somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Hybristophilia: নষ্টের প্রতি ভালোবাসা

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইভা ব্রাউন মাত্র ১৭ বছর বয়সে গভীর প্রেমে পড়েন ৪৬ বছর বয়েসী এক পুরুষের। দীর্ঘ ১২ বছর দূরন্ত সম্পর্কটাকে টেনে নিয়ে ২৯ বছর বয়সে বিয়ে করেন। আর বিয়ের মাত্র চল্লিশ ঘন্টারও কম সময়ের মাথায় তিনি এবং তার স্বামী এক সাথে আত্মহত্যা করেন।
.
১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল আত্মহত্যা করে মাত্র চল্লিশ ঘন্টার দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার আগে ইভা ব্রাউনের স্বামী পৃথিবীর বুকে আয়োজন করেছিলেন প্রায় সোয়া সাত কোটি মানুষ খুনের। সেই অ্যাডলফ হিটলার গানশুটে আত্মহত্যা করে মারা যান বার্লিনের ভূগর্ভস্থ ফুয়েরার বাংকারে। তার সাথে গভীর আবেগ এবং ভালোবাসায় ইভা ব্রাউনও সায়ানাইড ক্যাপসুল খেয়ে মারা যান ২৯ বছর বয়সে।
.
কথা হলো, হিটলারের মত একজন ডিকটেটরের জন্যে এত্ত্ব এত্ত্ব ভালোবাসা এই সুন্দরী মডেল কোথা থেকে যোগাড় করেছিলেন। ইভা ব্রাউন সম্পর্কে আরেকটি ব্যাপার জানা যায় এমন যে তার চেহারা দেখতে হিটলারের আগের পছন্দের একটা মেয়ের মত ছিল। সেই মেয়েটাও কিন্তু হিটলারের প্রেমে পড়েনি। সে ছিল সম্পর্কে হিটলারের ভাতিজি, তবুও নাকি শিকার হয়েছিলো তার লালসার। এতে মেয়েটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এক পর্যায়ে আত্মহত্যা করে।
.
এই ঘটনায় হিটলার বেজায় ভেঙ্গে পড়ে। পরে কাছাকাছি চেহারার ইভা ব্রাউনকে খুঁজে নেয় সে। মূলত এই দুই নারীর কেউই হয়তো তার প্রেমে পড়েনি। তবে ইভা ব্রাউন হিটলারের অনুগত ছিল। কিন্তু তাই বলে সে হিটলার মরার পরে কেন আত্মহত্যা করতে গেলো বিষ খেয়ে। ভিলেন মরার পরতো সে নিশ্চিন্তে পালাতে পারতো। তার এর আগেও দু দুবার আত্মহত্যার চেষ্টার রেকর্ড ছিলো। আত্মহত্যাটা কি আসলে তার এক ধরনের ম্যানিয়া হিসেবে ছিলো। হিটলারের জন্যে করতে পারছিলো না বলে তার মরার পরে কাজটা করে বসে দেরি না করে। নাকি আসলেই প্রেম ছিলো!
.
আরেকটা মত আছে এমন যে সাইকোপ্যাথ ধরনের সিরিয়াল কিলারদের প্রতি এক ধরনের মেয়েদের নাকি প্রবল আকর্ষণ থাকে। আমেরিকার এক জন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডি নারী মহলে নাকি অসম্ভব জনপ্রিয় ছিল। কারাবন্দী অবস্থায়ও তার কাছে প্রচুর প্রেম পত্র আসতো অনেক মেয়ের কাছ থেকে। সাইকোলজিস্টরা মন্দের প্রতি এই ধরনের আকর্ষণের ব্যাপারটাকে এক ধরনের অসুস্থতা হিসেবে ধরেন যার 'Hybristophilia' বলে দারুন একটা ক্লিনিকাল নামও আছে।
.
হিটলারের এই ইভা ব্রাউন বোধহয় ''Hybristophilia'র রুগী. ছিলো। নিজে এই ধরনের রুগী বা সাইকো প্যাথ না হলে হিটলার টাইপের ডিকটেটর খুনে মানুষের জন্যে ভালোবাসার ডিব্বা নিয়ে তার ঘুরার কথা না, তা হিটলার পেশাগত বা ব্যাক্তিগত জীবনে যত তুখড় মেধাবী মানুষই হোকনা কেন।
.
সৃষ্টিকর্তা বোধহয় সব প্রাণীর জন্যেই ঐ প্রাণীর মতই সঙ্গী তৈরী করে দূনিয়ায় ছড়িয়ে রেখেছেন। এ জন্যেই বোধ হয় পিশাচের জন্যে যোগাড় হয়ে যায় এক পীশচিনী। গোখরা সাপের সংসার হয় আরেকটা গোখরা সাপের সাথে, আর সুখে কুন্ডলী পাকাই তারা এক সাথে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে। কিন্তু, এক পীশাচের জন্যে আরেক পীশাচ, এক সাপের জন্যে আরেক সাপ, এক কবুতরের জন্যে আরেক কবুতর বেছে নেয়া সোজা। কারন সব কবুতর, সব গোখরা, সব পতঙ্গ একই। সমস্যা হচ্ছে মানুষের; সাধারন মানুষ গুলার। এরা সবাই ‘ওয়ান পিস্ মেইড, কারীগর ডেড্’ অবস্থা। শরীর-বৃত্ত্বীয় মিল থাকলেও মূলত সব মানুষই আলাদা।
.
চেহারা দেখে যাকে খুব পরিচিত কাছের মানুষ মনে হয়, কথা বলার পরই দেখা যায় সে মূলত খুবই অপরিচিত এক জন। একে বারে ভীন্ন জগতের বাসীন্দা। আর এটা হলো সবচেয়ে ভালো দিক যে কথা বলে বুঝা যাচ্ছে। বিপদ হলো যে, বেশীর ভাগ সময়েই দেখা যাচ্ছে, কথা বলার পরেও ভিন্নতাটা বুজা যাচ্ছে না। একটা ইবলীশ টাইপের বান্দাও দেখা যায় কি দারুন মধু মাখাই কথা বলে যাচ্ছে!!! আর সেই সাথে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনটাকে কঠিন বানাই দিচ্ছে। একটা লম্পট ছেলেকে টার্গেট করতে দেখা যায় ঢেকেঢুকে চলা দারুন ভদ্র মেয়েটাকে। আবার শখের পতিতা বা বেশ্যা শ্রেণীর মেয়েটা ইটিশ পিটিশের জন্যে খুঁজে বেড়ায় এমন একটা ছেলে, যে কিনা মেয়েটার পতিতা বৃত্ত্বীর কেচ্ছা জানার পরে শোকে তাপে একটু লুকাই চুরাই কান্নাকাটি করবে। বড়জোর গাঞ্জায় দুয়েক দম দিয়ে আবার পড়তে বসে যাবে। অর্থাৎ, সবকিছু হবে নিরাপদে, মুখশের আড়ালে।
.
অ্যাডলফ হিটলার আর ইভা ব্রাউন বোধহয় এই দিক দিয়ে ভালো যে তারা কেউ কারো কাছে মিথ্যা বা মুখোশ পরে জীবন কাটায়নি।
.
#Afnan_Abdullah
০৯১৩২০১৫

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৪৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×