somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজ্ঞান এখন আর মানুষকে অবাক করেনা; তাই বিজ্ঞানের পাঠক দিন দিন কমে যাচ্ছে। একটি আধা গবেষনামূলক বিজ্ঞান পোষ্ট।

২৯ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোট বেলার কথা। ঘরে বসে হঠাৎ ঠট ঠট ঠট শব্দ শুনতে পেলাম। সাথে সাথে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। কি জিনিস আবার, কেনইবা এভাবে শব্দ করছে!

ভাত খাওয়া রেখে দৌড়ে ছুটে গেলাম শব্দের উৎস খুজতে। গিয়ে দেখি পুকুর ঘাটে অনেক ছেলে বুড়ো ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে কোন একটা জিনিসকে কেন্দ্র করে। দেখলাম একটা ঘুর্নায়মান যন্ত্র- ঘুরছে আর খটখট করছে। মুখে আংগুল পুরে অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম আর দশটা ছেলের মত। আসলে ওটা ছিল একটা পানির মটর যা দিয়ে পুকুরের পানি সরানো হচ্ছিল পাইপের মধ্যে প্রবাহ সৃষ্টি করে।

ছোট বেলায় গাড়ির কথা শুনেছি লোকের মুখে মুখে। মাঝে মধ্যে দুই একটি বাইসাইকেল কাঁচা রাস্তায় চলতে দেখতাম। তা দেখার জন্য আমার মত ছোট ছেলেরা সাইকেলের পিছনে দৌড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ত। ইশ যদি সাইকেলটা আমার হত!
একদিন সকাল বেলা আমার এক দূর সম্পর্কের চাচা কোথা থেকে একটা মটর সাইকেল নিয়ে হাজির। তখন যে মামার কত দাম তা দেখে কে? সেধে সেধে ছেলে বুড়োরা আসে খাতির করতে। সেই খাতিরে মোটেও পাত্তা দিত না আমার সেই মামা।
আমাদের গ্রামে টেলিভিশন ছিলনা। সেই মামাই প্রথম টেলিভিশন আনলেন আমাদের গ্রামে। আমাদের গ্রামে তার ঘরটা ছিল সবচেয়ে বড়। তবুও ভিড় সামলানো দায় হয়ে যেত ঘরের মধ্যে। আর আমরা ছোটরা তো চাঞ্চই পেতাম না।

এভাবে বর্তমান যুগের চোখে ছোট খাট বিষয়গুলো আমাদের খুব অবাক করত। খেলাধুলা ছাড়া বিনোদোনের আর কোন দ্বিতীয় মাধ্যম ছিল না আমাদের।

প্রতিটি জিনিস আমাদের অবাক করত; আর ভাবতাম এগুলো কিভাবে সম্ভব! কিভাবে একটা মটর নিজে নিজে ঘুরতে থাকে, কিভাবে নিজে নিজে একটা মটর সাইকেল দৌড়াতে থাকে, কিভাবে মটর সাইকেলে চড়ে অথচ হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যায় না, কিভাবে টেলিভিশনের মধ্যে মানুষ ঢুকল। এসব চিন্তাভাবনা যখন মাথায় আসত, দুষ্টমিতে লেগে যেতাম।
আমাকে মটর যন্ত্র বানাতে হবে, বানাতে হবে টেলিভিশন, ইত্যাদি। এমন অদ্ভুত চিন্তা ভাবনা ছোটবেলায় করেনি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে।
যাইহোক, আমাদের ছোট বিজ্ঞানিদের হাতে একেবারেই যে কিছু তৈরি হয়নি তা কিন্তু নয়। আমরা ছোটবেলায় গাড়ি তৈরি করতাম( খেলনা গাড়ি) টেলিভিশন তৈরি করতাম, মটর তৈরি করতাম। যদিও সেগুলো কোম্পানির তৈরিকৃত যন্ত্রপাতির মত উন্নত ছিলনা। তবুও আমরা তাতে মেধা খাটাতাম একটু একটু হলেও। এভাবে একজন মানুষ এক সময় বড় বিজ্ঞানীও হয়ে উঠতে পারে।

সায়েন্স বা বিজ্ঞান শব্দটার সাথে প্রথম পরিচিত হই ক্লাস ফোরে থাকতে। জানতে পারি, সায়েন্স বা বিজ্ঞানের সূত্র ব্যাবহার করে বিভিন্ন যন্ত্রপাতী তৈরি হয়। এই যেমন মটর সাইকেল, বাইসাইকেল, টেলিভিশন ইত্যাদি বিজ্ঞানের হাতে তৈরি হয়েছে। সেই থেকে মনে মনে বিজ্ঞান পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলাম।

এখন অনেক উন্নত প্রযুক্তি বের হয়েছে। প্রযুক্তির সাথে আমাদের নিত্য বসবাস। প্রযুক্তি ছাড়া আমরা এক মূহুর্ত চলতে পারি না। একজন মানুষ জন্মের সাথে সাথে প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হয়; কিন্তু, নিশ্চিত এখনকার শিশুরা কোন প্রযুক্তি দেখে অবাক হয় না। তাই কোন প্রযুক্তি কিভাবে তৈরি হল, তা নিয়ে তাদের মনে কোন প্রশ্ন তৈরি হয়না। কেননা, তারা এগুলো দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

আগেকার যুগে রেড়িও আবিষ্কার হওয়ার ঘটনা ছিল পৃথিবী কাঁপানো; আসলেই এমন আবিস্কারে পৃথিবী কাঁপবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু এখনকার যুগে যদি এমন কোন কিছু আবিষ্কার হয়? তখন আমাদের দেশের প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক প্রজন্ম সে বিষয়টা কিভাবে নেবে?

কিছুদিন আগে মস্তিস্কের GPS সিস্টেম আবিষ্কার করেছেন তিনজন বিজ্ঞান। নিঃশন্দেহে এটা একটা বিশাল আবিস্কার ছিল। কিন্তু এখনকার যুগের ছাত্র ছাত্রীদের কাছে মস্তিস্কের এই GPS সিস্টেম নিয়ে জানতে চাইবে, দেখবেন শিংহভাগই এই ব্যাপারে অবগত নয়। যখন রেড়িও আবিষ্কার হয়েছিল, তখন পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যাবস্থা ছিল খারাপ, তার পরেও রেড়িও আবিস্কারের কথা পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ খুব দ্রুত জেনেগিয়েছিল। শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই! অথচ বর্তমান যুগে পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যাবস্থা এত উন্নত হওয়া স্বত্ত্বেও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ মস্তিস্কের GPS সিস্টেম আবিস্কারের কথা কেন জানলনা? এর একটাই কারন, বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে এসেছে। আর বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কমার কারন, প্রযুক্তি এখন আর মানুষকে আগের মত অবাক করেনা, ভাবায় না। যেখানে খেতে গেলে বসতে গেলে সব খানেই প্রযুক্তির ব্যাবহার, সে প্রযুক্তি মানুষকে কিভাবে অবাক করবে, কিভাবে ভাবাবে? মানুষের দৃষ্টিতে প্রযুক্তি দর্শন খুব স্বাধারন ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। বিজ্ঞান ছাত্র ছাত্রীদের নিকট প্রশ্ন, বিষয়টা একটু হলেও সত্য কিনা?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৫:৫৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×