somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অবুঝমন
ক্লাস এইটের বছর থেকে কম্পিউটারের সঙ্গে পরিচয়। তখন থেকে ক্যারিয়ার টার্গেট ছিল আইটিতে। সাংবাদিকতা ছিল মনের খোরাক। অর্থাৎ লিখতে ভাল লাগে, তাই লিখি। কিন্তু ইন্টারমেডিয়েটের পর ঢাকায় সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়। এরপর থেকে সাংবাদিকতা হয়ে গেলো পুরোদমে পেশা ও নেশা।

সাগর-রুনি হত্যার রহস্য: অনুসন্ধান যা বলছে...

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাকসুদুর রহমান রঞ্জু। এটিএন বাংলার একজন পরিচালক। তিনি এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই। পেশায় একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী যেদিন খুন হন সেদিনই তিনি দেশ ত্যাগ করেন। ওই দিনই তার বিদেশে চলে যাওয়া স্বাভাবিক কিংবা কাকতালীয় ঘটনা হলেও নানা কারণে আইনশৃংখলা বাহিনী তাকে সন্দেহের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। অপরদিকে যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তিনি খুনের ঘটনার এক মাস পর পুরনো পাসপোর্ট পরিবর্তন করে নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। আবার নতুন পাসপোর্ট নেয়ার পর তিনি রহস্যজনকভাবে পুরনো পাসপোর্ট ব্যবহার করে দু’বার বিদেশ সফর করেন।
ওই সময় তার দেশ ত্যাগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে পুলিশ রঞ্জুর ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নেয়। তাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, সাগর-রুনীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় তার যাতায়াত ছিল। পরবর্তী সময়ে মামলাটি র‌্যাবে স্থানান্তর হওয়ার পর তারাও তাকে সন্দেহের তালিকায় রাখে। র‌্যাবের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহভাজন আসামিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাই তাকে তারা গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে র‌্যাবের সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরের অনুসন্ধানী টিমের কাছে দাবি করেন, ‘এ মামলায় রঞ্জু অন্যতম সন্দেহভাজন আসামি। তাকে পেলে অবশ্যই গ্রেফতার করতাম।’ শুধু র‌্যাবের এই শীর্ষ কর্মকর্তা নন, তদন্ত তদারকির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পুলিশের অন্য এক পদস্থ কর্মকর্তাও বলেন, ‘শুরু থেকে রঞ্জু তাদের সন্দেহের তালিকায় ছিলেন।’

পুলিশের অনুসন্ধানে রঞ্জু :


