somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতীত একটাই। ভবিষ্যৎ অজস্র কোটি, ইনফিনিট, অসীম.....

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বব্রহ্মান্ডে কোন একটা ঘটনা কিভাবে ঘটবে তা কোন এক মহা শক্তিধর সত্তা নিখুঁত ভাবে ঠিক করে রেখেছেন। তাঁর ঠিক করা রুলস্ গুলো বুঝার সুবিধার জন্যে আমরা ফিজিক্স, ক্যামেস্ট্রি, বায়োলোজী, এ্যাস্ট্রোলজী, সাইকোলোজী, ফাইন্যান্স, ইকোনোমিক্স ইত্যাদী ভাগে ভাগ করে নিয়েছি। জ্ঞানের সকল শাখাই সেই মহা শক্তির ঠিক করে রাখা নিয়ম, রুলস্, কোড গুলোই অনুসন্ধান করে চলেছে।
.
আর মানুষের হাতে রয়েছে কোন ঘটনাটা সে ঘটাবে তা পছন্দ করে নেয়ার এক বিষ্ময়কর মহা ক্ষমতা! সে যত বেশি রুলস্ গুলো জানবে, ঘটনার পরিনতি আগেই বুঝতে পারবে ততই সে নিজের পছন্দ মত ঘটনা ঘটিয়ে ভবিষ্যত নিজের মত করে বানিয়ে নিতে পারবে।
.
একটা ডিনামাইট দিয়ে মানুষ চাইলে পাথুরে পাহাড় ভেঙ্গে টানেল বানাতে পারে, আবার চাইলে শহরের পর শহর ধ্বংস করে দিতে পারে। ইউরেনিয়াম দিয়ে বিদ্যুৎ বানাতে পারে, আবার নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বানিয়ে জনপদ ধ্বসিয়ে দিতে পারে।
.
দূনিয়াতে যদি শুধু এক জন মানুষ থাকতো, বা সব মানুষ যদি একমতে থাকতো, আর তারা যদি বিশ্বভ্রম্মান্ডের প্রত্যেকটা রুলস, জ্ঞান-বিজ্ঞান জেনে যেতো তাহলে প্রত্যেকটা ঘটনা নিজের পছন্দ মত ঘটাতো। আর নিজের মন মত করে ভবিষ্যত সাজাতো। সেটা সম্ভব হচ্ছেনা বলেই কোটি মানুষের অজস্র পছন্দের অজস্র কোটি ঘটনার কো-ইন্সিডেন্সের কারনে ভবিষ্যত রয়ে যায় অজানা। এই সব অজস্র ছোট বড় ঘটনার যে কোন একটা না ঘটলেই পুরো পৃথিবীর ভবিষ্যৎ বাস্তবতা হয়ে যাবে ভিন্ন রকম। হীটলার যদি স্তালিন গ্রাথের বাধা উৎরে যেতেন তাহলে দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস হোতো ভিন্ন। আজকের বিশ্বের গল্প হতো অন্যরকম।
.
এভাবেই অজস্র কোটি রকম ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে আমরা বর্তমানে দাঁড়িয়ে থাকি। যে ভবিষ্যৎ জ্ঞানে এবং অজ্ঞানে আমরা নিজেরাই তৈরী করবো। আর জীবনের সব ঘটনার জন্যে আমরাই দায়ী থাকবো।
.
এখন, কিছু মানুষ আছে যারা মনে করে বা বিশ্বাস করে জগতে যা কিছু ঘটে সবই পূর্ব নির্ধারিত। এবং সবই অমোঘ, অলঙ্ঘনিয়। অর্থাৎ শুধু ফিজিক্স, ক্যামেস্ট্রির রুলস্ নয়, এক জন মানুষ কোন কাজটা বা ঘটনাটা পছন্দ করবে সেটাও সেই মহা স্বত্বা পূর্বেই নির্ধারন করে রেখেছে। ছুরি দিয়ে কে আপেল কাটবে, আর কে অন্যের গলা কাটবে কিংবা মানুষ আগুন দিয়ে চুলা জ্বালাবে না বন জ্বালাবে সেই পছন্দটাও মানুষ নিজে করছে না। অন্য কেউ আগে থেকেই করে রেখেছে। যা কিছু ঘটে তার কোন দায়ই এতে মানুষের থাকে না। এবং এই তত্ব অনুযায়ী যা ঘটার তা সে যতই চেষ্টা করুক বদলাতে পারে না।
.
