেকে বাচার জন্য কোন আত্মিয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ফিরে আসার পর তাকে কোন সাস্থি দেয়া হয়েছিল কিনা মনে নেই। তবে তার এমন অপরাধের খবর আমাদের গ্রাম ছাড়িয়ে পাশের গ্রামগুলোতেও পৌছে গিয়েছিল। আসলে তখনকার সময়ে আমাদের কাছে ঘটনাটা ছিল যেমন অবাক হওয়ার মত তেমনি বড়দের কাছেও। আমাদের গ্রামে তখন কেউ ধুমপান করত এমন খবর আমাদের জানা ছিল না। তাই একটা আট দশ বছরের ছেলের ধুমপানের খবর ছিল অবাক করার মত।

আমরা বিড়ি সিগারেট রাস্তাঘাটে অনেককে খেতে দেখতাম- কিন্তু মদ গাঁজার কথা মাঝে মাঝে লোক মুখে শুনতাম আর অবাক হতাম এই ভেবে যে, ওগুলো আবার কি জিনিস! মদ গাজার কথা শুনলে আমাদের মনে সামুয়িক কৌতুহল তৈরি হত।

একবার খবর বের হল, আমাদের গ্রামে কেউ একজন মদ খেয়েছে। মদ খেলে মাতাল হয়ে মাতলামি করতে দেখেছি সাদা কালো টেলিভিশনে। কিন্তু বাস্তবে দেখেনি।
লোকটি যে মদ খেয়ে মাতাল হয়েছিল, তার যথেচ্ছ প্রমান পেয়েছিল গণ্যমান্য সবাই। সুতারাং তাকে বিচারের আওতায় আনা হল। মুরব্বীদের নিয়ে বিচারের বৌঠক তৈরি হল। যে মদ খেয়েছে, তার বাবা মাও সন্তানের উচিৎ বিচার চায়। আমরা শুধু এটুকু দেখেছি আর এটুকুই জেনেছি; কিন্তু কিশের মদ, কোথায় পেয়েছে লোকটা তা আমরা জানতে পারিনি। কেননা আমরা ছিলাম ছোট, যেটুকু লোকমুখে শুনতাম, ততটুকুই জানতাম।

আমাদের গ্রামে প্রায় সবাই ছিলেন ইসলামী মাইন্ডের; অর্থাৎ তারা সবাই পীর আউলিয়ার বংশধর। সবাই ই কোন না কোন ভাবে সবার আত্মীয় ছিল। যার কারনে বংশের নামে কোন দুর্নাম ছড়াক তা কেউ চাইত না। তাই ছোট খাট অপরাধেও দেয়া হত গুরুদন্ড।

যে লোকটি মদ খেয়েছিল বলে প্রমান পাওয়া গিয়েছিল, তার ইসলামী নিয়ন অনুযায়ী বিচার হয়েছিল। বিচার হয়েছিল দোররা হিসেবে। ঠিক কিভাবে দোররা মারা হয়েছিল সেদিন আর কতগুলো মারা হয়েছিল তা মনে নেই।

এরপর এরকম বিচারের বৌঠক আর তেমন একটা দেখিনি। কারন যারা আমাদের গ্রামে বেশি ধার্মিক ছিলেন তাদের অনেকেই বার্ধক্যবশত মারা গিয়েছিলেন। এরপর যারা ছিলেন, তারা ততটা ধার্মিক ছিলেন না। তাই ছোট খাট অপরাধ করেও অনেকে পার পেয়ে যেত।
এখনকার সময়টা ঠিক বিপরীদ। আগেকার সেই দিনের সাথে সামান্য মিল খুজে পাওয়া যাবে না। অর্ধ যুগেই পাঁচ যুগের পরিবর্তন ঘটে এখন।

সেদিন কয়েকটা ছেলে রাস্তায় আড্ডা মারছিল আর গল্প করছিল। গল্পের মধ্যে সেল্ফি, ফেসবুক আর গার্ল্ফ্রেন্ড শব্দগুলো বার বার শোনা যাচ্ছিল।
একজন চিৎকার করে বলছিল, " ও আমার গার্ল ফ্রেন্ড,, ও আমার গার্ল ফ্রেন্ড। " আবার আরেকজন প্রতিবাদ করে বলছিল, " না ও আমার গার্ল ফ্রেন্ড,,,,। আসলে ওরা সবাই একে অন্যের সাথে ঠাট্টা করছিল।

আমার পাশেই এক বয়স্কমত ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমাকে দেখে ঠোট বাঁকিয়ে আর কপালটা ঘুচিয়ে জিজ্ঞেস করলেল, বাবা গার্ল ফ্রেন্ডটা আবার কি জিনিস! আমি কি উত্তর দেব বুঝতে পারলাম না। একজন বাবার বয়সী মানুষের কাছে গার্ল ফ্রেন্ডের অর্থ ব্যাখ্যা করার স্বস্থি পেলাম না।

বয়স্ক ভদ্রলোকটিও আমার কাছে গার্ল ফ্রেন্ডের অর্থ জানার জন্য প্রশ্ন করেনি; বরং সে প্রশ্ন করেছিল সময় ও যুগের বিশাল পরিবর্তন দেখে। আমি নিশ্চিত এই সময়টা ওনার মত আরো অনেককে অবাক করে দিচ্ছে।

এখনকার সময়ে প্রতি ছয় বছরে যুগের পরিবর্তন হয় ( হতে পারে তার চেয়েও কম সময়)। আগের যুগে প্রতি গ্রামে একজন ধুমপায়ী খুজে পাওয়া যেত না। আর এখনকার যুগে ছোট ছোট বাচ্চারাও ধুমপান করা শিখছে। আগেকার যুগে মদ গাজা কি জিনিস তা অনেকে জানতই না; আর এখন কার যুগে মদ গাজা হয়ে গেছে সহজ প্রাপ্য। আর এটাই যুগের পরিবর্তন।
কিছুদিন পরে এটাও হয়ত একটা স্বাধারন ঘটনা হয়ে দাঁড়াবে যে, ছেলে বাবাকে বলছে, কোথায় আমার মদের বোতল একটু দাও বাবা খেয়ে নিই।,,,

যুগের এমন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের কি কোন হাত নেই?? নাকি আমাদের হাত পা বাঁধা কোন অদৃশ্য সুতোয়!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×