এটি একটি পোস্টের কমেন্ট
আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সব সিস্টেম কে একটা স্বাভাবিক নিয়মের অধীন করেছেন, আর তা হল আপনা থেকে কোন কিছুই হয় না। আর কোন কিছু ঘটতে হলে পরস্পর বিপরীত দুটি শক্তি সবসময়ই ক্রিয়াশীল।অনেকটা দড়ি টানাটানি খেলার মত।যেদিকটা বেশি শক্তিশালী ঘটনাটি তার অনুকুলে ঘটে।
খিলাফাত প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটও অনুরূপ।
কিভাবে হবে তার বিস্তারিত বিবরণ জানতে পিছনে ফিরে তাকাতে হবে।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় মৌলিক যে প্রসিডিউরগুলো ব্যাবহৃত হয়েছিল তা বর্তমান সময় ও প্রেক্ষাপটেও সমভাবে প্রজোয্য।
প্রসিডিউরগুলো হলো-
১) দাওয়াত; (ইসলামে দাওয়াত কিন্তু কখনই শুধুমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক Motivation বা Brainwash নয় বরং পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও সত্যাসত্য বিশ্লেষনমূলক অনুধাবনভিত্তিক; উদ্দেশ্য আল্লাহ ও তার রসুলের পূর্ণ আনুগত্যে বিশ্বাসী লোক তৈরী করা as maximum as possible )
২) তা'লিম;(ইসলামী জীবন বিধান শিক্ষা দেওয়া; ইসলামী জীবন বিধানের একটি স্পেশাল বৈশিষ্ট্য হলো তা পরিপূর্ণভাবে মানবজীবনের প্রাত্যহিক জীবন যাত্রার নিয়মকানুন ও বাস্তব সমস্যা সমাধানের উপায়; ফলে এই শিক্ষায় শিক্ষিতদেরকে আলাদা করে অর্থনীতি,শিক্ষানীতি,রাষ্ট্রনীতি,সমরনীতি,বিচারব্যবস্থা ও পররাষ্ট্রনীতি শেখা বা জানার দরকার পড়ে না। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হতে পারে মানুষের সমস্যা তো পরিবর্তনশীল, হ্যাঁ এ জন্য আপনার নিরুৎসাহিত হবার কোন কারণ নেই কেননা ইসলামী জীবন বিধানের মূল ২টি উৎস ক্কুরআন ও হাদিস এমন এক সর্বঞ্জ সত্বার পক্ষ থেকে প্রেরিত যিনি নিজেই সমস্যা ও সমাধান দুই জিনিষেরই স্রষ্টা এবং তিনিই আমাদের এ বিষয়টা নিষ্চিত করেছেন যে তাঁর দেওয়া বিধান ক্কেয়ামত পর্যন্ত সর্বপ্রকার সমস্যার সর্বাধিক লাভজনক সমাধানে সক্ষম, আর নতুন সৃষ্ট সমাস্যার জন্য যে দুটি হাতিয়ার ব্যবহৃত হবে তা হলো ইজমা ও কিয়াস)
৩)তাযকিয়াহ (বা সংশোধন যেটা মুলত: একটা Life long Continuous process, যা কেবলমাত্র আল্লহ তাআলার জন্য নির্ধারিত ইবাদাত গুলো যেমন নামাজ, রোজা,যিকর ইত্যাদির পরিপুর্ণ চর্চার মাধ্যমে প্রথমে ব্যক্তিপর্যায়ে আয়ত্বে আসে এবং তা'লিম অনুযায়ী জীবনের প্রতিটি কাজ করার দ্বারা সামাজিকভাবে তা প্রতিষ্ঠিত হয়।সামাজিকভাবে ইসলাম প্র্যাকটিসের এই স্তর হতেই মুলত: ইসলামের এই নবগঠিত দলটি প্রথমত: ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে বাঁধার সম্মুখীন হতে শুরু করে।আস্তে আস্তে দাওয়াত,তা'লিম ও তাযকিয়াহর পরিধি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে বাড়তেই থাকে, সেইসাথে বাড়তে থাকে প্রতিরোধ।প্রাথমিক ভাবে দুর্বলতার দরুণ বিপক্ষের সাথে শুধুই ভালো আচরণ, তারপর ভালো আচরণ ও ভদ্রোচিত মৌখিক বাকবিতন্ডা, তারপর তারপর ভালো আচরণ, ভদ্রোচিত মৌখিক বাকবিতন্ডা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে বা ক্ষুদ্র পরিসরে আল্লাহর পছন্দনীয় জীবনব্যবস্থা কে প্রতিষ্ঠিত করতে বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে শক্তিপ্রয়োগ and finally......... )
