somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মগজ মাথায় :: বুদ্ধিমত্তা কোথায়? (অথবা নীলতিমিরা কি সভ্যতা গড়ে তুলতে পারবে?)

০৩ রা নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে মেয়েদের মাথায় ঘিলু কম, তাই তারা অঙ্ক বা বিজ্ঞান বোঝে কম। মেয়েদের মস্তিষ্কের গড়পড়তা ওজন হলো এগারোশ হতে বারোশ গ্রাম, যেখানে ছেলেদের মস্তিষ্কের গড় ওজন পনেরোশ গ্রাম প্রায়। তাহলে বুদ্ধিমত্তা মেয়েদের “সাইন্টিফিক”-ভাবেই কম, কি বলেন?

আমাদের আরো একটি ধারণা আছে যে, প্রাণী জগতে মানুষের মগজই সবচেয়ে বড়। তাই মানুষই সবচাইতে বুদ্ধিমান প্রাণী।

আসলেই কি তাই? বুদ্ধিমত্তা কি কেবল ঘিলুর ওজনের উপরেই নির্ভর করে?

একটা মজার তথ্য দেই। প্রাণী জগতে সবচাইতে বড় মগজ হলো নীল তিমির। মানুষের মগজের চাইতে তা প্রায় সাড়ে ছয় গুণ বড়! প্রায় আট কেজি তার মগজের ওজন! হাতির মগজের ওজন প্রায় সাড়ে চার কেজি। ডলফিনের হলো পনেরশ গ্রাম, প্রায় আমাদের সমান। তথ্যসূত্র ব্রেন, ফ্যাক্টস এন্ড ফিগার



এখন, বড় মস্তিষ্কই যদি বুদ্ধিমত্তার মাপকাঠি হতো, তাহলে আমরা দেখতাম তিমি আর ডলফিনদের নিজস্ব, উন্নত সভ্যতা। তারা আজ সমগ্র প্রাণীজগতে খবরদারি করে বেড়াতো। আমরা হতাম তাদের ইচ্ছা পূরণের ফেলনা কোন খেলনা! (আমাদের আর নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করতে হতো না ;) )

মূল ব্যাপারটা কিন্তু অন্য জায়গায়। আসলে, একটা বড় প্রাণীর শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে তুলনামুলক ভাবে একটা বড় মস্তিষ্কের দরকার হয়। তাই বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্র দেখার বিষয় হলো মগজ আর শরীরের ওজনের অনুপাত। বিজ্ঞানীরা দেখলেন যে এই অনুপাত যে প্রাণীর যত বেশী, সে প্রাণীও তত উন্নত। মানুষের ক্ষেত্রে এই অনুপাত হলো সবচাইতে বেশি। তাই মানুষই পৃথিবীতে সভ্যতা গড়ে তুলেছে, তিমি বা হাতি নয়।

পুরুষদের যেমন মগজের ওজন বেশি, তেমনই তাদের শারীরিক ওজনও মেয়েদের তুলনায় বেশি। মগজ-দেহের অনুপাত পুরুষ ও মেয়েদের মাঝে গড়পড়তাভাবে একই।

আবার নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক আনাতোলী ফ্রান্সের মগজের ওজন ছিল মাত্র এগারোশ গ্রাম, যেখানে কবি বায়রনের মস্তিষ্কের ওজন প্রায় বাইশশো! আইনস্টাইনের মগজের ওজন গড়পড়তা মানুষের চাইতে বেশি ছিল না, বরং কিছু কমই ছিল (এটা নিয়ে সাধারণের মাঝে কুসংস্কার আছে যে তার মস্তিষ্ক অন্যরকম, ওজন বেশি ইত্যাদি) তথ্যসূত্র উইকিপিডিয়া। আসলে একজন মানুষের মস্তিষ্কের গড়পড়তা ওজন যত হওয়া উচিত, তার চেয়ে একশ বা দুইশ গ্রাম কম-বেশি হলে কিন্তু খুব বেশি ক্ষতি বা লাভ হয় না।



এবার তাহলে আবার আগের প্রশ্নে আমরা ফিরে যাই। মানুষের বুদ্ধিমত্তা আসলে কিসের উপর নির্ভর করে?

প্রয়া আড়াই হাজার বছর আগে ইউরোপে স্পার্টা নামে একটি নগররাষ্ট্র ছিল। সেখানে রাজবংশের সাইকারগাস নামের একজন এক কুকুরছানা নিয়ে গিয়েছিলেন একটি গভীর গর্তে। গর্তে কেউ নামতো না। দড়ি দিয়ে কেবল খাবার আর পানি দেয়া হতো। অন্য একটি কুকুরছানাকে তিনি বড় হয়ে উঠতে দিয়েছিলেন স্বাভাবিকভাবে। দুইটিই যখন বড় হয়ে গেল, তখন তাদেরকে এক মাঠে এনে সামনে ছেড়ে দেয়া হলো এক খরগোশ। স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠা কুকুরছানা খরগোশকে তাড়া করে মেরে ফেললো। কিন্তু অপর কুকুরটি, খরগোশকে দেখেই দিল উল্টো দিকে দৌড় – শিকার করা তো দূরে থাক!

ল্যাবরেটরীতে বিজ্ঞনীরা বিভিন্ন প্রাণী নিয়ে গবেষণা করে দেখতে পেয়েছেন যে কোন প্রাণীকে যদি কোন সাদামাটা পরিবেশে রাখা হয় তাহলে তার বুদ্ধিমত্তাও হয় সাদামাটা। আর যদি তাকে উত্তেজনাময়, ঘটনাপূর্ণ পরিবেশে রাখা হয় তাহলে তার নতুন নতুন চিন্তার ক্ষেত্র তৈরি হয়, আচরণেও দেখা যায় ইতিবাচক পরিবর্তন।

তাই বুদ্ধিমত্তা বলতে যদি আমরা চিন্তাভাবনা, বিশ্লেষণ কিংবা উদ্ভাবনী ক্ষমতা বুঝি তাহলে নতুন নতুন বিভিন্ন বিষয় শিখে, চর্চা করে আমরা যে কেউই বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে পারি। আমাদের দেশে একটা ছেলে আর একটা মেয়ের বড় হওয়ার মাঝে, তাদের প্রাপ্ত পরিবেশ আর সুযোগ-সুবিধার মাঝে, তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে আকাশ পাতাল তফাত। তাই আমাদের দেশে মেয়েদের বিজ্ঞানের বিষয় নিতে নিরুৎসাহিত করতে দেখি। এমন কি একটা ছেলেও যে পড়াশুনার বাইরে অন্য কিছু চর্চা করবে, সে সুবিধাও সে পায় না। তাই আমরা ভিন্ন ভাবে ভাবতে পারি না, ভিন্ন ভাবে দেখতে পারি না। ভিন্নমত সহ্য করা - সেটা অনেক দূরের বিষয় (সামু ব্লগে এই বিষয়গুলো খুব ভালভাবে দেখা যায়)।



এই লেখাটি আগে বিজ্ঞানপুরী তে প্রকাশিত হয়েছিল। সম্পাদিত।

এ রকম আমার পছন্দের আরো একটি লেখা


তথ্যসূত্র:শারীরতত্ত্ব সবাই পড়, একটুখানি বিজ্ঞান, ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১০
১০টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×