somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মির্জা ফখরুলের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার

১৬ ই মে, ২০১১ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরকার ওয়াদা ভঙ্গ করেছে তাই মধ্যবর্তী নির্বাচন চাই
-মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বিএনপি

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের টানাপোড়েনের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে হাল ধরেছেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার আগে অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও নিজেকে সামলে রেখেছেন। সাংগঠনিক কাজে দিন রাত-দিন তুমুল ব্যস্ততায় এখন তার সময় কাটছে। এই ব্যস্ততার মাঝে একঘণ্টা সময় মেলে একপক্ষের জন্য। মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই প্রিন্ট মিডিয়াকে দেওয়া তার দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। দীর্ঘ আলাপচারিতায় ওঠে আসে বিএনপির মধ্যবর্তী নির্বাচনি দাবি এবং এর যৌক্তিকতা, এ মুহূর্তে তার ও দলের চ্যালেঞ্জ কী, সংবিধান সংশোধন নিয়ে বিএনপি কী বলতে চায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, বিএনপির আন্দোলনের কর্মসূচিসহ ইত্যকার বিষয়াদি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আদিত্য আরাফাত।



শুরুতে আপনাদের চলমান আন্দোলন মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়েই কথা বলিÑ বেশ কিছুদিন ধরে বিএনপি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে, ৯ মে আপনারা আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচিও পালন করলেন? এ মুহূর্তে মধ্যবর্তী নির্বাচন আপনারা কেন চাচ্ছেন?

একটি সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন কিছু কমিটমেন্ট নিয়ে আসে আর যখন তারা সেই কমিটমেন্টগুলো পূরণ করতে না পারে, যখন রাজনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে, তখন তার পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়। অনেক দেশে এটা হয় প্রয়োজনে। যেসব দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে, গণতন্ত্র দাঁড়িয়ে গেছে সেসব দেশেও প্রয়োজনে কিন্তু মধ্যবতী নির্বাচন হয়। এখন যে আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা বলছি তাও প্রয়োজনে। আমাদের যুুক্তি আছে। আওয়ামী লীগ সব জায়গায়ই ফেল। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা ফেল। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারছে না। দেখুন বিডিআর তো পুরাপুরিই ধ্বংসই হয়ে গেছে। বর্ডারে অবৈধ পথে বিভিন্ন জিনিস আসছে তা তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এর পরে ভারতের সাথে যেসব চুক্তি হয়েছে তার কোনোটাতেই কোনো কিছু গেইন করতে পারেনি। ট্রানজিট ব্যবহার করতে দিচ্ছি যেখানে আমি শুল্ক পাচ্ছি না। পানির ক্ষেত্রে তারা তিস্তা নদীর পানি দিচ্ছে না। গঙ্গার ন্যায্য হিস্যা আমাদের দিচ্ছে না। মেঘনার ওপারে যে ড্যাম হচ্ছে বারবার নিষেধ করার পরেও তারা তা বন্ধ করছে না। আমরা কেবল ভারতকে দিয়েই যাবো কিছু পাবো না তাতো হয় না। অধিকারের কথা বললে বিএনপিকে তারা ভারত বিরোধী বলে। আমার কথা হচ্ছে, আমাকে কিছু দিতে হলে তার বিনিময়ে কিছুতো পেতে হবে...গিভ অ্যান্ড টেক। ৫৮ নদীর মাঝে ৫৪টা নদীতে তারা বাঁধ দিয়েছে। এই কথাগুলো তো সরকার বলে না। এগুলোতো মেজর প্রবলেম। আশুগঞ্জে একটা নদী বন্দর তৈরি করা হচ্ছে শুধু মাত্র ভারতের জন্য। তাদের পুরো টারমিনাল দিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিন্তু আমি বিনিময়ে কী পাচ্ছি? কোনো বেনিফিটটা? পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ আছে যেখানে বর্ডারে নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করা হয়? একমাত্র আপনার আর আমার দেশে বর্ডারে লোকজনের জীবনের কোনো মূল্য নেই। গুলি করে পশুর মতো হত্যা করা হচ্ছে তাদের। ঠিক আছে ধরেই নিলাম যে সে স্মাগলিং করতে গেছে। তাহলে সেখানে আইনটা কী? আইনটা হলো আপনি তাকে গ্রেফতার করবেন, তার সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল হবে। আর তারা কী করছে, সরাসরি হত্যা করছে! সব দিক দিয়ে দেশে এখন চরম অবস্থা বিরাজ করছে। দেশের এই চরম অবস্থায় আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা বলছি।



আপনারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন আওয়ামী লীগও মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা বলেছে। তারমানে এটা আমাদের দেশের রাজনীতির ট্রাডিশন নাকি যখন বিরোধী দল ক্ষমতায় থাকবে তারা ২/৩ বছরের মাথায় মধ্যবর্তী নির্বাচনের ডাক দেবে?

