somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Black Friday (2004) : সত্যের স্বরূপ উন্মোচনের প্রয়াস।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ ভোর ৫:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার প্রেক্ষিতে ভারতীয় মুসলিম সমাজে এর বদলা দেওয়ার জন্য চরমপন্থী গ্রুপ গড়ে ওঠে। যার ফলাফল ১৯৯৩ এর মুম্বাইয়ে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ। নির্দিষ্ট সময় পর পর জনাকীর্ণ বাজার, মুম্বাই স্টক একচেঞ্জ, বাস স্টেশন সহ ১২/ ১৩ টি স্থানে পর পর বোমার বিস্ফোরণে পুরো মুম্বাই শহর কেঁপে ওঠে। প্রায় ২৫০ জন মানুষ নিহত এবং আহতের সংখ্যা সাত শতাধিক। ভারতের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় সংঘবদ্ধ বোমা বিস্ফোরণ। সাধারণ মুসলিমদের ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে মূলত এই ঘটনা ঘটানো হয়। ধর্মান্ধতার কাছে যুক্তি, ভাল মন্দ, বিবেচনা বোধের পরাজয়। মুম্বাই বিস্ফোরণের ঘটনাকে উপজীব্য করে অনেকটা ডকুমেন্টারী ধাঁচের এই মুভিতে মুম্বাই বিস্ফোরণের নেপথ্যে নায়কদের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে। মুম্বাই বিস্ফোরণের ঘটনার সূতিকাগার তৈরি হয়েছিল ১৯৯২ এ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর থেকেই। এরপর থেকেই ভারতে শহরের পর শহরে হিন্দু - মুসলিম দাঙ্গা, মুসলিম নারীদের সম্ভ্রম লুট, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি সংযোগ ইত্যাদি কারণে লাখ লাখ মুসলিম বাস্তুহারা হয়। প্রতিটি সমাজে মানুষের সহিঞ্চুতার একটি সীমা আছে। যখন এই সহিঞ্চুতার বাঁধটি ভেঙ্গে যায় তখন সে অস্থিত্ব রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। ঠিক এধরণের মানসিকতায় যখন কেউ পৌঁছে তখন সহজে তার প্রতিশোধ স্পৃহাকে কাজে লাগিয়ে তাকে যে কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়। এখানেও ঠিক তেমনটি ঘটেছে। সবার উদ্দেশ্য যখন এক থাকে তখন তা বাস্তবায়ন করার লজিস্টিকের অভাব হয়না। মুম্বাই বিস্ফোরণের ঘটনাতেও এই ধারণাটি প্রযোজ্য।

এটি কোন প্রচলিত ধারার ফিচার ফিল্মের মত নয়। ১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণ নিয়ে হোসাইন জাইদির লেখা এইক নামের বইয়ের চলচ্চিত্ররূপ। মুভিটি দেখার সময় এক মুহুর্তের জন্যও মনে হবে না মুভি দেখছেন। মনে হবে সত্যি ঘটনা লাইভ দেখছেন। ভারতীয় মুসলিমদের দারিদ্রতার সুযোগে তাদের ভুল পথে চালিত করার ব্যাপারটি উঠে এসেছে। কেউ ব্যাপারটিকে নেয় ধর্ম রক্ষা, মুসলিম জাতির অস্তিত্ব রক্ষার পন্থা হিসেবে; কেউ নেয় স্রেফ ব্যক্তিগত প্রতিশোধ স্পৃহা মেটানোর উপায় হিসেবে। এধরণের ঘটনাগুলোতে নাটের গুরুরা সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইয়ে থাকে। যাদের ব্যবহার করা হয় তারা অধিকাংশই নিম্নপেশার লোকজন। যাদের ধর্মীয় আবেগ বেশি। তাদের এমনভাবে ব্রেইনওয়াশ করা হয় নিজস্ব বিবেচনাবোধও স্তব্ধ হয়ে যায়।