২০১২ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসা থেকে সাগর-রুনীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন মামলাটি তদন্ত করে শেরেবাংলা নগর থানা। ওই সময় তদন্ত তদারকির দায়িত্বে ছিলেন পুলিশের এমন একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার (ডিসি) মুখোমুখি হয় যুগান্তরের অনুসন্ধানী টিম। অনুসন্ধানী টিমের পক্ষ থেকে গত চার মাসের ব্যবধানে ওই কর্মকর্তার নিজ কার্যালয়ে পাঁচ দফায় তার সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করা হয় (১৪ জানুয়ারি, ২০ জানুয়ারি, ১৭ ফেব্র“য়ারি, ১২ মার্চ ও ২ এপ্রিল)। তিনি বলেন, ‘রঞ্জু সাগরদের পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় একবার কনফার্ম গিয়েছিল। এ বিষয়ে রুনীর মাকে তো অনেকবারই ইন্টারভিউ করেছি। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম রঞ্জু এই বাসায় গিয়েছিলেন কিনা, তাকে চেনেন কিনা, প্রথমে তো চেনেই না বলে জানান। এই না, সেই না। পরে তিনি বলেন, ‘একদিন তিনি আমার সঙ্গে ওই বাসায় গিয়েছিল।’ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘আসলে তিনি অনেকবারই গিয়েছেন, একবার না। রুনীর মা কিন্তু খুব চালাক মহিলা।’ পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘রুনীর সঙ্গে রঞ্জুর এসএমএসের প্রমাণ পেয়েছিলাম। রুনীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ পরিচয়ও ছিল। রঞ্জুর মোবাইলের তিন মাসের কললিস্ট আমাদের কাছে ছিল। সিডিআরে রুনীর সঙ্গে রঞ্জুর কথাবার্তার প্রমাণও আছে। তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল, এসএমএসও ছিল...।’ এদিকে রুনীর সঙ্গে কখনও তার মোবাইলে কথা হয়নি বলে দাবি করে রঞ্জু যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার একটাই অ্যাকটেল মোবাইল নাম্বার। অনেক পুরাতন নম্বর। আর আমি কোনো নম্বর চেঞ্জ করিনি। রুনীর সঙ্গে সম্পর্ক পরিচয় থাকলে তো তা সিডিআরে থাকার কথা।’ রুনীদের বাসায় যাওয়া প্রসঙ্গে রঞ্জু দাবি করেন, ‘আমি যদি তার (রুনীর) বাসায় যাই, তার সঙ্গে পরিচয় থাকে, তাহলে কোনো না কোনো দিন কোনোভাবে আমার সঙ্গে তার কথা হইছে। একদিন হলেও তো কথা হবে। সত্যিটা হল, আমি তো তাদের পশ্চিম রাজাবাজারের বাসা-ই চিনি না।’ অপরদিকে রঞ্জুর বিদেশ যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রঞ্জুকে যে আমরা পেছন থেকে ট্র্যাকিং করেছি সেটা তার ভাই এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান টের পাননি। তবে তার কানে ছিল, আমরা এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে পারি। রঞ্জুকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু ঘটনার পর সে দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় তখন তার সঙ্গে আর কমিউনিকেট করা যায়নি। আর যে নাম্বারটি পেয়েছিলাম তাতে যোগাযোগ করা যায়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘রঞ্জুকে প্রথমে আমরা সাসপেক্টেড আসামি হিসেবে নিইনি। যখন মোবাইলের কললিস্ট দেখলাম এবং তাতে দেখা গেল, রুনীর সঙ্গে তার ফোনে কথাও হয়েছে। রয়েছে এসএমএস বিনিময়। এছাড়া ঘটনার দিন বিদেশে চলে যাওয়ায় তার প্রতি আমাদের সন্দেহ আরও বাড়ে। এজন্য তাকে পেলে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করতাম। এজন্য রঞ্জু সাহেব আমাদের সন্দেহের তালিকায় ছিলেন।’
র‌্যাবের চোখে রঞ্জু : থানা পুলিশ ও ডিবির হাত ঘুরে মামলাটি তদন্তের জন্য ঘটনার ৭৬ দিন পর র‌্যাব দায়িত্ব পায়। তাদের তদন্তেও বেরিয়ে আসে, ড. মাহফুজুর রহমানের ভাই রঞ্জু অন্যতম সন্দেহভাজন আসামি। ঘটনার পর তিনি দেশ ত্যাগ করেন। ব্যাপক অনুসন্ধানের পর তারাও সিদ্ধান্ত নেয়, দেশে ফিরলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। আর এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে যুগান্তর অনুসন্ধানী টিম র‌্যাবের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তার মুখোমুখি হয়। চার মাসের ব্যবধানে ওই কর্মকর্তার নিজ বাসায় তিনবার (গত ২১ ফেব্রুয়ারি, ১১ মার্চ ও ২ এপ্রিল) সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। তবে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় প্রতিবারই তিনি তার পরিচয় গোপন রাখার শর্ত জুড়ে দেন। প্রকৃত সত্য উদঘাটনের স্বার্থে যুগান্তর অনুসন্ধানী টিমও তার শর্তে রাজি হয়। এরমধ্যে দ্বিতীয় দফায় ১১ মার্চ দেয়া সাক্ষাৎকারে এটিএন বাংলার পরিচালক রঞ্জুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রুনীর সঙ্গে যাদের রিলেশন ছিল তারা সবাই সন্দেহভাজন। যেমন তানভীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ তিনি জানান, ‘এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজের ভাই রঞ্জুর সঙ্গে তার (রুনীর) ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। যেদিন সাগর-রুনী খুন হয় সেদিনই তিনি বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আজও তিনি দেশে ফিরে আসেনি। ওর নাম মাকসুদুর রহমান রঞ্জু। ও সন্দেহভাজন আসামিদের মধ্যে অন্যতম।’ তিনি আরও বলেন,‘ রুনীর সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। এমনকি এই হত্যাকাণ্ডে তার ইনভল্বমেন্ট থাকতে পারে। তবে তার বিষয়টি ডিসক্লোজ করা হয়নি। কিন্তু তার বিষয়টা এমন যে, মেইন সাসপেক্টেডের মধ্যে সেও একজন। সে জন্য তাকে পাহারা দেয়া হচ্ছে। এখনও দেয়া হয়। সে দেশে আসে কিনা তা সব সময় পাহারা দিচ্ছে র‌্যাব। তার বিষয় খোঁজ রাখা হচ্ছে। সেটা তো আর বাইরে কাউকে বলা হয় না। যেমন তানভীরকে ঘটনার পর পরই ধরা হয়েছিল। তেমনি ড. মাহফুজের ভাই দেশে থাকলে তাকেও ধরত র‌্যাব।’