৪) জিহাদ (শব্দটি ব্যপক অর্থবোধক, এবং আল্লাহর পছন্দনীয় জীবনব্যবস্থা কে প্রতিষ্ঠিত করতে বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে এতক্ষন যে তিনটি বিষয় আলোচনা হয়েছে তার প্রত্যেকটিই আভিধানিক ভাবে জিহাদের ভিতরই পড়ে তবুও শরিয়তের পরিভাষা অনুযায়ী জিহাদ বলতে specifically শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করাকেই বুঝায় )
আর যেহেতু একটি পরিপূর্ণ ও সম্পুর্ণ আলাদা জাতি গড়তেও যেমন সময় লাগে ধ্বংস হতেও তেমন সময় লাগে।
সুনানে আহমাদ এর ঐ হাদিস টিতে মুলত: এই চিরসত্য নিয়মটার কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে "মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে"
“তোমাদের মধ্যে নবুয়ত থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তারপর আল্লাহ তার সমাপ্তি ঘটাবেন।তারপর প্রতিষ্ঠিত হবে নবুয়তের আদলে খিলাফত তা তোমাদের মধ্যে থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করেন, অতঃপর তিনি তা্রও সমাপ্তি ঘটাবেন। তারপর আসবে যন্ত্রণদায়ক বংশের শাসন, তা থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করবেন।এক সময় আল্লাহর ইচ্ছায় এ্ররও অবসান ঘটবে।তারপর প্রতষ্ঠিত হবে জুলুমের শাসন এবং তা তোমাদের উপর থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করবেন।তারপর তিনি তা অপসারণ করবেন তারপর আবার ফিরে আসবে নবুয়তের আদলে খিলাফত। (আহমদ)
আমরা আমাদের দুরদর্শী মুরুব্বী ওলামায়ে কিরামের থেকে এ ব্যপারে কিছু টাচ পাচ্ছি যে ইনশাআল্লাহ বিশ্ব আবারও মুসলমানদের করতলগত হতে যাচ্ছে।
(এবং খুব সম্ভবত: সেটা ইমাম মাহদি আলাইহিসসালামের নেতৃত্বে)
আল্লাহ তাআলা যদি আসমানে এরকমই ফায়সালা করে থাকেন তবে তা তো অবশ্যম্ভাবী।
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا ۚ يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا ۚ وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
"তোমাদের ভিতর যারা ইমান এনেছে ও আল্লাহ পছন্দনীয় ভাল ভাল কাজ করেছে তাদের সাথে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে পৃথিবীতে তাদেরকে খিলাফাত দান করবেন যেমন তাদের পউর্ববর্তীদের দিয়েছিলেন, এবং তাদের জন্য যে জীবনব্যবস্থাকে আল্লাহ পছন্দ করেছেন তাকে,(অন্যান্য জীবনব্যবস্থার উপর ) বিজয়ী করবেন এবং তাদের ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থাকে নিরাপত্তা দিয়ে বদলিয়ে দিবেন। (তোমরা যেটা করবে তা হল) শুধুই আমার ইবাদাত করবে এবং আমার সাথে কাউকে কোনওভাবে সমকক্ষ মনে করবে না।(এতদসত্বেও ) যে অস্বীকার করে সে প্রকৃতই অনাচারী।"
এখন আমাদের কাজ হল উপরের নির্দেশনা মূলক আ্য়াত অনুযায়ী নিজেদেরকে তৈরি করা।
পন্থা হতে পারে এরুপ:
১) আল্লাহ ও তাঁর রসুলের ডাকে সাড়া দেওয়া, আর এ জন্য সবার আগে যেটা করতে হবে তা হলো স্বেচ্ছাচারিতা কে কুরবানি করে দেওয়া। কাজটা আদৌ সহজ নয়। তবে তুলনামুলকভাবে সহজ ও ব্যাপক ভাবে প্রচলিত একটি পন্থা আমার জানা আছে যেখানে কিছু সময় ও সামান্য কিছু সম্পদ খরচ করে এই কঠিন কাজটাকে প্রাথমিকভাবে বেশ ভালই আয়ত্ব করা যায়। আর তা হল নিজের কর্মব্যস্ত সময় থেকে ১২০ দিন বা ৪০ দিন অথবা নিদেনপক্ষে ১০ দিন/৭ দিন/৩দিন সময় হলেও দাওয়াত ও তাবলীগে বের হওয়া আর খুব মনযোগ সহকারে যেভাবে বলা হয় সেভাবে সময়টুকুর সদ্ব্যবহার করা। এভাবে যে যত বেশী সময় ও শ্রম দিবে তার উন্নতিও তত বেশী হবে।
২) যেকোন একজন নির্ভরযোগ্য আলেমের পরামর্শমত চলা এবং শরিয়াতের অবশ্যপালনীয় বিষয়গুলোর জ্ঞান অর্জন করা। ওনার পরামর্শমত Suitable বইপুস্তক পড়া।
৩) নামাজ ও তিলাওয়াত ঠিক করা; দিনের/রাতের কিছু সময় সুন্নাত যিকর গুলো করা।
৪) সালামের ব্যপক প্রচার করা;মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে কারও দোষত্রুটি না খোঁজা, কম কথা বলা, গীবত না করা; আত্মীয়দের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখা;উত্তরাধিকারে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দেওয়া;যাকাত আদায় করা, উপরন্তু বেশী বেশী দান করা;সম্পর্ক ও স্ট্যাটাস অনুযায়ী প্রত্যেক মুসলমানের হক আদায় করা যেমন প্রোপারলি বড়দের সম্মান করা ছোটদের স্নেহ করা এবং আলেম গণকে ভক্তিসহ সম্মান করা, দারিদ্রের দরুণ তাঁদেরকে অবমুল্যয়ন না করা;উচ্চপদস্থ অফিসার বা শিক্ষকগণের প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া; প্রত্যেক পেশাজীবির জন্য ঐ পেশার হালাল হারামের খুটিনাটি জ্ঞান অর্জন;সুদ ও ঘুষ বর্জন;প্রতারণা না করা ইত্যাদি কাজগুলো সামাজিকভাবে ইসলামের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে এবং ইসলাম মানার লাভকে হাতে হাতে পাওয়ার ব্যবস্থা করে।
৫) মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে ফিরানোর সাধ্যমত চেষ্টা করা। নিজেও গান না শোনা, অন্যদেরকেও নিষেধ করা,কমপক্ষে উচ্চ স্বরে যাতে না শোনে তা বুঝিয়ে বলা; স্ত্রী,মা,বোন দেরকে পর্দা করতে হুকুম করা, অন্য মহিলাদের থেকে নিজের চোখ হেফাজত করা, পর্দা ও আল্লাহর হুকুম মেনে চলার সুফল বলে বলে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা।তরুণ সমাজকে অশ্লীলতা ও মাদক থেকে বাচানোর জন্য চেষ্টা অব্যহত রাখা, এ ব্যপারে আইন শৃংখলা বাহিনীকে সহায়তা করা একটি বড় নেক আমল।
৬) আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে উৎসাহ দেয় এমন লোকবা দল আল্লাহর শত্রু। কাজেই এমন লোক, গোষ্ঠী বা দল ত্যাগ করা জরুরী।
৭)রাজনৈতিক দলের জন্যও উপরের নীতিটি মেনে না চললে মুনাফিক হবার সম্ভাবনা খুবই বেশী। কেননা শান্তিপুর্ণভাবে খিলাফাত প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি একটি বড় হাতিয়ার।অনেকে রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করার পক্ষপাতি আমি বলব তাদের এ ধারণা ভুল-এ থেকে তাওবাহ করা উচিৎ।ইসলামকে শাসনব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পারলে ইসলামি রাজনীতি করা সময়ের দাবী।
৮) মিডিয়ার ব্যপারে সাবধান হওয়া উচিৎ, কেননা মিডিয়া দাওয়াতের বড় শক্তিশালী হাতিয়ার;মিডিয়ার জগতে বিশেষত অবিশ্বাসীদের ব্যপক প্রাধান্য থাকায় তারা খুব সহজেই আমাদের মাঝে এমন সব মতবাদ ও ধ্যান ধারণা ছড়াতে পারে যাতে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। অথচ ভিক্টিম লোকটা হয়ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বেশ আদায় করে কিন্তু সে হয়তো কমিউনিজমে আস্থাশীল হবার কারণে ইসলামকে আফিম মনে করে বা কুরআন কে ১৪০০ বসর পরের সমাজের জন্য Inappropriate মনে করে , ফলে তার যে ইমান নষ্ট হয়ে গেছে সে হয়ত তা জানেই না। এই ব্যাপার গুলো সম্বন্ধেই হাদিসে এসেছে,