আপনারা তাহলে তুলনা করে দেখুন আমাদের সরকারের দু’বছর আর তাদের দু’বছর। আমাদের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি না দিয়েতো আর উপায় নেই। সরকারের দু’বছরে তারা কী করেছে? নির্বাচনি প্রতিশ্র“তি তারা পালন করতে পারছে না। সবক্ষেত্রে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।



আপনারা সংসদে না গিয়ে রাজপথে এসব দাবি তুলছেন কেন? বিএনপি চেয়ারপারসনতো মাত্র ৫ দিন সংসদে গিয়েছেন...


সংসদে আমরা যাব না বা সমাধান সংসদে সম্ভব না এটা কিন্তু বলিনি। কয়দিন আগেও আমরা সংসদে গিয়েছি। কিন্তু সমস্যাটা যেটা হচ্ছে, সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয়ে নিয়ে তারা আলোচনা করতেই চায় না। জিয়াউর রহমানকে তারা মহান সংসদের মধ্যে গালাগাল করছে। আমরা এসবের প্রতিবাদ করলেই তারা কণ্ঠরোধ করতে চায়। প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে।



আপনার রাজনৈতিক জীবনের ফ্লাশব্যাকে ফিরে যাই। বাম রাজনীতি দিয়ে আপনার রাজনীতি শুরু। বাম রাজনীতি ছেড়ে সেনা কর্মকর্তার গড়া বিএনপিতে যোগ দেওয়ার কী কারণ ছিল?

আনুষ্ঠানিকভাবে আমি ১৯৮৯ সালে বিএনপিতে যোগদান করি। তার আগে আমি সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছি। আমার বাবাও রাজনীতি করতেন। তিনি বিএনপির বিভিন্ন কাজ কর্মের সাথে সংযুক্ত ছিলেন। এইভাবে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া। বিএনপিতে কেন যোগ দিয়েছি এটাইতো জানতে চাচ্ছেন। আসলে রাজনীতি তখন আমার কাছে আদর্শের জায়গা। জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম, সততা, নিষ্ঠা সর্বোপরি তার চোখে মুখে স্বনির্ভর এক দেশের স্বপ্ন ছিল। জনমানুষের খুব কাছাকাছি তিনি থাকতে চাইতেন। এসব কিছু আমায় আকৃষ্ট করতো। এইতো এভাবেই বিএনপিতে আসা...।



আপনি বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। এ মুহূর্তে আপনার প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী?

সাংগঠনিকভাবে বিএনপিকে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার একটি সক্ষম দল হিসেবে গড়ে তোলা। দলকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানো। বিভিন্ন সমস্যা দূর করা। এগুলোই মূলত এখন আমার প্রথম দায়িত্ব। ভবিষ্যতে দেশের একটি নির্ভরযোগ্য দল হিসেবে বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করাই আমার মূল লক্ষ্য। সবচেয়ে বড় কাজ হলো দলকে সংগঠিত করা। আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করা। সরকারের নেওয়া দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষকে বুঝানো। এগুলো চলমান প্রক্রিয়া।



আপনি ভারপ্রাপ্ত মহসচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার আগে দলের সিনিয়র ও মধ্যমসারির নেতারা মহাসচিব পদ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব বিষয়কে কীভাবে মোকাবিলা করবেন?

দেখুন বিএনপি একটা বিশাল দল। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। এর আগে আমরা একের অধিক সময় দেশ পরিচালনা করেছি। দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন নিয়েও সংসদ গঠন করেছি। তাই গণতান্ত্রিক বিএনপির মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা ইতিবাচক হিসেবে মনে করি। দলে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে দলের বিষয়ে সকল নেতাকর্মী দলীয় স্বার্থ সংরক্ষণে একসঙ্গে আছেন। তাই সুসংগঠিত দল নিয়েই আমরা সামনের দিকে এগুতে পারব।



বিএনপির দলের মধ্যে ঐক্য নেই... অনেকেই বলছেন বিএনপি নিজেই গুছানো নয়...।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনীতির ইতিহাস দেখেন। আমাদের দেশের রাজনীতির ইতিহাস লক্ষ করলে দেখবেন যে মাওলানা ভাসানী যখন আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে এলেন তখন শেখ মুজিবুর রহমান নিজে দলবল নিয়ে মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে মতবিরোধ হয়েছিল। তো ঐখান থেকে বেরিয়ে এসে মাওলানা ভাসানী ন্যাপ গড়লেন। সব রাজনৈতিক দলেই ছোট-খাট সমস্যা হয় ।



৯ মে নয়াপল্টনের সমাবেশে আপনাদের সামনেই ছাত্রদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের লাঠালাঠি হয়েছে...

এইগুলো তো ছোটখাট সমস্যা। এগুলোকে বড় করে দেখা ঠিক নয়। আমাদের তো তেমন কোন বড় সমস্যা নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল তা আমরা কাটিয়ে ওঠেছি। আমাদের দল এখনো যথেষ্ট সুসংগঠিত অবস্থায় আছে।



সংবিধান সংশোধন বিষয়ে বিএনপি আসলে কী চাচ্ছে?

আমরা পঞ্চম সংশোধনী চাই। হাইকোর্টের রায় দিয়ে তারা পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন। সংবিধান পরিবর্তন প্রয়োজন হলে করবে। কিন্তু ফান্ডামেন্টাল চেঞ্জ করা যায় না। মৌলিক কিছু চেঞ্জ করতে হলে জনমতের প্রয়োজন হয়। সরকার একদিকে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম রাখল, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামও রাখল আবার সমাজতন্ত্রের কথা বলছে। তারা বলছে ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাবে। তো ’৭২-এর সংবিধানেই ফিরে গেলে সংবিধান নিয়ে তাদের এতো জগাখিচুড়ি কেন?





অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীরা রাষ্ট্রধর্ম, বিসমিল্লাহ এবং ধর্মীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন। বুদ্ধিজীবীদের এ প্রস্তাবকে আপনারা সমর্থন করেন কি-না!


সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, আর আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা রেখে শুরু করছি। এটা তো সরকার উঠিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম আমাদের পঞ্চম সংশোধনীতে ছিলো না। এরশাদ সাহেব সপ্তম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম জুড়ে দিয়েছেন। আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিষয়ে আমি বলতে চাই পৃথিবীর অনেক দেশেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি প্রচলিত রয়েছে। ধর্মকে রাষ্ট্রে ব্যবহার করার নজিরও শুধু বাংলাদেশে নয় বহু দেশেই আছে। আমেরিকায়ও বাইবেল নিয়ে শপথ করায়। বিএনপি ধর্মহীনতায়ও বিশ্বাস করে না এবং ধর্মান্ধতায়ও বিশ্বাস করে না। আমরা যেটা বিশ্বাস করি সেটা হলো ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’।



ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল বলে রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া কী?

এ রায় বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে। আমরা মনে করি এ রায় দেশের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সংকট আরও ঘনীভূত করবে।



তারেক-কোকোকে কেন্দ্র করে কর্মসূচি দিলে আপনাদের প্রতিপক্ষ দল এটাকে পারিবারিক কর্মসূচি হিসেবে আখ্যায়িত করে। কেন?

আমাদের দেশে আপনারা যারা সংবাদপত্রে কাজ করেন আপনাদের সম্পাদকসহ আপনারা সবাই একটা কাজ করার চেষ্টা করেন সেটা হচ্ছে পারিবারিক ব্যাপারটা আনতে চান। তারেক রহমান সাহেব কিন্তু তার নিজের গুণে রাজনীতি করছেন। তিনি বগুড়ায় অনেকদিন কাজ করেছেন। সারা বাংলাদেশজুড়ে বিভিন্নভাবে কাজ করেছেন। বিএনপির বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি কাজ করে রাজনীতিতে সামনে এসেছেন। স্বাভাবিকভাবেই তার সাথে কোনো অন্যায় হলে তার প্রতিবাদ তো হবেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই এইসব সমস্যা হচ্ছে। এই ধরেন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া, তাঁকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা, তারেক-কোকোর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া সবই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছু না। আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে যখন হবে তখন তো আমরা স্টেপ নেবই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনাকে যখন গ্রেফতার করলেন তখনো বেগম খালেদা জিয়াতো স্টেটমেন্টও দিয়েছিলেন। শেখ হাসনার একটি কথার সাথে আমি একমত যে, ‘খালেদা জিয়া আর শেখা হাসিনা এক নয়।’ আসলেই! এই যেমন এক জনের আচার ব্যবহারে কোনো অশালীনতা নেই কখনো বাজে কোনো কথা বলেন না। আরেকজন তার বিপরীত। খালেদা জিয়া নিজে পার্লামেন্টে বলেছিলেন শেখ মুজিবের মাজারে যাওয়ার কথা। বলেছিলেন দুই নেতারই ছবি টাঙানো হোক। জিয়াউর রহমান যে স্বাধীনতার ঘোষক এটা মানতেই তারা নারাজ। জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক হলে কি শেখ মুজিবকে খাটো করে দেখা হচ্ছে? নো! আমরা দেখি না। বিএনপির চেয়ারপারসনও কখনো শেখ মুজিবের নামে অশালীন কোনো কিছু বলেনি। আমরা এখনো স্বীকার করি মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের অবদান সর্বোচ্চ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জিয়াউর রহমানকেতো একজন মুক্তিযোদ্ধাও মনে করে না।



সাংগঠনিকভাবে বেশ কয়েকটি জেলার কমিটি হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে এক যুগেরও বেশি সময় কমিটি হয়নি। আবার কাউন্সিল পরবর্তী সময়ে যেসব কমিটি হয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রত্যাখ্যান ও পাল্টা কমিটির ঘোষণা এসেছে। আপনার কী মনে হয়?

প্রায় ৬০টির মতো কমিটি আমাদের পূর্ণাঙ্গ হয়ে গেছে। আর কয়েকটি বাকি আছে কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে সকল কমিটি অতি শিগগিরই শেষ করতে পারবো। তৃণমূল পর্যায়ের দিকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। তৃণমূল পর্যায়ে আরও শক্তিশালী হবে বিএনপি।



সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনারা কথা বলছেন। সরকার দুর্নীতিমুক্ত আমরা তা বলছি না। আপনাদের অনেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে...

বিএনপির যারা দুর্নীতি করছে তাদের বিরুদ্ধে কি মামলা হচ্ছে না? আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে। অথচ এর একটিরও কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর একটা মামলা আছে যেটাতে প্রধানমন্ত্রী নিজেই জড়িত ছিলেন সেটা হলো নাইকো। প্রধানমন্ত্রীকে খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারেক সাহেবের বিরুদ্ধে যে মামলা আছে তার বিরুদ্ধে একটা মামলারও কোন প্রমাণ তৈরিই করতে পারেনি তারা। আরও যাদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল মোশারফ সাহেব, মওদুদ সাহেব সবাই খালাস, বেকসুর খালাস। এই মামলা সবগুলো ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দায়ের করা হয়েছিল।



শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থাকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন? তদন্ত প্রতিবেদনে বিএনপি নেতার নামওতো এসেছে?


বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য এই কাজ করা হয়েছে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে শেয়ারবাজরের অবস্থা তখনই অস্থিতিশীল হয়ে যায়। চিরসত্য হলো ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে শেয়ারবাজারে ধস নামে।’ আওয়ামী লীগ চায় বাংলাদেশে যাতে একটা শক্ত শেয়ারবাজার তৈরি না হয়। শিল্পায়ন যাতে না হয় সে জন্যই সুপরিকল্পিতভাবে এই কাজ করা হয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম, ভারতীয় আগ্রাসনে বাংলাদেশের বস্ত্র বাজারে সমস্যা হচ্ছে। এই যে সুতার ব্যাপারটাই ধরেন। আমাদের তৈরি পণ্য ইংল্যান্ডে রফতানি করে আমরা কিন্তু মোটামুটি দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। তখনই এই সুতার দাম বেড়ে গেল। আমরা বারবার বলছি যে সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই কিন্তু ৪২০টি গার্মেন্টস্ বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের পোল্ট্রি কিন্তু দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন ইন্ডিয়া থেকে এইসব পোল্ট্রি এনে কিন্তু তাও প্রায় বন্ধ করে দেওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। আলটিমেটলি খবর নিয়ে দেখবেন বড় বড় গার্মেন্টস্ ভারতীয় উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আপনি পরিসংখ্যান দেখুন, বিএনপি সরকার যখনই ক্ষমতায় থাকে তখন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো ছিল আর যখনই আওয়ামী লীগ আসে তখনই পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। এই সবই হচ্ছে পলিসির ব্যাপার। তারা পরনির্ভরশীল। তাদেরই পলিসিই বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ করা। তারা ভারতকে দিতে পারলেই খুশি। কালচারের দিকটার দিকে তাকালে দেখবেন যে তাদের সমস্ত চ্যানেলগুলো আমরা দেখছি কিন্তু আমাদের একটা চ্যানেল কি ভারতের মানুষ দেখছে? আমাদের চ্যানেলগুলো ভারত সরকার দেখতে দিচ্ছে না। এই বিষয়গুলো হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। শেয়ার কেলেঙ্কারিতে যে কেউ জড়িত থাকুক তারই বিচার হওয়া উচিত। সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণেই তারা তারা এই অপরাধ করতে পেরেছে।



কিন্তু বিএনপির লোকওতো শেয়ারবাজার ধসের পিছনে জড়িত...


আমি বলি যেই জড়িত থাকুক সুযোগটাতো তারাই করে দিয়েছে। দরবেশ (সালমান এফ রহমান) নিয়ন্ত্রণ করছে কিছুই করতে পারছে না সরকার। কী করবে সরকার দরবেশদের? সে ক্ষমতাতো সরকারের নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজনকে জানি এই শেয়ার বাজারের ধসের কারণে তারা পুরোপুরি শেষ। সরকারের লোকরা এর সাথে আছে বলেই কিন্তু এইসব অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা চলে গেছে। আমি বলি যেই জড়িত থাকুক তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসুন। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কান্নায় ভারী হয়ে যাচ্ছে আকাশ-বাতাস।



যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিএনপি আসলে কী চাইছে?

অবশ্যই আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। সব সময় তারা বলেন যে আমরা নাকি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির সাথে আছি। এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কে বন্ধ করেছে? তারা করেছে। শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধের পর সাধারণ ক্ষমায়তো নিজেই তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। তারা বলছে বিচার হবে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে । আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে আছেন কারা? এর সদস্য কারা? ...এদেরকে আজ আপনি বিচারক বানাচ্ছেন! এতোদিন প্রধানমন্ত্রী বলেছিল, যত দ্রুত সম্ভব এর বিচার হবে। সেদিন কি বলেছে শুনেছেন? সেদিন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ৪০ বছর পরে যেহেতু মামলা হচ্ছে সুতরাং এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। আস্তে আস্তে এটা করবে। সুর এবার পাল্টে গেছে? কেন পাল্টে গেছে জানেন? জানেন না? প্রভুদের চাপে। ওপর থেকে হয়তো এখন নির্দেশ এসেছে-এই আস্তে...



নারীনীতি নিয়ে আপনারা স্পষ্ট কিছু বলছেন না কেন? আমিনী সাহেব যা করছেন তাতে কি আপনাদের নীতিগত সমর্থন আছে?


গণতান্ত্রিক অধিকার আছে যেকোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করার। উনি উনার দলের নারীনীতির ব্যাপারে বক্তব্য রাখছেন। সে ক্ষেত্রে তারতো অধিকার আছে। আমরা এই ব্যাপারে স্পষ্ট করে বলছি যে আমরা নারী ক্ষমতায়নের অগ্রপথিক। জিয়াউর রহমান মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর তৈরি করেন। পুলিশ, আনসার সেনাবহিনীতে মেয়েদের চাকরির ব্যবস্থা কিন্তু তিনিই করেন। পরবর্তীকালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বের সরকার মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য প্রাইমারি পর্যন্ত বৃত্তি ও শিক্ষা অতৈনিক এক এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই ক্ষেত্রে আমরা মনেকরি নারীনীতি নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একইভাবে আমরা ধর্মীয় অনুভূতিতে বিশ্বাস করি। ধর্মীয় অনুভূতিতে যেন আঘাত না হানে সে ব্যাপারেও আমরা লক্ষ রাখি। আমরা মনে করি বাংলাদেশের মানুষ ধর্মান্ধ নয়; ধর্মভীরু। সে ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনে এমন কোনো আইন করা উচিত হবে না। বিশেষ করে কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করা ঠিক হবে না।



সবশেষে জানতে চাইবো আপনাদের আন্দোলনের কর্মসূচি কী? কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছেন কি-না!


আমাদের রোড মার্চ আসবে লং মার্চ আসবে। আমাদের নেত্রী দেশব্যাপী গণসংযোগ করবেন। মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×