এমন একটি মাত্র নির্দিষ্ট এবং পূর্ব নির্ধারিত ভবিষ্যৎ আছে- এই বিশ্বাসের উপর তৈরী হয়েছে বাটারফ্লাই ইফেক্ট, ফাইনাল ডেস্টিনেশান, টাইম ট্রাভেলার্স ওয়াইফ, টার্মিনেটর এমন সব দর্শক প্রিয় মুভি গুলো। এইচ. জি. ওয়েলস্ এর গল্পে দ্যা টাইম মেশিন একই বিশ্বাস নিয়ে হলেও একটু ভিন্নতা দেখায়। অসংখ্যবার টাইম ট্রাভেল করে অতীতে গিয়ে যতই পছন্দ গুলো বদল করুক, দেখা যায় শেষমেষ পরিনতি একই থেকে যায়। তাই নায়ক এক সময় ঠিক করে ভবিষ্যতের দিকে নজর দিয়ে সেটা ঠিক মত করার।


পূর্ব নির্ধারিত একটি মাত্র ভবিষ্যতের ধারনার বিপরিতে দাঁড়িয়ে, অজস্র ভবিষ্যৎ থেকে নিজের জ্ঞান, দক্ষতা আর সাহস দিয়ে পছন্দ মত ভবিষ্যৎ বেছে নেয়ার বাস্তব ব্যপারটা অসাধারন দক্ষতার সাথে তুলে নিয়ে এসেছেন ওরিয়ল পাওলো (Oriol Paulo) তাঁর দুরেন্তে লা টরমেন্তা (Durante la tormenta) বা মিরেজ মুভিটিতে। ২০১৮ সালের এই স্পেনিস সিনেমায় তিনি দেখান চরীত্র গুলো টাইম ট্রাভেল করে অতীতের একেকটা ঘটনা পছন্দ করে (কোন একটা কাজ করে বা না করে) কিভাবে নিজেদের ভবিষ্যৎ বদলে ফেলতেছে। প্রত্যেকটা ঘটনা ঘটা এবং না ঘটার উপর কিভাবে ভিন্ন ভিন্ন ভবিষ্যৎ নির্ভর করে থাকে তা কি চমৎকার ভাবেই না এই পরিচালক তুলে ধরেন।
.
বেলজিয়ামের জ্যাকো ভ্যান ডরমেইল (Jaco Van Dormael) ২০০৯ সালে তাঁর মি. নোবডি মুভিটাতে আরো সুনির্দিষ্ট করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দিয়ে ব্যপারটা দেখিয়ে দেন। রেল স্টেশানে দাঁড়িয়ে আছে এক কিশোর। ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে বাবার সাথে থাকবে নাকি মায়ের সাথে। দুটো পছন্দের সাথে ভিন্ন দুরকম ভবিষ্যৎ তার জন্যে অপেক্ষা করতেছে। এ্যাভেঞ্জার্স এন্ড গেম, এজ্ অব টুমরো, ডনি ডার্কো বা ইন্টার স্ট্যালার এর মত কঠিন মুভিগুলোতেও মানুষের বিস্তর জ্ঞান আর অমানুষিক অসম্ভব চেষ্টায় পছন্দ মত ভবিষ্যৎ তৈরী করতে দেখা যায়।
.
এভাবেই প্রতিটা মাইক্রো মিলি সেকেন্ডে আমরা পছন্দ করতে থাকি, ক্লিক্ করে যাই। ক্লিক করলে কি হবে সেটা এক মহা সত্তা কাল সৃষ্টিরও বহু কাল আগে ঠিক করে রেখেছেন। আমরা শুধু পছন্দ করে যাই অজস্র কোটি ভবিষ্যৎ থেকে কোন ভবিষ্যৎটা আমার হবে।
.
অতীত একটাই। কিন্তু ভবিষ্যৎ সব সময়েই অজস্র কোটি, ইনফিনিট, অসীম.....
.
#Afnan_Abdullah
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×