"بادروا بالاعمال فتنا كقطع الليل المظلم يصبح الرجل مؤمنا و يمسي كافرا و يمسي
"مؤمنا و يصبح كافرا يبيع دينه بعرض من الدنيا
"তোমরা দ্রুত ভাল কাজের দিকে অগ্রসর হও ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতের ন্যায় ফিতনা আসার আগেই, সেই সময় কোন ব্যক্তি সকালে ঈমানদার অবস্থায় উঠবে আর সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে, এবং সন্ধ্যা করবে ঈমানদার অবস্থায় আর সকালে উঠবে কাফির হয়ে; সে দুনিয়ার সামান্য সম্পদের বিনিময়ে নিজের দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে।
مَّن كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَاهَا مَذْمُومًا مَّدْحُورًا
যে ব্যক্তি দুনিয়া চায় আমি তাকে এখান থেকে আমার ইচ্ছামত সামান্য অংশ দিয়ে দেই অত:পর তার জন্য প্রস্তত রেখেছি জাহান্নাম যাতে সে অপদস্থ হয়ে প্রবেশ করবে
وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَىٰ لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَٰئِكَ كَانَ سَعْيُهُم مَّشْكُورًا
আর যে আখিরাত চায় এবং সে জন্য ঈমান সহকারে চেষ্টাও করে, তার সে চেষ্টা প্রশংসনীয় ও কবুল।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে অনুধাবন করার তৌফিক দিন। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সব সিস্টেম কে একটা স্বাভাবিক নিয়মের অধীন করেছেন, আর তা হল আপনা থেকে কোন কিছুই হয় না। আর কোন কিছু ঘটতে হলে পরস্পর বিপরীত দুটি শক্তি সবসময়ই ক্রিয়াশীল।অনেকটা দড়ি টানাটানি খেলার মত।যেদিকটা বেশি শক্তিশালী ঘটনাটি তার অনুকুলে ঘটে।
খিলাফাত প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটও অনুরূপ।
কিভাবে হবে তার বিস্তারিত বিবরণ জানতে পিছনে ফিরে তাকাতে হবে।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় মৌলিক যে প্রসিডিউরগুলো ব্যাবহৃত হয়েছিল তা বর্তমান সময় ও প্রেক্ষাপটেও সমভাবে প্রজোয্য।
প্রসিডিউরগুলো হলো-
১) দাওয়াত; (ইসলামে দাওয়াত কিন্তু কখনই শুধুমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক Motivation বা Brainwash নয় বরং পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও সত্যাসত্য বিশ্লেষনমূলক অনুধাবনভিত্তিক; উদ্দেশ্য আল্লাহ ও তার রসুলের পূর্ণ আনুগত্যে বিশ্বাসী লোক তৈরী করা as maximum as possible )
২) তা'লিম;(ইসলামী জীবন বিধান শিক্ষা দেওয়া; ইসলামী জীবন বিধানের একটি স্পেশাল বৈশিষ্ট্য হলো তা পরিপূর্ণভাবে মানবজীবনের প্রাত্যহিক জীবন যাত্রার নিয়মকানুন ও বাস্তব সমস্যা সমাধানের উপায়; ফলে এই শিক্ষায় শিক্ষিতদেরকে আলাদা করে অর্থনীতি,শিক্ষানীতি,রাষ্ট্রনীতি,সমরনীতি,বিচারব্যবস্থা ও পররাষ্ট্রনীতি শেখা বা জানার দরকার পড়ে না। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হতে পারে মানুষের সমস্যা তো পরিবর্তনশীল, হ্যাঁ এ জন্য আপনার নিরুৎসাহিত হবার কোন কারণ নেই কেননা ইসলামী জীবন বিধানের মূল ২টি উৎস ক্কুরআন ও হাদিস এমন এক সর্বঞ্জ সত্বার পক্ষ থেকে প্রেরিত যিনি নিজেই সমস্যা ও সমাধান দুই জিনিষেরই স্রষ্টা এবং তিনিই আমাদের এ বিষয়টা নিষ্চিত করেছেন যে তাঁর দেওয়া বিধান ক্কেয়ামত পর্যন্ত সর্বপ্রকার সমস্যার সর্বাধিক লাভজনক সমাধানে সক্ষম, আর নতুন সৃষ্ট সমাস্যার জন্য যে দুটি হাতিয়ার ব্যবহৃত হবে তা হলো ইজমা ও কিয়াস)
৩)তাযকিয়াহ (বা সংশোধন যেটা মুলত: একটা Life long Continuous process, যা কেবলমাত্র আল্লহ তাআলার জন্য নির্ধারিত ইবাদাত গুলো যেমন নামাজ, রোজা,যিকর ইত্যাদির পরিপুর্ণ চর্চার মাধ্যমে প্রথমে ব্যক্তিপর্যায়ে আয়ত্বে আসে এবং তা'লিম অনুযায়ী জীবনের প্রতিটি কাজ করার দ্বারা সামাজিকভাবে তা প্রতিষ্ঠিত হয়।সামাজিকভাবে ইসলাম প্র্যাকটিসের এই স্তর হতেই মুলত: ইসলামের এই নবগঠিত দলটি প্রথমত: ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে বাঁধার সম্মুখীন হতে শুরু করে।আস্তে আস্তে দাওয়াত,তা'লিম ও তাযকিয়াহর পরিধি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে বাড়তেই থাকে, সেইসাথে বাড়তে থাকে প্রতিরোধ।প্রাথমিক ভাবে দুর্বলতার দরুণ বিপক্ষের সাথে শুধুই ভালো আচরণ, তারপর ভালো আচরণ ও ভদ্রোচিত মৌখিক বাকবিতন্ডা, তারপর তারপর ভালো আচরণ, ভদ্রোচিত মৌখিক বাকবিতন্ডা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে বা ক্ষুদ্র পরিসরে আল্লাহর পছন্দনীয় জীবনব্যবস্থা কে প্রতিষ্ঠিত করতে বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে শক্তিপ্রয়োগ and finally......... )
৪) জিহাদ (শব্দটি ব্যপক অর্থবোধক, এবং আল্লাহর পছন্দনীয় জীবনব্যবস্থা কে প্রতিষ্ঠিত করতে বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে এতক্ষন যে তিনটি বিষয় আলোচনা হয়েছে তার প্রত্যেকটিই আভিধানিক ভাবে জিহাদের ভিতরই পড়ে তবুও শরিয়তের পরিভাষা অনুযায়ী জিহাদ বলতে specifically শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করাকেই বুঝায় )
আর যেহেতু একটি পরিপূর্ণ ও সম্পুর্ণ আলাদা জাতি গড়তেও যেমন সময় লাগে ধ্বংস হতেও তেমন সময় লাগে।
সুনানে আহমাদ এর ঐ হাদিস টিতে মুলত: এই চিরসত্য নিয়মটার কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে "মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে"
“তোমাদের মধ্যে নবুয়ত থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তারপর আল্লাহ তার সমাপ্তি ঘটাবেন।তারপর প্রতিষ্ঠিত হবে নবুয়তের আদলে খিলাফত তা তোমাদের মধ্যে থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করেন, অতঃপর তিনি তা্রও সমাপ্তি ঘটাবেন। তারপর আসবে যন্ত্রণদায়ক বংশের শাসন, তা থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করবেন।এক সময় আল্লাহর ইচ্ছায় এ্ররও অবসান ঘটবে।তারপর প্রতষ্ঠিত হবে জুলুমের শাসন এবং তা তোমাদের উপর থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করবেন।তারপর তিনি তা অপসারণ করবেন তারপর আবার ফিরে আসবে নবুয়তের আদলে খিলাফত। (আহমদ)
আমরা আমাদের দুরদর্শী মুরুব্বী ওলামায়ে কিরামের থেকে এ ব্যপারে কিছু টাচ পাচ্ছি যে ইনশাআল্লাহ বিশ্ব আবারও মুসলমানদের করতলগত হতে যাচ্ছে।
(এবং খুব সম্ভবত: সেটা ইমাম মাহদি আলাইহিসসালামের নেতৃত্বে)
আল্লাহ তাআলা যদি আসমানে এরকমই ফায়সালা করে থাকেন তবে তা তো অবশ্যম্ভাবী।
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا ۚ يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا ۚ وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
"তোমাদের ভিতর যারা ইমান এনেছে ও আল্লাহ পছন্দনীয় ভাল ভাল কাজ করেছে তাদের সাথে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে পৃথিবীতে তাদেরকে খিলাফাত দান করবেন যেমন তাদের পউর্ববর্তীদের দিয়েছিলেন, এবং তাদের জন্য যে জীবনব্যবস্থাকে আল্লাহ পছন্দ করেছেন তাকে,(অন্যান্য জীবনব্যবস্থার উপর ) বিজয়ী করবেন এবং তাদের ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থাকে নিরাপত্তা দিয়ে বদলিয়ে দিবেন। (তোমরা যেটা করবে তা হল) শুধুই আমার ইবাদাত করবে এবং আমার সাথে কাউকে কোনওভাবে সমকক্ষ মনে করবে না।(এতদসত্বেও ) যে অস্বীকার করে সে প্রকৃতই অনাচারী।"
এখন আমাদের কাজ হল উপরের নির্দেশনা মূলক আ্য়াত অনুযায়ী নিজেদেরকে তৈরি করা।
পন্থা হতে পারে এরুপ:
১) আল্লাহ ও তাঁর রসুলের ডাকে সাড়া দেওয়া, আর এ জন্য সবার আগে যেটা করতে হবে তা হলো স্বেচ্ছাচারিতা কে কুরবানি করে দেওয়া। কাজটা আদৌ সহজ নয়। তবে তুলনামুলকভাবে সহজ ও ব্যাপক ভাবে প্রচলিত একটি পন্থা আমার জানা আছে যেখানে কিছু সময় ও সামান্য কিছু সম্পদ খরচ করে এই কঠিন কাজটাকে প্রাথমিকভাবে বেশ ভালই আয়ত্ব করা যায়। আর তা হল নিজের কর্মব্যস্ত সময় থেকে ১২০ দিন বা ৪০ দিন অথবা নিদেনপক্ষে ১০ দিন/৭ দিন/৩দিন সময় হলেও দাওয়াত ও তাবলীগে বের হওয়া আর খুব মনযোগ সহকারে যেভাবে বলা হয় সেভাবে সময়টুকুর সদ্ব্যবহার করা। এভাবে যে যত বেশী সময় ও শ্রম দিবে তার উন্নতিও তত বেশী হবে।
২) যেকোন একজন নির্ভরযোগ্য আলেমের পরামর্শমত চলা এবং শরিয়াতের অবশ্যপালনীয় বিষয়গুলোর জ্ঞান অর্জন করা। ওনার পরামর্শমত Suitable বইপুস্তক পড়া।
৩) নামাজ ও তিলাওয়াত ঠিক করা; দিনের/রাতের কিছু সময় সুন্নাত যিকর গুলো করা।
৪) সালামের ব্যপক প্রচার করা;মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে কারও দোষত্রুটি না খোঁজা, কম কথা বলা, গীবত না করা; আত্মীয়দের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখা;উত্তরাধিকারে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দেওয়া;যাকাত আদায় করা, উপরন্তু বেশী বেশী দান করা;সম্পর্ক ও স্ট্যাটাস অনুযায়ী প্রত্যেক মুসলমানের হক আদায় করা যেমন প্রোপারলি বড়দের সম্মান করা ছোটদের স্নেহ করা এবং আলেম গণকে ভক্তিসহ সম্মান করা, দারিদ্রের দরুণ তাঁদেরকে অবমুল্যয়ন না করা;উচ্চপদস্থ অফিসার বা শিক্ষকগণের প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া; প্রত্যেক পেশাজীবির জন্য ঐ পেশার হালাল হারামের খুটিনাটি জ্ঞান অর্জন;সুদ ও ঘুষ বর্জন;প্রতারণা না করা ইত্যাদি কাজগুলো সামাজিকভাবে ইসলামের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে এবং ইসলাম মানার লাভকে হাতে হাতে পাওয়ার ব্যবস্থা করে।