পুরো সিনেমাটি পুলিশ ইন্টারোগেশনে আনা আসামীদের রিমান্ডে জমানবন্দীর উপর এগিয়েছে। নেপথ্যে কণ্ঠের সাথে ঘটনাগুলো দেখানো হয়েছে। পুলিশ ইন্টারোগেশনে তথ্য আদায়ে সন্দেহভাজনদের উপর যেসব পন্থা প্রযোগ করা হচ্ছিল তা গা শিউরে উঠার মত। আর সন্দেহভাজনরাও শেষ ভরসা না যাওয়া পর্যন্ত এত নির্যাতন কিভাবে সহ্য করল সেটাও অবাক করার মত। সন্দেহভাজনদের মানসিকভাবে দুর্বল করতে তাদের স্ত্রী, কন্যাদেরও ইন্টারোগেশন সেলে আনা হয়। এসব মহিলাদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় যেভাবে টর্চার করা হয় তা ওই সময় মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগে সারা ভারতজুড়ে তীব্র সমালোচনা হয়। এই ব্যাপারটিও এখানে দেখানো হয়েছে।

সাম্প্রদায়িক ইস্যু নিয়ে ছবি বানাতে গেলে অনেক কিছুই বিবেচনায় আনতে হয়। সবচেয়ে বেশি যেটি প্রযোজন তা হল পক্ষপাতিত্ব মুক্ত থাকা। এখানে পরিচালক সফল বলতে হয়। বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং এর প্রেক্ষিতে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মুম্বাইয়ে হিন্দু দাঙ্গাবাজদের পক্ষে মূল হোতা ছিলেন শিবসেনা প্রধান বাল ঠাকরে। এবং প্রতিশোধ নিতে মুসলিমদের পক্ষ থেকে নেতৃত্বে ছিলেন দাউদ ইব্রাহীম হয়ে কাজ করা টাইগার মেনন। এই ব্যাপারগুলোও পরিচালক স্পষ্ট এবং সাহসিকতার সাথে তুলে ধরতে পেরেছেন। দাঙ্গায় মুম্বাই পুলিশের নিস্কৃয়তা এবং দাঙ্গাবাজদের সহায়তা করার ব্যাপারও আসামীদের জমানবন্দীতে উঠে এসেছে। ভারতের মত দেশে ধর্মীয় স্পর্শকাতর এবং সাম্প্রদায়িকতার মত বিতর্কিত বিষয়গুলো সিনেমায় সাহসী উপস্থাপন অনেকটা অপ্রত্যাশিত।




উপমহাদেশের রাজনীতিতে হিন্দু - মুসলিম সাম্প্রদায়িক ইস্যুটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং সুযোগ পেলেই যেকোন দেশ এই ধরণের ইস্যুকে ব্যবহার করে নানাবিধ স্বার্থ হাসিলে তৎপর থাকে। মুম্বাই বিস্ফোরণের হোতাদের লজিস্টিক সাপোর্ট, ট্রেনিং ইত্যাদিতে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আই.এস.আই জড়িত ছিল। ভারতের এই দাবীর যুক্তি দায়ী আসামীদের জমানবন্দী। এখানে জমানবন্দীর নেপথ্যকন্ঠে আই.এস.আই কর্তৃক ভারত থেকে রিক্রুট, তাদের পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ দান, মানসিকভাবে মটিভেশন প্রদানের বিষয়গুলোও দেখানো হয়েছে। পরিচালক তার প্রচেষ্টায় পক্ষপাতিত্বের কোন সুযোগ রাখেননি। কারা দায়ী, কারা দায়ী নয়, পক্ষে-বিপক্ষে যা আছে সবই বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। বিচারের ভারটি ছেড়ে দিয়েছেন দর্শকদের উপর।

পরিচালকঃ অনুরাগ কাশ্যপ
অভিনয়েঃ কে.কে মেনন, পবন মালহোত্রা, অদিত্য শ্রীবাস্তব,দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, কিশোর কদম, গজরাজ রাও, জাকির হোসাইন প্রমুখ।
মুক্তির তারিখঃ ৯ ফেব্রুয়ারী ২০০৭।
দেশঃ ভারত
ভাষাঃ হিন্দী।
২১টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×