১৯৯৬ এর ভোটের রাতে বিটিভি বেশ উচ্চমার্গীয় একটা সাইফাই বাংলা সিনেমা দেখায়। ছোট্ট ববিতা বিদেশ যাওয়ার আগে তার ছোট্ট বান্ধবী চম্পাকে একটা পুতুল দিয়ে যায়। আর একই পুতুলের একটা ক্লোন তার সাথ নিয়ে যায়। এর পর তারা দিন রাত সেই পুতুলের মাধ্যমে বিদেশ বিভুঁই থেকে কথা বার্তা চালিয়ে যেত। এদেশে চম্পা পুতুলের দিকে ফিরে কথা বললে ঐদেশে ববিতা তার পুতুলের সামনে দাঁড়িয়ে উত্তর দিতো!
.
রাত জেগে চোখ ডলতে ডলতে অবিশ্বাস্য সেই বিজ্ঞান দেখছিলাম ছোটরা। আর বড়রা গিলছিলো ভোটের ফলাফল। তখন আবার দিনে ভোট হতো, আর মধ্যরাতে সিনেমার ফাঁকে ফাঁকে সেই ভোটের রেজাল্ট দিতো। প্রায় আসনই বাংলাদেশ জাতিয়তাবাদী দল পাচ্ছিলো। আর ছোট রাজীব ছোট চম্পার পুতুলটা চুরি করে মুচকি মুচকি হাঁছিলো।
.
তখন এখনকার মত ডামি, মমি, কাকতাড়ুয়া প্রার্থি ছিলো না। ববিতা চম্পার সামনেও জাফর ইকবাল ছাড়া আর কোন নায়ক ছিলো না। তাই বড় হয়ে দুই বান্ধবীই এক যোগে তার প্রেমে পরে যায়। হেফাজত, হাতপাখার ব্রান্ডিঙ ছিলো না বলে মাসনা, সুলাসা, রুবাআর ব্যপারে সমাজ ঐভাবে সচেতন ছিলো না। এই জ্ঞানের অভাবে দুই বান্ধবীকেই যে মাসনা সুলাসা বানিয়ে নেয়া যায় সেই সমাধানের পথে জাফর সাহেব হাঁটেন নি। এই যুগে যেটা কোন সমস্যাই না সে যুগে সেটা নিয়েই সিনেমা আগাতে থাকে ব্যাপক জটিলতা নিয়ে। দুই নায়িকা এক সাথে পটে যাওয়া যেখানে একটা সুযোগ সেখানে সিনেমার গল্পে তা হয়ে যায় বিরাট এক সমস্যা।! একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে বিএনপি যখন জিতে যাচ্ছে তখনই ক্লাইমেক্স
এর চুড়ান্ত ধাপে পৌঁছে গল্প। চম্পা তার জামাই জাফর ইকবালের হাতে তারই বাল্য-বান্ধবী ববিতাকে লিখা বিবাহ পূর্ব প্রেমপত্রের বিশাল পান্ডুলিপি আবিষ্কার করে বসে। সলমনের এই গুপ্তধনের সন্ধান তাকে দেয় ভিলেন রাজীব। বড় বেলাতেও তার কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে আজকের সাকিব আল হাসান এর মত মেজাজ হারান জাফর ইকবালও। সাকিবের ফ্যান বেজ এর মত স্রেফ চড় থাপ্পড়ে রাজীব থামবার পাত্র নয় বলে তাকে মরতে হয় শেষমেষ।
.
বিরোধী দল ছাড়াই যেভাবে ৯৬ এর নির্বাচন-সংবাদ আগাচ্ছিলো, ভিলেন এর বিদায়ের পরও শুধু নায়ক নায়িকাদের সংখ্যাগত জটিলতা নিয়েই গল্প আগাচ্ছিলো নাচে আর গানে। আমরা বুঝে যাই নায়কের অভাবে এক নায়িকা অবধারিত ভাবে মারা যাবে। কে হবে জামাই তা নিয়ে কোন ক্লাইমেক্স নাই। কিন্তু কে টিকবে বউ হয়ে-চম্পা না ববিতা এই ছিলো রহস্য। ঠিক এখনকার বড়রা যেমন ভাবছে কে হবে বিরোধী দল অনেকটা তেমন। তখনকার বড়রাও জানতো কে যাচ্ছে সরকারে আর কে যাচ্ছে অবধারিত বিরোধী আন্দোলনে। ববিতা ঠিকই মারা যায়। চম্পা আর জাফর ইকবালের সুখের সংসারের রাতে বিএনপির দু:খের সংসার শুরু হয়েছিলো মাস তিনেকের হরতালে।
.
সরল অঙ্কে যেই বিষয়টা এখনো বুঝিনি তা হলো সিনেমার জেনর। পুতুল দিয়ে যেহেতু কথা বলা দেখায়, যে প্রযুক্তি এখনো অনাবিষ্কৃত, সেহেতু এটাতো সাইফাই হওয়ার কথা। তাই না?
.
#Afnan_Abdullah