৫) মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে ফিরানোর সাধ্যমত চেষ্টা করা। নিজেও গান না শোনা, অন্যদেরকেও নিষেধ করা,কমপক্ষে উচ্চ স্বরে যাতে না শোনে তা বুঝিয়ে বলা; স্ত্রী,মা,বোন দেরকে পর্দা করতে হুকুম করা, অন্য মহিলাদের থেকে নিজের চোখ হেফাজত করা, পর্দা ও আল্লাহর হুকুম মেনে চলার সুফল বলে বলে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা।তরুণ সমাজকে অশ্লীলতা ও মাদক থেকে বাচানোর জন্য চেষ্টা অব্যহত রাখা, এ ব্যপারে আইন শৃংখলা বাহিনীকে সহায়তা করা একটি বড় নেক আমল।
৬) আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে উৎসাহ দেয় এমন লোকবা দল আল্লাহর শত্রু। কাজেই এমন লোক, গোষ্ঠী বা দল ত্যাগ করা জরুরী।
৭)রাজনৈতিক দলের জন্যও উপরের নীতিটি মেনে না চললে মুনাফিক হবার সম্ভাবনা খুবই বেশী। কেননা শান্তিপুর্ণভাবে খিলাফাত প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি একটি বড় হাতিয়ার।অনেকে রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করার পক্ষপাতি আমি বলব তাদের এ ধারণা ভুল-এ থেকে তাওবাহ করা উচিৎ।ইসলামকে শাসনব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পারলে ইসলামি রাজনীতি করা সময়ের দাবী।
৮) মিডিয়ার ব্যপারে সাবধান হওয়া উচিৎ, কেননা মিডিয়া দাওয়াতের বড় শক্তিশালী হাতিয়ার;মিডিয়ার জগতে বিশেষত অবিশ্বাসীদের ব্যপক প্রাধান্য থাকায় তারা খুব সহজেই আমাদের মাঝে এমন সব মতবাদ ও ধ্যান ধারণা ছড়াতে পারে যাতে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। অথচ ভিক্টিম লোকটা হয়ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বেশ আদায় করে কিন্তু সে হয়তো কমিউনিজমে আস্থাশীল হবার কারণে ইসলামকে আফিম মনে করে বা কুরআন কে ১৪০০ বসর পরের সমাজের জন্য Inappropriate মনে করে , ফলে তার যে ইমান নষ্ট হয়ে গেছে সে হয়ত তা জানেই না। এই ব্যাপার গুলো সম্বন্ধেই হাদিসে এসেছে,
"بادروا بالاعمال فتنا كقطع الليل المظلم يصبح الرجل مؤمنا و يمسي كافرا و يمسي
"مؤمنا و يصبح كافرا يبيع دينه بعرض من الدنيا
"তোমরা দ্রুত ভাল কাজের দিকে অগ্রসর হও ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতের ন্যায় ফিতনা আসার আগেই, সেই সময় কোন ব্যক্তি সকালে ঈমানদার অবস্থায় উঠবে আর সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে, এবং সন্ধ্যা করবে ঈমানদার অবস্থায় আর সকালে উঠবে কাফির হয়ে; সে দুনিয়ার সামান্য সম্পদের বিনিময়ে নিজের দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে।
مَّن كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَاهَا مَذْمُومًا مَّدْحُورًا
যে ব্যক্তি দুনিয়া চায় আমি তাকে এখান থেকে আমার ইচ্ছামত সামান্য অংশ দিয়ে দেই অত:পর তার জন্য প্রস্তত রেখেছি জাহান্নাম যাতে সে অপদস্থ হয়ে প্রবেশ করবে
وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَىٰ لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَٰئِكَ كَانَ سَعْيُهُم مَّشْكُورًا
আর যে আখিরাত চায় এবং সে জন্য ঈমান সহকারে চেষ্টাও করে, তার সে চেষ্টা প্রশংসনীয় ও কবুল।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে অনুধাবন করার তৌফিক দিন।