রঞ্জুর অস্বীকার :
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা সরাসরি অস্বীকার করেন মাকসুদুর রহমান রঞ্জু। তার বিষয়ে র‌্যাব এবং পুলিশের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার দেয়া তথ্য যাচাইয়ের জন্য যুগান্তর অনুসন্ধানী টিমের পক্ষ থেকে রঞ্জুকে ১৮ মার্চ ফোন করা হয়। পরে তার দেয়া সময় অনুযায়ী ২২ মার্চ এটিএন বাংলার কনফারেন্স রুমে যুগান্তর অনুসন্ধানী টিমের মুখোমুখি হন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন এটিএন বাংলার দু’জন বিশেষ প্রতিনিধি নাদিরা কিরণ ও মাহমুদুর রহমান। এ সময় তিনি যুগান্তরের অনুসন্ধানী টিমকে বলেন, ‘সাগর-রুনীর নিহত হওয়ার খবর আমি দেশে থেকে শুনেছি। ঘটনার পরে তো দেশেই ছিলাম। ঘটনার পরদিন আমি বিদেশে গেছি। আমার বিষয়ে পুলিশ কিংবা র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তারা যা বলেছেন তা তারা অনেকটা ধারণা করেই হয় তো বলছেন। এটা স্রেফ ধারণা। প্রমাণ কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। প্রমাণ দিতে পারবে বলেও আমার মনে হয় না।’

বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য মিথ্যা দাবি করে এটিএন বাংলার এ পরিচালক বলেন, ‘আমি তো কোথাও লুকাইনি। আমি তো ওপেনলি ঘুরছি। সব যায়গায় যাচ্ছি। কোথায় যাচ্ছি, কোথায় গেছি তা তো তাদের জানার কথা। তাহলে আমার বিরুদ্ধে কেন ঢালাওভাবে এসব মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। যারা এসব কথা বলছেন, তারা সঠিক কথা বলেননি।’

রুনীকে চেনেন না রঞ্জু :
এটিএন বাংলার পরিচালক রঞ্জু যুগান্তরের অনুসন্ধানী টিমের কাছে দাবি করেন, তিনি রুনীকে চেনেন না। তবে নাম জানতেন। ব্যবসায়ী রঞ্জু বলেন, ‘সত্য একটাই, আমি রুনী কিংবা সাগরকে কখনও দেখিনি। আপনারা বলতে পারেন, সেলফ ডিফেন্স নেয়ার জন্য অনেকে মিথ্যা কথা বলতে পারে। আল্লাহ তো উপরে আছেন। আমাকে তো জবাব দিতে হবে। সাগরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তাকে কখনও আমি দেখিওনি। আর রুনীকেও আমি চিনি না।’ আবার তিনি এও বলেন, ‘অনেক সময় আমি নাদিরা কিরণের সঙ্গে রুনীকে মিক্সড করে ফেলতাম।’

তথ্য লুকাতে পারে কেউ :
এটিএন বাংলার পরিচালক ঘটনার পরদিন বিদেশে পালিয়ে গেছেন। এরপর আর ফিরে আসেননি। এমন তথ্য যুগান্তর অনুসন্ধানী টিমকে ১১ মার্চ দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন র‌্যাব থেকে সদ্য বিদায়ী নীতিনির্ধারক পর্যায়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তা। কিন্তু পরে যুগান্তর অনুসন্ধানী টিম খোঁজ নিয়ে জানতে পারে রঞ্জু বর্তমানে দেশেই আছেন। এরপর তার সাক্ষাৎকারও নেয়া হয়।

এদিকে রঞ্জু দেশে থাকার পরও বিষয়টি র‌্যাব কেন জানে না এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যুগান্তরের অনুসন্ধানী টিম পুনরায় র‌্যাবের ওই সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মুখোমুখি হয় ২ এপ্রিল। এ সময় তার কাছে রঞ্জুর দেশে থাকার বিষয়টি তুলে ধরা হলে তিনি রীতিমতো হতবাক হন। এরপর যুগান্তরকে তিনি জানান, ‘হয় তো কেউ শেল্টার দিচ্ছে। রঞ্জু দেশে আসছে-গেছে তা আমার কাছে হাইড (গোপন) করে রেখেছিল। রঞ্জুর বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার তথ্য যদি আগে পেতাম তাহলে আমি দেখতাম। তবে হ্যাঁ, এখনও তাকে অ্যারেস্ট করা যেতে পারে। কারণ মামলা তো তদন্তাধীন। এখন তাকে পাওয়া গেলে সন্দেহভাজন হিসেবেই অ্যারেস্ট করা উচিত।’ তিনি দাবি করেন, ‘আমি অফিসে থাকাকালীন (দায়িত্বে থাকাকালীন সময়) পেলে অবশ্যই তাকে ধরতাম। আমি মনে করি, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।’

