চট্টগ্রামে ব্লগ দিবস ২০১২ উদযাপনঃ মনে থাকার মত একটি সন্ধ্যা।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
নজরুল স্কোয়ার, ডি.সি হিলের উন্মুক্ত মঞ্চের ধাপে ব্লগ দিবসের ব্যানার এবং কেক।
বাংলা ব্লগ দিবস উৎযাপনের জন্য বিভিন্ন স্থানের ব্লগাররা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ ধরণের পোস্ট ব্লগে এবং ফেসবুকে পড়তাম। চিটাগাংয়ে ব্লগ দিবস পালন নিয়ে বরাবরই উৎসাহী ছিলাম। ব্লগে লেখার জগতে নতুন। চট্টগ্রামের ব্লগারদের সাথে তেমন পরিচয়ও নেই। ফেসবুক এবং ব্লগের মাধ্যমে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন ব্লগারের সাথে পরিচিত হই। চট্টগ্রামে ব্লগ দিবস পালন নিয়ে ব্লগার তরুণ সৈনিকের একটি পোস্ট পড়ি। ওখানে অনেকে ব্লগ দিবস উৎযাপন নিয়ে মতামত দিয়েছেন। এর পর আমিও এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেই। আমি, তানজিম ভাই এবং তরুণ সৈনিক ভাই ফেসবুকের মাধ্যমে একটি ইভেন্ট করে পরষ্পর পরিচিত হওয়ার জন্য একটি সরাসরি সাক্ষাতের আয়োজন করি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন আমরা শিল্পকলায় প্রথম দেখা করি এবং একে অপরের সাথে পরিচিত হই। প্রথম মিটিংয়ে আমরা ৮ জন ব্লগারের সাথে পরিচিত হই। ওই দিনই ব্লগ পাঠক বিজু বড়ুয়া, ব্লগার ধুম ০০৭, নামহীন যুবক, তরুণ সৈনিক, তনজীম ভাইদের সাথে প্রথম দেখা। সবার মিট করার টাইম সিলেক্ট করা ছিল বিকেল ৪টায়। বাংলাদেশী টাইম ফলো করে সবার একজায়গায় মিলিত হতেই প্রায় সন্ধ্যা। শিল্পকলার পাশে একটি হোটেলে নাস্তার পর আমরা পরষ্পরকে আরো বেশি জানলাম । আড্ডার মাধ্যমে। আমাদের সবার মাঝের ডিজিটাল দূরত্বটাও ওই দিনই ঘুচে যায়। পরবর্তী কোনদিন অ্যাগেইন মিটিং করা যায় তাও নির্ধারণ হয়।
শিল্পকলায় প্রথম মিটিংয়ে আমরা ক'জন।
গত পরশু তরুণ সৈনিক ভাই ফোন করলেন। ঢাকা থেকে ব্লগ দিবসের পোস্টার আসতে পারে। পরদিন রাতে শহরে পোস্টারিং করতে হতে পারে। সে অনুযায়ী গতকাল বিকেলে কুরিয়ারে পোস্টার এসে পৌঁছে। সন্ধ্যার পর আমি , তরুণ সৈনিক, হারু ভাই, তানজীম ভাই আমরা পোস্টারিং শুরু করি। কয়েটি জায়গায় একসাথে ছিলাম। টাইম সেভ করার জন্য দু'জন করে ভাগ হয়ে শহরের দুই সাইডে পোস্টারিংয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে পোস্টারিং করলাম। রাত ১১টায় পোস্টার লাগানো শেষ হল। পরদিন ব্লগ দিবস। আমরা চাইছিলাম আয়োজনটা বঙ্গোপসাগরে কর্ণফুলীর মোহনা নেভাল বিচে করতে। সাগরের বাতাস, কাঁকড়া ভাজা..সব কিছু মিলিয়ে ভাল জমত। কয়েকজন ব্লগারের ওই দিন বিকেলে সময় বের করা পসিবল ছিলনা। তাই বিকল্প হিসেবে চিরাচরিত নাজরুল স্কোয়ার, ডি.সি হিলকেই বেছে নিতে হল।
ব্লগডের অফিসিয়াল ফটোশট।
আজ ব্লগ দিবস। বিকাল ৫:৩০ এর দিকেই সবার ডি.সি হিলে আসার কথা ছিল। প্রথমে আমি পৌঁছাই প্রায় ৬:৩০ এর দিকে। এর পর এলেন তানজীম ভাই, এরপর তরুণ সৈনিক ভাই হাতে ব্লগ ডের ব্যানার। একে একে চাটকিয়াং রুমান, নোমান ভাই, বিজু ভাই, হারু ভাই এলেন। চাটকিয়াং রুমান এবং নোমান ভাইয়ের সাথে আগে পরিচয় ছিল না। ব্লগে ওনাদের লেখা পড়েছি। এবার সরাসরি দেখলাম। শীতকাল। ডি.