![]()
আমার স্টুডেন্ট এর মা যে আমাকে আপু বলে ডাকতে বলেছিলেন সেটা তো আগেই বলেছি।
তো সেই আপুর প্রিয় কাজ রান্না বান্না করে মানুষকে খাওয়ানো। এইরকম একজন মহিয়সী মহিলাকে বিধাতা কেন এমন ভোজনবিমুখ হাসবেন্ড দিয়েছেন ভেবে পাই না। তাই বাধ্য হয়ে আমাকেই প্রতিদিন তার রান্না করা নাস্তার নানা আইটেম গিলতে হয়।
খাবার নষ্ট করা উচিত না। আমি তাই সুন্নত মেনে চলি। তাই তার পরীক্ষামূলক আইটেম ভালো লাগুক আর না লাগুক একটুও ফেলি না। এতে আপু আরো বেশি উৎসাহ পেয়ে যান।
একদিন বললেন,
: আপনার আর কোনো আইটেম খেতে ইচ্ছে হলে বলবেন
- জী বলবো।
: বাসা থেকে বাইরে থাকেন, মা রান্না করে খাওয়াতে পারে না। কোনো লজ্জা করবেন না।
- জী লজ্জা করবো না।
: আচ্ছা আপনাদের হলে খাবার কি ব্যবস্থা?
আমি চোখ মুখ করুন করে হলের খাওয়ার বর্ননা দিলাম।
- হলে প্রতিদিন বত্রিশ টাকার খাবার দেয়। দু বেলা মিল। ষোলো টাকা-ষোলো টাকা। গরু, মুরগী, মাছ থাকে। ডাল থাকে। ভর্তা থাকে। আর ভাজি থাকে।
: ভালই তো
- ভালো না আপু। গরুর মাংসের এক টুকরা বলতে আমরা সাধারনত যা বুঝি তা চার টুকরা করে দুই টুকরা দেয়া হয়, মুরগীর টুকরো এত ছোট করা হয় জানলে মুরগীও লজ্জা পাবে, ডাল পানির চেয়ে তরল,ভাজিতে তেল নামের কিছু দেওয়া হয় না!
আপুর মুখ কষ্টে এতটুক হয়ে গেল। করুন সুরে বললেন
: আপনি আজ রাতে প্লিজ খেয়ে যাবেন
আপুর করুন মুখ দেখে না বলার সাহস করি নি। এই দিনের ফলাফল হয়েছিলো ভয়াবহ। সেদিন তো খাওয়ালেনই। পারলে প্রতি সপ্তাহে একবার ঘটা করে ডিনারের দাওয়াত দেন!
একদিন ডিনারের আইটেম দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। এত আয়োজন শুধু একজনের জন্য দেখে তব্দা খাইলাম। আমি না করতে পারি না। প্রতিটা আইটেম দুইবার করে তুলে দিচ্ছেন। আমিও নিশ্বাস বন্ধ করে খেয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু পিকচার আভি বাকি। খাওয়া শেষে ফ্রিজ থেকে বের করলেন গাজর কা হালুয়া। বললাম আপু আর পারবো না !! কিন্তু উনি খাওয়াবেনই। শেষে একটা অল্টারনেটিভ ব্যবস্থা করলেন। সেই হালুয়া তিনি একটা হলুদ রংয়ের টিফিন বক্সে ভরে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।
রুমে ফিরতেই রুমমেটরা ঘিরে ধরলো। হাতের টিফিন বক্সের কাহিনী শুনে তাদের আর পায় কে ! আমাকে মহা উৎসাহে ক্ষ্যাপানো শুরু করলো। আমার টিফিন বক্স নিয়ে আসার ঘটনার সাথে নাকি হিন্দি রাব নে বানাদি জোড়ি মুভির মিল আছে। হলুদ রংযের টিফিন বক্সটা বিশেষ ইঙ্গিত বহন করে !!
মুহূর্তেই গোটা হলের বন্ধু সমাজে আমার টিফিন বক্সের কাহিনী ছড়িয়ে পড়লো। দুঃখের ব্যাপার হলো সেই গাজরের হালুয়া হলের সব বন্ধুরা মিলে খাইলেও আমি লজ্জায় একটা দানাও খাই নাই। আরো দুঃখের ব্যাপার হলো এরপর থেকে আমাকে দেখলেই পোলাপান 'হলে হলে হো যায়েগা পেয়ার' গান গাওয়া শুরু করে !
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