রঞ্জুর দ্বিতীয় পাসপোর্ট রহস্য :
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ব্যবসায়ী রঞ্জু সত্যিই ঘটনার দিন (২০১২ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি) সিঙ্গাপুর হয়ে (সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স-ফ্লাইট নম্বর-এসকে ৪৪৭) আমেরিকার লসএঞ্জেলসে যান। আর দেশে ফিরে আসেন ২২ ফেব্র“য়ারি। তার দেয়া প্রথম পাসপোর্টের নম্বর-এএ৯০৬৬২১০। এটি একটি এমআরপি পাসপোর্ট। এ পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি কাঠমান্ডু (যান ১২ জুন-ফেরেন ১৬ জুন) ও ব্যাংকক ভ্রমণ করেন (গমন-১১ জুলাই-আগমন-১৬ জুলাই)। এরপর থেকে প্রথম পাসপোর্টটি তিনি আর ব্যবহার করেননি। বিষয়টির ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে তাকে ফোন দেয়া হয় ২৩ মার্চ। তার কাছে অনুসন্ধানী টিমের প্রশ্ন ছিল, আপনি কি আর কোনো পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে গেছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথম পাসপোর্টের বিপরীতে নতুন পাসপোর্ট নিয়েছিলাম। পরে আমি নতুন পাসপোর্টই ব্যবহার করি।’ এই বক্তব্যের সূত্র ধরে তার কাছে দ্বিতীয় পাসপোর্টের নম্বরটি জানতে চাওয়া হলে রঞ্জু বলেন, ‘এটা আপনারা ইমিগ্রেশন থেকে সহজেই নিতে পারবেন। সেখানে সব তথ্যই আছে।’ পরদিন ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরাতন পাসপোর্টের বিপরীতে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ নতুন আরেকটি পাসপোর্ট (পাসপোর্ট নম্বর এসি ৪৪৮৬২৫১) তার নামে ইস্যু করা হয়। অথচ নিয়ম রয়েছে, পুরাতন পাসপোর্টের বিপরীতে নতুন পাসপোর্ট নিলেই পূর্বেরটি বাতিল বলে গণ্য হবে। কিন্তু এটিএন বাংলার পরিচালক রঞ্জু পুরাতন পাসপোর্টটি ২০১২ সালের ১১ জুলাই ব্যবহার করে সিঙ্গাপুরে চলে যান।

এভাবে পাসপোর্ট পরিবর্তন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী, পুরাতন পাসপোর্টের বিপরীতে নতুন পাসপোর্ট নিলে অটোমেটিক্যালি পুরাতনটি ইনভ্যালিড হয়ে যাবে।’

এদিকে এ বিষয়ে রঞ্জুর মন্তব্য নেয়ার জন্য বৃহস্পতি ও শুক্রবার একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে কল দেয়া হয়। কিন্তু তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপরও এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়ার জন্য শুক্রবার অনুসন্ধানী টিমের পক্ষ থেকে এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি মাহমুদুর রহমানের (প্রথমদিন সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় যিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন) সহযোগিতা চাওয়া হয়। তিনি জানান, ‘তার পক্ষে উনার (রঞ্জু) সঙ্গে এখন যোগাযোগ করে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

এরপর এ বিষয়ে এটিএন বাংলার অপর বিশেষ প্রতিনিধি মনিউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেলে তিনি হয়তো বিদেশে থাকতে পারেন।’

উল্লেখ্য, রঞ্জু তার দ্বিতীয় পাসপোর্টটি ব্যবহার করে গত তিন বছরে ২৮ বার বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করেন। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ৮ বার (ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, দুবাই ও মালয়েশিয়া), ২০১৪ সালে ১৭ বার (ব্যাংকক, হংকং, ফ্রাংকফুট ও লসএঞ্জেলস) এবং ২০১৫ সালে তিন বার (ব্যাংকক, জেদ্দা ও সিঙ্গাপুর) বিদেশ ভ্রমণ করেন। সর্বশেষ তিনি ১০ মার্চ মাস্কাট থেকে দেশে ফিরে আসেন।

জানেন না আইজিপি :
মাকসুদুর রহমান রঞ্জুর বিষয়ে সদ্য বিদায়ী র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ ওই কর্মকর্তার দেয়া সব তথ্য সবিস্তারে ৩ এপ্রিল বর্ণনা করা হয় আইজিপি একেএম শহীদুল হকের কাছে। তবে তিনি যুগান্তর অনুসন্ধানী টিমকে জানান, রঞ্জুর বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই।
এদিকে মাকসুদুর রহমান রঞ্জুর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমানের মন্তব্য নেয়ার জন্য শুক্রবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক ভানু রঞ্জন চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে সহযোগিতা কামনা করলে তিনি জানান, তার (ড. মাহফুজ) মোবাইল নম্বর জানা নেই। এছাড়া আরও কয়েকটি মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। (চলবে)
(সকল সাক্ষাৎকারের অডিও ও ভিডিও যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত)

- See more at: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×