সি হিলে পাহাড়ে শীতের আমেজটা একটু বেশি। অন্যান্য সময় এখানে জমজমাট থাকে। সন্ধ্যার পর অনেকে আড্ডা দিতে আসে। আজ তেমন মানুষজন নেই। উন্মুক্ত গ্যালারির উপরের দিকে একটি ধাপের সাথে ব্যানারটা লাগালাম। সামহোয়ার ব্লগ নিয়ে আমরা বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করছিলাম। ব্লগডের কেক আনার ব্যাপারটা নিয়ে আমরা কেউ তেমন চিন্তাও করিনি। চাটকিয়াং রুমান ভাই বললেন আজ ওনার বার্থডে। যাক এবার দুটো উপলক্ষ মিলে গেল। ওনাদের সবাইকে আড্ডায় বসিয়ে রেখে আমি এবং তরুণ সৈনিক ভাই কেক আনার উদ্দেশ্যে বের হলাম। পাশে একটি দোকান থেকে কেক নিয়ে আড্ডায় ফিরে আসলাম। কেকের প্যাকেট খুলেই রুমান ভাইকে সারপ্রাইজ দিলাম। কেক কাটার ছুরি ছিল না। ও ই দোকান থেকে একটি কাটা চামচ নিয়ে এসেছিলাম। ওটা আর পরে ফেরত দিতে ভুলে গেছি। কেক কেটে ব্লগ দিবস এবং রুমান ভাইয়ের বার্থডের শুভ সূচনা করলেন রুমান ভাই। কেক খাওয়ার পাশা পাশি চা, সিগারেটও চলছিল। আমরা সবাই ব্লগ নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করছিলাম।
চাটকিয়াং রুমান ভাই বার্থডে এবং ব্লগডের কেক খাচ্ছেন।
আমাদের মধ্যে সব থেকে বেশি কথা বলছিলেন নোমান ভাই। আমরা শ্রোতা ছিলাম। উনি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সামুর পাঠক এবং লেখক। ওনার কাছ থেকে অনেক জানলাম। গত ব্লগ দিবসে ওনার অভিজ্ঞতা, ঢাকায় বই মেলায় সামুর একজন জনপ্রিয় ব্লগারের সাথে আচমকা দেখা হয়ে যাওয়া , ব্লগারদের পিকনিকে যাওয়া ইত্যাদি স্মৃতিচারণ করলেন। আমরা বাকিরা শুনেই গেলাম। আফসোস হচ্ছিল অন্তত গত বছর থেকেও যদি ব্লগিং শুরু করতাম তাহলে এসব মজার ভালো মানুষগুলোর সাথে আরো আগে পরিচিত হতে পারতাম। ব্লগ পাঠক বিজু ভাই অনেক মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। সমসাময়িক ব্লগ গুলোর বর্তমান হালচাল, সামুর স্বর্ণযুগ ইত্যাদি অনেক বিষয় এই প্রথম জানলাম।
আড্ডার ফাঁকে চা।
ব্লগ দিবস। মাইক, মাইক্রোফোন, সভাপতি, মিলনায়তন, গুরুগম্ভীর উপস্থাপনা কোন কিছুই আমাদের আয়োজনে ছিল না। সন্ধ্যার পর ডি.সি হিলের শতবর্ষী রেইনট্রি গাছেগুলোর কালো অন্ধকারের ফাঁকে নিয়নের আধো হলদে আলো। হালকা কুয়াশা। কয়েকজন ইভিনিং ওয়াকারের হাটা চলা। চা ওয়ালা, ফুচকাবিক্রতা এরাই ছিলা আমাদের আয়োজনের দর্শক। যার যেভাবে ইচ্ছে ঘরোয়া আড্ডার মত একটা আড্ডার পরিবেশ। শীত বেশি পড়ছিল। একটা বাঁশ ভেঙ্গে কাঞ্চিগুলো জ্বালিয়ে উষ্ণতার পরশ ভালোই লাগছিল। ব্লগের পাশাপাশি আরো অনেক বিষয় আড্ডায় আলোচিত হল। ব্লগডের কল্যাণে ভালো কিছু ব্লগারের সাথে সম্পর্কটা আরো ঘণিষ্ট হল। আমরা ব্লগে কেউ কাউকে সরাসরি তেমন চিনিনা। এরকম আয়োজন এদূরত্বটা দূর করে। সব শেষে তরুণ সৈনিক ভাই, বিজু ভাই এবং তানজিম ভাইকে বিশেষ ধন্যবাদ। ওনারা উদ্যোগ না নিলে হয়ত এ আয়োজনটা সম্পূর্ণ হত না। সব শেষে ব্লগ দিবসের স্লোগান বাক স্বাধীনতা, বাক দ্বায়িত্বশীলতা যেন স্লোগানেই সীমাবদ্ধ না থাকে এই প্রত্যাশায় এগিয়ে যাক বাংলা ব্লগিং কমিউনিটি।
আরো কিছু ছবি:
শীতে উষ্ণতার পরশ।
আড্ডার একটি খন্ড মুহূর্ত।
আড্ডার একটি খন্ড মুহূর্ত।
উপস্থিত ব্লগারদের গ্রুপ ছবি।
হ্যাপি ব্লগডে।
কেকে মোমবাতি প্রজ্বলন।
আড্ডার একটি মুহূর্ত।
শীতে উষ্ণতার জন্য আগুন জ্বালিয়েছিলাম।
''সবাইকে ধন্যবাদ''
৪৮টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা
তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান
উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!
এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।
"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন
কে কাকে বিশ্বাস করবে?
করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।
সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন