২০১০ এর পর শেয়ার বাজারের মহাধ্বস এদেশের লক্ষ- লক্ষ বিনিয়োগকারীর জীবনে সিডরের আঘাত হানে যার ক্ষত এখনও শুকায়নি, ব্যাপারটি আমাদের সবার সামনে স্পষ্ট। আমাদের সবার জানা আছে সরকারের অদুর্দশিতা ও এদেশের অসচেতন বিনিয়োগকারী দু’পক্ষেরই অসাবধনতার ফল এই মহাধ্বস। আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা অসচেতন- গুজবনির্ভর। গুজব বা নিউজের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহজেই ফাঁদে ফেলা যায় যে সুযোগ গ্রহণ করে বাজারের গেমলাররা। তারা শেয়ারকে অস্থির করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। এভাবে ফুলিয়ে ফাপিয়ে বেশি দামে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর হাতে তুলে দিয়ে তারা সটকে পড়ে। পরে অন্য কোম্পানীর শেয়ার নিয়ে খেলা করে এভাবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা যখন প্রবেশ করে গেমলাররা তখন সে শেয়ার থেকে বের হয় এভাবে এদের সহজেই ফাঁদে ফেলে। তবে গেমলারদের সাথে সাথে সাধারন বিনিয়োগকারীও দু’একজনে লাভ করে । কিন্তু আল্টিমেটলি গেমলাররা সবসময় লাভবান ! সুতরাং আমাদের বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ও গবেষনা করে বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে, আজ বিনিয়োগ করে কাল লাভ করার প্রবণতা পরিহার করতে হবে কারন শেয়ার বাজার স্বল্পমেয়াদী নয় দীর্ঘ্যমেয়াদী বিনিয়োগের বাজার। উন্নত বিশ্বের শেয়ার বাজার দেখলে তারই বাস্তবতা দেখা যাবে।
এতো গেল সাধারন বিনিয়োগকারীর অবস্থা। আমাদের দেশের এ সরকারের একটা ঐতিহ্য আছে, এই মহাধ্বস সেই ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতা মাত্র !! সাধারন বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কের কোন কারন নেই। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসলে এরুপ ধ্বস-মহাধ্বস আরও আসবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমান অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর কথাইতো তার প্রমাণ- ”আমরা ক্ষমতায় থাকলে শেয়ার বাজার থেকে মানুষ কিছু পায়” কিন্তু সে মানুষ কারা তা সবারই জানা। আমাদের মত সাধারন বিনিয়োগকারীকে তো উনি মানুষ ভাবেননা। আল্লাহর কসম উনি যদি মানুষ ভাবতেন তবে মহাধ্বসে সর্বহারা নি:সদের আর্তনাদ উনি শুনতেন। উনি শুনেননি, উনি শুনেছেন উনার ভাষায় মানুষের কথা !! বড় বড় রাঘব বোয়ালদের শেয়ার বাজার থেকে লুটে-পুটে নেবার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু ভুলে যাবেননা, লক্ষ-লক্ষ নি:স্ব বিনিয়োগকারীর অভিশাপ বৃথা যাবেনা।
অপর দিকে পুজিবাজার তদারকিতে যারা নিয়জিত তাদের চরম ব্যর্থতার পরিচয় পাওয়া যায় ধ্বসের সময় ও ধ্বস পরবর্তী সময় গুলোতে। সর্বসাধারনের অন্তর্ভূক্তির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন স্থানে রোড শো ও মেলার আয়োজন চালাতে থাকে অথচ তখন পুজিবাজার অতিমূল্যায়িত হয়ে গেছে। বাজার পিই ৩০ পার হয়েছে যেটা শেয়ার বাজারের মানদন্ডে আতঙ্কিত হবার মত বিষয়। অথচ তখন পুজিবাজার তদারকির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ন সংস্থা অর্থমন্ত্রণালয় থেকে আমাদের চরম ব্যর্থ্য, অসচেতন মন্ত্রী আবুল মাল বলে চললেন- ’পুজিবাজার অতিমূল্যায়িত হবার মত কারন আমি দেখছিনা, শেয়ারবাজার পড়ে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই’। উনার এই বক্তব্য বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পায়। পিই রেশিও ৩০ পার হবার পরও বলে অতিমূল্যায়িত হয়নি!!! উনার ভাষায় পিই আর কত বাড়লে অতিমূল্যায়িত হবে উনিই জানেন। সরকারের গুরুত্বপুর্ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর বক্তব্য যদি এমন অদুরদর্শী হয় তবে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু নাই। আসলে উনি এর চেয়ে ভাল বলবেনই বা কেমনে! উনার কাছে শেয়ার বাজারের কোন মূল্য নেই। জাতীয় অর্থনীতিতে পুজিবাজারের কোন অবদান নেই! শেয়ার বাজার রাবিশ! আসলে উনার পুজিবাজারের ব্যাপারে ধারনাই নাই তা না হলে এমন কান্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য করতে বিবেক বাধা দিত। হাজার-হাজার কোটি টাকার দুর্নিতির চিত্র উনার সামনে তুলে ধরলে এ হাজার কোটি টাকা কিছু না, ও হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারী অর্থনীতিতে কোন প্রভাব ফেলবে না বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। পুর দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে বলবেন এটা কিছু না! এমন লোকের হাতে দেশের পুজিবাজার কেমনে নিরাপদ থাকবে!!?
উন্নত বেশ্বে জাতীয় উৎপাদনে পুজি বাজারের অবদান ৫ শতাংশ যেটা আমাদের মাত্র ১ শতাংশ। একটি স্থিতিশীল পুজিবাজার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের পুজিবাজারের অবদান অর্থনীতিতে বৃদ্ধি করতে হবে। পুজিবাজারের ধর্ম হল বাড়বে কমবে, দর সংশোধনের মাধ্যমে সে ক্রমাগত উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে। আর আমাদের বিনিয়োগকারীদেরও দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। রাতারাতি লাভের প্রবণতা পরিহার করে দীর্ঘ্যমেয়াদী বিনিয়োগে উৎসাহী হতে হবে কারন পুজিবাজার দীর্ঘ্যমেয়াদী বিনিয়োগের বাজার। উন্নত বিশ্বেও বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ্যমেয়াদী বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের পুজিবাজারকে শক্তিশালী করে তুলেছে। আর সর্বপরি আমাদের পুজিবাজারের তদারকিতে নিয়জিত প্রতিষ্ঠান সমুহকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ সঠিকভাবে পালন করলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। পুজিবাজারকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিন আপনাদের কাজ শুধু কম্পায়েন্স ঠিক রাখা। তবেই আমাদের পুজিবাজার শক্তিশালী হবে, জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান বড়বে।।